Ajker Patrika

একটি অলৌকিক ভ্রমণকাহিনি

সম্পাদকীয়
একটি অলৌকিক ভ্রমণকাহিনি

কাশেমের সামর্থ্য নেই। মেয়ের শখ পূরণ করতে প্রতিবেশীর বাড়ি থেকে তাই পরপর চারটি হাঁস চুরি করে। কিন্তু বাপ-বেটির মধ্যে অনুশোচনা কাজ করলে তারা সিদ্ধান্ত নেয় চারটি হাঁস কিনে প্রতিবেশীকে ফেরত দিয়ে ক্ষমা চাইবে। যা-ই হোক, বৃত্তিতে ভালো ফল করায় গ্রামের চেয়ারম্যান তাদের উপহার হিসেবে কিছু দিতে চাইলে তারা চারটি হাঁস এবং ঢাকায় ঘুরতে যেতে চায়। প্রথমে হাঁস নিয়ে প্রতিবেশীর বাড়ি গিয়ে ক্ষমা চায় কাশেম। তারা ক্ষমা তো করেই এবং হাঁসও ফেরত নেয় না। এরপর মেয়েকে নিয়ে ঢাকায় বেড়াতে যায় কাশেম। তাদের ভ্রমণকাহিনি নিয়ে এগোয় গল্প। এটি একটি নাটকের গল্প, নাম ‘একটি অলৌকিক ভ্রমণ কাহিনী’।

বাস্তবে কাশেমের মতো অভাবে পড়ে হয়তো অনেকে বাধ্য হয়ে চুরিবিদ্যা চর্চা করে। আবার স্বভাববশত অনেকে প্রতারণা করে লোকের সর্বস্ব লুট করে নেয়। কিন্তু আমরা এখনো জানি না ফুল মিয়া কেন চুরি করেন।

ফুল মিয়া কে, তা জানতে হলে পড়তে হবে গত ৩০ আগস্ট আজকের পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত একটি খবর। ২৯ আগস্ট ভোরে সীমান্ত এক্সপ্রেস ট্রেনে দিনাজপুর থেকে সৈয়দপুরে যাচ্ছিলেন মা কৌশিলা ও মেয়ে বীথি। তাঁদের পাশের আসনে বসা ফুল মিয়া আলাপের একপর্যায়ে কৌশলে মা-মেয়েকে জুস পান করালে অজ্ঞান হয়ে পড়েন তাঁরা। সন্তর্পণে তাঁদের কানের দুল ও নাকের ফুল খুলে নেন প্রতারক ফুল।

কিন্তু মা-মেয়ের এই যাত্রা একপ্রকার অলৌকিক ঘটনাই বটে! কারণ, তাঁদের পাশে আবদুর রহিম নামে আরেক যাত্রী ছিলেন, যিনি অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা। রহিমের সন্দেহ হলে তিনি ফুল মিয়াকে আটক করে বগির যাত্রীদের বিষয়টি অবগত করেন। ঘটনা স্বীকার না করায় জোর করে ফুল মিয়াকে তাঁরই জুস পান করানো হয়। সেই জুস পান করে তো তিনি নিজেও অজ্ঞান! ব্যাপারটা তখন পরিষ্কার। তৎক্ষণাৎ অজ্ঞান পার্টির এই সদস্যকে ট্রেনে দায়িত্বরত পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

সব ভ্রমণকাহিনি অলৌকিক হয় না। কারণ, সব সময় সচেতন কোনো ব্যক্তি পাশের সিটে ভ্রমণ না-ও করতে পারেন, যিনি প্রতারক চিনতে সিদ্ধহস্ত। আবার নাটকের গল্পের মতো সব চোর অনুশোচনাও করে না। ফুল মিয়ারও নিশ্চয়ই গয়না ফেরত দেওয়ার কোনো উদ্দেশ্য ছিল না।

হাস্যকর মনে হলেও ঘটনাটি ভুক্তভোগীদের জন্য তো বটেই, পঞ্চাশোর্ধ্ব শ্মশ্রুমণ্ডিত প্রতারকের জন্যও দুঃখজনক। সমাজতাত্ত্বিকেরা ভেবে দেখতে পারেন—কেন একজন ব্যক্তি ছল-চাতুরী-চুরির পথ বেছে নেয়, এভাবেই কি তাকে সংসার চালাতে হয়, তার কি আয়ের আর কোনো পথ খোলা থাকে না? আর যা-ই হোক, প্রতারণা কখনো আয়ের উৎস হতে পারে না।

গ্রামে গ্রামে কাজের সুযোগ থাকলে দেশজুড়ে প্রতারণা কমতে পারে অনেকখানি। কীভাবে উদ্যোগ নেওয়া যায় তা রাষ্ট্রচালকেরাই ভালো বলতে পারবেন। রাজনীতির কূটচাল একপাশে রেখে ছোট পরিসর থেকে ছোট

বিষয়ে কাজ করতে করতে একসময় পুরো দেশের চেহারা বদলে দেওয়া নিশ্চয়ই অসম্ভব কিছু নয়। রাজনীতির ভ্রমণ শুভ করতে ছোট উদ্যোগও গুরুত্বপূর্ণ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত