Ajker Patrika

করণীয় খুঁজে পাচ্ছে না শিক্ষা

সম্পাদকীয়
করণীয় খুঁজে পাচ্ছে না শিক্ষা

করোনাভাইরাসের বছরপূর্তি হয়ে গেছে প্রায় তিন মাস। এই সময়ে অনেক মানুষ কাজ হারিয়েছেন। পথে বসেছে অনেক পরিবার। কেউ পেশা বদলে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন, কেউবা আবার স্বীয় পেশায় ফিরবেন বলে প্রহর গুনে গুনে ক্লান্ত, বিরক্ত এবং যারপরনাই বিধ্বস্ত! অজানা আশঙ্কায় দিন গোনা এমনই একটি শ্রেণি—যাঁদের আমরা গালভরা বুলিতে বলি সমাজের বিবেক তথা শিক্ষক!

সবাই জানেন এই দেশের শিক্ষকেরা এখন ঘরে বসে বসে বেতন পাচ্ছেন। এটি সত্যি; কিন্তু শতকরা কত ভাগ? সরকারি আর এমপিওভুক্ত মিলিয়েও কিন্তু তা অর্ধেক হবে না। আমরা অনেকেই জানি না এই শিক্ষকদের একটি বড় অংশ বর্তমানে কর্ম হারানোর পাশাপাশি সহায়–সম্বল হারিয়ে প্রায় নিঃস্ব হতে চলেছেন। গত এক বছরে এই শিক্ষকদের ছোট্ট একটি অংশ কেবল এককালীন মাথাপিছু পাঁচ হাজার টাকা অনুদান পেয়েছে।

শিক্ষকদের প্রাণ শিক্ষার্থীরা। করোনা শুরুর ধাক্কাটা সামলে আমাদের শিক্ষা বিভাগ অনলাইন ক্লাস চালু করে কিছুটা হলেও ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে চেষ্টা করেছিল। তবে সেই ক্লাস বিটিভিতে না প্রচার করে স্যাটেলাইট চ্যানেল বিটিভি ওয়ার্ল্ডে প্রচার করায় সুফল তেমন পাওয়া যায়নি। এমনকি সব শিক্ষার্থীর কাছেও পৌঁছানো যায়নি। সে সময় অনেকেই ক্লাসটি বিটিভিতে প্রচার এবং প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের বেলায় বিটিভির পাশাপাশি রেডিওতে প্রচারের ব্যবস্থা করার দাবি করেন। কারণ, গ্রামের অধিকাংশ বাড়িতে স্যাটেলাইট সংযোগ দূরে থাক, টিভিও নেই। বিপরীতে ৫০০ টাকার একটি মোবাইল ফোনেও আছে এফএম রেডিওর সুবিধা। একসময় বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য কিন্তু দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে রেডিওতে ‘গণশিক্ষার আসর’ নামে একটি অনুষ্ঠান প্রচারিত হতো।
সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অনলাইন ক্লাসের নোটিশ জারি করলে কর্তৃপক্ষীয় তাগিদে রাতারাতি ফেসবুক ওয়াল ক্লাসে সয়লাব হয়ে যায়। ব্যতিক্রম বাদ দিলে এসব ক্লাসের দর্শক হয়ে ওঠেন আত্মীয়, শুভাকাঙ্ক্ষী এবং বন্ধুবান্ধব! আর লাভের লাভ হলো এই—নিয়োগদানকারী কর্তৃপক্ষ অনেকটা না বুঝেই খুশিতে গদগদ হলো!

করোনায় ১৫টি মাস কেটে গেলেও আমাদের শিক্ষা অধিকর্তারা এখন পর্যন্ত কোনো করণীয় নির্ধারণ করতে পারেননি। আগে তাও শহর এলাকার শিক্ষার্থীরা মন্দের ভালো হিসেবে টিভিতে একটি বা দুটি অনলাইন ক্লাস পেয়েছে। কিন্তু এই শিক্ষাবর্ষে তারা সেটি থেকেও বঞ্চিত। প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগে হাইস্কুল-কলেজে কিছু অনলাইন ক্লাস চললেও প্রাইমারি পর্যায়ের অবস্থা খুবই খারাপ। অথচ জুম মিটিং করতে করতে তাদের নাভিশ্বাস অবস্থা! সম্প্রতি জুম বাদ দিয়ে তাঁরা চেষ্টা করছে গুগল মিটে। আর এখন প্রশাসন শিক্ষকদের বাড়ি বাড়ি পাঠাচ্ছে কোন কোন শিক্ষার্থীর স্মার্টফোন আছে, সেই তালিকা করতে! নিরুপায় শিক্ষকেরা কর্তাদের হুকুমেই হোক বা বিবেকের তাড়নায় কিংবা কর্মের খাতিরে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তালিকা প্রেরণ না হয় করলেনই; কিন্তু তাতে লাভ কতটুকু হবে তা বোধগম্য নয়।

করোনাকালে সবকিছু খোলা থাকলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে। তাহলে কি জাতীর মেরুদণ্ডটা এখন আমাদের কাছে কম গুরুত্বপূর্ণ?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত