Ajker Patrika

এই তরুণেরা সাহসী

রানা আব্বাস, ঢাকা
আপডেট : ১১ আগস্ট ২০২১, ১৬: ২০
এই তরুণেরা সাহসী

‘সাকিব ভাই তাড়াতাড়ি আউট করেন, অনেক দিন পর বাসায় যাব’—পরশু সিরিজের শেষ টি-টোয়েন্টিতে উইকেটের পেছনে দাঁড়িয়ে সাকিব আল হাসানকে বলা উইকেটকিপার নুরুল হাসান সোহানের এই কথার অন্য তাৎপর্য আছে। টানা তিন মাস জৈব সুরক্ষাবলয়ে থেকে শুধু খেলা আর খেলা। অবশেষে ছুটি মিলেছে ক্রিকেটারদের।  একটু হাঁপ ছাড়ার সময় মিলেছে।

গতকাল দলের যাঁর সঙ্গেই কথা হলো, বেশির ভাগই পরিবার নিয়ে ব্যস্ত। কিন্তু সোহানকে পাওয়া গেল হাসপাতালে। মহামারির এই সময়ে হাসপাতালে কেন? তরুণ উইকেটকিপার ব্যাটসম্যানের স্ত্রী বেশ অসুস্থ। গত তিন মাস সোহানকে ক্রিকেট নিয়ে এতটাই ব্যস্ত থাকতে হয়েছে, স্ত্রীকে চিকিৎসকের কাছে নেওয়ার সুযোগ ছিল না। এতে স্ত্রীর অসুস্থতা আরও বেড়েছে। কাল হাসপাতালে গিয়েও ক্রিকেট থেকে কি আর মুক্তি মিলছে? অবিরত সাংবাদিকদের ফোন আসছে। সোহান হাসিমুখেই উত্তর দিচ্ছেন। 

গত দুটি সিরিজ অন্যভাবে ধরা দিয়েছে সোহানের কাছে। নিজেকে নতুন করে কীভাবে চেনালেন তিনি, সেটির ব্যাখ্যায় বললেন, ‘আগে ব্যর্থ হওয়া নিয়ে অনেক চিন্তা করতাম। এখন এটা নিয়ে চিন্তাই করি না। ভয়ও করি না। আমি পরিশ্রম করছি, করে যাব। যতটুকু আমার পাওনা, সেটা হবে।’

সোহানের মতো অস্ট্রেলিয়া সিরিজটা অন্যভাবে ধরা দিয়েছে দলের বেশির ভাগ তরুণ ক্রিকেটারের কাছেই। ধারাবাহিক আলো ছড়িয়েছেন আফিফ হোসেন, মেহেদী হাসান, শরিফুল ইসলাম, নাছুম আহমেদ এমনকি শেষ ম্যাচে সুযোগ পাওয়া সাইফউদ্দিনও। এই তরুণেরা প্রত্যেকে খেলেছেন ভয়ডরহীন ক্রিকেট। উপহার দিয়েছেন নতুন ব্র্যান্ডের ক্রিকেট। তীব্র চাপে ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলার রহস্যটা বলছিলেন মেহেদী, ‘সাহস কি আর কারও কাছে ধার করা যায়? সাহসটা আসে নিজের ভেতর থেকে। এটা কীভাবে কী হয়ে যায় নিজেও বলতে পারি না!’

অল্প সময়েই আক্রমণাত্মক বোলিংয়ে নিজেকে চিনিয়েছেন শরিফুল ইসলাম। মাঠে যতটা আক্রমণাত্মক, মাঠের বাইরে ঠিক বিপরীত। কথা বলেন নিচু স্বরে। কিন্তু ২২ গজে এই শরিফুলই হয়ে যান ক্ষিপ্র চিতা! উইকেট পেলেই লাফ দেন শূন্যে, যেন ছুঁতে চান আকাশটা। নিজের আক্রমণাত্মক মনোভাব নিয়ে শরিফুল বলছিলেন, ‘এটা আমার সহজাত। একটা উইকেট পেতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। অনেক ঘাম ঝরাতে হয়। কষ্টের ফলটা পেলে অনেক খুশি লাগে। উদ্‌যাপনটাও তাই অন্যরকম হয়।’ 

আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলতে পছন্দ করেন সাইফউদ্দিনও। তাঁর অবশ্য সিরিজটা প্রায় বসেই কেটেছে। তবে শেষ ম্যাচে সুযোগ পেয়েই সব পুষিয়ে দিয়েছেন, ১২ রানে নিয়েছেন ৩ উইকেট। সাইফউদ্দিনের কাল মনে পড়ল ২০১৯ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের কথা। যে ম্যাচটা তিনি খেলতে পারেননি কোমরের চোটে পড়ে। সাইফউদ্দিন কাল বলছিলেন, ‘বিশ্বকাপে সুযোগ ছিল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলার। কিন্তু কোমরের চোটের কারণে খেলতে পারিনি। জিম্বাবুয়েতে শেষ ম্যাচে ভালো খেলতে পারিনি। টিম ম্যানেজমেন্ট অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম চার টি-টোয়েন্টিতে তাই আমার ওপর ভরসা পায়নি। শেষ ম্যাচে একটি সুযোগ পেয়েছি। চেষ্টা করেছি নিজের শতভাগ উজাড় করে দেওয়ার।’

অস্ট্রেলিয়ার যে দলই খেলুক, তারা মাঠে ছেড়ে কথা বলে না। বাংলাদেশের বিপক্ষে এই সিরিজেও অস্ট্রেলিয়ানদের মুখ চলেছে সমানে। তাদের চোখে চোখ রেখে জবাব দিতে দুবার ভাবেননি বাংলাদেশের তরুণ খেলোয়াড়েরাও। এক ক্রিকেটার হাসতে হাসতেই বলছিলেন, ‘ওরা ইংরেজিতে গালি দিয়েছে, আমরা দিয়েছে বাংলায়!’

বাংলাদেশের এই তরুণ ক্রিকেটাররা সাহসী, এই তরুণেরা আত্মবিশ্বাসী। তাঁরা পারেন বড় দলের চোখে চোখ রেখে কথা বলতে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত