Ajker Patrika

রাষ্ট্র সংস্কারে জামায়াতের ১০ প্রস্তাব 

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ১৬: ২৯
রাষ্ট্র সংস্কারে জামায়াতের ১০ প্রস্তাব 

রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ১০টি খাত সংস্কারের প্রস্তাব তুলে ধরেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। আইন ও বিচার, সংসদ, নির্বাচনব্যবস্থা, আইনশৃঙ্খলা, জনপ্রশাসন, দুর্নীতি, সংবিধান, শিক্ষা ও সংস্কৃতি, পররাষ্ট্র ও ধর্মসংক্রান্ত সংস্কারে নির্দিষ্ট প্রস্তাব জানিয়েছে দলটি। 

আজ বুধবার রাজধানীর গুলশানে হোটেল ওয়েস্টিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব প্রস্তাবনা তুলে ধরেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান। আমিরের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন দলের নায়েবে আমির সৈয়দ মুহাম্মদ আবদুল্লাহ তাহের। 

আইন ও বিচার খাত সংস্কার প্রসঙ্গে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগের জন্য সুষ্ঠু ও সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। বিচার বিভাগ থেকে দ্বৈত শাসন দূর করতে হবে। বিচার বিভাগ নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথককরণের কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। আইন মন্ত্রণালয় থেকে আলাদা করে সুপ্রিম কোর্টের অধীনে পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। 

জামায়াতের প্রস্তাবে বলা হয়, ন্যায়বিচার নিশ্চিতের স্বার্থে বিদ্যমান আইনসমূহের প্রয়োজনীয় সংশোধনী ও গণমানুষের মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ আইন প্রণয়ন করতে হবে, সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩ ও সব কালো আইন বাতিল করতে হবে, বিচারের দীর্ঘসূত্রতা কমাতে বিভাগীয় পর্যায়ে হাইকোর্ট বেঞ্চ প্রতিষ্ঠা করতে হবে, নিম্ন আদালতের যথাযথ স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে পৃথক বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠন করতে হবে, সব ফৌজদারি মামলা তদন্তের জন্য স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে, দেওয়ানি মামলা সর্বোচ্চ পাঁচ বছর এবং ফৌজদারি মামলাসমূহ সর্বোচ্চ তিন বছরের মধ্যে নিষ্পত্তি করার বিধান করতে হবে। 

সংসদবিষয়ক সংস্কার প্রসঙ্গে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, সংসদের প্রধান বিরোধী দল থেকে একজন ডেপুটি স্পিকার মনোনীত করতে হবে, সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার নেতৃত্বে ছায়া মন্ত্রিসভা গঠনের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, সংসদে বিরোধীদলীয় সদস্যদের পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে। 

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক ব্যবস্থা (পিআর পদ্ধতি) চালু করতে হবে জানিয়ে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার প্রসঙ্গে জামায়াতের আমির বলেন, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কেয়ারটেকার (তত্ত্বাবধায়ক) সরকারব্যবস্থা সংবিধানে স্থায়ীভাবে সন্নিবেশিত করতে হবে। নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন দেশে প্রত্যাখ্যাত ইভিএম ভোটিং ব্যবস্থা বাতিল করতে হবে, কোনো সরকারি চাকরিজীবী চাকরি ছাড়ার তিন বছরের মধ্যে কোনো ধরনের নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। 

স্থানীয় সরকার নির্বাচন নির্দলীয়ভাবে সম্পন্ন করার ব্যবস্থা করতে হবে জানিয়ে জামায়াতের শীর্ষ নেতা বলেন, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ২০০৮ সালে প্রবর্তিত রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন প্রথা বাতিল করতে হবে, নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য কমিশনার নিয়োগের জন্য প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা ও প্রধান বিচারপতির সমন্বয়ে সার্চ কমিটি গঠিত হবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন একাধিক দিনে অনুষ্ঠিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

আইনশৃঙ্খলা সংস্কারে পুলিশ ও র‍্যাবকে ভিন্ন উপায়ে সংস্কারের দাবি জানিয়েছে জামায়াত। দলের আমির বলেন, পুলিশ আইন পরিবর্তন এবং পুলিশের জন্য একটি পলিসি গাইডলাইন তৈরি করতে হবে। পুলিশ সদস্যদের নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি এবং চাকরিচ্যুতির জন্য স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন করতে হবে, পুলিশ ট্রেনিং ম্যানুয়ালের মধ্যে ধর্মীয় শিক্ষা ও নৈতিক অনুশাসন অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান তিনি। এ ছাড়া পুলিশের মধ্যে মারণাস্ত্রের ব্যবহার বাতিল, রিমান্ড চলাকালে জিজ্ঞাসাবাদের ক্ষেত্রে আসামি পক্ষের আইনজীবীর উপস্থিতি এবং নারী আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাঁদের অভিভাবকের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে বলেও দাবি করেন তিনি। 

র‍্যাব সংস্কার প্রসঙ্গে জামায়াতের আমির বলেন, র‍্যাবের সামগ্রিক কার্যক্রম মনিটরিংয়ের জন্য সেল গঠন করতে হবে। কোনো র‍্যাব সদস্য আইনবহির্ভূত কাজে জড়িত হলে এই সেল তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করবে। মিডিয়ার ক্ষেত্রে নীতিমালা প্রণয়ন ও অনুসরণ নিশ্চিত করতে হবে। 

জনপ্রশাসন সংস্কার প্রসঙ্গে শফিকুর রহমান বলেন, জনবল নিয়োগ, বদলি, পদায়নে তদবির, সুপারিশ ও দলীয় আনুগত্যের পরিবর্তে যোগ্যতা, দক্ষতা ও সততাকে প্রাধান্য দিতে হবে, যেকোনো চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি থেকে শুরু করে নিয়োগ পর্যন্ত সময়ক্ষেপণ না করে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে, সরকারি চাকরিতে আবেদন বিনা মূল্যে করতে হবে, চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা আগামী দুই বছরের জন্য ৩৫ বছর ও পরবর্তী বয়সসীমা স্থায়ীভাবে ৩৩ বছর এবং অবসরের বয়সসীমা ৬২ বছর নির্ধারণ করতে হবে, চাকরির আবেদনে সকল ক্ষেত্রে বয়সসীমার বৈষম্য নিরসন করতে হবে। চাকরিতে বিরাজমান আন্তক্যাডার বৈষম্য দূর করতে হবে এবং বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে সরকারি চাকরিতে যারা প্রশ্নপত্র ফাঁস, দুর্নীতি, জালিয়াতি ও দলীয় বিবেচনায় চাকরি পেয়েছে, তাদের নিয়োগ বাতিল করতে হবে। 

দুর্নীতি দমনের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে জামায়াতের আমির বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনে পরীক্ষিত সৎ, ন্যায়পরায়ণ, দক্ষ ও যোগ্য লোক নিয়োগ দিতে হবে, রাষ্ট্রের সব সেক্টরে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে, দুর্নীতি দমন কমিশনকে শক্তিশালী করে নিরপেক্ষভাবে কাজ করার স্বাধীনতা দিতে হবে, বিগত সরকারের আমলে দেশ থেকে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার উপযুক্ত বিধান প্রণয়ন ও তা কার্যকর করার পদক্ষেপ নিতে হবে, মন্ত্রণালয়ভিত্তিক দুর্নীতি দমন কমিশন গঠন করতে হবে, দুর্নীতি দমন কমিশনের আইন সংস্কার, জনবল ও পরিধি বৃদ্ধি করতে হবে, রাষ্ট্রীয় ও জনগণের সম্পদ অবৈধভাবে ভোগ–দখলকারীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সুস্পষ্ট আইন প্রণয়ন করতে হবে। 

সংবিধান সংস্কার প্রসঙ্গে জামায়াতের আমির বলেন, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য রাখার বিধান সংযুক্ত করতে হবে। একই ব্যক্তি পরপর দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না। 

শিক্ষা ও সংস্কৃতি সংস্কার প্রসঙ্গে দলটি বলেছে, ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত মাধ্যমিক এবং একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিকে উচ্চমাধ্যমিক হিসেবে বলবৎ রাখতে হবে, অষ্টম শ্রেণির পাবলিক পরীক্ষা বাতিল করে আগের পরীক্ষা পদ্ধতি ফিরিয়ে আনতে হবে, পাঠ্যপুস্তকে ২০২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানের বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরতে হবে, সব শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকে ধর্মীয় মূল্যবোধবিরোধী উপাদান বাদ দিতে হবে। 

এ ছাড়া স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসাপ্রতিষ্ঠা, বিদ্যমান স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসাগুলোকে সরকারীকরণ, প্রতিটি জেলায় কমপক্ষে একটি করে কামিল মাদ্রাসাকে সরকারীকরণ, কারিগরি ও ভকেশনাল শিক্ষাকে সাধারণ শিক্ষার মূলধারায় যুক্ত করার আহ্বান জানান জামায়াতের আমির। একই সঙ্গে উচ্চশিক্ষার জন্য স্থায়ী শিক্ষা কমিশন গঠনের প্রস্তাব জানিয়েছেন তিনি। 

সংস্কৃতি সংস্কারের ক্ষেত্রে দলটির প্রস্তাব—জাতির ঐতিহাসিক আন্দোলন-সংগ্রাম ও মূল্যবোধের আলোকে বিভিন্ন ধরনের চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে হবে, জাতির ঐতিহাসিক দিনগুলোকে স্মরণীয় করার লক্ষ্যে বিশেষ দিবস হিসেবে ঘোষণা করে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় তা পালনের ব্যবস্থা করতে হবে। নাটক, সিনেমাসহ বিভিন্ন বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানগুলো অশ্লীলতামুক্ত করতে হবে। নাটক, সিনেমা ও বিভিন্ন কনটেন্টে বিভিন্ন ধর্ম, বিশেষ করে ইসলামকে হেয় করা থেকে বিরত থাকার বিধান প্রণয়ন করতে হবে। 

পররাষ্ট্রবিষয়ক সংস্কারের ক্ষেত্রে দলটি জানিয়েছে, পররাষ্ট্রীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে সব গণতান্ত্রিক দেশের সঙ্গে সাম্য ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে পারস্পরিক সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। এ বিষয়ে দলের আমির বলেন, জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় চীন, নেপাল, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার আন্তর্জাতিক নদীসমূহের পানিবণ্টন চুক্তির উদ্যোগ নিতে হবে। আসিয়ানভুক্ত দেশসমূহের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বৃদ্ধি করতে হবে। অন্যান্য রাষ্ট্রের সঙ্গে বিগত সরকারের আমলে সম্পাদিত সব চুক্তি রিভিউ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে একটি রিভিউ কমিশন গঠনের প্রস্তাব করেন তিনি। এ ছাড়াও সার্ক পুনর্গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে বলে জানান তিনি। 

তা ছাড়া ধর্ম মন্ত্রণালয় সংস্কারের প্রস্তাব জানিয়েছে জামায়াত। দলটি বলছে, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশকে (ইফাবা) রাষ্ট্রের কল্যাণে অর্থবহ প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমিকে স্বতন্ত্র সংস্থা বা দপ্তরে রূপান্তর করতে হবে, যাতে তারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে। ইসলামিক মিশনকে সরাসরি মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্বতন্ত্র সংস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। হজ ব্যবস্থাপনার জন্য স্বতন্ত্র অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা করতে হবে। হজ ও ওমরাহর খরচ কমানোর জন্য কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনে একটি গবেষণাপ্রতিষ্ঠানে প্রতিষ্ঠা করতে হবে, যেখানে দেশের বরেণ্য আলেমরা সম্পৃক্ত থাকবেন। বিতর্কিত সব বই বাতিল ও প্রকাশনা বন্ধ করতে হবে। সব ধর্মাবলম্বীর ধর্মীয় কার্যক্রম পরিচালনার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। 

সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে জামায়াতে আমির বলেন, ‘শেখ হাসিনা ও তার দোসররা যারা পালিয়ে গেছে, তাদের ফিরিয়ে এনে বিচার নিশ্চিত করতে হবে।’

আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে অংশ না নিলে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে শফিকুর রহমান বলেন, ‘২০১৪, ’১৮ ও ’২৪ সালে আওয়ামী লীগ কি নির্বাচন চেয়েছিল? তারাই যদি নির্বাচন আসতে না চায়—তাহলে তাদের কীভাবে নিয়ে আসবে, তাদের ওপর নির্বাচন চাপিয়ে দেওয়া ঠিক হবে কি না? এটা জনগণ ঠিক করবে।’ 

সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, আ ন ম শামসুল ইসলাম, এ টি এম মাছুম, সাইফুল আলম খান মিলন, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, হামিদুর রহমান আযাদ, মাওলানা আবদুল হালিম, এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, নূরুল ইসলাম বুলবুল, মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নির্বাচনী প্রচারণার তোড়ে বন্ধ হবে ‘ঋণ করে ঘি খেতে’ চাওয়াদের অপপ্রচার: সালাহউদ্দিন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
সালাহউদ্দিন আহমদ। ফাইল ছবি
সালাহউদ্দিন আহমদ। ফাইল ছবি

ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর ধানের শীষের প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণার তোড়ে ‘যারা ঋণ করে ঘি খেতে চাচ্ছে’, তাঁদের সমস্ত অপপ্রচার বন্ধ হয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। আজ শনিবার (৮ নভেম্বর) রাজধানীতে এক সভায় জামায়াতে ইসলামীকে উদ্দেশ্য করে এই মন্তব্য করেন তিনি।

‘৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের ৫০ বছর উপলক্ষে’ আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির নীতি–নির্ধারণী ফোরামের এই সদস্য। কাকরাইলে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ভবনের মাল্টিপারপাস হলে সভার আয়োজন করেছিল ছাত্রদল।

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে হতে হবে, এর কোনো বিকল্প নাই। কারণ একটা গণভোটের আয়োজন করা এর আগে, একই ইস্যুতে, যেখানে ফলাফল একই হবে। সেজন্য ব্যয়বহল শুধু নয়, একটা বিশাল আয়োজন আরেকটি অনুষ্ঠানের জন্য করা— এটা অগ্রহণযোগ্য, অযৌক্তিক। শুধুমাত্র আমরা জাতীয় ঐক্যের স্বার্থে, জনসম্মতি নেয়ার জন্য এই গণভোটের প্রস্তাব করেছিলাম এবং সেই গণভোটটা জাতীয় সংসদ নির্বাচনের একই দিনে অনুষ্ঠিত হবে ইনশাআল্লাহ।’

অনুষ্ঠানে উপস্থিত নেতা–কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করলে কতদিন থাকে? বাকি এক মাস এক সপ্তাহ। এর মধ্যে আমরা সবাই নির্বাচনী মাঠে যার যার নির্বাচনী এলাকায় আমাদের ধানের শীষের প্রার্থীর পক্ষে সবাই আমরা প্রচারণায় নেবে যাব। এই প্রচারণার তোড়ে যাঁরা ঋণ করে ঘি খেতে চাচ্ছে, তাঁদের সমস্ত অপপ্রচার বন্ধ হয়ে যাবে।’

এর আগে তফসিল ঘোষণার বিষয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান থাকবে— নির্বাচন কমিশনকে যেভাবে অনুরোধ করেছেন আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য, সেটা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ডিসেম্বরের প্রথমার্ধেই আশা করি আপনারা তফসিল ঘোষণার জন্য নির্বাচন কমিশনকে আহ্বান জানাবেন। অবশ্য আপনাদের সরকারের আহ্বানের আর কোনো প্রয়োজনও নাই। কারণ নির্বাচন কমিশনকে যে ইন্সট্রাকশন আপনারা দিয়েছেন সেই হিসাবে নির্বাচন কমিশন বলেছে, ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তারা আনুমানিক দুমাস সময় হাতে রেখে তফসিল ঘোষণা করবেন।’

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব। কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছিরের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়,কলেজ, মহানগর ও কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জুলাই সনদ–গণভোট

এত শক্তি প্রদর্শন আপনাদের মানায় না—অন্তর্বর্তী সরকারকে কড়া হুঁশিয়ারি সালাহউদ্দিনের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ২২: ১০
এত শক্তি প্রদর্শন আপনাদের মানায় না—অন্তর্বর্তী সরকারকে কড়া হুঁশিয়ারি সালাহউদ্দিনের

জুলাই সনদ ও গণভোট নিয়ে সৃষ্ট মতভেদ নিরসনে রাজনৈতিক দলগুলোকে অন্তর্বর্তী সরকারের সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার তীব্র সমালোচনা করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে এই সরকার নিরপেক্ষতা লঙ্ঘন করে একটি দলের পক্ষ নিয়ে তাদেরকে দিয়ে আলোচনার প্রস্তাব দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের এই নেতা।

সরকারের বেঁধে দেওয়া সময়সীমার আগের দিন আজ শনিবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বিকেলে কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে আলোচনা সভার আয়োজন করে ছাত্রদল।

স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘সরকারের উদ্দেশে বলতে চাচ্ছি, আমরা মনে করেছিলাম, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রেফারির ভূমিকা পালন করবে। অন্তর্বর্তী সরকার অত্যন্ত নিরপেক্ষভাবে তার দায়িত্ব পালন করবেন; তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকা পালন করবেন। অথচ এখন আপনারা রেফারি হয়ে হাত দিয়ে একটা গোল দিয়ে দিয়েছেন। এখন বলছেন, রাজনৈতিক দলগুলোকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে সাত দিনের মধ্যে, না হলে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।’

দলগুলোকে এভাবে সময় বেঁধে দেওয়ার এখতিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের নেই বলে মনে করেন সালাহউদ্দিন আহমদ। সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা কোনো নির্বাচিত সরকার নয়, এটা আপনারা যেন সব সময় ইয়াদ (মনে) রাখেন। আপনাদের এ রকম কোনো এখতিয়ার নাই, আমাদেরকে ডিকটেট (আদেশ) করার যে, সাত দিনের ভিতরে আপনার সিদ্ধান্ত না হলে আমরা সিদ্ধান্ত নেব। এত শক্তি প্রদর্শন আপনাদের বোধ হয় মানায় না!’

সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বিএনপি যোগাযোগ রাখে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সেটা এনসিপি হোক, জামায়াত হোক বা অন্যান্য পার্টি হোক। সবার সাথে আমরা গণতান্ত্রিক কালচার (সংস্কৃতি) হিসেবে রাজনৈতিক যোগাযোগ এবং আলাপ–আলোচনা, সম্পর্ক রাখব। কিন্তু কোনো বিষয়ে আলোচনা করার জন্য কোনো রেফারির ভূমিকায় কোনো দলকে দিয়ে আপনারা আহ্বান জানাবেন ইনডাইরেক্টলি, সেটা বোধ হয় সঠিক হচ্ছে না।’

জামায়াতে ইসলামীর উদ্দেশে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আপনারা যাঁরা ১৯৭১ সালে উল্টা দিকে যাত্রা করেছিলেন, ১৯৪৭ সালে বিপরীত দিকে যাত্রা শুরু করেছিলেন, জাতীয় পার্টির হাত ধরে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সাহেবের সহচর হয়েছিলেন, আপনারা আবার যদি আওয়ামী লীগের হাত ধরে পুনরুত্থান চান, কী পরিণতি হবে, আল্লাহ মালুম! আপনারা যা শুরু করেছেন, তাতে করে উৎসাহিত হবে পতিত ফ্যাসিস্ট। তাতে উৎসাহিত হবে বাংলাদেশে অন্য যেকোনো রকমের অগণতান্ত্রিক শক্তি।

‘কিন্তু সে জন্য যদি আপনারা বলতে চান যে, আপনারা খেতে পারবেন না, সে জন্য বাড়া ভাতে ছাই ছিটিয়ে দিবেন। সেটা বাংলাদেশের মানুষ আর কখনো গ্রহণ করবে না। সেই সুযোগ দেবে না।’

জামায়াতের নায়েবে আমিরের দুদিন আগের বক্তব্যকে ইঙ্গিত করে সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, ‘আপনারা ঘি খেতে চান, খান। কিন্তু আমরা বাংলাদেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য রাজপথের এই ময়দানকে অগণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আর উত্তপ্ত হতে দেব না। ঠিক। আপনারা বলেছেন, ১১ তারিখ পর্যন্ত আলটিমেটাম। আলটিমেটাম দিচ্ছেন সরকারকে? তো সরকার তো আপনাদের পক্ষে সুপারিশ দিয়েছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন তো আপনারা যা চান, তাই দিয়েছে। সে জন্য আপনারা তার সাথে সুর মিলিয়ে তাই কথা বলছেন।’

দেশে গণভোটের কোনো প্রয়োজন নেই বলে স্পষ্ট অবস্থান ব্যক্ত করে এই বিএনপির নেতা বলেন, এই গণভোটের মধ্য দিয়ে আইন প্রণীত হয়ে যাবে। এই গণভোটটার মধ্য দিয়ে সংবিধান পরিবর্তিত হয়ে যাবে। কিন্তু একটা নৈতিক বাধ্যবাধকতা সংসদ সদস্যদের ওপরে এবং আগামী সংসদের ওপরে আরোপিত হবে যে, জনগণ চায় এই সংস্কার বাস্তবায়ন হোক অথবা চায় না। নির্বাচনের দিন ছাড়া গণভোটের বিকল্প নেই।

১৩ নভেম্বর বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের ঘোষিত ‘লকডাউন’ কর্মসূচি প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘১৩ তারিখ বাংলাদেশে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে একটি রায় (রায়ের তারিখ) ঘোষণা হতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। সেদিন নাকি লকডাউন সারা বাংলাদেশে। মানুষ বলে না যে, পাগলের সুখ মনে মনে। এই এক বছরের ভেতরে কীভাবে আপনাদের মনে হলো যে, ফ্যাসিস্ট পতিত শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শক্তির পক্ষে বাংলাদেশে লড়া, আপনারা আহ্বান করবেন আর জনগণ সাড়া দেবে? যদি দুঃসাহস থাকে আপনারা আসেন। বাংলাদেশের মানুষ আপনাদেরকে কীভাবে আপ্যায়ন করে দেখব। আমরা তো চাই, আপনারা এসে বিচারের মুখোমুখি হোন।’

দেশ ক্রমেই অস্থিতিশীল হচ্ছে বলে মন্তব্য করে আলোচনা সভায় তিনি বলেন, ‘ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার হচ্ছে। সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে অনেক কিছু বলা হচ্ছে। কারা রাজপথকে উত্তপ্ত করে রাখতে চায়, কারা গত এক বছর দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে ভারতকে সুযোগ করে দিচ্ছে, ইতিহাসে তাদের কথা লেখা থাকবে। ভারত চায় অস্থিতিশীল বাংলাদেশ। ভারতের সে প্রত্যাশা যারা পূরণ করতে চায়, তাদেরকে আমরা ক্ষমা করব না।’

ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন সভাপতি রাকিবুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক আমানুল্লাহ আমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় প্রমুখ।

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সালাহউদ্দিন আহমদ সরকারকে নিরপেক্ষতার সঙ্গে সুষ্ঠু, সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য যাবতীয় কর্মকাণ্ড শুরু করার আহ্বান জানান। অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমরা আপনাদেরকে সমর্থন করেছি, করব ওই সীমারেখার মধ্যে। আর যদি মনে করেন, আরেকটি রাজনৈতিক দল দিয়ে আমাদেরকে আহ্বান জানাবেন আলোচনার জন্য।

‘তারা কারা? অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা যদি আমাদেরকে আহ্বান জানায় কোনো বিষয়ে আলোচনা করার জন্য, যেকোনো ইস্যুতে, আমরা সব সময় আলোচনায় আগ্রহী, যাব। কিন্তু অন্য কোনো একটি রাজনৈতিক দল দিয়ে আমাদেরকে আহ্বান জানানো হচ্ছে কেন?’

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে বিএনপির প্রতিনিধিত্ব করে আসা সালাহউদ্দিন আহমদ জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ নিয়ে দলের গুরুতর আপত্তির কথা বলেছেন। বিএনপির ভাষ্যমতে, গত ১৭ অক্টোবর যে জুলাই সনদে রাজনৈতিক দলগুলো স্বাক্ষর করেছিল, সেটি তারা বাস্তবায়ন করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। কিন্তু ২৮ অক্টোবর জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন যে প্রস্তাব জমা দিয়েছে, তাতে তাদের আপত্তি রয়েছে।

দলটি বলেছে, ওই প্রস্তাবের তফসিলে উল্লেখিত সনদে অনেক পরিবর্তন আনা হয়েছে। এ ছাড়া সনদ বাস্তবায়নে গণভোট কবে হবে, তা নিয়েও বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে মতভিন্নতা রয়েছে। বিএনপি সংসদ নির্বাচনের দিন গণভোট করার পক্ষে। অপর দিকে জামায়াতে ইসলামী চায়, আগে গণভোট করে জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দেওয়ার পর তার আলোকে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

এই পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে জুলাই সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন নিয়ে সমাধানে পৌঁছানোর আহ্বান জানায় অন্তর্বর্তী সরকার। গত রোববার উপদেষ্টা পরিষদের এক সভা থেকে বলা হয়, রাজনৈতিক দলগুলো যদি এক সপ্তাহের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দিতে না পারে, তাহলে সরকার তার মতো করে সিদ্ধান্ত নেবে।

এ বিষয়ে আলোচনার আহ্বান জানিয়ে গত বৃহস্পতিবার বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ফোন করেছিলেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। মির্জা ফখরুল তখন তাঁকে বলেছিলেন, দলের দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে আলোচনার পর এ বিষয়ে অবস্থান জানাবেন। বিষয়টি নিয়ে আজ আলোচনা সভায় দলের পক্ষ থেকে প্রথম প্রতিক্রিয়া দিলেন সালাহউদ্দিন আহমদ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতা চায় জামায়াত: ছাত্রদল নেতা আমান

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আমানুল্লাহ আমান। ফাইল ছবি
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আমানুল্লাহ আমান। ফাইল ছবি

জামায়াতে ইসলামী ‘পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য সেনাবাহিনীকে নিয়ে কালিমাযুক্ত কথাবার্তা বলছে’ বলে অভিযোগ করেছেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আমানুল্লাহ আমান।

রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশের (আইডিইবি) মাল্টিপারপাস হলে আজ শনিবার বিকেলে ‘৭ নভেম্বর: জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের ৫০ বছর’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ অভিযোগ করেন। ছাত্রদল এই সভার আয়োজন করে।

আমান বলেন, জন্মলগ্ন থেকে একটি সংগঠন যারা ইসলামের নাম ধারণ করে—এখন পর্যন্ত ইতিহাসে সব সময় স্রোতের বিপক্ষে ছিল, গণতন্ত্রের বিপক্ষে ছিল। নিজেদের স্বার্থে তারা ’৪৭-এ দেশভাগের বিরোধিতা করেছে; ’৭১-এ মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে, ’৯০-এ স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে এরশাদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। যুগে যুগে এই জামায়াতে ইসলামী মানুষের সেন্টিমেন্টের বিরুদ্ধে গেছে।

তিনি বলেন, ‘আজকে আরেকবার পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য সেনাবাহিনীকে নিয়ে কালিমাযুক্ত কথাবার্তা বলছে তারা (জামায়াতে ইসলামী)। সেনাবাহিনী বাংলাদেশের গর্বের ঠিকানা। আমরা যদি তাদের (জামায়াতে ইসলামী) সঙ্গে তাল মিলিয়ে কথা বলি, তাহলে বাংলাদেশের জন্য অনিবার্য বিপদ অপেক্ষা করছে।’

ছাত্রদলের এই নেতা বলেন, ‘শেখ হাসিনার যেদিন রায় হবে, সেদিন আওয়ামী লীগ ঢাকায় লকডাউন দিয়েছে। আবার আওয়ামী লীগের সঙ্গে গোপনে যাদের প্রেম, সেই জামায়াতে ইসলামী একই সময়ে জনসভার কর্মসূচি দিয়েছে। বাংলাদেশে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করার জন্য গোপনে গোপনে আঁতাত চলছে। ’৭১-এর পরাজিত শক্তি আর ’২৪-এর পরাজিত শক্তি মিলে বাংলাদেশকে অনিবার্য বিপদের দিকে ঠেলে দিতে চাচ্ছে। এই ষড়যন্ত্র ছাত্রদল সজাগ থাকতে সফল হতে দেবে না।’

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিবের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদসহ বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, মহানগর ও কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের নেতারা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ মুজিবের রক্ষীবাহিনী ৩০ হাজার মুক্তিযোদ্ধা হত্যা করেছিল: সালাহউদ্দিন আহমদ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
‘৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসে’র ৫০ বছর উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। ছবি: আজকের পত্রিকা
‘৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসে’র ৫০ বছর উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। ছবি: আজকের পত্রিকা

শেখ মুজিবুর রহমান রক্ষীবাহিনী সৃষ্টির মধ্য দিয়ে ৩০ হাজার তৎকালীন মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করেছে বলে অভিযোগ তুলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার অন্তরে কখনোই বাকশালের বাইরে অন্য কোনো চেতনা ছিল না। শেখ মুজিব করেছিলেন সাহসিকতার সঙ্গে বাকশাল, সাংবিধানিকভাবে উন্মুক্তভাবে আর শেখ হাসিনা সেই বাকশাল এখানে বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিলেন একদলীয় শাসনব্যবস্থার মাধ্যমে। গণতান্ত্রিক মুখোশ ও ভোটের নামে প্রহসনের মাধ্যমে এই একদলীয় রাষ্ট্রব্যবস্থা শেখ হাসিনা বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিলেন।’

‘৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসে’র ৫০ বছর উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ভবনের মাল্টিপারপাস হলে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল।

ইতিহাসের ব্যাখ্যা দিয়ে বিএনপির নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘এই দেশের, এই ভূখণ্ডের মানুষ তাঁর (শেখ মুজিব) মাধ্যমেই এ দেশের মুক্তি চেয়েছিল, অর্থনৈতিক মুক্তি ও গণতান্ত্রিক মুক্তি। অথচ তিনি বাংলাদেশের মানুষের অধিকারকে কবর দিয়েছেন, গণতন্ত্রকে কবর দিয়েছেন, এ দেশের অর্থনীতির বারোটা বাজিয়েছেন। আওয়ামী লীগের জন্ম থেকে শেষ পর্যন্ত তাদের রক্তে, চেতনায়, ডিএনএতে গণতন্ত্রের বীজ নাই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত