Ajker Patrika

সাফের ফাইনাল খেলাটা কঠিন হবে

ব্রিটিশ কোচ জেমি ডে
আপডেট : ২৬ আগস্ট ২০২১, ১৮: ৪৩
সাফের ফাইনাল খেলাটা কঠিন হবে

প্রশ্ন: সাফের আগে ফিলিস্তিন-কিরগিজস্তানের মতো বড় দুই দলের বিপক্ষে তিনটি ম্যাচ পাচ্ছেন। টুর্নামেন্টের আগে তিনটি ম্যাচ কতটা কাজে দেবে? 
জেমি ডে: খেলোয়াড়দের পরখ করার বড় সুযোগ এটি। এদের মধ্যে বেশির ভাগ ফুটবলারই সাফের দলে থাকবে। নির্বাচিত ২৩ খেলোয়াড়ের প্রত্যেকে অন্তত একটি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাবে। আশা করছি তারা ভালো করবে। যাদের আমরা ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টের দলে নিতে পারিনি, তারাও আমার বিবেচনায় আছে। হয়তো তারাও সাফের দলে সুযোগ পেতে পারে। আমাদের লক্ষ্য থাকবে ভালো খেলে সাফে একটা সম্মানজনক ফল করা। বড় দলগুলোর বিপক্ষে খেললে আমরা সাফের আগে নিজেদের ভুলগুলো ধরতে পারব। সমস্যা হচ্ছে পাঁচ দিনের মধ্যে তিনটি ম্যাচ খেলতে হবে। যদি কিছুদিন বিশ্রাম নিয়ে খেলা যেত, তাহলে ভালো হতো।  

প্রশ্ন: দলে দুই প্রবাসীকে রেখেছেন। তাদের নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কী? 
জেমি: করোনার অনেক বিধিনিষেধ থাকায় তাদের খেলা সরাসরি দেখার সুযোগ হয়নি। তবে জাতীয় দলে খেলার মতো যথেষ্ট বয়স তাদের হয়েছে। কানাডায় আমার ভাই থাকে, সে জানে আমি কী ধরনের খেলোয়াড় খুঁজছি। ফ্রান্সে আমার দুজন ভালো বন্ধু আছে। রাহবার খান ও নায়েব তাহমিদ ইসলাম সম্পর্কে যথেষ্ট তথ্য আমার হাতে আছে। ভিডিওতে তাদের খেলা দেখা হয়েছে। আমার মনে হয়, আমরা ভালো দুজন ফুটবলার পেতে যাচ্ছি। তারা যদি জাতীয় দলের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারে, তাহলে আমাদের জন্য ভালো। ভালো খেলতে না পারলে ধরে নেব তারা এখনো প্রস্তুত নয়।  

প্রশ্ন: আগের সাফেও আপনি কোচ ছিলেন। সেবার বাংলাদেশ গ্রুপ পর্ব থেকেই বাদ পড়ে গেল। এবার কত দূর যেতে পারবেন বলে আশা করছেন? 
জেমি: গতবারের সাফে আমাদের দলটা ভালোই খেলেছিল। ছোটখাটো ভুলে যেভাবে বাদ পড়তে হলো, আসলেই সেটা দুর্ভাগ্যজনক। এবারের সাফ যে ফরম্যাটে হচ্ছে (রাউন্ড রবিন পদ্ধতিতে), এভাবে ফাইনালে খেলা খুব কঠিন। গ্রুপ পদ্ধতিতে খেললে সেমিফাইনালে খেলার ভালো একটা সুযোগ থাকত আমাদের। সাফের স্বাগতিক মালদ্বীপ, নিজেদের মাঠে তারা ফাইনাল খেলতে চাইবে। ভারতের মতো দল আছে। শ্রীলঙ্কাও নতুন কোচ পেয়েছে। তবে আগেই হাল ছাড়লে হবে না। আমাদের লক্ষ্য স্থির করতে হবে পাঁচ দলের মধ্যে সেরা দুই দল হওয়া। আমাদের দুই থেকে তিনটি ম্যাচ অন্তত জিততে হবে।

প্রশ্ন: সামনে লম্বা সূচি। দলের অধিকাংশ ফুটবলার বসুন্ধরা কিংসের। তারাও লম্বা সময় খেলার মধ্যে আছে। টানা খেলায় থাকা ফুটবলারদের বিশ্রামের বিষয়টি কি ভেবেছেন? 
জেমি: দুঃখজনকভাবে বাংলাদেশের ফুটবলাররা লম্বা বিশ্রামের সুযোগ পায় না। এর একটা নেতিবাচক প্রভাব থাকবেই। আগামী তিন মাসে আমাদের ফুটবলারদের খুব বেশি মানসিক-শারীরিক চাপ যাবে। অনুশীলন যেন বেশি কঠিন না হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। আমার আর ফিজিওর প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে, ক্লান্ত ফুটবলারদের মধ্য থেকেই তাদের সেরাটা বের করে আনা। 

প্রশ্ন: বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে বল দখলে দলের পারফরম্যান্স ভালো ছিল না। সমস্যাটা কাটিয়ে উঠতে বিশেষ কোনো পরিকল্পনা আছে? 
জেমি: সত্যি বলতে বড় দলের বিপক্ষে খেললে বল দখলে রাখা খুব কঠিন। যাদের বিপক্ষে খেলছি, তারা কৌশলে আমাদের চেয়ে অনেক এগিয়ে। যখন আমাদের পায়ে বল আসে, তখন প্রতিপক্ষ শারীরিক-মানসিকভাবে চেষ্টা করে আমাদের পা থেকে বল কেড়ে নেওয়ার। আমরা চেষ্টা করছি এই জায়গায় উন্নতি করতে। বল পায়ে রাখলে প্রতিপক্ষের খেলার গতি ধীর করে দেওয়া যায়। জাতীয় দলের ক্যাম্পে এ নিয়ে কাজ করতে হবে। এতে আমাদের গোল করার সুযোগ বাড়বে। আমাদের রক্ষণ যথেষ্ট ভালো। কয়েকটি জায়গায় যদি উন্নতি করা যায়, তাহলে আমাদের সাফের ফাইনালে খেলার সুযোগও বাড়বে। 

প্রশ্ন: লিগ ফুটবল থেকে তো সেভাবে গোল করার মতো ফুটবলার উঠে আসছে না? 
জেমি: বিদেশি কোচ হিসেবে চাইব বাইরের দেশ থেকে প্রবাসীরা আসুক, ক্লাবগুলোয় বিদেশি কোচরা দায়িত্বে থাকুক। এই কোচেরা দায়িত্বে থাকলে দেশি ফুটবলারদের টেকনিক শক্তিশালী হবে। তবে এভাবে সমস্যার সমাধান আসলে হয় না। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) অবশ্যই একটি উন্নয়ন পরিকল্পনা থাকতে হবে। কিশোর ফুটবলারদের জন্য উন্নত কোচের ব্যবস্থা করতে হবে। তরুণেরা যেন লিগে বেশি বেশি আক্রমণভাগে খেলার সুযোগ পায়, সেই ব্যবস্থাটাও করতে হবে। বিপিএল ফুটবলের বাইরে অনূর্ধ্ব-২১ ও অনূর্ধ্ব-২৩ লিগের ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে গোল করতে পারে এমন তরুণ ফুটবলার পাব। একটা ভালো পরিকল্পনা থাকলে অবশ্যই ভালো মানের ফুটবলার পাব। 

প্রশ্ন: অবশেষে বাফুফে নিজেদের একাডেমি চালু করতে যাচ্ছে। এবার কি সংকট মিটবে? 
জেমি: আগেও তো একাডেমি ছিল কিন্তু অর্থাভাবে সেটা বন্ধ হয়ে গেল। একজন প্রধান কোচ হিসেবে বলব একাডেমিতে অন্তত ১২টি বয়সভিত্তিক দল প্রয়োজন এবং তরুণ ফুটবলারদের প্রতিদিন অনুশীলন করাতে হবে। শুধু ফুটবলই নয়, ফুটবলের বাইরের জীবনটাও তাদের শেখাতে হবে। এরা যেন সঠিক পুষ্টি পায়, সঠিক শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে সেদিকটাও লক্ষ রাখতে হবে। জানি ফেডারেশনের আর্থিক সমস্যা আছে, তবু বলব একাডেমির দল যেন ১২ বছর বয়স থেকে শুরু করা হয়। একাডেমি থাকলে একটা দেশের ফুটবল কতটা উন্নতি করতে পারে ভিয়েতনাম তার প্রমাণ। ইংল্যান্ড তরুণ ফুটবলারদের কাঁধে ভর করে ইউরোর ফাইনাল খেলল। বাংলাদেশের ফুটবলে বড় আকারের বিনিয়োগের প্রয়োজন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত