Ajker Patrika

সংবিধানেই ঘুরপাক খাচ্ছে আলোচনা

  • ৭০ অনুচ্ছেদের অনাস্থা প্রস্তাবে সরকারের স্থায়িত্ব থাকবে না: বিএনপি
  • সংবিধান সংশোধনে সব ক্ষেত্রে গণভোট প্রয়োজন নেই
  • জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল নিয়েও দ্বিমত আছে বিএনপির
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে বিএনপির প্রতিনিধিদল। গতকাল জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে। ছবি: মেহেদী হাসান
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে বিএনপির প্রতিনিধিদল। গতকাল জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে। ছবি: মেহেদী হাসান

নির্বাচন ও সংস্কার নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনা চলছে দফায় দফায়। সংস্কারের অন্যতম বড় জায়গা সংবিধান। এই জায়গাতে অনেক বিষয়ে আপত্তি আছে দেশের অন্যতম বড় দল বিএনপির। সংবিধান সংশোধনে গণভোট, ৭০ অনুচ্ছেদ, জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলসহ আপত্তির জায়গাগুলো গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে জানিয়েছে বিএনপি।

জাতীয় সংসদের এলডি হলে গতকাল বিএনপির সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ হয়। সূচনা বক্তব্য দেন কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। কয়েক ঘণ্টা আলোচনার পর উভয় পক্ষ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলে। জানানো হয়, আগামী রোববার আবার আলোচনায় বসবে দুই পক্ষ।

সংবিধান নিয়ে আপত্তির বিভিন্ন বিষয় থাকলেও বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আলোচনা চলমান রাখতে চাই, আজকে শেষ না হলে পরেও আলোচনা হবে। আমরা বোঝাতে চাই বিএনপি সংস্কারের বিষয়ে কতটা সিরিয়াস।’

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সংলাপ শুরু হয়। সূচনা বক্তব্য দেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। এরপর বেলা ১১টার দিকে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হয়ে চলে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত। ১৫ মিনিটের বিরতির পরে আবার বৈঠক শুরু হয়ে চলে বেলা ২টা পর্যন্ত। মধ্যাহ্নভোজের বিরতি শেষে আড়াইটার পরে শুরু হওয়া বৈঠক শেষ হয় বিকেল পৌনে ৫টার দিকে।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, গতকালের সংলাপে সংবিধান সংস্কার ও বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের সুপারিশ নিয়ে আলোচনা হয়। সংবিধানের অধিকাংশ বিষয়ের আলোচনা এখনো বাকি রয়েছে। আগামী রোববার বেলা ১১টা থেকে বিএনপির সঙ্গে আবার সংলাপে বসবে কমিশন। রোববারের পরে আরও এক দিন সংলাপে হতে পারে বলে মনে করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. বদিউল আলম মজুমদার ও ড. ইফতেখারুজ্জামান।

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে সংলাপে দলটির ৫ সদস্যের প্রতিনিধিদলে ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ, দলটির নির্বাহী কমিটির সদস্য রুহুল কুদ্দুস কাজল ও আবু মো. মনিরুজ্জামান খান।

রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতির বিষয়ে বিএনপি পঞ্চদশ সংশোধনীর আগের অবস্থায় ফিরে যেতে চায় বলে জানিয়েছেন সালাহউদ্দিন আহমদ। গতকালের সংলাপ শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘ওইখানে ধর্মনিরপেক্ষতা নেই। আল্লাহর ওপর আস্থা এবং বিশ্বাস আছে। ওইখানে গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদসহ সবকিছু আছে রাষ্ট্র এবং সংবিধানের মূলনীতি হিসেবে। দুইটা দুই জিনিস। আমরা বহুত্ববাদের পক্ষে নই, ধর্মনিরপেক্ষতা নীতির পক্ষেও নই।’

এ বিষয়ে সালাহউদ্দিন আরও বলেন, ‘আমরা বহুত্ববাদের বিরোধিতা করেছি। তবে সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায়বিচার—যে কথাগুলো স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করা আছে, সেসব বিষয়ে প্রস্তাবনায় এবং রাষ্ট্রীয় মূলনীতিতে অন্তর্ভুক্ত করা যায় কি না, তা প্রস্তাব করা হয়েছে। আমরা বলেছি, এ বিষয়ে আমরা নীতিগতভাবে একমত; তবে আমরা দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে সেটা আপনাদের পরে জানাব।’

সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে অর্থবিল ছাড়া সব বিষয়ে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে সংসদ সদস্যদের ভোটের ক্ষমতা দেওয়ার সুপারিশ করেছে সংবিধান সংস্কার কমিশন। বিষয়টিতে দ্বিমত জানিয়েছে বিএনপি।

এ বিষয়ে দলটির যুক্তির বিষয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক সংস্কৃতি এবং চর্চা যদি আমরা ৭০ অনুচ্ছেদ অর্থবিল ছাড়া বাকি সর্বক্ষেত্রে ওপেন করি, তাহলে সরকারের স্থায়িত্ব থাকবে না। রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে ব্যাপক বাধা আসতে পারে। এই অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের অতীতের রাজনীতিতে এবং এর পূর্ব ইতিহাসেও আমরা পাই।’

তবে অর্থবিল, সংবিধান সংশোধন বিল, আস্থা ভোট এবং জাতীয় নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো বাদে সংসদ সদস্যরা যেকোনো বিষয়ে আলাপ-আলোচনা এবং সংসদে ভোট দিতে পারবে বলে মনে করে বিএনপি। আর ভবিষ্যতে গণতান্ত্রিক চর্চার মধ্য দিয়ে সাংবিধানিক শাসনের ধারাবাহিকতা থাকলে তখন ৭০ অনুচ্ছেদের বিষয়ে আরও কিছু করা যাবে বলে তাদের মত।

সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে সংসদের উভয় কক্ষে পাসের পরে রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের আগে গণভোটে দেওয়ার সুপারিশ করেছে সংবিধান সংস্কার কমিশন। এ বিষয়েও দ্বিমত আছে দেশের বড় দলটির।

সালাহউদ্দিন বলেন, ‘আমরা বলেছি যে সংবিধানের সব সংশোধনীর জন্য গণভোটের প্রয়োজন নেই। শুধু সংবিধানের মূলনীতি, ৪৮, ৫৬ এবং ১৪২ অনুচ্ছেদ সংশোধন করতে হলে গণভোটে যেতে হবে। ঢালাওভাবে যদি আমরা সব সংশোধনী গণভোটের জন্য বিধান রাখি, তাহলে সেটা অনুচিত হবে।’

জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের সুপারিশ আছে সংস্কার কমিশনের। এ বিষয়ে গতকাল আলোচনা হয়নি। তবে এ বিষয়েও বিএনপি একমত নয়।

এ বিষয়ে দলের যুক্তি তুলে ধরে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘নতুন চর্চা। হঠাৎ করে একটা অধ্যায় এখানে আনার ব্যবস্থা হলে সেটা অন্যান্য ক্ষেত্রে নির্বাহী বিভাগকে এবং আইনসভাকে দুর্বল করে দেওয়া হচ্ছে কি না, দেখতে হবে। রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে, আমরা যে সময় সংসদে থাকব না অথবা সংসদ ভেঙে যায়, সেই সময়কার ক্ষেত্রে দেখা যাবে সেই কমিশন খুব বেশি ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়ে অন্য কিছু করতে পারে। এগুলো আমরা চিন্তাভাবনা করেছি। তবে এই বিষয়টা পরবর্তী নির্বাচিত সংসদে আলোচনার সুযোগ রয়েছে।’

সংবিধান সংস্কার কমিশনের যেসব বিষয়ে একমত হয়েছেন, তা কীভাবে বাস্তবায়ন হবে—জানতে চাইলে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাজ হচ্ছে সবার সঙ্গে আলোচনা করে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করা। যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলো একত্র করে প্রতিবেদন তৈরি করে পক্ষগুলোকে স্বাক্ষর করতে বলবে। সেটা ‍তারাই বুঝবে, এটাকে তারা জুলাই সনদ বলবে, না কী বলবে, তা ঠিক করবে।

বিএনপির সঙ্গে সংলাপের পর জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে জাতীয় সনদ তৈরি করা; যাতে করে বাংলাদেশে একটি স্থায়ী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে পারি।’

দেশে বারবার গণতন্ত্র হোঁচট খেয়েছে জানিয়ে আলী রীয়াজ আরও বলেন, ‘বারবার আমরা দেখছি এ দেশে গণতন্ত্র হোঁচট খেয়েছে, তা নয়, ব্যক্তিতান্ত্রিক স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এ দেশে। আমরা চাই সেগুলো যাতে ভবিষ্যতে না ঘটে। সেই জায়গাগুলোকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার জন্য এ প্রচেষ্টা।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে গুলিতে নিহত মামুন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের প্রধান সহযোগী

গাজীপুরে রাস্তা আটকে চলাচল করা পুলিশ কমিশনার নাজমুল করিম বরখাস্ত

আসিফ ক্ষমা না চাইলে অ্যাকশনে যাওয়ার হুমকি ফুটবলারদের

উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ

দিনদুপুরে রাজধানীতে হাসপাতালের সামনে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক, থাকবেন তারেক রহমান

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক, থাকবেন তারেক রহমান

চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিসহ সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আজ সোমবার (১০ নভেম্বর) রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক হবে। বৈঠকে ভার্চুয়ালি সভাপতিত্ব করবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

রাত ৮টার দিকে বৈঠকটি গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে শুরু হওয়ার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান।

শায়রুল কবির খান জানান, এটা জরুরি কোনো বৈঠক নয়, নিয়মিত বৈঠক।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে গুলিতে নিহত মামুন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের প্রধান সহযোগী

গাজীপুরে রাস্তা আটকে চলাচল করা পুলিশ কমিশনার নাজমুল করিম বরখাস্ত

আসিফ ক্ষমা না চাইলে অ্যাকশনে যাওয়ার হুমকি ফুটবলারদের

উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ

দিনদুপুরে রাজধানীতে হাসপাতালের সামনে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাজনৈতিক শিষ্টাচার চর্চার আহ্বান জানালেন জাপার রুহুল আমির হাওলাদার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার। ফাইল ছবি
এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার। ফাইল ছবি

অতীতের রাজনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত কর্মকাণ্ডের কারণেই আজ সব ক্ষেত্রে চরম অনৈক্য সৃষ্টির হয়েছে। এতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে বলে দাবি করেছেন জাতীয় পার্টির (একাংশ) মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার।

আজ সোমবার রাজধানীর গুলশানের হাওলাদার টাওয়ারে জাতীয় পার্টির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, ‘দেশের সাধারণ মানুষ এখনো বিশ্বাস করতে পারছে না, আগামী ফেব্রুয়ারিতে আদৌ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে কিনা। সরকারকে দায়িত্ব নিয়ে এই সংশয় ও অনিশ্চয়তা দূর করতে হবে।’

জাতীয় পার্টির মহাসচিব আরও বলেন, ‘নির্বাচন অবশ্যই হতে হবে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক। কোনো কারণে যদি নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হয়, তাহলে নির্বাচনের পর দেশ আরও গভীর সংকটে নিমজ্জিত হবে।’

রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, অতীতের রাজনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত কর্মকাণ্ডের কারণে দেশে আজ সর্বক্ষেত্রে অনৈক্য বিরাজমান। আমাদের ওই ধরনের আচরণ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। না হলে বিশ্ব দরবারে জাতি হিসেবে আমরা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারব না।

এ সময় জাতীয় পার্টির মহাসচিব আরও বলেন, ‘রাজনীতিতে মতের পার্থক্য থাকতে পারে, অবস্থানগত দূরত্ব থাকতে পারে। কিন্তু প্রতিহিংসা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। জাতীয় পার্টি প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাসী নয়। আমরা বিশ্বাস করি গণতান্ত্রিক চর্চায় ও নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনায়।’

সভায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান লিয়াকত হোসেন খোকা, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জাতীয় যুব সংহতির আহ্বায়ক ফখরুল আহসান শাহজাদা, ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হাওলাদার, নাসির উদ্দিন সরকার, কেন্দ্রীয় নেতা সিরাজুল আরেফিন মাসুম, আব্দুস সাত্তার, আলমগীর হোসেন, জিয়াউর রহমান বিপুল, আল মামুন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে গুলিতে নিহত মামুন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের প্রধান সহযোগী

গাজীপুরে রাস্তা আটকে চলাচল করা পুলিশ কমিশনার নাজমুল করিম বরখাস্ত

আসিফ ক্ষমা না চাইলে অ্যাকশনে যাওয়ার হুমকি ফুটবলারদের

উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ

দিনদুপুরে রাজধানীতে হাসপাতালের সামনে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জুলাই আন্দোলনে দূর থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তারেক রহমান: মঈন খান

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
জাসাসের আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান। ছবি: আজকের পত্রিকা
জাসাসের আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান। ছবি: আজকের পত্রিকা

জুলাই আন্দোলনের অগ্রভাগে ছাত্ররা থাকলেও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দূর থেকে এর নেতৃত্ব দিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান।

আজ সোমবার সকালে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) এক প্রকাশনা অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভায় তিনি এই মন্তব্য করেন।

অনুষ্ঠানে আবদুল মঈন খান বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনকে যাঁরা শুধু ছাত্রদের হাতে কেন্দ্রীভূত করতে চান, তাঁরা নিজস্ব ইচ্ছায় করতে পারেন, তবে সেটা সঠিক বিশ্লেষণ না। ৩৬ জুলাইয়ে জনতার পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটেছিল। ছাত্ররা জুলাই আন্দোলনের অগ্রভাগে ছিলেন। কিন্তু তারেক রহমান ১০ হাজার কিলোমিটার দূর থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।’

তিনি বলেন, ৫ আগস্ট একদিনে হয়নি, বিএনপিসহ অনেক রাজনৈতিক দলের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে এ আন্দোলনের সফলতা এসেছে।  

নির্বাচন অনুষ্ঠানের তাগিদ দিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, একটি অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে সত্যিকারের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠন করাই এখন চ্যালেঞ্জ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে গুলিতে নিহত মামুন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের প্রধান সহযোগী

গাজীপুরে রাস্তা আটকে চলাচল করা পুলিশ কমিশনার নাজমুল করিম বরখাস্ত

আসিফ ক্ষমা না চাইলে অ্যাকশনে যাওয়ার হুমকি ফুটবলারদের

উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ

দিনদুপুরে রাজধানীতে হাসপাতালের সামনে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দলগুলোর টানাপোড়েন: রাজনীতির মাঠে উত্তাপ

  • আগামীকাল রাজধানীর পুরানা পল্টন মোড়ে গণসমাবেশ করবে জামায়াত
  • নির্বাচন বিলম্বের চেষ্টা বলে মনে করছে বিএনপি, রাজপথে সক্রিয় হওয়ার ইঙ্গিত
  • ‘লকডাউন’ কর্মসূচি দিয়ে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টায় কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ
‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১০ নভেম্বর ২০২৫, ১৭: ২৩
দলগুলোর টানাপোড়েন: রাজনীতির মাঠে উত্তাপ

জুলাই সনদের বাস্তবায়ন ও গণভোট নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার টানাপোড়েন এখন চরমে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে দীর্ঘদিনের সংলাপে যেসব বিষয় নিয়ে ঐকমত্য এসেছিল, তার বাস্তবায়ন নিয়ে এখন বিপরীত অবস্থানে চলে গেছে বড় দুই দল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। প্রতিদিনই চলছে কথার লড়াই। আলোচনার টেবিল ছেড়ে এখন মাঠের কর্মসূচিতে চলে গেছে দলগুলো। এতে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজনীতির মাঠ।

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি এবং ওই আদেশের ওপর নভেম্বর মাসের মধ্যেই গণভোট আয়োজন করার দাবিতে অনড় জামায়াত। একই সঙ্গে আগামী জাতীয় নির্বাচনে উভয়কক্ষে বা উচ্চকক্ষে পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতি চালু করার দাবিও জানিয়েছে দলটি। এসব দাবির পক্ষে ইসলামী আন্দোলন, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), নেজামে ইসলাম পার্টি, ডেভেলপমেন্ট পার্টি ও বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনকে সঙ্গে নিয়ে রাজপথের কর্মসূচি পালন করে আসছে তারা। এরই ধারাবাহিকতায় আগামীকাল ১১ নভেম্বর মঙ্গলবার রাজধানীর পুরানা পল্টন মোড়ে গণসমাবেশ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে জামায়াত। এই সমাবেশকে ঘিরে বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী জমায়েতের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানা গেছে।

জামায়াতসহ ৮ দলের এমন কর্মসূচিকে নির্বাচন বিলম্বের চেষ্টা বলে মনে করছে বিএনপি। এ অবস্থায় দলটি রাজপথে সক্রিয় হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে। ৭ নভেম্বর রাজধানীতে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের শোভাযাত্রায় এমন ইঙ্গিত দেন দলটির নেতারা।

মাঠের কর্মসূচির পাশাপাশি কথার যুদ্ধেও জড়িয়ে পড়ছেন রাজনৈতিক নেতারা। গতকাল রোববার রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে মানুষের আকাঙ্ক্ষা তীব্র হলেও একটি পক্ষ তা বিলম্বিত করতে মাঠে নেমেছে।’ তাদের উদ্দেশ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘যারা বিলম্বিত (নির্বাচন) করতে চায়, তারা কি গণতন্ত্রের পক্ষের মানুষ? বিশ্বাস করা যায়?’

জামায়াত অবশ্য মনে করে গণতন্ত্রে আলোচনার পাশাপাশি রাজপথে আওয়াজ তোলা, দুটোই চলে। সম্প্রতি এক কর্মসূচিতে দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘আমরা এখনো নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় আন্দোলনে আছি। সোজা আঙুলে যদি ঘি না ওঠে তাহলে আঙুল বাঁকা করব; কিন্তু ঘি আমাদের লাগবেই। সুতরাং যা বোঝাতে চাই, বুঝে নিন। নো হাঙ্কি-পাঙ্কি, জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট লাগবেই।’

১১ নভেম্বরের সমাবেশকে সামনে রেখে গতকাল প্রস্তুতি সভা করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। ওই সভার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে এক বিবৃতিতে দলটির মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুস আহমদ বলেন, ‘আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম, আমাদের দাবির গুরুত্ব অনুধাবন করে প্রধান উপদেষ্টা কোনো ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেবেন; কিন্তু আমাদের হতাশ হতে হয়েছে। তাই আমাদের আগে ঘোষিত কর্মসূচি মাঠে প্রতিফলিত হবে।’ তিনি বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র মেরামতের যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, তা কোনোভাবেই ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। আমরা যাঁরা চব্বিশের জুলাইয়ে জীবনবাজি রেখে লড়াই করেছি, তাঁরা প্রয়োজনে আবারও রাজপথে গণজোয়ার তৈরি করব।’

বিরাজমান পরিস্থিতিকে মোটেও ‘ভালো’ মনে করছেন না রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। সব মিলিয়ে উত্তেজনার পাশাপাশি নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথে বড় ধরনের এক প্রতিবন্ধকতাও দেখছেন তাঁরা। উত্তেজনার মূলে রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকাকে দায়ী করে বিশ্লেষকেরা বলছেন, দলগুলো নিজ অবস্থানে অনড় থাকায় উত্তেজনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকারের তরফে ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্তের বিষয়ে এক জায়গায় আসার অনুরোধেও গা করেনি দলগুলো। এতে মাঠের রাজনৈতিক দলগুলোর বিবাদে উত্তেজনা ক্রমেই বাড়ছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের (অব.) শিক্ষক অধ্যাপক ড. আল মাসুদ হাসানুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, উত্তেজনা প্রশমন না হলে নেতিবাচক প্রভাব থেকে যাবে। নির্বাচন হওয়াকে প্রভাবিত করতে পারে। এটি আশঙ্কার দিক। সবারই প্রশ্ন, তাহলে নির্বাচন কীভাবে সম্ভব হবে? এখানে নির্বাচন মুখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ সবার একটি নির্বাচিত সরকারের প্রত্যাশা। সেভাবে সহতম না থাকলে রাজনীতিতে চরম নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

এদিকে আগামী ১৩ নভেম্বর শেখ হাসিনার নামে হওয়া মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার রায় ঘোষণার দিনক্ষণ চূড়ান্ত হবে। সেদিন ঢাকা ‘লকডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দলের পেজ থেকে এ ঘোষণা আসে। এ কর্মসূচি ঘিরে ক্ষণে-ক্ষণে দলটির পক্ষ থেকে বিভিন্ন বার্তা দেওয়া হচ্ছে, যেখানে নানা ধরনের হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে।

দলগুলোর এমন কর্মসূচি দেখে নড়েচড়ে বসেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও। এসব কর্মসূচি ঘিরে নাশকতার আশঙ্কা করে তারা প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিচ্ছে বলেও জানা গেছে।

পুলিশের একাধিক সূত্র বলছে, ১১ নভেম্বর পুরানা পল্টনে সমাবেশ ও ১৩ নভেম্বর আওয়ামী লীগের ঘোষিত ‘ঢাকা লকডাউন’কে সামনে রেখে আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। শনিবার বিকেলে রাজধানীর বিভিন্ন মোড়ে পুলিশ সদস্যদের বাড়তি উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। রায়ট গিয়ার, হেলমেট, বডি আর্মারসহ পূর্ণ প্রস্তুতিতে তারা অবস্থান নেয়। এ সময় পথচারীদের সন্দেহ হলে ব্যাগ তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদ করতে দেখা যায়। সন্দেহজনক যানবাহন থামিয়ে তল্লাশিও করা হয়।

ডিএমপির কয়েকটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানান, বিকেল ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত ‘ডিসপ্লে এক্সারসাইজ’ চালানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়। এটি নিয়মিত মহড়া, এর সঙ্গে অন্য কোনো বিশেষ ঘটনাবলির সম্পৃক্ততা নেই।

ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, এটি আমাদের নিয়মিত নিরাপত্তা মহড়া। ফোর্স মোবিলাইজেশনের একটি অংশ, যা নিয়মিতই হয়ে থাকে।

কোনো নিরাপত্তাঝুঁকির প্রস্তুতি কি না—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘না, কোনো নিরাপত্তাঝুঁকি নেই। এটি আমাদের রুটিন কার্যক্রমের অংশ। ‘ফোর্স মোবিলাইজেশন’ প্রক্রিয়ায় সাধারণত জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য বাহিনীকে একত্র করা, প্রস্তুত রাখা ও মোতায়েনের অনুশীলন করা হয়। এতে রিজার্ভ ফোর্স সক্রিয় করা, জনবল ও সরঞ্জাম প্রস্তুত রাখাসহ নানা অনুশীলন অন্তর্ভুক্ত থাকে।’

সম্প্রতি রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ও চার্জ পয়েন্টের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। পাশাপাশি নিষিদ্ধঘোষিত আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা রাতদিন ঝটিকা মিছিল করছে। এ ছাড়া ভারতে অবস্থানরত আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ১৩ নভেম্বর ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন।

নাশকতা ও সহিংসতা প্রতিরোধে পুলিশ বাড়তি সতর্ক অবস্থানে থাকলেও, পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে গুলিতে নিহত মামুন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের প্রধান সহযোগী

গাজীপুরে রাস্তা আটকে চলাচল করা পুলিশ কমিশনার নাজমুল করিম বরখাস্ত

আসিফ ক্ষমা না চাইলে অ্যাকশনে যাওয়ার হুমকি ফুটবলারদের

উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ

দিনদুপুরে রাজধানীতে হাসপাতালের সামনে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত