Ajker Patrika

মাঠে নামলেও সংঘাতে জড়াবে না বিএনপি

  • ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবি আদায়ের জন্য কর্মসূচি শুরু।
  • সরকারকে বেকায়দায় ফেলার মতো কোনো কর্মসূচি দেবে না।
  • আন্তর্জাতিক শ্রম দিবসে আজ রাজধানীতে সমাবেশ করবে।
রেজা করিম, ঢাকা 
আপডেট : ০১ মে ২০২৫, ১১: ৫৩
মাঠে নামলেও সংঘাতে জড়াবে না বিএনপি

জাতীয় সংসদ নির্বাচন হলে ক্ষমতার খরা কাটানোর আশাবাদী বিএনপি আগামী ডিসেম্বরে নির্বাচন দাবি করছে। দাবি আদায়ে মাঠের কর্মসূচি শুরু করেছে। করণীয় নিয়ে বিভিন্ন দলের সঙ্গে বৈঠক করছে। তবে ভোটের জন্য অপেক্ষা দীর্ঘ হলেও অন্তর্বর্তী সরকারকে বেকায়দায় ফেলার মতো কোনো কর্মসূচি দেবে না দলটি। কোনো সংঘাতেও জড়াবে না।

বিএনপির নীতিনির্ধারণী মহল এমন চিন্তাভাবনা করছে বলে কয়েকজন নেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে। তাঁরা বলছেন, বিএনপি এবং সমমনা দলগুলো ডিসেম্বরে নির্বাচন দাবি করলেও অন্তর্বর্তী সরকার ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন করার কথা বলছে। সরকার এখনো সুনির্দিষ্ট তারিখ না বলায় নির্বাচন নিয়ে দলে অনিশ্চয়তা ও অস্বস্তি রয়ে গেছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকের পরও সংশয় পুরোপুরি কাটেনি। এ অবস্থায় কাঙ্ক্ষিত সময়ে নির্বাচন আদায়ে সমমনা দল ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোকে নিয়ে মাঠের কর্মসূচি পালন শুরু হয়েছে।

বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সূত্র বলছে, সবদিক চিন্তা করেই ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান সবার জন্য মঙ্গলজনক মনে করছে বিএনপি। এ জন্যই বারবার সরকারের কাছে এ দাবি জানানো হচ্ছে। তবে দাবি আদায় করতে গিয়ে বিএনপি এমন কিছু করতে চায় না, যাতে সরকার বেকায়দায় পড়ে এবং দেশে খারাপ কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। যা তৃতীয় কোনো পক্ষ সুযোগ নিতে পারে। তাই নির্বাচন বিলম্বিত হলেও কর্মসূচি ঘিরে যেকোনো ধরনের সংঘাত এড়িয়ে চলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। গত সোমবার রাতে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়।

বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে ভূমিকা রাখা একাধিক নেতা এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। বিএনপির একটি সূত্র বলেছে, সোমবার রাতের সভার সিদ্ধান্তের অংশ হিসেবে দায়িত্বশীল নেতাদের কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকমান্ড। বৈঠকে পরিস্থিতি জটিল করতে পারে অথবা সরকারের সঙ্গে দলের সম্পর্কের অবনতি ঘটাতে পারে—এমন কোনো কিছু না করতে ও বলতে নেতাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আগ বাড়িয়ে কিছু বলা ও উসকানিমূলক কোনো বক্তৃতা-বিবৃতি দেওয়া থেকে দায়িত্বশীল নেতাদের বিরত থাকতে বলা হয়েছে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। এই সরকারের কাছে দ্রুততম সময়ে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান ও রোডম্যাপের দাবি জানাচ্ছে বিএনপি। তবে আট মাসেও রোডম্যাপ দেওয়া হয়নি। বিএনপি দ্রুত নির্বাচন চাইলেও একসময়ের জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামী প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচন চায়। এ ছাড়া জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) রাষ্ট্র সংস্কার ও ফ্যাসিস্টদের বিচার শেষে নির্বাচনের পক্ষে।

বিএনপির নেতারা বলছেন, ডিসেম্বর শীতকাল। দেশে বেশির ভাগ জাতীয় নির্বাচনই শীতকালে হয়েছে। এই নির্বাচনের জন্য শীতকালকেই আদর্শ সময় মনে করছে নির্বাচন কমিশনও। নতুন বছরের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হবে রমজান মাস। এরপর পবিত্র ঈদুল ফিতর। এপ্রিলে এসএসসি পরীক্ষা হওয়ার কথা। এ সময় নির্বাচন হলে পরীক্ষা পেছাতে হবে। মে মাসের শেষ দিকে পবিত্র ঈদুল আজহা। ফলে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা থেকে শুরু করে ভোট গ্রহণ পর্যন্ত যে দু-তিন মাস সময় প্রয়োজন, সেটা এ সময়ে বের করা সম্ভব নয়। এতে নির্বাচন জুনের পর চলে যেতে পারে। এসব চিন্তা থেকেই চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চাইছে বিএনপি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘চিন্তাভাবনা করেই আমরা ডিসেম্বরে নির্বাচন দাবি করেছি।’ ডিসেম্বরে নির্বাচন না হলে বিএনপি কী করবে—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা তো সরকারকে সময় দিয়েছি, নির্বাচনের দিন-তারিখ পরিষ্কার ঘোষণা দিতে হবে। একটা সময় পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করব। তারপর আমরা এই দাবিতে (ডিসেম্বরে নির্বাচন) হয়তো নানা রকম কর্মসূচি গ্রহণ করতে পারি।’

ডিসেম্বরে নির্বাচনের দাবি আদায়ে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণে গত ১৭ এপ্রিল থেকে বিভিন্ন দলের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করছে বিএনপি। এখন পর্যন্ত ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এলডিপি, সিপিবি, বাসদ, লেবার পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ, এনডিএম, গণফোরাম, বাম গণতান্ত্রিক ঐক্য এবং জন অধিকার পার্টি, এনপিপি, বাম গণতান্ত্রিক ঐক্য, জাতীয় পার্টি (বিজেপি), ন্যাপ ভাসানী, আমজনতার দল, পিপলস পার্টিসহ বিভিন্ন দলের সঙ্গে বৈঠক করেছে। এই দলগুলোও ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছে বিএনপি।

ডিসেম্বরের মধ্যে ভোটের দাবি আদায়ে সরকারকে চাপে রাখার কৌশল হিসেবে তরুণসমাজকে সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। এর অংশ হিসেবে সারা দেশে বিভাগীয় পর্যায়ে সেমিনার ও সমাবেশের কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপির তিন অঙ্গসংগঠন—জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল। ওই তিন সংগঠনের ঘোষণা অনুযায়ী, ৯ মে এসব কর্মসূচি শুরু হচ্ছে। এর আগে আজ ১ মে আন্তর্জাতিক শ্রম দিবসে ঢাকায় বড় সমাবেশের আয়োজন করেছে বিএনপি। বিএনপির সূত্র বলেছে, আজ বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মীর সমাবেশ ঘটানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘জনগণ ভোট দেওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে। এ ছাড়া নির্বাচিত সরকার না থাকায় নানা সমস্যাও দেখা দিচ্ছে। জনগণের আকাঙ্ক্ষা এবং বিদ্যমান পরিস্থিতি আমলে নিয়ে যত দ্রুত সম্ভব সরকারকে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করতে হবে। এ বিষয়টি বিএনপির পক্ষ থেকে সরকারকে বোঝানোর চেষ্টা করছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বাদ পড়েছেন বড় অনেক নেতা, চাপে বিএনপি

  • মনোনয়নবঞ্চিত নেতাদের কর্মী-সমর্থকদের ক্ষোভ, অসন্তোষ।
  • বঞ্চিতদের নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে, প্রার্থী বদলও হতে পারে।
  • মনোনীতদের ওপর নজর রাখা হচ্ছে, প্রয়োজনে নতুন সিদ্ধান্ত।
‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৮: ০৪
বাদ পড়েছেন বড় অনেক নেতা, চাপে বিএনপি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির ঘোষিত ২৩৭ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় নাম নেই দলটির অনেক বড় নেতার। মনোনয়নবঞ্চিত এসব নেতা এ নিয়ে মুখ খুলছেন না। তবে তাঁদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ হয়েছে।

দলীয় সূত্র বলেছে, মনোনয়নবঞ্চিতদের কর্মী-সমর্থকদের এই ক্ষোভ-বিক্ষোভে বিএনপি কিছুটা চাপে পড়েছে। গতকাল মঙ্গলবার মাদারীপুর-১ আসনের প্রার্থীর নাম স্থগিত করা হয়েছে। দলটির নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক নেতা বলছেন, মনোনয়নবঞ্চিতদের নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে, পর্যালোচনা হচ্ছে। এটি সম্ভাব্য তালিকা। প্রয়োজনে প্রার্থী বদল হতে পারে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত সোমবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য ৩০০ আসনের মধ্যে প্রবীণ-নবীনের সমন্বয়ে ২৩৭ আসনে দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা ঘোষণা করেন।

সম্ভাব্য এই প্রার্থী তালিকায় হেভিওয়েটদের মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, আসাদুজ্জামান রিপন, আসলাম চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, জয়নুল আবেদীন, আব্দুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, হুমায়ুন কবির, সাবেক সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, সিলেটের সাবেক মেয়র আরিফুল হক, জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস, মুন্সিগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবদুল হাইসহ আরও অনেকের নাম নেই।

দলীয় প্রার্থী তালিকায় বাদ পড়া এসব নেতা দলীয় সিদ্ধান্তের বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখালেও তাঁদের কর্মী-সমর্থকেরা সমালোচনা করছেন। সোমবার রাত থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় মনোনয়নবঞ্চিতদের কর্মী-সমর্থকেরা বিক্ষোভ করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতেও পছন্দের নেতা মনোনীত না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। বঞ্চিত নেতারা এ বিষয়ে গণমাধ্যমে মুখ খুলছেন না। তবে মনঃক্ষুণ্ন হওয়ার বিষয়টি ঘনিষ্ঠজনদের জানিয়েছেন। কারও কারও কথায় হতাশাও প্রকাশ পেয়েছে।

বঞ্চিত নেতারা বলছেন, প্রার্থী তালিকায় নাম না থাকার কারণ তাঁরা জানেন না। বুঝতেও পারছেন না। এক নেতা অভিমানের সুরে বলেন, ‘কিছু জানি না। এসব নিয়ে কথা বলতেও ইচ্ছা করছে না।’

বিগত একাদশ সংসদে বিএনপি থেকে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য ছিলেন রুমিন ফারহানা। সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় নাম না থাকা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গণমাধ্যমে তিনি বলেন, প্রকাশিত তালিকাটি প্রাথমিক পর্যায়ের। সময়ের সঙ্গে তালিকায় পরিবর্তন আসতে পারে। কেউ বাদ পড়তে পারেন, আবার নতুন কেউ যুক্তও হতে পারেন। তাই এই তালিকাকে চূড়ান্ত হিসেবে দেখা উচিত নয়।

বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে ভূমিকা রাখা একাধিক নেতা বলছেন, উল্লেখযোগ্যসংখ্যক হেভিওয়েট নেতা মনোনয়নের প্রাথমিক তালিকায় জায়গা পাননি। এসব নেতার বিপুলসংখ্যক কর্মী-সমর্থক রয়েছেন। কেউ কেউ নিজ নির্বাচনী এলাকার বাইরেও সব জায়গায় সমান জনপ্রিয় ও সুপরিচিত মুখ। তাঁদের নাম না থাকায় তীব্র সমালোচনা শুরু হওয়ায় দল চাপ অনুভব করছে। এ অবস্থায় তাঁদের নিয়ে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে, পর্যালোচনা করা হচ্ছে।

বাদ পড়া হেভিওয়েট নেতাদের মধ্যে কারও এখনো মনোনয়ন পাওয়ার সুযোগ আছে কি না, জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, সে জন্যই তো সম্ভাব্য (ঘোষিত তালিকা) বলা হয়েছে। যদি প্রয়োজন মনে করে, স্থায়ী কমিটি আবার অদল-বদল করতে পারে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরে চূড়ান্ত করা হবে।

এদিকে ২৩৭ আসনের ঘোষিত সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে মাদারীপুর-১ আসনের প্রার্থীর নাম গতকাল স্থগিত করেছে বিএনপি। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভীর সই করা বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এর ফলে সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে ৬৪টিতে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা বাকি রইল। দলীয় সূত্র বলছে, ৬৪ আসনের মধ্যে ৪০টি দেওয়া হতে পারে শরিকদের। বাকি আসনগুলো রাখা হয়েছে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের জন্য। এখনো দলের অনেক মনোনয়নপ্রত্যাশী আছেন, তাঁদের মধ্যে থেকে যোগ্যদের এসব আসনে মনোনয়ন দেওয়া হবে। পাশাপাশি বাদ পড়া হেভিওয়েট নেতাদেরও কেউ কেউ মনোনয়ন পেতে পারেন।

বিএনপির মনোনয়ন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক নেতা বলেন, সম্ভাব্য তালিকায় নাম ওঠা প্রার্থীদেরও চূড়ান্ত মনোনয়নের আগপর্যন্ত স্থান ধরে রাখতে চূড়ান্ত পরীক্ষা দিতে হবে। প্রাথমিকভাবে মনোনীতদের ওপর নজর রাখা হচ্ছে। ঘোষিত সম্ভাব্য প্রার্থীদের কারও আচরণে দলীয় নির্দেশের প্রতিফলন না ঘটলে তাঁর বিষয়ে দল নতুন সিদ্ধান্ত নিতে পারে। অন্যদিকে তাঁর বিকল্প হিসেবে যাঁকে দল ভেবে রেখেছে অথবা প্রাথমিকে বঞ্চিত হয়েছেন, এমন কারও ভাগ্য খুলে যেতে পারে।

দ্বিতীয় প্রজন্মের যাঁরা আছেন তালিকায়

বিএনপির মনোনীতদের এই প্রাথমিক তালিকায় দলের প্রয়াত ও প্রবীণ বেশ কয়েকজন নেতার সন্তানদেরও নাম রয়েছে। দ্বিতীয় প্রজন্মের এই প্রার্থীদের বেশির ভাগই অবশ্য রাজনীতিতে সক্রিয়। অনেকের আগেও নির্বাচন করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। কেউ কেউ সংসদেও গেছেন।

দ্বিতীয় প্রজন্মের এই তরুণ নেতারা হলেন—সাবেক স্পিকার জমির উদ্দিন সরকারের ছেলে মোহাম্মদ নওশাদ জমির (পঞ্চগড়-১), সাবেক প্রতিমন্ত্রী প্রয়াত ফজলুর রহমান পটলের মেয়ে ফারজানা শারমিন পুতুল (নাটোর-১), সাবেক এমপি আব্দুর রউফ চৌধুরীর ছেলে রাগীব রউফ চৌধুরী (কুষ্টিয়া-২), সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত তরিকুল ইসলামের ছেলে অনিন্দ্য ইসলাম অমিত (যশোর-৩), সাবেক এমপি সালাউদ্দিন আহমেদের ছেলে তানভীর আহমেদ রবিন (ঢাকা-৪), অবিভক্ত ঢাকার সাবেক মেয়র ও সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত সাদেক হোসেন খোকার ছেলে প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন (ঢাকা-৬), বিএনপির সাবেক মহাসচিব ও সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত কে এম ওবায়দুর রহমানের মেয়ে শ্যামা ওবায়েদ (ফরিদপুর-২), সাবেক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের মেয়ে চৌধুরী নায়াব ইউসুফ (ফরিদপুর-৩), সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রয়াত সাইফুর রহমানের ছেলে নাসের রহমান (মৌলভীবাজার-৩), বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিনের ছেলে মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন (চট্টগ্রাম-৫), বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রয়াত সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী (চট্টগ্রাম-৭), সাবেক বন ও পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর ছেলে মিশকাতুল ইসলাম চৌধুরী (চট্টগ্রাম-১৪), বিএনপির স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত আ স ম হান্নান শাহর ছেলে শাহ রিয়াজুল হান্নান (গাজীপুর-৪), সাবেক শিল্পমন্ত্রী শামসুল ইসলাম খানের ছেলে মঈনুল ইসলাম খাঁন (মানিকগঞ্জ-২), ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি আনওয়ারুল হোসেন খান চৌধুরীর ছেলে ইয়াসের খান চৌধুরী (ময়মনসিংহ-৯), সাবেক এমপি সিরাজুল হকের ছেলে মাহমুদুল হক রুবেল (শেরপুর-৩), সাবেক হুইপ প্রয়াত জাহেদ আলী চৌধুরীর ছেলে ইঞ্জিনিয়ার ফাহিম চৌধুরী (শেরপুর-২), শেরপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হযরত আলীর মেয়ে সানসিলা জেবরিন প্রিয়াঙ্কা (শেরপুর-১), সাবেক এমপি শহিদুল ইসলাম মাস্টারের ছেলে মেহেদী হাসান (ঝিনাইদহ-৩), গাজীপুরের সাবেক মেয়র আব্দুল মান্নানের ছেলে এম মঞ্জুরুল করিম রনি (গাজীপুর-২), সাবেক এমপি নুরুল ইসলাম মঞ্জুরের ছেলে আহমেদ সোহেল মঞ্জু সুমন (পিরোজপুর-২)।

নাসের রহমান মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি। তিনি ২০০১ সালের উপনির্বাচনে মৌলভীবাজার-৩ আসনের এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০০৬ সালের জানুয়ারিতে উপনির্বাচনে এমপি হয়েছিলেন মঈনুল ইসলাম খাঁন।

বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত। ফরিদপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ২০১৮ সালের নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন। শেরপুর ১, ২ ও ৩ আসনে মনোনীত প্রার্থীরাও ওই নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নে অংশ নিয়েছিলেন।

ফাঁকা রয়েছে যে আসনগুলো

বিএনপি যেসব আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণা করেনি, সেগুলো হলো—ঠাকুরগাঁও-২, দিনাজপুর-৫, নীলফামারী-১ ও ৩, লালমনিরহাট-২, বগুড়া-২, নওগাঁ-৫, নাটোর-৩, সিরাজগঞ্জ-১, পাবনা-১, ঝিনাইদহ-১, ২ ও ৪, যশোর-৫, নড়াইল-২, বাগেরহাট-১, ২ ও ৩, খুলনা-১, পটুয়াখালী-২ ও ৩, বরিশাল-৩, ঝালকাঠি-১, পিরোজপুর-১, টাঙ্গাইল-৫, ময়মনসিংহ-৪ ও ১০, কিশোরগঞ্জ-১ ও ৫, মানিকগঞ্জ-১, মুন্সিগঞ্জ-৩, ঢাকা-৭, ৯, ১০, ১৩, ১৭, ১৮ ও ২০, গাজীপুর-১ ও ৬, নরসিংদী-৩, নারায়ণগঞ্জ-৪, রাজবাড়ী-২, ফরিদপুর-১, মাদারীপুর-১ ও ২, সুনামগঞ্জ-২ ও ৪, সিলেট-৪ ও ৫, হবিগঞ্জ-১, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ ও ৬, কুমিল্লা-২ ও ৭, লক্ষ্মীপুর-১ ও ৪, চট্টগ্রাম-৩, ৬, ৯, ১১, ১৪ ও ১৫ এবং কক্সবাজার-২।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বড় দলের সঙ্গে আসন ভাগ, ছোট দল নিয়ে জোট ভাবনায় এনসিপি

অর্চি হক, ঢাকা 
আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ১১: ১৬
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য নিজেদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। অবশ্য কিছু আসন তারা ফাঁকা রেখেছে। জামায়াতে ইসলামী আগেই ঘোষণা দিয়ে প্রার্থী মাঠে নামালেও এখনো সে তালিকা চূড়ন্ত নয় বলে জানিয়েছে। এই অবস্থায় আলোচনা—জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) কি তাহলে বিএনপি বা জামায়াতের সঙ্গে জোটে যেতে পারে?

তবে এনসিপির নেতারা বলছেন, বিএনপি-জামায়াতের মতো বড় দলের সঙ্গে জোটে না গিয়ে; বরং তাদের কারও সঙ্গে আসন সমঝোতার কথা ভাবছেন তাঁরা। তাঁদের মতে, এর পেছনে দুটো কারণ রয়েছে। প্রথমত, বিএনপি ও জামায়াতের অতীতের কৃতকর্মের দায়ভার রয়েছে। জোটে গেলে এনসিপিকেও এর ভাগীদার হতে হবে। দ্বিতীয়ত, বড় দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হলে তাদের ছায়ায় ঢাকা পড়ার আশঙ্কা থাকে। জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া দল হিসেবে এনসিপি নিজেদের শক্তি পরখ করতে চায়। তাই বড় দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়ার বিপক্ষে এনসিপি নেতাদের একটি অংশ। তাঁরা বলছেন, জোটে না গিয়ে আসন সমঝোতা হতে পারে বড় দলের সঙ্গে। আর ছোট দলের সঙ্গে জোট গড়ে নিজেরাই একটা বড় শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে কি না, সে চেষ্টা করে দেখা যেতে পারে।

এনসিপির নেতারা বলছেন, এখন পর্যন্ত সব পথই খোলা রেখেছেন তাঁরা। দল থেকে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা দেওয়ার আগপর্যন্ত সব দলের সঙ্গেই তাই দর-কষাকষি চলতে পারে।

দলের মুখ্য সমন্বয়ক ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী এ বিষয়ে বলেন, ‘যারা সংস্কার বাস্তবায়নের পথে যাবে, আমরা তাদের সঙ্গেই জোটে যেতে পারি। তবে যারা সংস্কারের বিপক্ষে, তাদের সঙ্গে আমাদের জোট হবে না, এটা নিশ্চিত।’

এনসিপি সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি-জামায়াতসহ ছোট-বড় বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আগামী ৭ নভেম্বর দলের নির্বাহী কাউন্সিলের সভায় নির্বাচনী মনোনয়ন এবং জোট গঠনের সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, গণতন্ত্র মঞ্চের মধ্যের কয়েকটি দল নিয়ে এনসিপির জোটের আলোচনা চলছে। এবি পার্টিও এর সঙ্গে যুক্ত হতে পারে।

৭ নভেম্বরের পর প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা দিতে পারে এনসিপি। প্রাথমিকভাবে ৭০-১০০ জনের তালিকা দেওয়ার আলোচনা চলছে। জানা গেছে, সরকারে থাকা দুজন ছাত্র উপদেষ্টার মধ্যে একজন এনসিপির মনোনয়নে নির্বাচন করতে পারেন।

এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, ‘আমাদের প্রার্থী তালিকায় অনেক চমক আসছে। সামনের নির্বাচনে এনসিপি হবে গেম চেঞ্জার। যারা তথাকথিত ‘আন্ডার ডগ’ তারা ‘সুপার ডগদের’ পাশ কাটিয়ে কীভাবে এগিয়ে যায়, সেটাই এবার দেখা যাবে।’

এনসিপির আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম ইতিমধ্যে জানিয়েছেন ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার লক্ষ্য তাঁদের। তবে এনসিপির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নেতারা বলছেন, ৩০০ আসনে প্রার্থী না দিলেও ১৭০ থেকে ১৮০টিতে প্রার্থী থাকবে এনসিপির।

বিএনপি এনসিপির শীর্ষ কয়েকজন নেতার এলাকায় প্রার্থী না দেওয়ায় গুঞ্জন চলছে, বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা হয়েছে এনসিপির। তবে বিষয়টি সত্য নয় বলে জানিয়েছেন দলের যুগ্ম সদস্যসচিব সালেহউদ্দিন সিফাত। তিনি বলেন, ৩০০ আসনের মধ্যে বিএনপি ২৩৭টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। যে ৬৩টি আসনে এখনো প্রার্থী দেয়নি তার মধ্যে রয়েছে ঢাকা-৯, ঢাকা-১০, লক্ষ্মীপুর-১। এটা নিয়ে একটি প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলের ‘সি টিম’ এর নেতারা ‘পারসেপশন’ তৈরি করেছেন যে বিএনপি এই তিনটি আসন নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলমকে ছেড়ে দিয়েছে। কথিত ‘ভাই-ব্রাদার’ কোরামের অংশ না হওয়ায় নাকি হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলমকে বলি দিয়েছে এনসিপি। কারণ পঞ্চগড়-১ ও কুমিল্লার দেবিদ্বারে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এ বিষয়গুলো সত্য নয় বলে দাবি করেন সালেহ উদ্দিন সিফাত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিএনপি প্রার্থী না দেওয়ায় ভিপি নুরকে নিয়ে জল্পনা

পটুয়াখালী প্রতিনিধি
নুরুল হক নুর। ছবি: সংগৃহীত
নুরুল হক নুর। ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ২৩৭টি আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। কিন্তু পটুয়াখালী-৩ (গলাচিপা ও দশমিনা) আসনে বিএনপি কোনো প্রার্থী ঘোষণা না করায় রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন উঠেছে, আসনটি গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও সাবেক ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুরের জন্য ফাঁকা রাখা হয়েছে। গণঅধিকার পরিষদ বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ নির্বাচনে অংশ নিলে আসনটি নুরুল হকের জন্য ছেড়ে দেওয়া হবে।

এদিকে দলের প্রার্থী তালিকায় আসনটিতে কারও নাম না থাকায় স্থানীয় বিএনপি নেতাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।

জানা গেছে, পটুয়াখালী-৩ আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান মামুন মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। প্রার্থী তালিকায় নাম না থাকায় স্থানীয় নেতা-কর্মীরা হতাশা প্রকাশ করেছেন। তবে অনেকে এটি কৌশলগত পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন।

গত সোমবার বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২৩৭টি আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেন। পটুয়াখালীর চারটি আসনের মধ্যে দুটি শূন্য রাখা হয়।

দলের প্রার্থী ঘোষণার পর বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হাসান মামুন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লেখেন, ‘প্রিয় গলাচিপা-দশমিনাবাসী, আপনারা ধৈর্য ধরুন ও আশঙ্কামুক্ত থাকুন। যেকোনো পরিস্থিতিতে বিএনপি পটুয়াখালী-৩ আসনে প্রার্থী দেবে, ইনশা আল্লাহ।’

এর আগে আসনটিতে বিএনপি ও গণঅধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছিল। দুই পক্ষের মধ্যে একাধিকবার সংঘর্ষ ও বাগ্‌বিতণ্ডার ঘটনাও ঘটে। এমনকি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রশাসন একপর্যায়ে ১৪৪ ধারা জারি করেছিল।

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর আজকের পত্রিকাকে বলেন, গণঅধিকার পরিষদ নির্বাচনী জোটের বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে স্থিতিশীল রাজনীতি ও বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে ভবিষ্যতে নির্বাচনী জোট করলেও গণঅধিকার পরিষদের প্রার্থীরা নিজ দলের প্রতীক ট্রাক নিয়ে নির্বাচন করবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

তহবিল সংকটে ভুগছে তরুণদের দল এনসিপি

  • নিবন্ধন না থাকার সময়টাতে ক্রাউড ফান্ডিংয়ে সাড়া মিলেছে কম।
  • গত প্রায় পাঁচ মাসে তহবিলে গণচাঁদা এসেছে ৬৫ লাখ টাকা।
  • তৃণমূল কমিটি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনকে প্রয়োজনীয় আর্থিক সহযোগিতা করা যাচ্ছে না।
অর্চি হক, ঢাকা 
আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ১১: ৫৯
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) তহবিল সংকটে ভুগছে। দলের আয়ের অন্যতম উৎস ‘ক্রাউড ফান্ডিং’ বা গণচাঁদা সংগ্রহে আশানুরূপ সাড়া মিলছে না। রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন না থাকার সময়টাতে প্রবাসীরাও সরাসরি এনসিপিকে টাকা পাঠাতে পারছিলেন না। গতকাল দলটিকে শাপলা কলি প্রতীকে নিবন্ধন দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

নেতা-কর্মীদের কাছ থেকে আদায় করা চাঁদার টাকাতেই চলছে এনসিপির কার্যক্রম। কিন্তু যে পরিমাণ চাঁদা আসছে, তা দল পরিচালনার জন্য যথেষ্ট নয় বলে জানিয়েছেন অর্থ সংগ্রহের সঙ্গে সম্পৃক্ত নেতারা। এমন অবস্থায় নির্বাচন সামনে রেখে দলীয় তহবিল সংগ্রহে নতুন ক্যাম্পেইনের পরিকল্পনা করছে দলটি।

দলে তহবিল সংকটের কথা স্বীকার করেছেন এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব এবং কোষাধ্যক্ষ এস এম সাইফ মোস্তাফিজ। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের অফিসের ভাড়া এবং আনুষঙ্গিক খরচ নির্বাহী কাউন্সিলের সদস্যদের দেওয়া টাকায় চলছে। তবে আমরা বড় কোনো কর্মসূচি ও অন্য কিছু ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত তহবিল না থাকায় সমস্যায় পড়ছি। সারা দেশের তৃণমূল কমিটি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনকে প্রয়োজনীয় আর্থিক সহযোগিতা করা যাচ্ছে না।’

এনসিপির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীর বাংলামোটরে রূপায়ণ ট্রেড সেন্টারে দলের কেন্দ্রীয় অস্থায়ী কার্যালয়ের ভাড়াসহ আনুষঙ্গিক খরচ পাঁচ লাখ টাকা। এই ভবনের দুটি তলায় এনসিপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের অফিস রয়েছে। ভবনের ১৬ তলায় এনসিপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়। আর তৃতীয় তলা জাতীয় যুবশক্তিসহ এনসিপির অঙ্গ ও সহযোগী কয়েকটি সংগঠনের অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ১৬ তলার ভাড়া ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা, আর তৃতীয় তলার ভাড়া ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা। এ ছাড়া সার্ভিস চার্জ ও ইউটিলিটিস বাবদ মাসে গড়ে এক লাখ টাকা পরিশোধ করতে হয়। দলের নেতারাই এই টাকা দিয়ে থাকেন বলে জানান সাইফ মোস্তাফিজ।

দলের খরচ চালানোর জন্য তহবিল বাড়াতে গত অক্টোবরের শুরুতে এনসিপির নির্বাহী কাউন্সিলের সভায় আলোচনা হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, নির্বাহী কাউন্সিলের ৫৭ জন সদস্য প্রতি মাসে ন্যূনতম ১ হাজার টাকা করে দেবেন। এ ছাড়া প্রত্যেক সদস্য নিজেদের আত্মীয়, বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের মধ্যে থেকে পাঁচজনের তালিকা দেবেন, যাঁরা প্রতি মাসে দলীয় তহবিলে অনুদান দেবেন। তবে নির্বাহী কাউন্সিলের বেশির ভাগ সদস্যই পাঁচজনের পূর্ণাঙ্গ তালিকা দিতে পারেননি বলে জানা গেছে।

এনসিপির সদস্যদের জন্যও প্রতি মাসে চাঁদা দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। তবে অনেকে এটা দিতে পারেন না বলে জানান দলের নেতারা।

এনসিপির তহবিল সংকট সম্পর্কে দলের যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, ‘একদিকে প্রচারণা আছে, এনসিপি কিংস পার্টি, অন্যদিকে এনসিপিতে তহবিল সংকট। কিংস পার্টির এই ভ্রান্ত প্রচারণা এনসিপিকে পিছিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয়েছে। আশা করি, নিবন্ধন পাওয়ায় এখন দেশ-বিদেশে অবস্থান করা বাংলাদেশি নাগরিকেরা এনসিপিকে চালিয়ে নেওয়ার জন্য উদ্যোগ নেবেন।’

চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি নতুন দল হিসেবে এনসিপির যাত্রা শুরু হয়। দলটির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত তাদের অঙ্গসংগঠন ১৫টি। ৫০টি জেলা কমিটি ও ৩২৩টি উপজেলা কমিটি রয়েছে। সারা দেশে দলের মোট সদস্যসংখ্যা প্রায় ২২ হাজার। দল গঠনের পর থেকে প্রায় ৭০ হাজার সদস্য ফরম বিক্রি হয়েছে। প্রতিটি ফরমের দাম ১০০ টাকা। এই বাবদ ৭০ লাখ টাকা এসেছে।

ক্রাউড ফান্ডিংয়ে সাড়া কম

চলতি বছরের ৫ জুন ক্রাউড ফান্ডিং অর্থাৎ গণচাঁদা সংগ্রহের কাজ শুরু করে এনসিপি। সে সময় দলের সদস্যসচিব আখতার হোসেন জানান, ওয়েবসাইটে গিয়ে ব্যাংকিং চ্যানেলে ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এনসিপির কেন্দ্রীয় তহবিলে দলের শুভাকাঙ্ক্ষী, সদস্য ও সাধারণ মানুষ অনুদান দিতে পারবেন। একই সঙ্গে সরাসরি এনসিপির কার্যালয়ে রসিদ সংগ্রহ করার মধ্য দিয়ে অনুদান দেওয়া যাবে।

গত প্রায় পাঁচ মাসে এনসিপির তহবিলে ৬৫ লাখ টাকা গণচাঁদা এসেছে বলে জানিয়েছেন কোষাধ্যক্ষ সাইফ মোস্তাফিজ। তাঁর দেওয়া তথ্য এবং এনসিপির ক্রাউড ফান্ডিং ওয়েবসাইটের চিত্র বলছে, শুরুর দিকে গণচাঁদার ক্ষেত্রে ভালো সাড়া পাওয়া গেলেও পরে এতে ভাটা পড়েছে। গত তিন মাসে গণচাঁদা তহবিলে যুক্ত হয়েছে মাত্র ১ লাখ ১৩ হাজার টাকা।

এর মধ্যে ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত এক মাসে যুক্ত হয়েছে ৩৯ হাজার ৫৫৫ টাকা। ২০ অক্টোবর থেকে ২৭ অক্টোবর সাত দিনে জমা পড়েছে ১২ হাজার ২১৩ টাকা।

সর্বোচ্চ গণচাঁদা ঢাকা থেকে, সর্বনিম্নে গোপালগঞ্জ

এনসিপির ক্রাউড ফান্ডিং ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, গত তিন মাসে সর্বোচ্চ গণচাঁদা এসেছে ঢাকা জেলা থেকে। এই জেলার ৫২ জন দাতা মোট ৫১ হাজার ৩২২ টাকা দিয়েছেন। অন্যদিকে সবচেয়ে কম চাঁদা এসেছে গোপালগঞ্জ থেকে। গত তিন মাসে এই জেলা থেকে মাত্র একজন চাঁদা দিয়েছেন, যার পরিমাণ পাঁচ টাকা।

এনসিপিকে গণচাঁদা দেওয়ার ক্ষেত্রে শীর্ষ পাঁচ জেলা হলো—ঢাকা, সিরাজগঞ্জ, নীলফামারী, চট্টগ্রাম ও লক্ষ্মীপুর। আর সবচেয়ে কম গণচাঁদা এসেছে যথাক্রমে গোপালগঞ্জ, লালমনিরহাট, ঝালকাঠি, কুড়িগ্রাম ও বরিশাল জেলা থেকে। ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে, গত তিন মাসে প্রবাস থেকে চারজন মোট ২ হাজার ২৫০ টাকা পাঠিয়েছেন।

সাইফ মোস্তাফিজ জানান, দলের নিবন্ধন না থাকায় প্রবাসীরা সরাসরি এনসিপিকে টাকা পাঠাতে পারছিলেন না। এ কারণে ক্রাউড ফান্ডিংয়ের গতি কিছুটা মন্থর। এরপরেও যাঁরা টাকা দিয়েছেন, তাঁরা দেশে থাকা কারও মাধ্যমে পাঠিয়েছেন।

এনসিপির আর্থিক নীতিমালায় কী আছে

গত জুনে এনসিপি নিজেদের আর্থিক ও তহবিল পরিচালনার নীতিমালা প্রণয়ন করে। সেখানে বলা হয়েছে, সদস্যদের মাসিক ফি দিতে হবে। নীতিমালায় ‘১০০ টাকা ক্যাম্পেইন’ ও ‘ছোট দান, বড় স্বপ্ন’-এর উল্লেখ রয়েছে। এর মাধ্যমে সাধারণ জনগণের ক্ষুদ্র অনুদান সংগ্রহে জোর দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, যাতে দলের কাজে গণমানুষের ইচ্ছার প্রতিফলন হয়। পাশাপাশি ব্যক্তিগত অনুদান থেকে আয় আসবে। নীতিমালায় দলীয় আয়ের মধ্যে টি-শার্ট, মগ, বই বিক্রি, প্রশিক্ষণ কর্মসূচি, অনলাইন কোর্স থেকে আয়ের কথা বলা হয়েছে।

অনলাইন গণচাঁদার ক্ষেত্রে ওয়েবসাইটে ডিজিটাল রসিদের মাধ্যমে দেশের এবং দেশের বাইরে প্রবাসীরা অর্থ দিতে পারবেন। করপোরেট অনুদানের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষভাবে যাচাই করে শুধু বৈধ এবং নৈতিক উৎস থেকে টাকা গ্রহণযোগ্য হবে। কোনো কালোটাকা, অজানা উৎস, বিদেশি সরকার বা অপরাধসংশ্লিষ্ট অর্থ গ্রহণ একেবারে নিষিদ্ধ বলে নীতিমালায় উল্লেখ আছে। নীতিমালায় প্রতি ছয় মাস পর অভ্যন্তরীণ অডিট এবং প্রতিবছর বাহ্যিক নিরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সে হিসেবে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের আগে এনসিপির আয়-ব্যয়ের পূর্ণাঙ্গ হিসাব অর্থাৎ অভ্যন্তরীণ অডিট রিপোর্ট প্রকাশ করার কথা।

দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেন, ‘বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলো সাধারণত আয়-ব্যয়ের হিসাব প্রকাশ করে না। তবে আমরা স্বচ্ছতায় বিশ্বাস করি। নির্বাচনের আগেই আমাদের দলের এখন পর্যন্ত যত খরচ হয়েছে এবং প্রোগ্রামে আমাদের খরচ কীভাবে হয়েছে, সব বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট প্রকাশ করতে পারব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত