Ajker Patrika

মুখোশ উন্মোচনের খেসারত?

সম্পাদকীয়
মুখোশ উন্মোচনের খেসারত?

সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জেরে এখন জেলহাজতে। তাঁর অপরাধ—তিনি অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাটের ঘটনা প্রকাশ করেছেন। অনেকের মুখোশ উন্মোচন করেছেন। সত্য প্রকাশ করেছেন। সংবাদপত্র ও পেশাদার সাংবাদিকের কাজই হচ্ছে সত্য উন্মোচন করা। সমাজের অসামঞ্জস্য, অবিচার, দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রকৃত ঘটনা জনগণকে জানানো। এটা যদি না করা যায়, তবে সাংবাদিকতাই থাকে না।

এখন রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা করা এবং তাঁকে মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানোর মধ্য দিয়ে সৎ, পেশাদার ও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাকে ঝুঁকিপূর্ণ করা হলো। সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হলো। সত্যিকার অর্থে একটি দেশ যখন এগিয়ে যায়, সেখানে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হয়; তখন তার পেছনে দুর্নীতিরও শঙ্কা থাকে। একটি মহল ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জন্য নানান পাঁয়তারা করে। তখন সৎ ও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা খুবই প্রয়োজন। না হলে কোথায় লুটপাট হচ্ছে, জনগণের টাকা চুরি হচ্ছে—তা জনগণ জানবে কী করে? আর সরকারের ভালো ভালো কাজের অন্তরালে একটি গোষ্ঠীর অশুভ তৎপরতা বা তাদের লুটপাটের সত্য তুলে না ধরলে সরকারই বা সুশাসন প্রতিষ্ঠা করবে কীভাবে? অনুসন্ধানী সাংবাদিকেরাই তা করেন। এটা তাঁদের নেশা। ভালো খবর, ঘটনার নেপথ্যের সত্য খুঁজে বের করা, অপরাধীদের ধরতে সহযোগিতা করা মানে দেশকে সহায়তা করা, সরকারের ভালো কাজে সহযোগী হওয়ার শামিল।

দুর্ভাগ্য হচ্ছে, আমাদের দেশের একটি গোষ্ঠী বা চক্র, যারা সরকারের ভেতরে বা বাইরে থেকে নিজেদের স্বার্থহানির আশঙ্কায় সরকারকে ভুল বুঝিয়ে, নানান ষড়যন্ত্র করে সব ভালো কাজের পেছনে লাগে—তারা সুযোগ পেলেই মিথ্যাকে সত্য বানানোর মোড়কে আঘাত করে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাকে। তারা জানে, এর মাধ্যমে সাংবাদিকতাকে ঘায়েল করা গেলে, তাদের অপকর্ম আর কেউ জানতে পারবে না। এতে আসলে সরকার ও দেশেরই ক্ষতি।

সরকার যদি মনে করে দেশটিকে সত্যিকার অর্থে এগিয়ে নিতে হবে, তাহলে তাদের ভেতরে ও বাইরে যে অশুভ চক্রটি রয়েছে, তাদের নির্মূল করতে হবে। সব অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধ করতে চাইলে, সত্য প্রকাশে আরও উদার হতে হবে। সৎ সাংবাদিকতা করার সুযোগ রুদ্ধ নয় বরং অবারিত করতে হবে।

রোজিনাকে যে অভিযোগে হেনস্তা করা হয়েছে, ঠিক একই অভিযোগে আরও অনেককে অভিযুক্ত করা যায়। দেশের অনেক অনুসন্ধানী সাংবাদিক রয়েছেন, যাঁরা প্রতিনিয়ত সত্য উদ্‌ঘাটনে নিয়োজিত, এটা তাঁদের পেশার প্রতি, দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা। তাঁরা অনেক কষ্টে সত্য জানার পেছনে লেগে থাকেন, অনিয়ম-দুর্নীতির মূল হোতাদের খুঁজে ফেরেন। ধারণা বা শোনা কথার ওপর নির্ভর না করে তাই সেই তথ্যপ্রমাণ খুঁজতে থাকেন। এ চাওয়া তাঁদের নিজের ব্যক্তিগত বা পারিবারিক স্বার্থের জন্য নয়।

একজন অনুসন্ধানী সাংবাদিক চান, তাঁর একটি ভালো প্রতিবেদনের মাধ্যমে যাতে প্রকৃত সত্য সরকার ও জনগণ জানতে পারে এবং এর মাধ্যমে করণীয় নির্ধারণ করা যায়। এটাই তাঁদের চাওয়া। এখানে সাংবাদিককে সরকারের প্রতিপক্ষ বানানোর অর্থ হলো—স্বার্থান্বেষী মহলটিকে আরও আশকারা দেওয়া। এমন অসংখ্য ঘটনা আছে, যা অনুসন্ধানী সাংবাদিকেরাই সবার নজরে এনেছেন, যার ফল ইতিবাচক হয়েছে, সরকার এ থেকে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে।

তাই আমরা মনে করি, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাকে নাজেহাল না করে বরং তাকে সহায়তা দেওয়া উচিত। তাঁর সত্য জানার সুযোগ করে, দেশের গুটিকয়েক মহলের অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধের কঠিন যাত্রা অবিচল রাখা উচিত, যা সরকারেরও চাওয়া। না হলে, সৎ ও পেশাদার সাংবাদিকতা থাকবে না। বেলা শেষে ক্ষতি হবে দেশের এবং জনগণের।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পুরোনো রাউটার ফেলে না দিয়ে যে কাজে ব্যবহার করতে পারেন

পাকিস্তানের সামরিক ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতার সামনে অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে ভারত: ব্রিটিশ বিশ্লেষক

প্রশাসনিক আদেশে জামায়াত নিষিদ্ধ ভুল, আ.লীগের কার্যক্রম বন্ধ সঠিক: বিএনপি

কী লিখেছিলেন মাহফুজ আলম, ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে ডিলিট করলেন কেন

প্রথম ভাষণে গাজা প্রসঙ্গে যা বললেন পোপ লিও চতুর্দশ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত