Ajker Patrika

সংবিধান: পুনর্লিখন নয়, সংস্কার

সম্পাদকীয়
সংবিধান: পুনর্লিখন নয়, সংস্কার

রচিত হয়েছিল। এর মধ্যেই নিহিত ছিল এক নতুন রাষ্ট্রের স্বপ্ন ও দিকনির্দেশনা। স্বাধীনতার পর প্রায় পাঁচ দশক পেরিয়ে এলেও সংবিধানের গুরুত্ব ও তাৎপর্য আজও অপরিসীম। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তাও দেখা দিয়েছে। তবে সেই পরিবর্তন বা সংশোধন হবে কীভাবে—এটাই এখন বিতর্কের বিষয়। সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ড. কামাল হোসেন স্পষ্ট করে বলেছেন, এটি পুরোপুরি বাতিল করে নতুন সংবিধান রচনা করা বাস্তবসম্মত বা গ্রহণযোগ্য নয়; বরং প্রয়োজনীয় সংস্কার করে সময়োপযোগী করা যেতে পারে।

২৮ ফেব্রুয়ারি এ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে আজকের পত্রিকায়। জুলাই অভ্যুদয়ের পর সংবিধান পুনর্লিখনের প্রসঙ্গ সামনে এসেছে। এর বিপক্ষে ও পক্ষে নানা মতামত এসেছে, যার মধ্যে কিছু ছিল বাস্তবসম্মত, কিছু ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। সংবিধান পরিবর্তনের পক্ষে যাঁরা, তাঁদের বক্তব্য হলো—১৯৭২ সালের সংবিধান বর্তমান বাস্তবতার সঙ্গে পুরোপুরি খাপ খায় না, ফলে একে নতুন করে ঢেলে সাজানো দরকার। অন্যদিকে, সংবিধান রক্ষার পক্ষের মত হলো—যুগের প্রয়োজনে সংশোধন করা যেতে পারে, তবে এটি বাতিল করে নতুন সংবিধান প্রণয়নের প্রশ্নই আসে না। এই বিতর্কের মাঝেই ড. কামাল হোসেন

তাঁর অভিমত দিয়েছেন যে, সংবিধান একটি স্থিতিশীল দলিল, যা একটি জাতির আইনি ভিত্তি ও নৈতিক অবস্থানকে সংজ্ঞায়িত করে। তাই এটিকে হঠাৎ করেই বাতিল করে নতুন করে রচনা করার চিন্তা অযৌক্তিক।

বাহাত্তরের সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদের বক্তব্য আরও স্পষ্ট। তিনি বলেছেন, সংবিধানের প্রতিটি অনুচ্ছেদ, শব্দ ও বাক্য এক রক্তাক্ত সংগ্রামের ফসল। এটি শুধু একটি আইনি দলিল নয়, এটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতিফলন। তাই যাঁরা সংবিধান পুনর্লিখনের কথা বলছেন, তাঁরা আসলে ইতিহাস ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে অস্বীকার করতে চাইছেন। সংবিধান সংশোধন করা যেতে পারে, তবে এর মূল কাঠামো ধ্বংস করার চিন্তা আত্মঘাতী হতে পারে।

বাংলাদেশের সংবিধানে ইতিমধ্যেই বহু সংশোধনী আনা হয়েছে, যার মধ্যে কিছু ছিল গণতান্ত্রিক অগ্রগতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ, আবার কিছু পরিবর্তন হয়েছে রাজনৈতিক স্বার্থে, যা বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। সংবিধানের স্থায়িত্ব থাকা জরুরি, কিন্তু সেই স্থায়িত্ব যেন কোনো গোষ্ঠীর সুবিধার জন্য ব্যবহৃত না হয়। দেশের সাধারণ মানুষ চায় একটি কার্যকর, গণতান্ত্রিক ও ন্যায়ভিত্তিক সংবিধান। যেকোনো পরিবর্তন বা সংশোধন এমন হতে হবে, যাতে দেশের জনগণের অধিকার ও স্বাধীনতা আরও সুসংহত হয়, কোনো গোষ্ঠীর ক্ষমতা সংহত করার হাতিয়ার না হয়ে ওঠে।

বাংলাদেশের সংবিধানকে অকারণে প্রশ্নবিদ্ধ করা উচিত নয়। যে সংবিধান এত দিন ধরে দেশকে পরিচালিত করেছে, তাকে হঠাৎ করে বাতিল করে নতুন করে লেখার চিন্তা জাতীয় ঐক্যকে দুর্বল করতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

এনবিআর চেয়ারম্যানের কক্ষের সামনে কর্মকর্তাদের অবস্থান

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত