অনলাইন ডেস্ক
প্রাচীন মানবের টিকে থাকার লড়াইয়ের গুরুত্বপূর্ণ ও চমকপ্রদ উপাদান খুঁজে পেলেন বিজ্ঞানীরা। ৪০ হাজার বছর আগে পৃথিবীর চুম্বকক্ষেত্রের বড় রকমের পরিবর্তনের সময় সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির মারাত্মক প্রভাবে হুমকির মুখে পড়েছিল পৃথিবীর জীবজগৎ। এই সংকটের মুখে হোমো স্যাপিয়েনসরা (আধুনিক মানুষের পূর্বপুরুষ) এক অভিনব কৌশলে রক্ষা পায়। বিজ্ঞানীদের দাবি, সেই সময় প্রাকৃতিক খনিজ ওকারকে সানস্ক্রিন হিসেবে ব্যবহার করেই টিকে থাকতে পেরেছিলেন তাঁরা। আর এই সময়েই নিয়ান্ডাথাল প্রজাতি বিলুপ্ত হতে থাকে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব মিশিগানের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে এমনই এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। গবেষকরা বলছেন, ওকার নামক খনিজটি ত্বকে মাখলে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি ঠেকানো যায়। সেই সময় ইউরোপে বসবাসরত হোমো স্যাপিয়েনসরা নিয়মিতভাবে লাল, বাদামি কিংবা হলুদচে রঙের এই খনিজ ব্যবহার করতেন, যা সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি প্রতিহত করতে সাহায্য করত।
পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্র তৈরি হয় ভূগর্ভের কেন্দ্রে থাকা বৈদ্যুতিক প্রবাহ থেকে, যা পৃথিবীকে ঘিরে একটি অদৃশ্য আবরণ তৈরি করে। এই আবরণ আমাদের রক্ষা করে মহাজাগতিক রশ্মি ও সূর্যের তেজস্ক্রিয় কণার হাত থেকে।
উত্তর ও দক্ষিণ মেরু চৌম্বকক্ষেত্রের দুই প্রান্ত হিসেবে কাজ করে। তবে এই অবস্থান স্থায়ী নয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই মেরুগুলো তাদের ভৌগোলিক অবস্থান থেকে সরে যেতে পারে, এবং চৌম্বকক্ষেত্রের শক্তিও পরিবর্তিত হতে পারে।
সর্বশেষ এমন একটি ঘটনা ঘটেছিল প্রায় ৪০ হাজার বছর আগে, যাকে বলা হয় ‘লাশাম্পস এক্সকারশন’।
গবেষকেরা বলেন, ৪১ হাজার থেকে ৩৯ হাজার বছর আগে পৃথিবীর চুম্বকক্ষেত্র চরমভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। ‘লাশাম্পস এক্সকারশন’নামে পরিচিত এই সময়কালে চুম্বকীয় উত্তর মেরু নেমে এসেছিল প্রায় নিরক্ষরেখার কাছাকাছি এবং চুম্বকক্ষেত্রের শক্তি নেমে গিয়েছিল মাত্র ১০ শতাংশে। ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে সূর্যের রশ্মি এবং মহাজাগতিক বিকিরণ সরাসরি বায়ুমণ্ডল ভেদ করে প্রবেশ করত।
এর ফলে, অরোরা বা মেরুআলো—যা সাধারণত দেখা যায় শুধুমাত্র উত্তর বা দক্ষিণ মেরুর কাছাকাছি অঞ্চলে, তা সেই সময় পুরো ইউরোপজুড়ে এবং উত্তর আফ্রিকার পর্যন্ত বিস্তৃত হয়।
বিজ্ঞানীদের গণনা থেকে আরও জানা গেছে, এই সময় হোমো স্যাপিয়েনস এবং নেহান্ডারথাল—উভয়েই সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাবের প্রতি অনেক বেশি সংবেদনশীল হয়ে উঠেছিল।
গবেষণার প্রধান লেখক, জলবায়ু ও মহাকাশ বিজ্ঞান বিভাগের গবেষক ড. অগ্নিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘আমরা দেখেছি, যেসব জায়গায় চুম্বকক্ষেত্র দুর্বল হয়ে পড়েছিল এবং সূর্যের কণাগুলো সহজেই প্রবেশ করত, ঠিক সেসব অঞ্চলেই তখন মানুষের গুহায় বাসের প্রবণতা এবং ওকার ব্যবহারের হার বেড়েছিল।’
ওকার শুধু রঙ বা অলংকারের উপকরণ নয়, সানস্ক্রিন হিসেবে এর ব্যবহার ছিল অন্যতম—বলছেন গবেষণার সহলেখক এবং অ্যানথ্রোপলজির অধ্যাপক র্যাভেন গারভি। তিনি আরও বলেন, ‘সরাসরি প্রমাণ না থাকলেও, আমরা প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের মাধ্যমে অনুমান করতে পারি যে, ওকার ব্যবহারের একটি বড় কারণ ছিল সূর্যের রশ্মি থেকে ত্বক রক্ষা করা।’
গবেষকেরা আরও জানান, এই সময় মানুষের তৈরি সূঁচের মতো সরঞ্জামের খোঁজ পাওয়া গেছে, যেগুলো দিয়ে সেলাই করা হতো কাপড়। অর্থাৎ, তারা ত্বক ঢেকে রাখার উপযোগী পোশাকও তৈরি করত। শীত ও সূর্যের রশ্মি থেকে বাঁচার আরেকটি উপায় ছিল পোশাক।
অন্যদিকে, ইউরোপে তখন ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছিল নেহান্ডারথালরা। বিজ্ঞানীদের মতে, তারা হয়তো এসব প্রতিরক্ষা কৌশল প্রয়োগ করতে পারেনি, তাই হোমো স্যাপিয়েনসরা টিকে গেলেও নেহান্ডারথালরা হারিয়ে গেছে।
গবেষণাটি সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকী সায়েন্স অ্যাডভান্সেস–এ।
তথ্যসূত্র: বিবিসি সায়েন্স ফোকাস
প্রাচীন মানবের টিকে থাকার লড়াইয়ের গুরুত্বপূর্ণ ও চমকপ্রদ উপাদান খুঁজে পেলেন বিজ্ঞানীরা। ৪০ হাজার বছর আগে পৃথিবীর চুম্বকক্ষেত্রের বড় রকমের পরিবর্তনের সময় সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির মারাত্মক প্রভাবে হুমকির মুখে পড়েছিল পৃথিবীর জীবজগৎ। এই সংকটের মুখে হোমো স্যাপিয়েনসরা (আধুনিক মানুষের পূর্বপুরুষ) এক অভিনব কৌশলে রক্ষা পায়। বিজ্ঞানীদের দাবি, সেই সময় প্রাকৃতিক খনিজ ওকারকে সানস্ক্রিন হিসেবে ব্যবহার করেই টিকে থাকতে পেরেছিলেন তাঁরা। আর এই সময়েই নিয়ান্ডাথাল প্রজাতি বিলুপ্ত হতে থাকে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব মিশিগানের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে এমনই এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। গবেষকরা বলছেন, ওকার নামক খনিজটি ত্বকে মাখলে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি ঠেকানো যায়। সেই সময় ইউরোপে বসবাসরত হোমো স্যাপিয়েনসরা নিয়মিতভাবে লাল, বাদামি কিংবা হলুদচে রঙের এই খনিজ ব্যবহার করতেন, যা সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি প্রতিহত করতে সাহায্য করত।
পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্র তৈরি হয় ভূগর্ভের কেন্দ্রে থাকা বৈদ্যুতিক প্রবাহ থেকে, যা পৃথিবীকে ঘিরে একটি অদৃশ্য আবরণ তৈরি করে। এই আবরণ আমাদের রক্ষা করে মহাজাগতিক রশ্মি ও সূর্যের তেজস্ক্রিয় কণার হাত থেকে।
উত্তর ও দক্ষিণ মেরু চৌম্বকক্ষেত্রের দুই প্রান্ত হিসেবে কাজ করে। তবে এই অবস্থান স্থায়ী নয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই মেরুগুলো তাদের ভৌগোলিক অবস্থান থেকে সরে যেতে পারে, এবং চৌম্বকক্ষেত্রের শক্তিও পরিবর্তিত হতে পারে।
সর্বশেষ এমন একটি ঘটনা ঘটেছিল প্রায় ৪০ হাজার বছর আগে, যাকে বলা হয় ‘লাশাম্পস এক্সকারশন’।
গবেষকেরা বলেন, ৪১ হাজার থেকে ৩৯ হাজার বছর আগে পৃথিবীর চুম্বকক্ষেত্র চরমভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। ‘লাশাম্পস এক্সকারশন’নামে পরিচিত এই সময়কালে চুম্বকীয় উত্তর মেরু নেমে এসেছিল প্রায় নিরক্ষরেখার কাছাকাছি এবং চুম্বকক্ষেত্রের শক্তি নেমে গিয়েছিল মাত্র ১০ শতাংশে। ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে সূর্যের রশ্মি এবং মহাজাগতিক বিকিরণ সরাসরি বায়ুমণ্ডল ভেদ করে প্রবেশ করত।
এর ফলে, অরোরা বা মেরুআলো—যা সাধারণত দেখা যায় শুধুমাত্র উত্তর বা দক্ষিণ মেরুর কাছাকাছি অঞ্চলে, তা সেই সময় পুরো ইউরোপজুড়ে এবং উত্তর আফ্রিকার পর্যন্ত বিস্তৃত হয়।
