Ajker Patrika

এভাবে ‘ফিনিশ’ কাম্য নয়

সম্পাদকীয়
এভাবে ‘ফিনিশ’ কাম্য নয়

পল্লবীতে সাহিনুদ্দিন নামে এক ব্যক্তিকে গত ১৬ মে বিকেলে তাঁর শিশুপুত্রের সামনে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তাতে দেখা যায়, দুই ব্যক্তি সাহিনুদ্দিনের শরীরের বিভিন্ন অংশে কোপাচ্ছেন। ওই দুই ব্যক্তিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছেন। এদের একজনের নাম মানিক, অন্যজন মনির।

এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সাবেক সাংসদ ও তরীকত ফেডারেশনের সাবেক মহাসচিব এম এ আউয়ালকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। খবরে জানা যায়, সাবেক সাংসদ তাঁর আবাসন প্রকল্পের জন্য জমি দখলে সফল না হয়েই ভাড়াটে খুনি দিয়ে সাহিনুদ্দিনকে খুন করিয়েছেন। এর আগেও ১০ একর জমি দখলের জন্য এম এ আউয়াল নিহত সাহিনুদ্দিনকে নানাভাবে হয়রানি করেছেন, মিথ্যা অভিযোগে জেল খাটিয়েছেন, হত্যারও চেষ্টা করেছেন। একটি ইসলামি দলের নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য আবাসন ব্যবসা প্রসারের জন্য নানা বেআইনি কাজ করেছেন বলেও এখন গণমাধ্যমে খবর বের হচ্ছে। নিজের রাজনৈতিক পরিচয় ও সাবেক আইনপ্রণেতা হিসেবে নিজেকে তিনি আইনের ঊর্ধ্বে ভেবে যেসব অপকর্ম করেছেন, সেগুলো তখন সম্ভবত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দেখেও না দেখার ভান করেছে। তাই এবার তিনি সাহিনুদ্দিনকে হত্যার মধ্য দিয়ে তাঁর ক্ষমতার চরম বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। খুনে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণকারীদের একজন তাঁকে ফোন করে জানিয়েছেন, ‘স্যার, ফিনিশ’।

একজন নিরপরাধ মানুষকে এভাবে ফিনিশ বা শেষ করে দিয়ে আইনের বাইরে থাকতে পারেননি এবার এই সাবেক আইনপ্রণেতা এবং তাঁর সহযোগী খুনিরা। আউয়ালসহ তাঁর অপরাধের সঙ্গে জড়িত সবাইকে খুঁজে বের করে সবার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে মানুষ আশা করে।

সাহিনুদ্দিনকে হত্যা করার অভিযোগে মূল হোতাসহ কয়েকজনকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হওয়ায় মানুষ কিছুটা স্বস্তি বোধ করলেও প্রত্যক্ষভাবে হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া মানিক ও মনির বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ায় নানা প্রশ্নও দেখা দিয়েছে। আদালতে বিচার হবে, বিচারক বিচারিক পদ্ধতিতেই প্রকৃত অপরাধীর শাস্তি দেবেন—এটাই প্রত্যাশিত। আদালতই দোষী-নির্দোষ নির্ধারণের উপযুক্ত প্রতিষ্ঠান। কিন্তু বিচারের আগে অভিযুক্ত ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের পুলিশ হেফাজতে রহস্যজনক মৃত্যু দুঃখজনক এবং এই প্রক্রিয়াটি আইনের শাসনের পরিপন্থী।

জিজ্ঞাসাবাদে কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরুনোর আশঙ্কা থেকে কিংবা বিশেষ কাউকে রেহাই দেওয়ার উদ্দেশ্যে বন্দুকযুদ্ধের ‘নাটক’ সাজিয়ে মানিক ও মনিরকে ‘হত্যা’ করা হলো কি না সে প্রশ্ন সংগত কারণেই সামনে আসছে। অতীতে এমন অনেক নাটক হয়েছে।

আমরা ন্যায়বিচার চাই। ব্যক্তিগত প্রভাব খাটিয়ে অন্যায়-অপকর্ম করে, দখলবাজি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি এবং হত্যার মতো কোনো গুরুতর অপরাধ সংঘটন করে কেউ যেন বিচারের বাইরে থাকতে না পারে, সেটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব যাঁদের, তাঁরা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা দেখাবেন না—এটাই আমরা চাই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত