Ajker Patrika

বিয়েপাগল এক কর্মকর্তা

সম্পাদকীয়
বিয়েপাগল এক কর্মকর্তা

যখন একজন বন কর্মকর্তার বিচার চেয়ে মানববন্ধন হয়েছিল বরিশালে, তখন অনেকেই ব্যাপারটিকে হাস্যরসের বিষয় বলে মনে করেছেন এবং প্রচুর হেসেছেন। একে একে ১৭টি বিয়ে যিনি করেছেন, তাঁর মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক আছে কি না, সে রকম কথাও বলাবলি হয়েছে পাড়ার রোয়াকে, চায়ের আড্ডায়। সেসব আড্ডাতেই কেউ কেউ বলেছেন, মতলবে জন্মগ্রহণকারী এই বন কর্মকর্তার মতলবই ছিল খারাপ। যেখানে নোঙর গেড়েছেন, সেখানেই নতুন নতুন বিয়ে করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, ‘প্রথম বিয়ের পর তা গোপন রেখে একে একে ১৭টি বিয়ে করে তিনি ধর্মীয় মূল্যবোধ, দেশীয় সংস্কৃতি এবং আমাদের সমাজব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করে গুরুতর অপরাধ সংঘটিত করেছেন।’

নিরানন্দ এই জীবনে এ ধরনের ঘটনা কৌতুকের জন্ম দেয় বটে, কিন্তু মূলত তা একজন কর্মকর্তার দাপট, প্রলোভনের ক্ষমতা ইত্যাদি নিয়েও ভাবতে বাধ্য করে। আসলেই একজন মানুষ কী করে ঘরে স্ত্রী রেখে একের পর এক বিয়ে করে চলেন? কেউ কি জানতেন না এই কর্মকর্তার বিবাহ অভিযানের কথা? এমনিতেই আমাদের দেশে নারীরা প্রকৃত সম্মান পান খুব কম, তার ওপর এ রকম বিয়েপাগল কর্মকর্তার প্রতারণার শিকার হলে এই নারীদের মানসিক অবস্থা কেমন হতে পারে, সেটা সহজেই অনুমেয়।

বিয়ে করা নিয়ে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো আছে, তা খুবই ভয়াবহ। ‘বিবাহের শিকার’ নারীদের অভিযোগ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, তিনি মূলত প্রতারণা করেই বিয়ে করেছেন। কাউকে বিদেশে পড়াশোনা করানোর প্রলোভন দেখিয়ে, কাউকে সরকারি চাকরি দেওয়ার লোভ দেখিয়ে, কাউকে বিমানবালা হিসেবে চাকরি দেওয়ার কথা বলে, কাউকে আবার সম্পত্তির মালিক করে দেওয়ার স্বপ্ন দেখিয়ে বিয়ে সম্পন্ন করেছেন। বিয়ের শিকার এই নারীরা বা তাঁদের পরিবারের পক্ষ থেকেও এই ‘পাত্র’ সম্পর্কে কোনো খোঁজ নেওয়া হয়েছিল কি না, সে প্রশ্নও ওঠা স্বাভাবিক।

বরিশাল সামাজিক বন বিভাগের বিভাগীয় উপ-বন সংরক্ষক এই ব্যক্তিকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে মামলাও চলছে। মামলা চলুক মামলার মতো। কিন্তু এ ধরনের প্রবণতা নিয়ে কিছু কথা বলা নিশ্চয়ই অসমীচীন হবে না।

সরকারি কাজে যে শিষ্টাচার থাকে, তা যদি অনুসরণ করা না হয়, তাহলে প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা ভেঙে পড়তে পারে। দৃষ্টান্ত হিসেবে অপকর্মগুলো থেকে গেলে এবং তার বিচার না হলে কনিষ্ঠ কর্মকর্তারাও জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার পদাঙ্ক ধরে চলার সাহস পেয়ে যেতে পারেন। এটা যেকোনো দুর্নীতি, দুরাচার সম্পর্কেই প্রযোজ্য। আমাদের দেশে বহু সরকারি অফিস আছে, যেখানে ফাইল নড়ানোর জন্য ‘খরচাপাতি’ করতে হয়। শোনা যায়, এই টাকার ভাগ কম-বেশি সবাই পান। এই উপরি আয় যখন ঐতিহ্যে পরিণত হয়, তখন তা থেকে মুক্ত হওয়া কঠিন। সে ধরনের দুর্নীতির পাশাপাশি যদি নতুন আপদ হিসেবে বিবাহ-রঙ্গ যোগ হয়, তাহলে তা সামলাবে কে?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত