Ajker Patrika

সেনানিবাসে বৈঠক নিয়ে হাসনাতের সঙ্গে দ্বিমত করে সারজিসের পোস্ট

আপডেট : ২৩ মার্চ ২০২৫, ১৬: ৩৫
হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলম। ছবি: সংগৃহীত
হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলম। ছবি: সংগৃহীত

সেনানিবাসে ১১ মার্চের বৈঠক নিয়ে নতুন করে কথা বলেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। আজ রোববার সকালের দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্টে ‘১১ মার্চ সেনাপ্রধানের সাথে সাক্ষাৎ নিয়ে আমার জায়গা থেকে কিছু সংশোধন, সংযোজন ও বিয়োজন’—শীর্ষক একটি স্ট্যাটাসের অবতারণা করেন তিনি।

সারজিস আলম বলেন, ‘সেদিন (১১ মার্চ) আমি এবং হাসনাত (আব্দুল্লাহ) সেনাপ্রধানের সাথে গিয়ে কথা বলি। আমাদের সাথে আমাদের দলের গুরুত্বপূর্ণ আরেকজন সদস্যেরও যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু যাওয়ার পূর্ব মুহূর্তে ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে তিনি যেতে পারেননি। প্রথমেই স্পষ্ট করে জানিয়ে রাখি, সেদিন সেনানিবাসে আমাদের ডেকে নেওয়া হয়নি বরং সেনাপ্রধানের মিলিটারি অ্যাডভাইজারের সাথে যখন প্রয়োজন হতো তখন ম্যাসেজের মাধ্যমে আমাদের কিছু জিজ্ঞাসা ও উত্তর আদান-প্রদান হতো।’

সারজিস আলম তাঁর স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘যেদিন সেনাপ্রধান পিলখানা হত্যাকাণ্ড দিবসে অনেকটা কড়া ভাষায় বক্তব্য দিলেন এবং বললেন “এনাফ ইজ এনাফ” তখন আমি সেনাপ্রধানের মিলিটারি অ্যাডভাইজরকে জিজ্ঞাসা করি—আপনাদের দৃষ্টিতে অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু দেখছেন কিনা? সেনাপ্রধানের বক্তব্য তুলনামূলক স্ট্রেইট ফরওয়ার্ড (straight-forward) এবং হার্শ (harsh) মনে হচ্ছে। তিনি আমাকে বললেন, তোমরা কি এ বিষয়ে সরাসরি কথা বলতে চাও? আমি বললাম—বলা যেতে পারে। এরপরে সেদিন সেনাপ্রধানের সাথে আমাদের সাক্ষাৎ হয়। সেনাভবনে সেই রুমে আমরা তিনজনই ছিলাম। সেনাপ্রধান, হাসনাত এবং আমি।’

সারজিস আলম বলেন, ‘মানুষ হিসেবে যেকোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তির অভিমতকে একেকজন একেকভাবে অবজার্ভ করে। হাসনাত সেদিন তাঁর জায়গা থেকে যেভাবে সেনাপ্রধানের বক্তব্যকে অবজার্ভ ও রিসিভ করেছে এবং ফেসবুকে লিখেছে, আমার সে ক্ষেত্রে কিছুটা দ্বিমত আছে।’

তিনি বলেন, ‘আমার জায়গা থেকে আমি সেদিনের বক্তব্যকে সরাসরি “প্রস্তাব” দেওয়ার আঙ্গিকে দেখি না বরং “সরাসরি অভিমত প্রকাশের” মতো করে দেখি। “অভিমত প্রকাশ” এবং “প্রস্তাব দেওয়া” দুটি বিষয়ের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। যদিও পূর্বের তুলনায় সেদিন সেনাপ্রধান অনেকটা স্ট্রেইট-ফরওয়ার্ড ভাষায় কথা বলছিলেন। পাশাপাশি রিফাইন্ড আওয়ামী লীগের জন্য “চাপ দেওয়ার” যে বিষয়টি এসেছে, সেখানে “চাপ দেওয়া হয়েছে” এমনটি আমার মনে হয়নি। বরং রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ না আসলে দীর্ঘ মেয়াদে দেশের পরিস্থিতি এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে সমস্যার সৃষ্টি হবে, সেটা তিনি অতি আত্মবিশ্বাসের সাথে বলছিলেন।’

আওয়ামী লীগ ইস্যুতে হাসনাত আব্দুল্লাহর বক্তব্য প্রসঙ্গে সারজিস আলম তাঁর স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘হাসনাতের বক্তব্যে যে টপিকগুলো এসেছিল, যেমন—রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ, সাবের হোসেন, শিরিন শারমিন চৌধুরী, সোহেল তাজ, এসব নিয়ে কথা হয়েছিল। আওয়ামী লীগ ফিরে আসবে কি না, এই ইলেকশনে আওয়ামী লীগ থাকলে কি হবে, না থাকলে কি হবে, আওয়ামী লীগ এই ইলেকশন না করলে কবে ফিরে আসতে পারে কিংবা আদৌ আসবে কি না—এসব বিষয় নিয়ে কথা হয়েছিল। এসব সমীকরণে দেশের ওপরে কি প্রভাব পড়তে পারে, স্থিতিশীলতা কিংবা অস্থিতিশীলতা কোন পর্যায়ে যেতে পারে সেসব নিয়ে কথা হয়েছিল।’

হাসনাত আব্দুল্লাহর বক্তব্যের টোন প্রসঙ্গে সারজিস আলম বলেন, ‘কিন্তু যেই টোনে হাসনাতের ফেসবুক লেখা উপস্থাপন করা হয়েছে, আমি মনে করি কনভারসেশন ততটা এক্সট্রিম ছিল না। তবে অন্য কোনো একদিনের চেয়ে অবশ্যই স্ট্রেইট-ফরওয়ার্ড এবং সো-কনফিডেন্ট ছিল। দেশের স্থিতিশীলতার জন্য রিফাইন্ড আওয়ামী লীগের ইলেকশনে অংশগ্রহণ করা যে প্রয়োজনীয়, সে বিষয়ে সরাসরি অভিমত ছিল।’

এনসিপির এই মুখ্য সংগঠক আরও বলেন, ‘হাসনাত তাঁর বক্তব্যে আরেকটি বিষয় উল্লেখ করেছে—“আলোচনার একপর্যায়ে বলি, যেই দল এখনো ক্ষমা চায় নাই, অপরাধ স্বীকার করে নাই, সেই দলকে আপনারা কীভাবে ক্ষমা করে দিবেন! অপর পক্ষ থেকে রেগে গিয়ে উত্তর আসে, “ইউ পিপল নো নাথিং। ইউ ল্যাক উইজডোম অ্যান্ড এক্সপেরিয়েন্স। উই আর ইন দিজ সার্ভিস ফর এটলিস্ট ফোর্টি ইয়ার্স। তোমার বয়সের থেকে বেশি”।’

উল্লিখিত বক্তব্য প্রসঙ্গে সারজিস বলেন, ‘এই কনভারসেশনটা হয়েছে, এটা সত্য। কিন্তু আমাদের রুমে বসে হওয়া কনভারসেশন হঠাৎ এককভাবে শেষ করে যখন সেনাপ্রধান উঠে দাঁড়ালেন এবং রুম থেকে কথা বলতে বলতে বের হয়ে এসে যখন আমরা গাড়িতে করে ফিরব, তার পূর্বে বিদায় নেওয়ার সময় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এই কনভারসেশন হয়েছে। সেনাপ্রধান রেগে যাওয়ার সুরে এই কথা বলেছেন বলে আমার মনে হয়নি, বরং বয়সে তুলনামূলক বেশ সিনিয়র কেউ জুনিয়রদের যেভাবে অভিজ্ঞতার ভারের কথা ব্যক্ত করে, সেই টোন এবং এক্সপ্রেশনে বলেছেন।’

হাসনাত আব্দুল্লাহর সমর্থনে স্লোগান দেওয়া প্রসঙ্গে এনসিপির এই নেতা বলেন, “‘হাসনাত না ওয়াকার”—এই ন্যারেটিভ এবং স্লোগান আমি প্রত্যাশা করি না। হাসনাতের জায়গা ভিন্ন এবং সেনাপ্রধান জনাব ওয়াকারুজ্জামানের জায়গাও ভিন্ন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টি অন্যান্য রাজনৈতিক দল কিংবা জনগণকে মুখোমুখি দাঁড় করানোও কখনো প্রাসঙ্গিক নয়। পাশাপাশি সেনাপ্রধানের পদত্যাগ নিয়ে যে কথা দু-এক জায়গায় আসছে সেটিও আমাদের বক্তব্য নয়।’

স্ট্যাটাসে সারজিস আরও বলেন, ‘এসবের পাশাপাশি আমি আমার ব্যক্তিগত জায়গা থেকে একটি অভিমত প্রকাশ করতে চাই—আমি ভুল হতে পারি, কিন্তু এই মুহূর্তে আমার এটিই সঠিক মনে হচ্ছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাথে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের কেউ না কেউ যোগাযোগ রক্ষা করে। সেই প্রাইভেসি তারা বজায় রাখে। আমাদের সাথে সেনাপ্রধানের যে বিষয়গুলো নিয়ে কথা হয়েছে, সেগুলোর সাথে আমাদের সরাসরি দ্বিমত থাকলেও আমরা সেগুলো নিয়ে আমাদের দলের ফোরামে বিস্তারিত আলোচনা করতে পারতাম, সিদ্ধান্ত নিতে পারতাম, সে অনুযায়ী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে পারতাম। কিংবা অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনার মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে আওয়ামী লীগের যেকোনো ভার্সনের বিরুদ্ধে এখনকার মতোই রাজপথে নামতে পারতাম। অথবা অন্য রাজনৈতিক দলগুলো সরাসরি আমাদের সাথে ঐকমত্যে না পৌঁছালে আমরা শুধুমাত্র আমাদের দলের পক্ষ থেকেই এই দাবি নিয়ে রাজপথে নামতে পারতাম।’

তিনি বলেন, ‘কিন্তু যেভাবে এই কথাগুলো ফেসবুকে স্ট্যাটাসের মাধ্যমে এসেছে এই প্রক্রিয়াটি আমার সমীচীন মনে হয়নি বরং এর ফলে পরবর্তীতে যেকোনো স্টেকহোল্ডারের সাথে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা আস্থার সংকটে পড়তে পারে।

আমার এই বক্তব্যে আমার সহযোদ্ধা হাসনাতের বক্তব্যের সাথে বেশ কিছু ক্ষেত্রে দ্বিমত এসেছে। এটার জন্য অনেকে আমার সমালোচনা করতে পারেন, কিন্তু আমি বিশ্বাস করি আমাদের ব্যক্তিত্ব স্রোতে গা ভাসানোর মতো কখনোই ছিল না। ছিল না বলেই আমরা হাসিনা রেজিমের বন্দুকের সামনে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলাম।’

হাসনাতের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে সারজিস আলম বলেন, ‘আজও কেউ হাসনাতের দিকে বন্দুক তাক করলে তার সামনে দাঁড়িয়ে যাওয়ার কমিটমেন্ট আমাদের আছে। কিন্তু সহযোদ্ধার কোনো বিষয় যখন নিজের জায়গা থেকে সংশোধন দেওয়ার প্রয়োজন মনে করি তখন সেটাও আমি করব। সেই বিবেকবোধটুকু ছিল বলেই ৬ জুন প্রথম যেদিন শহীদ মিনারে কয়েকজন কোটা প্রথার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যায়, তাদের মধ্যে সামনের সারিতে আমরা ছিলাম।’

তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি আমাদের এই বিবেকবোধের জায়গাটুকুই আমাদের সঠিক পথে রাখবে। আত্মসমালোচনা করার এই মানসিকতাই আমাদের কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে নিয়ে যাবে। জুলাই গণহত্যা, বিডিআর হত্যাকাণ্ড, শাপলা চত্বরের হত্যাকাণ্ড ঘটানো “আওয়ামী লীগের যেকোনো ভার্সনের” বাংলাদেশের রাজনীতিতে আসার বিরুদ্ধে। আমাদের লড়াই অব্যাহত থাকবে। Truth shall prevail. ’

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৭-৮ নভেম্বর প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করতে পারে এনসিপি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৪ নভেম্বর ২০২৫, ০০: ৫৭
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) শিগগির প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করবে। ৭- ৮ নভেম্বরের দিকে এই তালিকা ঘোষণা করা হতে পারে বলে এনসিপি সূত্রে জানা গেছে।

আজ সোমবার সন্ধ্যার পর বেশ কিছু সংবাদমাধ্যমে এনসিপির প্রার্থী তালিকা ঘোষণাসংক্রান্ত সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি সত্য নয় বলে জানিয়েছেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা।

এনসিপির যুগ্ম আহবায়ক সারোয়ার তুষার এ বিষয়ে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা কোনো প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করিনি। তবে ৭-৮ নভেম্বরের দিকে প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করতে পারি। এটা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নেতা বলেন, প্রাথমিকভাবে ৭০-১০০ জনের নাম ঘোষণা করা হতে পারে। কিছু আলাপ চলছে। তবে সেটা এখনো চূড়ান্ত নয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

টিভির ব্রেকিং নিউজে এনসিপির প্রার্থী তালিকা নিয়ে যা বললেন তাজনুভা জাবীন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
তাজনুভা জাবীন। ছবি: সংগৃহীত
তাজনুভা জাবীন। ছবি: সংগৃহীত

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য ২৩৭ আসনের বিপরীতে সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। আজ সোমবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

এর কিছু সময় পরই দেশের কিছু বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে এনসিপির প্রার্থী ঘোষণার খবর প্রচার করা হয়। এ নিয়ে শুরু হয় নানা গুঞ্জন। এ বিষয়ে মুখ খুলেছেন এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক তাজনুভা জাবীন।

এক ফেসবুক পোস্টে জাবীন বলেছেন, ‘যাদের প্রার্থী তালিকা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা হলো, তাদেরটা ব্রেকিং নিউজে জায়গা পেল না, কিন্তু ঠিক একই দিন একই সময় যারা আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি, তাদের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা নিয়ে ব্রেকিং নিউজ যাচ্ছে।’

জাবীন আরও লেখেন, ‘ব্রেকিং নিউজের পেছনের রাজনীতি কী? কী বয়ান মানুষের কাছে দেওয়ার জন্য কারা এত ব‍্যাকুল?’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গুম নিয়ে কাজ করা সানজিদা তুলিকে প্রার্থী করছে বিএনপি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
সানজিদা তুলি। ছবি: সংগৃহীত
সানজিদা তুলি। ছবি: সংগৃহীত

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকার একটি আসনে গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্বজনদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’-এর সমন্বয়ক সানজিদা ইসলামকে (তুলি) প্রার্থী করছে বিএনপি। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারগুলোকে নিয়ে এ সংগঠন গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন সানজিদা ইসলাম। তাঁর ভাই সাজেদুল ইসলাম সুমন ছিলেন ২৫ নম্বর ওয়ার্ড (ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন) বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। ২০১৩ সালের ৪ ডিসেম্বর রাতে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে তাঁকে তুলে নিয়ে যায় র‌্যাবের একটি দল। এখনো তাঁর খোঁজ পাওয়া যায়নি।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আজ সোমবার বিকেলে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৩৭ আসনে দলের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন।

মিরপুর, শাহ আলী ও দারুস সালাম এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা-১৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে সানজিদা ইসলামের নাম ঘোষণা করা হয়। এর বাইরে ঢাকা-১ (দোহার–নবাবগঞ্জ) আসনে খন্দকার আবু আশফাক, ঢাকা-২ (কেরানীগঞ্জ ও সাভারের কিছু অংশ) আসনে আমানউল্লাহ আমান, ঢাকা-৩ (কেরানীগঞ্জের কিছু অংশ) আসনে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ঢাকা-৪ (শ্যামপুর–কদমতলী) আসনে তানভীর আহমেদ রবিনকে প্রার্থী করছে বিএনপি।

ঢাকা-৫ (যাত্রাবাড়ী–ডেমরা) আসনে নবী উল্লাহ নবী, ঢাকা-৬ (সূত্রাপুর, ওয়ারী, গেন্ডারিয়া ও কোতোয়ালির একাংশ) আসনে ইশরাক হোসেন, ঢাকা-৮ (মতিঝিল, পল্টন, শাহবাগ, শাহজাহানপুর ও রমনা) আসনে মির্জা আব্বাস উদ্দিন আহমেদ, ঢাকা-১১ (বাড্ডা, ভাটারা ও রামপুরা) আসনে এম এ কাইয়ুম, ঢাকা-১২ (তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, হাতিরঝিল ও শেরেবাংলা নগরের একাংশ) আসনে সাইফুল আলম নীরব, ঢাকা-১৫ (শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া, কাফরুল ও মিরপুরের একাংশ) আসনে শফিকুল ইসলাম খান, ঢাকা-১৬ (রূপনগর ও পল্লবী) আসনে আমিনুল হক এবং ঢাকা-১৯ (সাভার পৌরসভা, সেনানিবাসসহ সাভারের একাংশ) আসনে দেওয়ান মোহাম্মদ সালাউদ্দিনকে প্রার্থী করছে বিএনপি।

জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে আজ ২৩৭ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। যেসব আসনে প্রার্থী দেওয়া হয়নি, সেগুলোর মধ্যে ঢাকার বেশ কয়েকটি আসন রয়েছে। সেগুলো হলো ঢাকা-৭ (লালবাগ, চকবাজার, বংশাল এবং কামরাঙ্গীরচর ও কোতোয়ালির একাংশ), ঢাকা-৯ (সবুজবাগ, খিলগাঁও ও মুগদা), ঢাকা-১০ (ধানমন্ডি, নিউমার্কেট, কলাবাগান ও হাজারীবাগ), ঢাকা-১৩ (মোহাম্মদপুর, আদাবর ও শেরেবাংলা নগরের একাংশ), ঢাকা-১৭ (ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকা, গুলশান ও বনানী), ঢাকা-১৮ (বৃহত্তর উত্তরার ছয়টি থানা) এবং ঢাকা-২০ (ধামরাই উপজেলা)।

এসব আসনের প্রার্থী পরে ঘোষণা করা হবে বলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, যেসব আসনে প্রার্থী দেওয়া হয়নি, সেগুলো পরে ঘোষণা করা হবে। এর বাইরে কিছু আসন শরিকদের ছাড়া হবে।

প্রার্থী ঘোষণার আগে আজ দুপুর সাড়ে ১২টায় জরুরি বৈঠকে বসেন বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। প্রায় পাঁচ ঘণ্টাব্যাপী চলা এ বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত ও চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে করণীয় নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়।

আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এর আগে ডিসেম্বরের শুরুর দিকে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জন্মস্থানে প্রথমবার ভোটের লড়াইয়ে নামছেন খালেদা জিয়া

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ২৩: ৪৬
দিনাজপুর শহরে খালেদা জিয়ার জন্ম ও শৈশবের বেড়ে ওঠা হলেও তিনি কখনো এই এলাকার জনপ্রতিনিধি হতে প্রার্থী হননি। ছবি: এএফপি
দিনাজপুর শহরে খালেদা জিয়ার জন্ম ও শৈশবের বেড়ে ওঠা হলেও তিনি কখনো এই এলাকার জনপ্রতিনিধি হতে প্রার্থী হননি। ছবি: এএফপি

দিনাজপুর শহরে খালেদা জিয়ার জন্ম ও শৈশবের বেড়ে ওঠা হলেও রাজনৈতিক জীবনে তিনি কখনো এই এলাকার জনপ্রতিনিধি হতে প্রার্থী হননি। সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত দিনাজপুর-৩ আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তাঁর বড় বোন খুরশীদ জাহান হক।

নিজের জন্মস্থানে এবার প্রথম প্রার্থী হচ্ছেন খালেদা জিয়া। ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে তিনটি সংসদীয় আসন থেকে প্রার্থী হচ্ছেন তিনি। দিনাজপুর-৩ আসন ছাড়াও ফেনী-১ ও বগুড়া-৭ আসন থেকে ধানের শীষের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে খালেদা জিয়া পাঁচটি আসনেও নির্বাচন করেছেন; কখনো হারেননি।

আজ সোমবার (৩ নভেম্বর) বিকেলে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ২৩৭ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

খালেদা জিয়ার পৈতৃক নিবাস ফেনীতে। কিন্তু জন্মের পর দিনাজপুর শহরেই তাঁর শৈশব কেটেছে; এ শহরেই তিনি পড়াশোনা করেছেন। তবে তাঁর স্বামী বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের পৈতৃকবাড়ি বগুড়ায়।

সে হিসেবে বগুড়া ‘বিএনপির ঘাঁটি’ হিসেবে পরিচিত দলের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই। ১৯৯১ সাল থেকে খালেদা জিয়া শ্বশুরবাড়ি বগুড়ার দুটি আসনে—বগুড়া-৬ (সদর) ও ৭ (গাবতলী ও শাহজাহানপুর)—নির্বাচন করে আসছেন; কখনো হারেননি।

বগুড়া-৭ আসন থেকে বিগত ১২টি নির্বাচনের মধ্যে বিএনপি ছয়বার (এর মধ্যে খালেদা জিয়া পাঁচবার), জাতীয় পার্টি তিনবার, আওয়ামী লীগ দুবার ও স্বতস্ত্র (বিএনপির সমর্থনে) প্রার্থী একবার জয় পেয়েছেন। খালেদা জিয়া চারবার বগুড়া-৬ আসন নিজের জন্য রেখে বগুড়া-৭ আসন উপনির্বাচনের জন্য ছেড়ে দিয়েছেন। একবার (২০০৮) উপনির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন মওদুদ আহমদ। বাকি তিনবার (১৯৯১, ১৯৯৬-জুন ও ২০০১) জয়ী হয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু।

এবার বগুড়া-৬ আসনে ধানের শীষে প্রথম প্রার্থী হয়েছেন খালেদা জিয়ার ছেলে ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

গত ১১ অক্টোবর ঢাকার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বগুড়ার সাতটি আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সভা ছিল। সে সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন তারেক রহমান। সভায় ২২ জন নেতা উপস্থিত ছিলেন।

সেই সভার তিন দিন পর পাঁচজনকে ফোন করে নির্বাচনী প্রচার জোরদার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তবে বগুড়া-৬ ও ৭ নিয়ে কাউকে ফোন দেওয়া হয়নি। তখন থেকেই স্থানীয় নেতা-কর্মীদের ধারণা ছিল, হয়তো এ দুটি আসনে ‘জিয়া পরিবারের’ কেউ প্রার্থী হবেন।

ফেনী-১: ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলা নিয়ে গঠিত ফেনী-১ আসন। ১৯৭৩ সালের পর থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বিগত ৫০ বছরের নির্বাচনে বেশির ভাগ সময় বিএনপির প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন।

বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এই আসন থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ফেনী জেলায় খালেদা জিয়ার আদি পৈতৃক নিবাস। ফলে নির্বাচন এলেই এখানে স্লোগান ওঠে—‘ফেনীর মেয়ে খালেদা, গর্ব মোদের আলাদা’।

১৯৯১, ১৯৯৬, ১৯৯৬ (জুন), ২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে বেগম খালেদা জিয়া এই আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে খালেদা জিয়া আসনটি ছেড়ে দিলে উপনির্বাচনে বিজয়ী হন তাঁর ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার।

২০১৪ সালে বিএনপি ভোট বর্জন করেছিল। ২০১৮ সালে দণ্ডিত হওয়ায় খালেদা জিয়া এখানে প্রার্থী হতে পারেননি। তখন প্রার্থী হয়েছিলেন রফিকুল ইসলাম মজনু।

দিনাজপুর-৩: আসনটি সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত। ১২টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এখানে বিএনপি ১৯৭৯, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে জয়লাভ করে। ১৯৭৯ সালে প্রথমবার বিএনপির প্রার্থী হিসেবে রেজওয়ানুল হক ইদু চৌধুরী জয়লাভ করেন। পরের দুবার জয় পান খুরশীদ জাহান হক।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত