Ajker Patrika

জিম্বাবুয়েতে বাংলাদেশ গেলে মনে পড়ে রবিউলকে

বোরহান জাবেদ, ঢাকা
আপডেট : ০৩ জুলাই ২০২১, ১৫: ৫৩
জিম্বাবুয়েতে বাংলাদেশ গেলে মনে পড়ে রবিউলকে

‘হয়তো আমার কপালেই এমন কিছু লেখা ছিল’—আক্ষেপের সুরেই মোবাইল ফোনের অন্য প্রান্ত থেকে কথাগুলো বলছিলেন রবিউল ইসলাম শিবলু।

হঠাৎ রবিউল কেন? ২০১৩ সালের পর আরেকটি জিম্বাবুয়ে সফরে গেছে বাংলাদেশ। সে সফরে বাংলাদেশ পেয়েছিল অমিতসম্ভাবনাময় এক পেসার। সময়ের স্রোতে তিনি হারিয়ে গেলেও জিম্বাবুয়েতে বাংলাদেশ গেলে মনে পড়বেই রবিউলকে।

বাংলাদেশের পেস বোলিং আক্রমণ নিয়ে আফসোসের শেষ নেই। বিশেষ করে টেস্টে। এক দশক আগে বাংলাদেশকে বড় স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন রবিউল। বিদেশের মাঠে বাংলাদেশের কোনো পেসার ঘণ্টার পর ঘণ্টা যে প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের পরীক্ষা নিতে পারেন, তা দেখিয়েছিলেন রবিউল। ২০১৩ সালের সেই জিম্বাবুয়ে সফরে বাংলাদেশের ‘নখদন্তহীন’ পেস বোলিং আক্রমণকে নতুন মাত্রা দিয়েছিলেন এই রবিউল।

দুই টেস্টের সিরিজটা ১-১ ড্র করেছিল বাংলাদেশ। তবে দারুণ বোলিংয়ে সবার নজর কেড়েছিলেন রবিউল। ক্লান্তিহীন আর টানা একই লাইন-লেংথে বোলিং করে ভালো উদাহরণ তৈরি করেছিলেন। আরেকটা জিম্বাবুয়ে সিরিজ সামনে রেখে আট বছর আগের স্মৃতি মনে পড়ে রবিউলেরও, ‘অভ্যাস থেকেই টানা বোলিং করাটা আয়ত্ত করেছিলাম। নেটে যেখানে অন্যেরা দুই–এক বোলিং করে উঠে যেত, আমি টানা বোলিং করে যেতাম।’

হারারেতে সিরিজের প্রথম টেস্টে ৫৭ ওভার বোলিং করে রবিউল ৯ উইকেট নিলেও দল হেরেছিল। একই ভেন্যুতে পরের টেস্টেই ঘুরে দাঁড়িয়েছিল বাংলাদেশ। সেটিতে আরও দুর্দান্ত ছিলেন রবিউল। প্রথম ইনিংসে আবারও পেয়েছিলেন ৫ উইকেট। টানা দুই ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়ে আলোচনায় ছিলেন রবিউল। ২ টেস্টের সিরিজে ১৫ উইকেট নিয়ে সিরিজের সেরা রবিউলই। দেশের বাইরে সেবারই প্রথম বাংলাদেশি কোনো পেস বোলার সিরিজসেরা হয়েছিলেন। জিম্বাবুয়েতে সেই সিরিজে রবিউলের ১৫ উইকেট এক সিরিজে বাংলাদেশি পেসারের সর্বোচ্চ উইকেট হয়ে আছে। দেশে–বিদেশে যেখানেই হোক, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের আর কোনো পেসার ৫ উইকেট পাননি।

 যখনই তাঁকে নিয়ে বড় স্বপ্ন বুনেছিল বাংলাদেশ, তখনই দৃশ্যপট থেকে মিলিয়ে যেতে শুরু করেন রবিউল। ২০১৪ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্ট খেলেছেন। খেলোয়াড়ি জীবন পেছনে ফেলে রবিউল এখন নাম লিখিয়েছেন কোচিং ও আম্পায়ারিংয়ে। তা সম্ভাবনা জাগিয়ে কেন হারিয়ে গেলেন? এ প্রশ্নে রবিউল কাঠগড়ায় তুললেন বাংলাদেশ দলের সাবেক কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে। ক্ষোভমেশানো কণ্ঠে বললেন, ‘সিরিজসেরা হওয়ার পর ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পরের সিরিজেই আমাকে বাদ দেওয়া হয়। তখনকার কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে আমাকে হয়তো সেভাবে পছন্দ করতেন না!’

ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে ভালো ফিটনেস নিয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন রবিউল। অথচ সেই ফিটনেস ধরে না রাখার দায়েই ধীরে ধীরে দৃশ্যপট থেকে হারিয়ে গেলেন রবিউল। এতে অবশ্য নিজেকেই দায়ী করলেন এই পেসার, ‘অন্যদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। নিজেরই হয়তো ঘাটতি ছিল। হয়তো প্রয়োজনের তুলনায় ফিটনেস নিয়ে সেভাবে কাজ করতে পারিনি।’

দৃশ্যের আড়ালে চলে গেলেও রবিউলের আশা, এই বাংলাদেশ দলের পেসাররাও দুর্দান্ত কিছু করবে। এবার ইনিংসে ৫ উইকেটের খরাটা ঘোচাবে। রবিউল বললেন, ‘আমাদের পেস আক্রমণটা এবার দারুণ। আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে সেরা। এবার নিশ্চয়ই একজন ইনিংসে ৫ উইকেট পাবে।’

যে ৯ টেস্ট খেলে ২৫ উইকেট রবিউল পেয়েছেন, ২৪টিই নিয়েছেন দেশের বাইরে। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই তাসকিন-রাহিদের ভালো করার কিছু পরামর্শ দিলেন রবিউল, ‘এক জায়গায় ধারাবাহিক বোলিং করতে হবে। আর ধৈর্য রাখতে হবে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত