Ajker Patrika

ডাকসু ও জাকসুতে ভরাডুবি

আলোচনায় বাগছাসে সংস্কার, সিদ্ধান্তহীনতায় নেতারা

  • এনসিপির নির্বাহী কাউন্সিলের সভায় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ভরাডুবি নিয়ে আলোচনা।
  • দুই মাস আগে থেকেই চলছে নাম পরিবর্তনের চিন্তা, আসবে আরও পরিবর্তন।
  • এনসিপির সঙ্গে আমাদের ফরমাল সম্পর্ক নেই, তারা বাগছাস নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না: কাদের
অর্চি হক, ঢাকা 
আলোচনায় বাগছাসে সংস্কার, সিদ্ধান্তহীনতায় নেতারা

ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) ভরাডুবি হয়েছে। মাত্র এক বছর আগে যে তরুণদের নেতৃত্বে দেশের ছাত্র-জনতা এক হয়ে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটিয়েছিল, এক বছরের ব্যবধানে সেই তরুণ নেতাদের একটা বড় অংশ নিজেদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সমর্থন পেতে ব্যর্থ হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সামনে চলে এসেছে বাগছাস এবং তাদের ভ্রাতৃপ্রতিম রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাদের মধ্যে বিভাজন এবং মতানৈক্যের নানা বিষয়। দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে বিপর্যয়ের পর বাগছাসে সংস্কার আনার কথা বলছেন এনসিপির নেতারা। তবে কী কী সংস্কার আনা হবে, তা নিয়ে সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি তাঁরা। সংস্কার প্রশ্নে নেতাদের মধ্যে রয়েছে মতানৈক্য।

এনসিপি ও বাগছাসের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, বাগছাসে বিভিন্ন পরিবর্তন আনার বিষয়ে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা চলছে। সংগঠনের নাম পরিবর্তনের কথা ভাবা হচ্ছে। এ ছাড়া সংগঠনের নিয়ন্ত্রণ ও কর্তৃত্বের বিষয়েও সংস্কার হতে পারে।

এনসিপির নেতারা জানান, ডাকসু নির্বাচনে ভরাডুবির পর গত শুক্রবার দলের নির্বাহী কাউন্সিলের সভায় অনেক নেতা হতাশা প্রকাশ করেন। পরাজয়ের পেছনে বিভিন্ন কারণ তুলে ধরেন তাঁরা। সাংগঠনিক দুর্বলতা, অন্তর্কলহ নিয়ে ক্ষোভ জানান তাঁরা। এরপর বিভিন্ন জায়গায় আলোচনা ছড়িয়ে পড়ে, বাগছাস বিলুপ্ত হতে যাচ্ছে।

তবে বাগছাস বিলুপ্তির বিষয়টি সঠিক নয় বলে জানিয়েছেন এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব ও দপ্তর সম্পাদক সালেহ উদ্দিন সিফাত। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘দলের নির্বাহী কাউন্সিলের মিটিংয়ে ডাকসু নির্বাচনকেন্দ্রিক আলাপ-আলোচনা হয়েছে, নির্বাচন-পূর্ব পরিস্থিতি পর্যালোচনা হয়েছে এবং প্রত্যাশিত ফলাফল না আসার কারণ সম্পর্কেও আলোচনা হয়েছে। তবে বাগছাস বিলুপ্তি বা পুনর্গঠন-সম্পর্কিত কোনো আলোচনা হয়নি। আমি মনে করি, এ-সম্পর্কিত আলোচনা সাধারণত ছাত্রসংগঠনটি তাদের নিজস্ব ফোরামেই করবে। এখানে এনসিপির নির্বাহী কাউন্সিলের কর্তৃত্বমূলক ভূমিকা থাকা ঠিক নয়।’

এনসিপির একটি সূত্র জানিয়েছে, বাগছাসে সংস্কার আনার বিষয়টি সমন্বয় করার জন্য এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুসরাত তাবাসসুমকে দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। তবে এ বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

বাগছাস নেতারা বলছেন, বাগছাসে কী পরিবর্তন আসবে তা নিয়ে সিদ্ধান্তের এখতিয়ার এনসিপির নেই। কারণ তাদের মতাদর্শের মিল থাকলেও আনুষ্ঠানিক কোনো সম্পর্ক নেই।

বাগছাসের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আবদুল কাদের বলেন, ‘এনসিপির সঙ্গে আমাদের ফরমাল কোনো সম্পর্ক নেই। আমাদের বিষয়ে তারা কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মুখসারির এই যোদ্ধা জানান, তাঁরা বহুদিন আগে থেকেই নাম পরিবর্তনের চিন্তা করছেন। এ ছাড়া বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় কিছু সংস্কার নিয়েও ভাবা হচ্ছে। তবে সংস্কারের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

আবদুল কাদের বলেন, ‘আমাদের সংগঠনের নামটা দুর্বোধ্য, তাই মাসদুয়েক আগে থেকেই এটা পরিবর্তনের বিষয়ে আলাপ হচ্ছিল। এর বাইরে কিছু রিফর্ম হতে পারে। সেগুলো নিয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’

এনসিপি গঠনের আগে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি জুলাই আন্দোলনের সামনের সারির নেতাদের নিয়ে গঠন করা হয় বাগছাস। তাঁরা নিজেদের স্বাধীন সংগঠন বলে দাবি করে। এনসিপির সঙ্গে কাগজ-কলমে তাদের সম্পর্ক নেই। তবে বাগছাস এনসিপির ছাত্রসংগঠন হিসেবে পরিচিত।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনসিপি ও বাগছাসের একাধিক নেতা জানান, তাঁদের মধ্যে বিভেদ-মতানৈক্য আগেও ছিল, তবে ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনের ফলাফলে বিপর্যয়ের পর তা আরও প্রকট হচ্ছে। ডাকসু নির্বাচনের শেষ সময়ে এনসিপির কয়েকজন শীর্ষ নেতা বাগছাসের প্যানেলের প্রার্থীদের হয়ে সামাজিক মাধ্যমে প্রচার চালিয়েছিলেন। তবে ক্যাম্পাসে সরাসরি প্রচারণায় এনসিপির শীর্ষ নেতারা অংশ নেননি। নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর আবদুল কাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও কারসাজির অভিযোগ তোলেন। অন্যদিকে হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলমসহ এনসিপির একাধিক শীর্ষস্থানীয় নেতা নির্বাচন স্বচ্ছ হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।

বাগছাস নেতাদের অভিযোগ, ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ভ্রাতৃপ্রতিম দল হিসেবে এনসিপির কাছ থেকে যে সহযোগিতা ও সমর্থন তাদের পাওয়ার কথা ছিল, তা তাঁরা পাননি। অন্যদিকে এনসিপি নেতাদের মতে, সাংগঠনিক দুর্বলতা বিভাজন ও অন্তর্দ্বন্দের কারণেই বাগছাসের ভরাডুবি হয়েছে।

তবে সংগঠনের মধ্যে বিভাজনের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন আবদুল কাদের। তিনি বলেন, ‘আমাদের ভেতরে কোনো বিভেদ নেই। কারও কারও ভিন্ন উদ্দেশ্য ছিল, এজেন্ট ছিল। তারা চলে গেছে। আমরা নির্বাচনে প্রত্যাশিত ফল পাইনি, তাই সবার একটু মন খারাপ। আশা করছি খুব দ্রুতই আমরা এটা কাটিয়ে উঠতে পারব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিক্ষোভ থেকে সহিংসতায় উত্তাল ভাঙ্গা, মসজিদে আশ্রয় নিয়েছেন পুলিশ সদস্যরা

দাওয়াত না দেওয়ায় মাদ্রাসার সব খাবার খেয়ে গেলেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা

উত্তাল ভাঙ্গা: থানাসহ চারটি সরকারি দপ্তরে হামলা-ভাঙচুর, পুলিশসহ আহত অনেকে

সন্তানের গলা কেটে লাশ বাবার হাতে তুলে দিলেন মা

কক্সবাজার, মাদারীপুর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ডিসি প্রত্যাহার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত