Ajker Patrika

গালি যখন স্লোগান

সম্পাদকীয়
গালি যখন স্লোগান

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বড্ড কষ্ট বুকে নিয়েই ‘সব শালারা বাটপার’ স্লোগানটি দিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরেই তাঁরা দ্বিতীয় ক্যাম্পাস পাচ্ছেন না। ঠিকাদারেরা ভেলকিবাজি করছেন।ক্যাম্পাসের জন্য জমিও অধিগ্রহণ করা হয়নি। এই অবস্থায় ‘সব শালারা বাটপার, আর্মি হবে ঠিকাদার’ স্লোগানটি দেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

কেন সেনাবাহিনীর প্রসঙ্গ তুললেন তাঁরা? আসলে টাকাপয়সা মেরে খাওয়া ঠিকাদারদের হাত থেকে এই কাজ কেড়ে নিতে বলছেন শিক্ষার্থীরা। এরপর দ্বিতীয় ক্যাম্পাসটি যেন হয়, সে জন্য এমন কারও হাতে কাজটি দেওয়ার কথা বলছেন, যাদের হাতে কাজটি সুসম্পন্ন হয়। ব্যস, ঘটনা এটুকুই।

‘সব শালারা বাটপার’ কথাটি নিয়েই ভাবতে হচ্ছে। আমাদের সরকারি কর্মকাণ্ডে আমলানির্ভরতা এবং রাজনীতিবিদদের লালসা মিলেমিশে যে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, তা নিমেষে ঝেড়ে ফেলা কঠিন।অতি সহজে সরকারি কাজকারবারে ঘুষ-বাণিজ্য দূর হয়ে যাবে, এতটা আশাবাদী হওয়ার সময় এখনো আসেনি। সরকারি কাজে যে জবাবদিহি থাকা দরকার, তা নিশ্চিত করতে না পারলে শুধু মুখের কথায় এই দুর্নীতি দূর হবে না। সরকারি টাকার প্রশ্ন যেখানে আছে, সেখানেই কাজটি ঠিকভাবে হচ্ছে কি না, তা নিয়ে সংশয় থেকে যায় এবং লুটেপুটে খাওয়া হচ্ছে কি না, তা জানতে ইচ্ছে করে।

ঘুষের কারবারে আমাদের জাতি যে সিদ্ধহস্ত, সে কথা ইতিহাসে পাওয়া যাবে। বহু জাতির হাড়ে-মজ্জায় এই ঘুষ-দুর্নীতির ইতিহাস আছে। কিন্তু অনেক জাতিই তাদের সততা, নিয়মানুবর্তিতা, জবাবদিহির মাধ্যমে নিজেদের সেই কলঙ্ক মুছে ফেলতে প্রয়াসী হয়েছে। আমরা সে পথে হাঁটতে পারব কি না, সেটা সময়ই বলে দেবে।

সরকারি ঠিকাদারি কাজগুলোর দিকে লক্ষ করলে দেখা যায়, যে টাকায় অনায়াসে একটি প্রকল্প সমাধা হতে পারে, তার দ্বিগুণ বা তারও বেশি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। সাদা চোখেই বোঝা যায় এটা চুরি, এটা লুটপাট। কিন্তু ক্ষমতার দাপটে সেই চুরিকে অগ্রাহ্য করা হয়েছে। কেউ চুরির হদিস নিতে যায়নি। বছরের পর বছর, সরকারের পর সরকার এই দিকটাতে নজর দেয়নি, বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে পৃষ্ঠপোষকতাই করেছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা তারই একটি ক্ষুদ্র প্রকাশমাত্র।

এই শিক্ষার্থীরা স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে চাইছেন। কিন্তু তাঁরা এখনো নিশ্চিত নন, যে ‘সিস্টেম’ গড়ে উঠেছে, তা ভেঙে ফেলা সম্ভব কি না। এই মেধাবীদের কেউ কেউ সরকারি চাকরিতে যাবেন, নিজেদের সততা দিয়ে ঘুষ-দুর্নীতিকে দূরে ছুড়ে ফেলবেন—এ রকম ভাবতে ভালো লাগে। কিন্তু ‘সিস্টেম’ পরিবর্তনের জন্য যে দৃঢ়চেতা আদর্শের প্রয়োজন, সেটি অর্জন করা না হলে সেই তিমিরেই পড়ে থাকতে হবে।

আমাদের আমলাতন্ত্র জগদ্দল পাথরের মতো, আমাদের রাজনীতি নীতিহীনতার দিকে ক্রমেই ধাবিত। সংস্কারের ক্ষেত্রে এই দুই অঞ্চলকে ঠিকঠাক করা জরুরি। রূপপুরের বালিশ-কাণ্ডের মতো ঘটনার অবসান চাইলে সামগ্রিকভাবে যে শুদ্ধি করার প্রয়োজন আছে, তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। রাষ্ট্র সংস্কারের পথে এই স্টেশনটা পড়বে তো—আমাদের এই জিজ্ঞাসা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

অরকার আক্রমণে তরুণী প্রশিক্ষকের মৃত্যু, ভাইরাল ভিডিওটি সম্পর্কে যা জানা গেল

অস্থিরতার সামান্য ইঙ্গিত পেলেই আমরা চলে যাব

ভারতকে পাকিস্তানি সেনাপ্রধানের পারমাণবিক যুদ্ধের হুমকি, যা বলল যুক্তরাষ্ট্র

প্লট–ফ্ল্যাট বরাদ্দে সচিব, এমপি, মন্ত্রী, বিচারপতিসহ যাঁদের কোটা বাতিল

জর্ডান-মিসরকে নিয়ে বৃহত্তর ইসরায়েল প্রতিষ্ঠা করতে চান নেতানিয়াহু

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত