Ajker Patrika

বাণিজ্যিকীকরণের কবলে শিক্ষা

সম্পাদকীয়
বাণিজ্যিকীকরণের কবলে শিক্ষা

ময়মনসিংহের তারাকান্দা এন ইসলামিয়া একাডেমি কলেজে একজন আয়াকে প্রভাষক ও নিয়মবহির্ভূতভাবে অফিস সহকারী নিয়োগ এবং একই প্রভাষককে দুই বিষয়ে নিয়োগ দেখিয়ে ২২ জনকে অবৈধভাবে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে অধ্যক্ষ মো. নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে গত বছরের ৫ আগস্টের পর। আবার তাঁদের নিয়োগ দেখানো হয়েছে ২০০৪ এবং ২০১৬ সালে। ঘটনাটি শুধু একটি নির্দিষ্ট কলেজের সমস্যা নয়, বরং এটি পুরো শিক্ষাব্যবস্থায় ছড়িয়ে পড়া অসাধুতা ও বাণিজ্যিকীকরণের গভীর ক্ষতকে নির্দেশ করে।

যেকোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হলো জ্ঞান অর্জনের অন্যতম ক্ষেত্র। পারিবারিক শিক্ষার পর শিক্ষার্থীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে নির্দিষ্ট বিষয়ে পাঠ গ্রহণের পাশাপাশি জীবনাচার, মানবিক গুণাবলি অর্জন করে থাকে। এভাবে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ জীবন গড়ে ওঠে। অথচ তারাকান্দার এই কলেজে অর্থের বিনিময়ে যোগ্যতাহীন ব্যক্তিদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

আজকের পত্রিকায় ২৫ আগস্ট প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, কলেজের আয়া হোসনে আরাকে সংস্কৃতি বিষয়ের প্রভাষক করা হয়েছে। যে বিষয়ে যাঁর দক্ষতা নেই, তাঁকে যখন সে বিষয়ের প্রভাষক করা হয়, তখনই এটা পরিষ্কার হয়েছে যে, নিয়োগে অনিয়ম হয়েছে। তা ছাড়া, নানা বিষয়ের প্রভাষক পদে অযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

এ অবৈধ নিয়োগপ্রক্রিয়ায় প্রত্যেকের কাছ থেকে ১৫ থেকে ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। অধ্যক্ষ যদিও নিয়োগে টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন, কিন্তু টাকা নেওয়া হয়েছে, সে কথা এড়াতে পারেননি। তাঁর কথা ধরেই তদন্ত করলে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে।

এই ঘটনায় শুধু অধ্যক্ষই নন, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারাও সমান অপরাধী। শিক্ষা বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সমর্থন না থাকলে এভাবে অযোগ্য ব্যক্তিরা নিয়োগ পেতে পারেন না। শিক্ষক নিয়োগে মেধা, যোগ্যতাই প্রধান ব্যাপার। কিন্তু অর্থ যখন নিয়োগের একমাত্র মাপকাঠি হয়ে দাঁড়ায়, তখন তা শিক্ষার্থীদের জন্য মহা বিপদ হয়ে দাঁড়ায়। অযোগ্য শিক্ষক কোনো শিক্ষার্থীকে ভালোভাবে গড়ে তুলতে পারেন না। শিক্ষা একটা বড় নৈতিকতার জায়গা, কোনো বাণিজ্যের জায়গা না। এ ধরনের দুর্নীতি সম্ভব হয়েছে শিক্ষা বিভাগের পৃষ্ঠপোষকতায়। কারণ, তারা তো শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত (মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার) করে থাকে।

অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম যখন নিয়োগপ্রক্রিয়াকে ‘যথাযথ’ বলে দাবি করেন এবং বলেন, ‘কলেজে সবাই আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেছে’, তখন এটি তাঁর অনৈতিক অবস্থানকে পরিষ্কার করে। আশার কথা, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড ময়মনসিংহের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মো. শহীদুল্লাহ দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছেন। পাঁচজন শিক্ষকের এমপিও স্থগিত করা এবং পুরো বিষয়টি তদন্ত করার আশ্বাস দিয়েছেন।

অভিযুক্ত অধ্যক্ষসহ শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। তারাকান্দা এন ইসলামিয়া একাডেমি কলেজের ঘটনাটি শিক্ষার ক্ষেত্রে অস্বাস্থ্যকর ঘটনা। অবক্ষয় রোধ করা এবং শিক্ষাব্যবস্থায় আস্থা ফিরিয়ে আনা জরুরি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত