Ajker Patrika

পৃথিবীর নতুন সঙ্গী কোয়াসি-মুন, সঙ্গ ছাড়বে ২০৮৩ সালে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

পৃথিবী হয়তো সৌরজগতের একমাত্র বাসযোগ্য গ্রহ। তবে এর মানে এই নয় যে, আমরা একা। প্রায়ই ছোট-বড় গ্রহাণু আমাদের পাশ কাটিয়ে চলে যায়। সাম্প্রতিক এমনই এক নতুন অতিথি ধরা দিয়েছে—গ্রহাণু ২০২৫ পিএন ৭।

গত গ্রীষ্মে এটি শনাক্ত করেন জ্যোতির্বিদেরা। এটি এমন এক কক্ষপথে ঘুরছে, যা পৃথিবীর কক্ষপথের প্রায় অনুরূপ। যেন একই মহাজাগতিক মহাসড়কে পাশাপাশি দুটি গাড়ি চলছে। এ ধরনের গ্রহাণুকে বলা হয় কোয়াসি-মুন (quasi-moon) বা চাঁদসদৃশ গ্রহাণু।

তবে এবারের গ্রহাণুটি হতে পারে এখন পর্যন্ত চিহ্নিত কোয়াসি-মুনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ছোট। এর দৈর্ঘ্য হতে পারে সর্বোচ্চ ৫২ ফুট।

অনেক সময় পৃথিবীর আশপাশের গ্রহাণুগুলো মঙ্গল ও বৃহস্পতির মাঝখানে থাকা প্রধান অ্যাস্টারয়েড বেল্ট থেকে আসে। আবার এটি চাঁদের বুকে বড় উল্কা আঘাত হানার ফলে ছিটকে পড়া অংশও হতে পারে।

২০২৫ পিএন ৭-এর উৎস সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এই গ্রহাণু নিয়ে চলতি মাসে রিসার্চ নোটস অব দ্য আমেরিকান অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটিতে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়। গবেষণাপত্রের সহলেখক ও স্পেনের মাদ্রিদের কমপ্লুতেন্সে বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিদ কার্লোস দে লা ফুয়েন্তে মার্কোস বলেন, ‘এর উৎস নিয়ে এখনো আমাদের কাছে প্রকৃত কোনো সূত্র নেই, কেবল অনুমান করা যায়।

যদিও ২০২৫ পিএন ৭ পৃথিবীর সঙ্গে এখন তাল মিলিয়ে চলছে, এটি স্থায়ী কোনো সঙ্গী নয়। এটি একসময় অন্য কোথাও চলে যাবে। জ্যোতির্বিদদের ধারণা, এটি হয়তো আরও ৬০ বছর পৃথিবীর আশপাশে থাকবে।

পৃথিবীর আছে নানা ধরনের উপগ্রহ। কিছু থাকে মিনি-মুন (ছোট চাঁদ), যা পৃথিবীকে ঘিরে কক্ষপথে ঘোরে। তবে তারা বেশিক্ষণ থাকে না, সাধারণত কয়েক মাস। যেমন—২০২৪ সালে ধরা পড়া ২০২৪ পিটি ৫, যেটি নভেম্বরে পৃথিবী ছেড়ে চলে যায়।

তবে কোয়াসি-মুনের কক্ষপথ পৃথিবীকে ঘিরে নয়, বরং সূর্যকে ঘিরে। এরা পৃথিবীর সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলে শত শত বছর। এই দীর্ঘ সময় ধরে পৃথিবীর কাছে থাকায় বিজ্ঞানীরা এদের নিয়ে আগ্রহী। এ রকমই আরেক কোয়াসি-মুন কামোʻওআলেভাতে (Kamoʻoalewa) চীন তাদের তিয়ানওয়েন-২ নামের একটি মহাকাশযান পাঠানোর পরিকল্পনা করেছে। মিশনটির উদ্দেশ্য হলো সেই গ্রহাণু থেকে মাটি বা পাথরের নমুনা সংগ্রহ করে তা পৃথিবীতে এনে গবেষণা করা।

হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যান-স্টার্স পর্যবেক্ষণকেন্দ্র থেকে গত ২ আগস্ট ২০২৫ পিএন ৭ প্রথম দেখা যায়। পরে পুরোনো ছবিতে খুঁজে দেখা গেলে বোঝা যায়, এটি কয়েক বছর ধরেই আমাদের আশপাশে ছিল। এর ফলে জ্যোতির্বিদেরা এর কক্ষপথ নির্ধারণে সক্ষম হন।

গবেষণা অনুযায়ী, ১৯৫৭ সালেই ২০২৫ পিএন ৭ কোয়াসি-মুন কক্ষপথে প্রবেশ করে।

জ্যোতির্বিদদের হিসাব অনুযায়ী, ১৯৮০ সালের আগস্টে এটি পৃথিবীর সবচেয়ে কাছাকাছি আসে—প্রায় ২৫ লাখ মাইল দূরে (যা পৃথিবী-চাঁদের দূরত্বের দশ গুণ)। সর্বোচ্চ দূরত্ব হতে পারে ১ কোটি ১০ লাখ মাইল।

কম্পিউটার সিমুলেশন দেখিয়েছে, এটি মোট ১২৬ বছর পৃথিবীর সঙ্গে এভাবে চলবে এবং ২০৮৩ সালে পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবে।

২০২৫ পিএন ৭ সবচেয়ে ছোট কোয়াসি-মুন কি না—এর উত্তর এখনো নিশ্চিত নয়। সাধারণত একটি গ্রহাণুর আকার নির্ধারণ করা হয় তার উপরিভাগ কতটা সূর্যের আলো প্রতিফলিত করছে তার ওপর ভিত্তি করে। তবে ২০২৫ পিএন ৭ পর্যবেক্ষণ করা কঠিন হওয়ায় এর প্রকৃত আয়তন এখনো অজানা।

কার্লোস দে লা ফুয়েন্তে মার্কোস বলেন, ‘আমরা নিশ্চিতভাবে এর আকার বলতে পারি না।’ কিছু অনুমান বলছে, এটি ১৬০ ফুট পর্যন্ত দীর্ঘ হতে পারে। ভবিষ্যতের আরও পর্যবেক্ষণে হয়তো নিশ্চিত হওয়া যাবে এটি সবচেয়ে ছোট কোয়াসি-মুন কি না।

পৃথিবীর আশপাশের এসব গ্রহাণু, যদি তারা ধাক্কা না মারে, বিজ্ঞানীদের জন্য হয়ে ওঠে আশীর্বাদ। কারণ, এদের সাহায্যে আমাদের সৌরজগতের গঠনের ইতিহাস ও বিবর্তন বোঝা যায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দেড় বছরে পুলিশের যে ক্ষতি হয়েছে, ৫০ বছরেও পুনরুদ্ধার কঠিন: সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা

ফুটবলাররা পানি না গিলে কুলি করেন কেন

নেপাল পুলিশের স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র নেই, জেন-জি বিক্ষোভে গুলি ছুড়ল কারা—ষড়যন্ত্রের অভিযোগ কে পি শর্মার

জাপাকে যে দোষ দেওয়া হচ্ছে, তার বড় ভাগীদার বিএনপি-জামায়াত: আনিসুল

শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে জেগেছে বাংলাদেশের ফাইনালের স্বপ্ন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত