Ajker Patrika

পুরুষেরা কেন নারীর চেয়ে কম বাঁচেন—নতুন গবেষণায় চমকপ্রদ তথ্য

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: দ্য টাইমস
ছবি: দ্য টাইমস

প্রাচীনকাল থেকেই একটি বিষয় স্পষ্ট—পুরুষেরা নারীর তুলনায় কম দিন বাঁচেন। গ্রিক পুরুষেরা সাধারণত যুদ্ধে অকালমৃত্যু বরণ করতেন। ভিক্টোরিয়ান যুগের সমাধিফলকে দেখা যায়—বিধবারা তাঁদের স্বামীকে টপকে অনেক বছর বেঁচে থেকেছেন। এবার এক বিস্তৃত বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রমাণ করছে, এই বৈষম্য কেবল ইতিহাসে নয়, জীববিজ্ঞানের গভীরেও লুকিয়ে আছে।

জার্মানির ‘ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর ইভোলিউশনারি অ্যানথ্রোপলজি’ এর গবেষকেরা এগারো শ-এর বেশি স্তন্যপায়ী প্রাণী ও পাখির প্রজাতি বিশ্লেষণ করে দেখেছেন—কোন লিঙ্গ বেশি দিন বাঁচে। ফলাফলে উঠে এসেছে একটি পরিষ্কার নিয়ম—পুরুষেরা যত বেশি জটিল ও ক্লান্তিকর প্রজনন আচরণে যুক্ত থাকে, তাঁদের জীবনকাল ততই ছোট হয়।

গবেষণায় দেখা গেছে, স্তন্যপায়ী প্রাণীর মধ্যে স্ত্রী প্রাণীরা পুরুষের চেয়ে গড়ে প্রায় ১২ শতাংশ বেশি দিন বাঁচে। অন্যদিকে, পাখির ক্ষেত্রে পুরুষেরা স্ত্রীদের তুলনায় প্রায় ৫ শতাংশ বেশি দিন বাঁচে। এই বৈপরীত্যের ব্যাখ্যা লুকিয়ে আছে প্রজনন প্রতিযোগিতায়। হরিণের শিংয়ের লড়াই বা গরিলাদের হেরেম নিয়ে দ্বন্দ্বে পুরুষেরা বিপুল শক্তি খরচ করে, আঘাত পাওয়ার ঝুঁকিও বেশি থাকে। এ কারণে তাঁদের আয়ু কম হয়।

কিন্তু অনেক পাখি একগামী এবং দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক গড়ে তোলে। তারা উভয় মিলে সন্তান লালনপালন করে, ফলে পুরুষদের বাড়তি প্রতিযোগিতা করতে হয় না। তাই তাদের আয়ু নারীর তুলনায় বেশি। তবে ময়ূরের মতো কিছু প্রজাতিতে পুরুষদের আবার চোখ-ধাঁধানো রঙিন পালক প্রদর্শন করে সঙ্গী আকর্ষণ করতে হয়—ফলে তাদের আয়ুও কমে যায়।

স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যেও ব্যতিক্রম আছে। যেমন—নেকড়েরা সাধারণত একগামী, আর এ কারণে পুরুষ নেকড়ের আয়ু কখনো কখনো স্ত্রী নেকড়ের চেয়ে বেশি হয়। অন্যদিকে, মানুষের কাছের আত্মীয় শিম্পাঞ্জির মধ্যে পুরুষেরা তীব্র প্রতিযোগিতায় লিপ্ত থাকে, ফলে তাদের গড় আয়ু স্ত্রীদের তুলনায় প্রায় পাঁচ ভাগ কম।

বুধবার (২ অক্টোবর) যুক্তরাজ্যভিত্তিক দ্য টাইমস জানিয়েছে, এই গবেষণায় জেনেটিক গঠনকেও গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। স্তন্যপায়ীদের ক্ষেত্রে পুরুষের একটি এক্স এবং একটি ওয়াই ক্রোমোজোম থাকে, আর নারীর দুটি এক্স। নারীদের ক্ষেত্রে একটি এক্স ক্রোমোজোম ক্ষতিগ্রস্ত হলে অন্যটি সুরক্ষার কাজ করে। পুরুষদের সেই সুবিধা নেই। বিপরীতে, পাখিদের ক্ষেত্রে নিয়ম উল্টো—পুরুষদের দুটি ‘জেড’ ক্রোমোজোম থাকে, যা তাদের সুবিধা দেয়।

গবেষকেরা দেখেছেন, চিড়িয়াখানায় চিকিৎসা সেবা ও নিরাপত্তার মধ্যেও এই আয়ুর পার্থক্য থেকে যায়, যদিও ব্যবধান কিছুটা কমে। মানব সমাজেও একই চিত্র। চিকিৎসা ও জনস্বাস্থ্য উন্নত হলেও, যুক্তরাজ্যের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী পুরুষদের গড় আয়ু ৭৮.৮ বছর, আর নারীদের ৮২.৮ বছর।

অতএব, গবেষকদের ভাষায় এই বৈষম্য আমাদের বিবর্তনের ইতিহাসে গভীরভাবে প্রোথিত। ফলে পুরুষেরা নারীদের চেয়ে কম দিন বাঁচবে—এটাই যেন প্রকৃতির স্থায়ী নিয়ম।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শুধু থালাবাটি নয়, এনসিপির জন্য আছে লাউ-বেগুন-কলাসহ ৫০ প্রতীক

এনসিপিকে শাপলা দিলে মামলা করব না, তবে ইসি দিতে পারে না: মান্না

পুরুষেরা কেন নারীর চেয়ে কম বাঁচেন—নতুন গবেষণায় চমকপ্রদ তথ্য

ট্রাম্পের ভিসা কড়াকড়ির পর ভারতের দিকেই ঝুঁকছে মার্কিন কোম্পানিগুলো

শহিদুল আলমের জাহাজ এখনো আটক হয়নি, দিলেন ভিডিওবার্তা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত