Ajker Patrika

বিএনপির চেয়ারপারসনের চিকিৎসা

খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে

  • অবস্থার অবনতি না হলেও খুব একটা উন্নতিও হয়নি খালেদা জিয়ার।
  • লন্ডনের হাসপাতালে কথা বলেছেন ছেলে তারেক রহমান।
  • ওই হাসপাতালেই আগের দফায় চিকিৎসা নেন তিনি।
  • কাতারের আমিরের এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাওয়ার চেষ্টা।
‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ১৯
খালেদা জিয়া। ফাইল ছবি
খালেদা জিয়া। ফাইল ছবি

উন্নত চিকিৎসার জন্য গুরুতর অসুস্থ বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দেশের বাইরে নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এর আগে দেশের বাইরে নিয়ে যেখানে চিকিৎসা করানো হয়েছিল, সেই লন্ডনের হাসপাতালেই তাঁকে পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এ ব্যাপারে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ আনুষঙ্গিক সব প্রস্তুতি সেরে রাখা হয়েছে। এখন বাকি বিষয় নির্ভর করছে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের ওপর। মেডিকেল বোর্ড সিদ্ধান্ত দিলেই তাঁকে দেশের বাইরে নেওয়া হবে বলে জানা গেছে।

গত ২৩ নভেম্বর থেকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে সংকটাপন্ন অবস্থায় চিকিৎসাধীন আছেন ৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে তাঁর ফুসফুসে সংক্রমণের কথা জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। তবে তাঁর কিডনির সমস্যাও দেখা দিয়েছে। কয়েক দিনের বিরতির পর তিনি শনিবার দু-একটি কথা বলেন বলে জানা গেছে।

চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে গতকাল রোববার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার আর অবনতি না হলেও খুব একটা উন্নতিও হয়নি। তার আগের দিন চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থা ‘সংকটময়’ বলে জানিয়েছিলেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি তখন আরও বলেছিলেন, ওই মুহূর্তে তাঁর শারীরিক অবস্থা বিদেশে নেওয়ার মতো স্থিতিশীল নয়।

দলীয় এবং খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠ কয়েকটি সূত্র বলেছে, দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়াকে সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এরপরেও প্রয়োজন অনুযায়ী তা যথেষ্ট বলে মনে করা হচ্ছে না। এ কারণেই তাঁকে দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার কথা চিন্তা করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের নাম আলোচনায় এলেও যুক্তরাজ্যের পক্ষেই সংশ্লিষ্টদের মত বেশি। খালেদা জিয়া লন্ডনের যে হাসপাতালে এর আগে চিকিৎসা নিয়েছেন, এবারও সেখানেই তাঁকে ভর্তি করানোর প্রক্রিয়া চলছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তাঁর স্ত্রী জোবাইদা রহমান ওই হাসপাতালে গিয়ে এরই মধ্যে সেখানকার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন। খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় যুক্ত এভারকেয়ার হাসপাতালের চিকিৎসকদের সঙ্গে লন্ডনের হাসপাতালটির চিকিৎসকের সঙ্গে কথাও বলিয়ে দিয়েছেন তারেক রহমান।

বিএনপির চেয়ারপারসনকে লন্ডনে পাঠাতে কাতার থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স বাংলাদেশে আনার প্রক্রিয়া চলছে বলেও জানিয়েছে একাধিক সূত্র। কাতারের আমিরের সৌজন্যে ওই সর্বাধুনিক এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করেই খালেদা জিয়াকে এর আগেরবার লন্ডনে পাঠানো হয়েছিল।

প্রস্তুতির বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেছেন, ‘বিদেশে নেওয়ার জন্য যে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো রয়েছে; যেমন ভিসা, যেসব দেশে যাওয়ার প্রয়োজন হতে পারে, সেসব দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করা এবং এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের বিষয় নিয়ে যথেষ্ট আলোচনা হয়েছে এবং এ ব্যাপারে মোটামুটি কাজ এগিয়ে আছে। অর্থাৎ যদি প্রয়োজন হয়, তাহলে তাঁকে দ্রুত নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে অবিলম্বে সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হবে।’

খালেদা জিয়া বেশ কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন রোগশোকের সঙ্গে যুদ্ধ করে চলেছেন। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসা গ্রহণের অনুমতি দিতে বারবার আবেদন করা হলেও তাতে সাড়া মেলেনি। আইনকানুনসহ নানা যুক্তি দেখিয়ে আবেদন নাকচ করা হয়। অবশেষে চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনে কারামুক্তির পর বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ পান বিএনপির চেয়ারপারসন। গত ৮ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য কাতারের আমিরের পাঠানো এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে চেপে যুক্তরাজ্যে যান খালেদা জিয়া। লন্ডনের হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে গত ৬ মে দেশে ফেরেন তিনি। দেশে ফেরার পরও কয়েকবার অসুস্থতার কারণে হাসপাতাল-বাড়ি করতে হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে।

‘মশাল রোড শো’ স্থগিত

খালেদা জিয়ার অসুস্থতার কারণে বিজয়ের মাসের শুরুর দিন আজকের পূর্বঘোষিত ‘মশাল রোড শো’ কর্মসূচি স্থগিত করেছে বিএনপি। গতকাল নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচি স্থগিত করার ঘোষণা দেন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। রিজভী বলেন, ‘আমি আজকে সর্বশেষ যতটুকু শুনেছি, তাঁর (খালেদা জিয়া) শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে এবং বিদেশে যাওয়ার ব্যাপারে মেডিকেল বোর্ড এখনো কোনো পরামর্শ দেয়নি। এই অবস্থায় আমাদের কর্মসূচি স্থগিত করেছি।’

দোয়া-প্রার্থনা অব্যাহত

খালেদা জিয়ার আরোগ্য কামনায় দেশব্যাপী দোয়া ও প্রার্থনা অব্যাহত রয়েছে। গতকালও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন মসজিদ-মন্দির এবং বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয়ে তাঁর জন্য দোয়া ও প্রার্থনা করা হয়েছে। দলের নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি সমাজের সর্বস্তরের সাধারণ মানুষও খালেদা জিয়ার জন্য দোয়া করছেন।

গতকাল বিকেলে নয়াপল্টনের আনন্দ কমিউনিটি সেন্টারে খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি। এই মাহফিলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ অনেকে অংশ নেন। মির্জা আব্বাস এ সময় বলেন, ‘আজকে দেশনেত্রী মারাত্মক অসুস্থ। অথচ, এই সময়ে তারেক রহমান আসতে পারছেন না। এ যে কত যন্ত্রণার, তা সন্তান ছাড়া কেউ বুঝবে না।’

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জনপ্রিয় খল অভিনেতা মনোয়ার হোসেন ডিপজল তাঁর ফেসবুকে খালেদা জিয়ার একটি ছবি পোস্ট করে তাঁর জন্য দোয়া চেয়েছেন।

গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্যোগে খালেদা জিয়ার রোগমুক্তির জন্য একটি বিশেষ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। বাদ জোহর বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন মসজিদে এই দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদসহ অনেকে এই দোয়া মাহফিলে অংশ নেন।

গতকাল রাতে খালেদা জিয়াকে দেখতে হাসপাতালে যান জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। তাঁর সঙ্গে ছিলেন ঢাকা-১৭ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী ডা. এস এম খালিদুজ্জামান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