বিজ্ঞানীদের গণনা থেকে আরও জানা গেছে, এই সময় হোমো স্যাপিয়েনস এবং নেহান্ডারথাল—উভয়েই সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাবের প্রতি অনেক বেশি সংবেদনশীল হয়ে উঠেছিল।
গবেষণার প্রধান লেখক, জলবায়ু ও মহাকাশ বিজ্ঞান বিভাগের গবেষক ড. অগ্নিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘আমরা দেখেছি, যেসব জায়গায় চুম্বকক্ষেত্র দুর্বল হয়ে পড়েছিল এবং সূর্যের কণাগুলো সহজেই প্রবেশ করত, ঠিক সেসব অঞ্চলেই তখন মানুষের গুহায় বাসের প্রবণতা এবং ওকার ব্যবহারের হার বেড়েছিল।’
ওকার শুধু রঙ বা অলংকারের উপকরণ নয়, সানস্ক্রিন হিসেবে এর ব্যবহার ছিল অন্যতম—বলছেন গবেষণার সহলেখক এবং অ্যানথ্রোপলজির অধ্যাপক র্যাভেন গারভি। তিনি আরও বলেন, ‘সরাসরি প্রমাণ না থাকলেও, আমরা প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের মাধ্যমে অনুমান করতে পারি যে, ওকার ব্যবহারের একটি বড় কারণ ছিল সূর্যের রশ্মি থেকে ত্বক রক্ষা করা।’
গবেষকেরা আরও জানান, এই সময় মানুষের তৈরি সূঁচের মতো সরঞ্জামের খোঁজ পাওয়া গেছে, যেগুলো দিয়ে সেলাই করা হতো কাপড়। অর্থাৎ, তারা ত্বক ঢেকে রাখার উপযোগী পোশাকও তৈরি করত। শীত ও সূর্যের রশ্মি থেকে বাঁচার আরেকটি উপায় ছিল পোশাক।
অন্যদিকে, ইউরোপে তখন ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছিল নেহান্ডারথালরা। বিজ্ঞানীদের মতে, তারা হয়তো এসব প্রতিরক্ষা কৌশল প্রয়োগ করতে পারেনি, তাই হোমো স্যাপিয়েনসরা টিকে গেলেও নেহান্ডারথালরা হারিয়ে গেছে।
গবেষণাটি সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকী সায়েন্স অ্যাডভান্সেস–এ।
তথ্যসূত্র: বিবিসি সায়েন্স ফোকাস
গণিত, প্রকৌশল, জ্যোতির্বিদ্যা ও চিকিৎসাবিদ্যার মতো বিষয়ে উচ্চতর বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ছিল প্রাচীন মিসরীয়দের। তাঁরা তাত্ত্বিক জ্ঞানের চেয়ে ব্যবহারিক জ্ঞানকে বেশি প্রাধান্য দিতেন। অনেকের ধারণা, বিজ্ঞান আধুনিককালের আবিষ্কার, যার শিকড় প্রাচীন গ্রিক সভ্যতায়।
২ ঘণ্টা আগেপ্রস্তর যুগে চীনের পূর্বাঞ্চলে সমাজের নেতৃত্বে ছিল নারী। সম্প্রতি প্রাপ্ত ডিএনএ বিশ্লেষণে উঠে এসেছে এমনই অভূতপূর্ব তথ্য। প্রায় সাড়ে ৪ হাজার আগের কঙ্কালের জিনগত উপাদান বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন, সেই সময়কার সমাজ ছিল মাতৃতান্ত্রিক এবং সমাজের সদস্যরা অন্তত ১০ প্রজন্ম ধরে মায়ের বংশ অনুসারে...
১ দিন আগেপ্রতি বছর নদী, সমুদ্র ও অন্য বিভিন্ন জলাশয় থেকে প্রায় ১ ট্রিলিয়ন মাছ ধরা হয়। এদের বেশির ভাগই খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তবে এই বিপুল-সংখ্যক মাছ ধরার পরে তাদের যে পদ্ধতিতে মারা হয়, তা অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক। সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, মাছকে পানি থেকে তোলার পর তারা গড়ে প্রায় ২২ মিনিট পর্যন্ত
৩ দিন আগেপৃথিবীর সবচেয়ে শুষ্ক মরুভূমিগুলোর কেন্দ্রে অবস্থিত আরব অঞ্চল একসময় সবুজে মোড়ানো স্বর্গোদ্যান ছিল। মরুপ্রধান অঞ্চল হলেও পৃথিবীর দীর্ঘ ইতিহাসে এই ভূমি নানা সময়ে আর্দ্র আবহাওয়ার দেখা পেয়েছে, আর তখনই সেখানে জন্ম নিয়েছে লেক-নদী, বনভূমি এবং জীববৈচিত্র্যের স্বর্গ। সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে এমনটাই
৫ দিন আগে