Ajker Patrika

বোতলে বার্তাবাহক

বোতলে বার্তাবাহক

‘বাপু তোমরা সক্কলে একটু সাবধানে থাইকো। ও বিন্তির মা, বঁইচির মা, শোনো। তোমরা একটু সাবধানে থাইকো। গেরামে ওলা বিবি আইছে।’

জহির রায়হানের ‘হাজার বছর ধরে’ উপন্যাসের মকবুল চরিত্রের বলা কথাগুলো অতীতের সব মহামারির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। ওলা বিবি বা বর্তমানে যাকে বলা হয় কলেরা; একসময় এর প্রাদুর্ভাবে গ্রামকে গ্রাম উজাড় হয়ে যেত। হালের করোনার মতোই ওলা বিবিকে তখন ভয় পেত মানুষ।

কিন্তু চিকিৎসাবিজ্ঞানের অগ্রগতি ওলা বিবির ভয়কে কাটিয়ে দিয়েছে। এখন কলেরার চিকিৎসা কম খরচে সহজেই করা যায়। ঘরে স্যালাইন থাকলেই হলো। স্যালাইন না থাকলে বেশি করে পান করতে হবে পানি। প্রযুক্তি যত সামনের দিকে এগিয়ে গেছে, তার ছোঁয়া লেগেছে চিকিৎসাবিজ্ঞানেও। কমেছে মানুষের মৃত্যুহার। কিন্তু প্রায় দুই বছর ধরে করোনা নামক ভাইরাস আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে যাচ্ছে।

একটু পরেই ‘এমআরএনএ’ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা দেখে ঘাবড়ে যাবেন না। একটু মন দিয়ে পড়লেই সহজে বুঝতে পারবেন, করোনাকে তাড়ানোর জন্য বিজ্ঞানীরা কী-না করে চলেছেন।

ক্রান্তিকালে আবারও মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে সেই চিকিৎসাবিজ্ঞান। বের হয়েছে করোনাভাইরাসের টিকা। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন দেশে পুরোদমে চলছে টিকাদান কার্যক্রম। বয়স্করা পাচ্ছেন তৃতীয় বা বুস্টার ডোজ। সবচেয়ে বেশি আলোচিত টিকা হচ্ছে ফাইজার-বায়োএনটেক ও মডার্নার টিকা। দুটোতেই ব্যবহার করা হয়েছে চিকিৎসার আধুনিক প্রযুক্তি ‘এমআরএনএ’। ‘এমআরএনএ’ বা মেসেঞ্জার

আরএনএ-কে এককথায় বলা যায় বার্তাবাহী রাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড। কোষে প্রোটিন তৈরির বার্তা বহন করে বলেই এ নাম দেওয়া হয়েছে। বিজ্ঞানভিত্তিক সাময়িকী নেচার বলছে, মানবদেহে কোষের কার্যকারিতা বাড়াতে এই এমআরএনএ একজন বার্তাবাহকের মতোই কাজ করে। বানানোর পর রাখা হয় শিশিতে। এরপর সেখান থেকে দেওয়া হয় মানুষের দেহে। কার্যক্রম শুরু করার আগপর্যন্ত থাকে একধরনের মেমব্রেন বা পর্দার ভেতরে। অনেকটা বোতলের মতোই। তাই অস্ট্রেলিয়ার বিজ্ঞানভিত্তিক সাময়িকী কসমস এর নাম দিয়েছে ‘বোতলে বার্তাবাহক’।

মানুষের প্রতিটি কোষের নিউক্লিয়াসে জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়া ট্রান্সক্রিপশনের মাধ্যমে ডিএনএ অনুসরণ করে তৈরি হয় আরএনএ বা রাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড। সেখান থেকে ট্রান্সলেশন নামক প্রক্রিয়ায় তৈরি হয় প্রোটিন। মূলত এসব প্রোটিনই জীবাণু বা ভাইরাসের কার্যক্রম রুখে দেয়। আর এসব প্রোটিনকে কার্যকর হিসেবে গড়ে তোলে মেসেঞ্জার রাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড বা এমআরএনএ। এটি নিউক্লিয়াসে থাকা ডিএনএ-র কোষগুলো বহন করে প্রথমে সাইটোপ্লাজমে নিয়ে যায়। এরপর কোড অনুযায়ী একের পর এক অ্যামাইনো অ্যাসিড বসিয়ে তৈরি করে প্রোটিন। অনেকটা পুঁতির মালা, তসবি কিংবা লোহার শিকলের মতো। তাই একে চেইন বলা হয়। কোড বসানোর বার্তাটা এমআরএনএ-ই দেয়।

এরপর এসব টিকা আমাদের দেহে নির্দিষ্ট কোনো জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এমনটাই ঘটে থাকে করোনার টিকার ক্ষেত্রে। বাইরে থেকে এমন কিছু প্রবেশ করানো হয়, যাতে ভেতরে তৈরি হয় অ্যান্টিবডি। করোনাকে দেখলেই সেগুলো কাজ করতে শুরু করে। তবে দেহের ভেতরের কোনো ক্ষতি করে না।

অস্ট্রেলিয়ার বিজ্ঞানভিত্তিক সাময়িকী কসমস জানায়, করোনাভাইরাস ছাড়াও ক্যানসার থেকে শুরু করে বিভিন্ন জটিল এবং কঠিন ফ্লুজাতীয় রোগে এমআরএনএ এখন সর্বাধিক প্রাধান্য পাচ্ছে।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত