Ajker Patrika

ভোলায় নারী নির্যাতন

সম্পাদকীয়
ভোলায় নারী নির্যাতন

ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলায় এক নারকীয় ঘটনা ঘটেছে। বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের অভিযোগ তুলে এক নারীকে গাছের সঙ্গে বেঁধে, চুল কেটে, গলায় জুতার মালা পরিয়ে হেনস্তা করা হয়েছে। আর এই অপকর্মে নেতৃত্ব দিয়েছেন এক বিএনপি নেতা!

নারীর প্রতি অবমাননা আমাদের দেশে নতুন নয়। নারী-পুরুষের সম-অধিকারের কথা বলা হলেও সুযোগ পেলেই নারীর অধিকার খর্ব করার উদাহরণ এই সমাজে ভূরি ভূরি। কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে তা যাচাই-বাছাই করে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে আসা হলে তার একটা অর্থ থাকে। কিন্তু যে কেউ যেকোনো অভিযোগে যাকে-তাকে বিচারের সম্মুখীন করার এই প্রবণতা সামাজিক পশ্চাৎপদতাকেই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। এ রকম ঘটনা প্রকাশ্যে ঘটতে থাকলে সামাজিক দুর্বৃত্তরাই শক্তিশালী হয়ে উঠবে এবং আইনকে নিজের হাতে তুলে নেবে।

শুধু ভোলাতেই নারী নির্যাতন হচ্ছে, তা নয়। সুযোগ পেলেই নারীবিদ্বেষের বহিঃপ্রকাশ দেখা যায় দেশের সর্বত্রই। এ ধরনের আচরণের কারণে যে মনস্তাত্ত্বিক ক্ষত তৈরি হয়, তা সহজে দূর হয় না। সমাজের সর্বস্তরে, বিশেষ করে শিশু-কিশোরদের মনে এই অপমান ও সহিংসতা স্থায়ীভাবে জায়গা করে নিতে পারে, যা স্বাভাবিক জীবনযাপনে বাধার সৃষ্টি করতে পারে। আইনের শাসন ব্যর্থ হলে আইনের প্রতি আস্থাও চলে যেতে পারে, যা ভয়ংকর এক ভবিষ্যতের ঠিকানায় আমাদের পৌঁছে দিতে পারে।

নারী-পুরুষ সম্পর্কের ক্ষেত্রে সচেতনতা বৃদ্ধি করা জরুরি। চুল কেটে দেওয়া, জুতার মালা পরিয়ে পাড়া প্রদক্ষিণ করানো ইত্যাদি ধরনের পশ্চাৎপদ ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। প্রকাশ্যে মানুষের অপমান করা থেকে বিরত থাকতে হবে। সামাজিকভাবে এই শালীনতার প্রতি ইতিবাচক মতামতকে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে হবে। এ ক্ষেত্রে গ্রাম বা মহল্লার প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সচেতন হওয়া জরুরি। নারীর প্রতি কোনো ধরনের সহিংসতা যেন না ঘটে, তার নিশ্চয়তা দিতে হবে তাঁদের।

কেউ অন্যায় করলে তার বিচার হতে হবে প্রচলিত ব্যবস্থায়। কেউ নিজের হাতে আইন তুলে নিলে ব্যবস্থাটাই ধসে পড়ে। নিজের হাতে যারা আইন তুলে নিচ্ছে, তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে। সৌভাগ্য আমাদের, ভোলার নারকীয় ঘটনায় পুলিশ বিএনপির ওই নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তার যেন লোকদেখানো না হয়, বিচারের মাধ্যমে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও দিতে হবে।

নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়ার বিরুদ্ধে সরকারকেও উদ্যোগী হতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে মব সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে স্পষ্ট দিকনির্দেশনা থাকতে হবে। নইলে যেভাবে ১০-১৫ জন উচ্ছৃঙ্খল লোক হঠাৎ করেই কারও ওপর চড়াও হয়, তা ঠেকানো যাবে না। মাঝে কিছুদিন এই ধরনের মব কিছুটা কমলেও ইদানীং আবার বেড়ে গেছে। পুলিশ উপস্থিত থাকলেও দুঃখজনকভাবে তারা শুধু দর্শক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে—এমন দৃশ্যও বিরল নয়। মোদ্দাকথা, কেউ কোনো অপরাধ করলে তার শাস্তি হতে হবে নির্দিষ্ট আইনি পথে। নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়াকে কোনোভাবেই উৎসাহিত করা যাবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত