Ajker Patrika

আগুন কি জ্বলতেই থাকবে?

সম্পাদকীয়
আগুন কি জ্বলতেই থাকবে?

অগ্নিকাণ্ডে দেশে বছরে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কত, তার কোনো হিসাব পাওয়া না গেলেও আগুনে পুড়ে জীবন ও সম্পদের ক্ষতি একটি নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। বস্তি, বাসাবাড়ি, দোকানপাটে আগুন লাগার খবর প্রায়ই পাওয়া যায়। কোনো কোনো অগ্নিকাণ্ডে ক্ষয়ক্ষতি কম হয়, কোনোটায় বেশি। আগুনে ক্ষতি না হওয়ার কোনো নিরাপদ ও স্থায়ী ব্যবস্থা আমাদের দেশে নেই। সাধারণত অসাবধানতার জন্যই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আগুনে পুড়ে মানুষ আশ্রয় হারায়, সম্পদ হারায়, নিঃস্ব হয়ে পথে বসে। চোখের সামনে দাউ দাউ করে নিজের স্বপ্ন পুড়তে দেখে চোখের জলে বুক ভাসায়; কিন্তু আগুন না লাগার মতো জনসচেতনতার অভাব দূর হয় না।

কিছু পরিসংখ্যানের দিকে চোখ ফেরানো যাক। ২০১৯ সাল। ফায়ার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, সেই বছর সারা দেশে ২৪ হাজার ৭৪টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর প্রধান কারণ ছিল বৈদ্যুতিক গোলযোগ। কমপক্ষে ৮ হাজার ৬৪৪টি অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে এ থেকে। দ্বিতীয় শীর্ষ কারণ চুলার আগুন। ৪ হাজার ৪২৮টি অগ্নিকাণ্ডের পেছনে দায়ী ছিল চুলার আগুন। সিগারেটের আগুন থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে ৪ হাজার ১৫৩টি।

২০২০ সাল। হিসাবটা আরেকটু সংক্ষেপ করা যাক। বছরজুড়ে বিভিন্ন বস্তিতেই আগুন লাগার ঘটনা ঘটে ৩০টির বেশি। অবশ্য সব ঘটনা যে ভয়াবহ ছিল তা-ও নয়, কোনো কোনোটিতে ক্ষয়ক্ষতি তেমন হয়নি। তবে প্রশ্ন হলো, এত ঘনঘন বস্তিতে কেন আগুন লাগে?

চলতি বছরের শুরু থেকেও বস্তিতে আগুন লাগার ঘটনা কম নয়। ফেব্রুয়ারি মাসে চট্টগ্রামের ইপিজেড এলাকায় বস্তিতে আগুনে দগ্ধ হয়ে পক্ষাঘাতগ্রস্ত এক বৃদ্ধ মারা গেছেন। ফায়ার সার্ভিস জানায়, আগুনে বস্তির ৪৮টি ঘর পুড়ে গেছে। ওই মাসেই রাজধানীর মুগদার মানিকনগরের কুমিল্লাপট্টিতে আগুন লাগে। একই মাসে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় আগুনে পুড়ে মারা গেছে তিন বছরের এক শিশু। এ ছাড়া আগুনে পুড়ে গেছে সাতটি বসতঘর।

মার্চে সাভারের আশুলিয়ায় একটি শ্রমিক কলোনিতে আগুন লেগে অর্ধশতাধিক ঘর পুড়ে গেছে। ঘটনার সময় ঘরগুলোয় কেউ ছিলেন না। শ্রমিকেরা কর্মস্থলে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। প্রায় দেড় ঘণ্টা চেষ্টা করে ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট আগুন নেভাতে সক্ষম হয়। কিন্তু ততক্ষণে কলোনির প্রায় ৮০টি ঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়।

৭ জুন, সোমবার রাজধানীর মহাখালীর সাততলা বস্তিতে আগুন লাগে। প্রায় তিন ঘণ্টা চেষ্টার পর সকাল পৌনে সাতটার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। অগ্নিকাণ্ডে কয়েক শ ঘর পুড়ে গেছে। যদিও প্রাথমিকভাবে হতাহত হওয়ার কোনো খবর পাওয়া যায়নি; কিন্তু অনেক বস্তিবাসী শেষ সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন। অল্প আয়ের মানুষই সাধারণত বস্তিতে বাস করেন। আগুনে তাদের ঘর পুড়লে তারা যেমন মাথা গোঁজার ঠাঁই হারান, তেমনি তিল তিল করে জমানো সামান্য গৃহস্থালি জিনিসপত্রও পুড়ে ছাই হয়। এভাবে কত মানুষের স্বপ্ন-আশা যে ছাই হয়, তার হিসাব কে রাখে?

এই সাততলা বস্তিতে গত বছরও আগুন লেগেছিল, নভেম্বরের ২৩ তারিখে। ওই সময় ১৬ ঘণ্টার ব্যবধানে আগুন লাগে মোহাম্মদপুরের জহুরি মহল্লায়। জহুরি মহল্লার আগুন নিভতে না নিভতেই রাত আড়াইটার দিকে আগুন লাগে মিরপুরের বাউনিয়াবাদ এলাকার বস্তিতে। পুড়ে যায় শতাধিক ঘরবাড়ি ও দোকানপাট।

আগুন লাগার খবর পেলে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে নেভানোর দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া হলেও কখনো কখনো কিছু যৌক্তিক কারণেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হয়। আগুন লাগার স্থানের রাস্তাঘাট অপরিসর হলে, আশে পাশে পানির উৎস বা সরবরাহ না থাকলে আগুন নিয়ন্ত্রণে বেগ পেতে হয়। বড় বড় ভবন, পোশাক কারখানাসহ বেশির ভাগ জায়গায়ই আগুন নেভানোর ব্যবস্থা রাখা হয় না। নিম্নমানের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহার, বৈদ্যুতিক লাইন নিয়মিত চেক না করায় প্রধানত শর্টসার্কিট হয়ে অগ্নিকাণ্ড ঘটে। আগুনে যাতে মানুষের আশা এবং ভবিষ্যৎ পুড়ে না যায়, তার ব্যবস্থা করতে উদ্যোগ নিয়ে সক্রিয়তা দেখাতে হবে সরকারকে আর আগুনের বিরুদ্ধে সব মানুষের সচেতনতা জাগাতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

লাহোরে পাল্টা আঘাত হেনে পাকিস্তানকে জবাব দিল ভারত

পাকিস্তানের চীনা জে-১০ দিয়ে ভারতের রাফাল যুদ্ধবিমান ধ্বংস, যুক্তরাষ্ট্রের কড়া নজরে এই টক্বর

একটি দলের ওপর ভরসার বিনিময়ে পেয়েছি অশ্বডিম্ব: মাহফুজ আলম

গতকাল রাতে ৪৮টি ভারতীয় ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি পাকিস্তানের

অহনার দাবি, নিজের দোষ ঢাকতে ডাবল টাইমিংয়ের কথা বলেছেন শামীম

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত