Ajker Patrika

পারিবারিক পরিচয় ও ভারত বিরোধিতার জন্য আমাকে আটকে রাখা হয়েছিল: আযমী

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
পারিবারিক পরিচয় ও ভারত বিরোধিতার জন্য আমাকে আটকে রাখা হয়েছিল: আযমী

জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযমের ছেলে হওয়ায় এবং ভারত বিরোধী অবস্থান নেওয়ায় দীর্ঘ ৮ বছর ‘আয়নাঘর’ এ বন্দী করে রাখা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহিল আমান আযমী। সংবাদ সম্মেলনে তিনি আয়নাঘরে নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। একই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে প্রকৃত শহীদের সংখ্যা পুনর্নির্ধারণ এবং জাতীয় সংগীতের নতুন করে লেখার দাবি দাবি জানিয়েছেন তিনি। 

আজ মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম জুমে যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন তিনি। 

সংবাদ সম্মেলনে আব্দুল্লাহিল আমান আযমী বলেন, ‘মূলত দুটি কারণে আমাকে ধরে রেখেছিল। এক-আমার পৈতৃক ও পারিবারিক পরিচয়। দুই-আমি ভারত বিরোধী। এটা স্পষ্ট যে, বিদেশি চক্রের গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তারা আমাকে আটকে রেখেছিল।’ 

দেশের পররাষ্ট্রনীতি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যে বন্ধু আমার ক্ষতি করে, তাকে শত্রু ছাড়া আমি বন্ধু ভাবতে পারি না।  ভারত যত দিন বন্ধুসুলভ আচরণ করবে তত দিন আমি বুকে জড়িয়ে ধরব, ভারত যদি শত্রুর মতো আচরণ করে তাহলে আমি তাকে শত্রুই ভাবব এবং শত্রু বলে যাব। গুপ্ত বন্দীশালাতে থাকাকালীন আমাকে একজন বলেছে, আপনি বিদেশি শক্তির গভীর ষড়যন্ত্রের শিকার। এই কারণে আমাকে বারবার প্রশ্ন করা হয়েছে-আপনি ভারতের বিরুদ্ধে সোচ্চার কেন।’ 

দীর্ঘদিন বন্দী থাকার ফলে দাঁত, চোখসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন বলে জানান আব্দুল্লাহিল আমান আযমী। বক্তব্যের শুরুতে তিনি ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ, আহত ও ছাত্র-জনতার আন্দোলনের যারা আহত, নিহত হয়েছেন তাদের প্রতি শোক, কৃতজ্ঞতা ও শুভেচ্ছা জানান। তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদের প্রকৃত সংখ্যা নির্ধারণ এবং জাতীয় সংগীত ও সংবিধান পরিবর্তনের দাবি জানান। 

আযমী বলেন, ‘শেখ মুজিবুর রহমান কোনো রকম জরিপ ছাড়াই মুক্তিযুদ্ধের শহীদের সংখ্যা প্রকাশ করেন। একটা যুদ্ধে কত মানুষ মারা গেলেন, তার কোনো সঠিক সংখ্যা জাতি এখনো জানে না। একটা জরিপ হয়েছিল-যেখানে ২ লাখ ৮৬ হাজার শহীদের সংখ্যা জানা গেলেও, শেখ মুজিবুর রহমান ৩ লাখ বলতে গিয়ে ৩ মিলিয়ন বলে।’ 

বর্তমান জাতীয় সংগীত স্বাধীন বাংলাদেশের অস্তিত্বের পরিপন্থী উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটা দুই বাংলা এক করার জন্য বঙ্গভঙ্গ রদের সময়কে উপস্থাপন করে। যে সংগীত দুই বাংলা এক করার জন্য করা হয়, সেটা কীভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হতে পারে? এই সংগীত ১৯৭১ সালে ভারত আমাদের ওপরে চাপিয়ে দিয়েছিল। জাতীয় সংগীত করার জন্য অনেক গান রয়েছে। এই সরকারের উচিত একটা নতুন কমিশন গঠন করে একটি নতুন জাতীয় সংগীত তৈরি করা।’ 

সংবিধানে কী ধরনের পরিবর্তন চান এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সংবিধানে মানবাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে অন্যায় হলে আইনের আশ্রয় নেওয়ার সুযোগ নাই, এটা বাতিল করতে হবে। মানবাধিকার পরিপন্থী যতগুলো আইন আছে, সেগুলো সবকিছু বাতিল করতে হবে। নতুন করে সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে। এ দেশের ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের আবেগের প্রতিফলন হতে হবে।’ 

তবে বাংলাদেশ একটি মুসলিম রাষ্ট্র উল্লেখ করে আযমী বলেন, ‘এখানে প্রায় ৯০ ভাগের বেশি মুসলমান রয়েছে। মুসলমানদের আল্লাহর আইনের বিরোধী কোনো সংবিধান থাকতে পারবে না। আমাদের সংবিধানে লেখা আছে, জনগণ সার্বভৌমত্বের মালিক। কিন্তু জনগণ সার্বভৌমত্বের মালিক নয়। সার্বভৌমত্বের মালিক একমাত্র আল্লাহ। আল্লাহর আইনের বিরোধী কোনো আইন পাস হতে পারে না। জনগণ সার্বভৌমত্বের মালিক হতে পারে না। সুতরাং সংবিধানে একটা আইন সংযোজন করে আমাদের মুসলিম চেতনার আইন করতে হবে।’ 

রাজনীতিতে সক্রিয় হবেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি এখনো চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছি। রাজনীতি নিয়ে আমি কারও সঙ্গে কোনো আলোচনা করিনি। আমি দেশপ্রেমিক, আমি দেশের জন্য কাজ করতে চাই। আল্লাহ তায়ালা যেন আমাকে দেশের মানুষের সেবা করার সুযোগ দেন এবং সাহায্য করেন।’ 

সংবাদ সম্মেলনে আয়নাঘরে দীর্ঘ ৮ বছর তাকে নানান শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের বিভিন্ন ঘটনা তুলে ধরেন আযমী। তিনি জানান, গত ৬ আগস্ট দিবাগত রাতে তাকে আয়নাঘর থেকে মুক্তি দেওয়া হবে বলে জানানো হয়। পরে সেদিন ভোরে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল এলাকা তাকে নামিয়ে দেওয়া হয়। গাড়িতে সকলের মুখ কাপড়ে ঢাকা ছিল। তারা তাকে ঢাকায় ফিরতে পাঁচ হাজার টাকা ধরিয়ে দেন। পরে তিনি ঢাকাগামী একটি বাসে উঠে এক যাত্রীর মোবাইল থেকে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরিবারের লোকজন তাঁকে ঢাকার টেকনিক্যাল মোড় থেকে বাসায় নিয়ে যান। বাসায় নেওয়ার একদিন পরে আযমী অজ্ঞান হয়ে যান। তারপর থেকে একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত