Ajker Patrika

নৈরাজ্য

সম্পাদকীয়
নৈরাজ্য

নৈরাজ্য সৃষ্টির নতুন এক প্রবণতা শুরু হয়েছে। কিছু মানুষ একত্র হয়ে কোনো বাড়িতে কিংবা অফিসে হানা দিচ্ছে। বাড়ি বা অফিসে ফ্যাসিবাদী কেউ লুকিয়ে আছে—এ রকম অভিযোগ এনে তারা ঢুকে পড়ছে ভবনে, লুটপাট চালাচ্ছে। কিছুদিন আগে গুলশানে এ রকম একটি অঘটনের পর এবার রাজধানীর কলাবাগান ও মিরপুর ডিওএইচএসেও একই ধরনের ঘটনা ঘটল। এই আচরণকে ফ্যাসিবাদী আচরণ বলা যায় কি না, সেটা সরকার ভেবে দেখতে পারে।

কয়েক দিন আগেই আমরা বলেছিলাম, লাগাম টেনে ধরা না হলে এই নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীরা ফ্রাঙ্কেনস্টাইনে পরিণত হতে পারে। একের পর এক এ ধরনের নৈরাজ্য ঘটতে দেখে মনে হচ্ছে, বাস্তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারি সক্রিয়তা প্রশ্নাতীত নয়। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা গভীর রাতে সংবাদ সম্মেলন করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য নিজের সদিচ্ছার কথা জানালেও এই নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের মনে কোনো ধরনের ভয় ধরাতে পেরেছেন বলে মনে হচ্ছে না।

কলাবাগানে কী ঘটল, তা জানা যাক। রাজধানীর রাসেল স্কয়ারে যাঁরা একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ঢুকে ভাঙচুর, লুটপাট চালিয়েছেন, তাঁদের নেতৃত্বে ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কলাবাগান থানার আহ্বায়ক সালাউদ্দিন সালমান। লুটপাট চালানোর সময় সালাউদ্দিন সালমানসহ ১৪ জনকে আটক করেছে যৌথ বাহিনী। কেন তাঁরা এই লুটপাট চালিয়েছেন? কারণ, তাঁদের মনে হয়েছে, এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আওয়ামী লীগের যোগাযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে বৈষম্যবিরোধী নেতা নিজের হাতে আইন তুলে নিয়ে দলবলসমেত ছুটে গেছেন সেই প্রতিষ্ঠানে। ভাঙচুরে অংশ নিয়েছেন। এটাকে যদি আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া বলে, তাহলে এর বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতারা কী ব্যবস্থা দেবেন, সেটা জানা দরকার। কেন তাঁরা অভিযোগ পেয়ে পুলিশকে না জানিয়ে লুটপাট চালানোকেই শ্রেয় বলে ভেবেছেন? তাঁদের নৈতিক অবস্থাটাও বিবেচনায় নিতে হবে। এটা যে অপরাধ, সে কথা বোঝার মতো ক্ষমতাই যদি এদের না থাকে, তাহলে কেন এদের ঔদ্ধত্য সহ্য করতে হবে?

মিরপুরের ঘটনাটির সঙ্গে গুলশানের ঘটনাটির সাযুজ্য রয়েছে। এখানে হামলাকারীরা নিজেদের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মী বলে পরিচয় দিয়েছেন। এই পরিচয়ে কি সাত খুন মাফ হয়ে যাবে বলে মনে করে এই নেতা-কর্মীর দল! নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী এই দলের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন পল্লবী থানা ইউনিটের আহ্বায়ক পরিচয় দেওয়া জামিল তাজ নামের এক যুবক। যদিও জামিল তাজ বলেছেন, তাঁরা পুলিশকে জানিয়েই এই অভিযানে যান, কিন্তু প্রশ্ন হলো, তাঁরা নিজেরা কেন একটি বাড়িতে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করবেন? স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা তো বলেই দিয়েছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ছাড়া কেউ কোনো অভিযান চালাতে পারবে না। তাহলে উপদেষ্টার কথা যে মানা হচ্ছে না, সেটা তো স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে। এ অবস্থায় যারা নৈরাজ্য চালাতে চায়, তারা নিজের ইচ্ছেমতো এই ধরনের অভিযান অব্যাহত রাখবে বলে শঙ্কা থেকে যায়।

সরকারের পক্ষ থেকে কঠিন বার্তা দেওয়া না হলে এই নৈরাজ্য বন্ধ হবে বলে মনে হয় না। প্রশ্ন হলো, সরকার কেন এদের ছাড় দিচ্ছে?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত