Ajker Patrika

আত্মহত্যা অনাকাঙ্ক্ষিত

সম্পাদকীয়
আত্মহত্যা অনাকাঙ্ক্ষিত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হাফিজুর রহমান। তরতাজা এক তরুণ যিনি কিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত, মূকাভিনেতা—তাঁর মৃত্যুর কারণ কী হতে পারে?

কেন একজন তরুণ ঈদের পরের দিন সকালেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আড্ডা দিতে আসবেন, রাতে লাপাত্তা হয়ে যাবেন? তারও আট দিন পর তাঁর লাশ পাওয়া যাবে মর্গে! পুলিশ বলছে, আত্মহত্যা! হাফিজুরের ‘আত্মহত্যার’ ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে শাহবাগ থানার ওসি মোহাম্মদ মামুন অর রশিদের কাছ থেকে জানা যায়, ১৫ মে রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বহির্বিভাগের সামনে ভ্রাম্যমাণ ডাবের দোকান থেকে দা নিয়ে নিজের গলায় কোপ দিচ্ছিলেন ২৩-২৪ বছরের এক যুবক। তাঁর গলা থেকে প্রচুর রক্ত ঝরছিল। কোপানোর সময় তিনি বারবার বলছিলেন, ‘আমাকে মাফ করে দাও, আমাকে মাফ করে দাও’ সেখানে থাকা পথচারীরা তাঁকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। পরে সেখানে দায়িত্বরত শাহবাগ থানার দারোগা আল আমিনসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য তাঁকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে রিকশায় উঠিয়ে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়ার চেষ্টা করেন। তখন তিনি রিকশা থেকে লাফ দিয়ে নেমে যান এবং বলতে থাকেন, ‘আমি চিকিৎসা করব না, আমাকে মাফ করে দাও।’ পরে অন্য লোকজনের সহযোগিতায় তাঁকে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হয়। তাঁকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়, প্রয়োজনীয় রক্তের ব্যবস্থাও করা হয়। বাঁচানোর ‘সর্বোচ্চ চেষ্টা’ করা হলেও দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে তিনি মারা যান।

এমন একটি তরুণের মৃত্যু মেনে নেওয়ার মতো নয়। হাফিজের মৃত্যু নিয়ে পুলিশ যা বলছে, তার পেছনের কারণ বের করবে কে? ওসির বক্তব্য কতটুকু সত্য? হাফিজুর কি মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন যে আত্মহননের পথ বেছে নিলেন? দিন দিন তরুণ-তরুণীদের আত্মহত্যার প্রবণতা, মানসিক যন্ত্রণা অনেক বাড়ছে। আমাদের চারপাশেই এমনটা ঘটছে। এ দেশে মানসিক চিকিৎসার বিষয়টি গুরুত্বহীন হয়ে আছে। ঘরে ঘরে মানসিকভাবে অসুস্থ রোগীদের নিয়ে পরিবারগুলো কী যন্ত্রণা ভোগ করছে, যারা এর শিকার তাঁরা তা জানেন। রাষ্ট্রে, সমাজে কি কেউ দেখার নেই? হয়তো চেষ্টা করা যেতে পারে আরও আগে থেকে। স্কুলের পাঠ্যবইয়ে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে পড়ানো যেতে পারে। এগিয়ে আসা জরুরি মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসকদেরও।

হাফিজুরের মতো তাজা প্রাণের আত্মহত্যা তো কোনোভাবেই কাম্য নয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত