Ajker Patrika

বিজ্ঞানে আটকে গেছেন ঈশপ

সাইরুল ইসলাম, ঢাকা
বিজ্ঞানে আটকে গেছেন ঈশপ

মানুষ নামক বুদ্ধিমান প্রাণী যখন বর্বর জীবনযাপন করছিল, বিজ্ঞান তখন অন্ধকার গুহায় শিকলবন্দী। সভ্যতার সেই আদিকালে আগুন আবিষ্কারের পর থেকেই বিজ্ঞানের শিকলে লাগানো হাজার হাজার তালা একটা একটা করে খুলতে শুরু করে। সভ্যতা এগিয়ে যায়, বর্বর মানুষ হয়ে ওঠে সভ্য!

তবে এর পুরো কৃতিত্ব কি বিজ্ঞানের? না। দার্শনিক থমাস হবস তাঁর সামাজিক চুক্তি তত্ত্বে বলেছিলেন, মানুষ নিজেদের হিংস্র, বর্বর আর আক্রমণাত্মক মনোভাব দমিয়ে রাখার জন্যই একত্রে বসবাস শুরু করে। আর তাতেই গড়ে ওঠে অন্যকে উপকার করার মানসিকতা এবং তাতে পাওয়া যায় ইতিবাচক জীবনের বার্তা। এ যেন অনেকটা পল্লিকবি জসীমউদ্‌দীনের ‘সবার সুখে’ কবিতার মতো, ‘সবার সুখে হাসব আমি কাঁদব সবার দুখে/নিজের খাবার বিলিয়ে দেব অনাহারীর মুখে’।

কিন্তু বর্বর সত্তা এত সহজে বশে আসেনি। নীতিকথা বলেও যখন কাজ হচ্ছিল না, তখন ঈশপ নামের এক গ্রিক পণ্ডিত বের করলেন অভিনব এক উপায়। খ্রিষ্টের জন্মের অনেক আগে প্রাচীন গ্রিসে বসবাস করতেন ঈশপ। মানুষের মনে নীতিকথা পাকাপোক্ত করতে প্রাণীদের বেছে নেন তিনি। একেক প্রাণীর মধ্যে মানুষের একেক চরিত্র দেখান। আর খারাপ কাজের প্রতি ঘৃণার জন্ম দেন মানুষের মনে।
কিন্তু আজকের যুগে জন্ম নিলে গল্পগুলো হয়তো আবার নতুন করে লিখতে হতো ঈশপকে। কেননা, তাঁর এসব গল্পের তথ্যের সঙ্গে বিজ্ঞানের তথ্যে ফারাক অনেক।

ঈশপের গল্পে প্রাণীদের আচরণের যে ধারণা দেওয়া হয়েছে, তার সব কটিই অনুমাননির্ভর। আড়াই হাজার বছর পার হয়ে গেলেও সেটি মানুষের নজরে আসেনি। কারণ, প্রাণীদের নিয়ে গবেষণা ছিল না।

কিন্তু গত শতকে প্রাণিবিজ্ঞানে এসে জমা হয়েছে নতুন সব তথ্য। ঈশপের গল্পের চতুর খ্যাঁকশিয়াল, বোকা গাধা, বানর, ভেড়া, কাক কিংবা নেকড়ের আচরণগত বৈশিষ্ট্য জানতে পেরেছে মানুষ। ফলে গল্পগুলো বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে দেখতে গিয়ে সবকিছু যেন মিলছে না। ‘ঈশপ’স অ্যানিমেল’ বইয়ে ঠিক এসব গল্পই বলতে চেয়েছেন ব্রিটিশ লেখক ও গবেষক জো উইমপেনি। সংবাদমাধ্যম বিবিসির সায়েন্স ফোকাস নামক বিজ্ঞানভিত্তিক ওয়েবসাইটে ঈশপের কয়েকটি গল্পের পাশাপাশি বিজ্ঞানের ধারণা নিয়ে এসেছেন তিনি।

তৃষ্ণার্ত কাকের গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। কলসের নিচে থাকা পানি খেতে বুদ্ধিমান কাক পাথরের টুকরো ফেলতে থাকে। এতে পানি ধীরে ধীরে ওপরে ওঠে এবং কাক পানি খেয়ে তৃষ্ণা নিবারণ করে। কিন্তু বিজ্ঞান বলছে, কাকের যে বুদ্ধি আছে, সে বুদ্ধি নিয়ে পানি আর পাথরের সম্পর্ক ব্যাখ্যা করতে পারবে না সে।

বানর আর জেলের গল্পটাও বেশ মজার। জেলের জাল ফেলা দেখে বানর সেটি শিখে নেয়। তাঁরা জাল রেখে যখন চলে যান, তখন বানর এসে পানিতে জাল ফেলতে গিয়ে নিজেই জালে আটকে যায়। ঈশপ এই গল্পে বানরকে অনুকরণপ্রিয় এবং বোকা হিসেবে দেখিয়েছেন। কিন্তু বিজ্ঞান বলছে ভিন্ন কথা। বানর অনুকরণ করে না, তারা দেখে শিখে নেয়। আর বানর বোকাও নয়।

তবে বিজ্ঞান অনুপস্থিত থাকলেও মজাচ্ছলে নীতিকথা মানুষের মনে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য অনন্য হয়ে থাকবে ঈশপের এসব গল্প। কেননা, প্রতিটা গল্পই মানুষকে কিছুটা হলেও সত্যিকার সভ্য করে তুলতে পারে।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত