Ajker Patrika

ঢাকা কবে বাসযোগ্য হবে?

সম্পাদকীয়
ঢাকা কবে বাসযোগ্য হবে?

আমাদের প্রিয় ঢাকা আবারও বিশ্বের বসবাস-অযোগ্য শহরের নতুন তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। শুধু স্থানই পায়নি; বরং বসবাস-অযোগ্য শহরের একেবারে শীর্ষেই রয়েছে এর নাম। নতুন র‍্যাঙ্কিংটি প্রকাশ করেছে ইকোনমিস্ট ইনটেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ)। তালিকার শেষদিক থেকে চার নম্বর স্থানে রয়েছে ঢাকা। বিভিন্ন দেশের শহরের ওপর জরিপ চালিয়ে ১৪০টি শহরের র‍্যাঙ্কিং প্রকাশ করা হয়েছে। এ তালিকায় ১৩৭ নম্বরে ঢাকার অবস্থান।

নতুন এ জরিপ অনুসারে ২০২১ সালে বসবাসযোগ্য শহরের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে জাপানের ওসাকা। তৃতীয় অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেড। ইকোনমিস্ট গত বছর বসবাসযোগ্য শহরের যে র‍্যাংকিং করেছিল, তা বাতিল করা হয়েছিল। এ কারণে সর্বশেষ র‍্যাঙ্কিং প্রকাশিত হয় ২০১৯ সালে। সেই তালিকা অনুসারে বিশ্বে বসবাসের অযোগ্য শহরগুলোর তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে ছিল ঢাকা। বসবাসযোগ্যতার দিক দিয়ে ওই বছর ১৪০টি শহরের মধ্যে ঢাকার অবস্থান ছিল ১৩৮তম। সেই হিসাবে এক ধাপ এগিয়েছে ঢাকা।

এই খবরটি যখন পড়ছিলাম, তখন নিজেকে খুব হতাশ লাগছিল। তখন বিশ্বের সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন বেশ কিছু শহরের ছবি ভাসছিল চোখে! আহা কত হতভাগা আমরা! আমাদের কত উন্নয়ন হচ্ছে চারপাশে। নতুন নতুন সড়ক হচ্ছে। অলি-গলিতে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগছে। মেট্রোরেল, এক্সপ্রেসওয়ে হচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে ফ্লাইওভার। আরও কত কিছু যে হচ্ছে। তারপরও কেন আমার শহর সবার চেয়ে পিছিয়ে? এত সরকারি টাকা খরচ করেও একটি বাসযোগ্য শহর করতে পারি না আমরা? তাহলে এ কিসের উন্নয়ন? বছরের পর বছর তবে আমরা কী করলাম? এ প্রশ্ন এখন সামনে এসেছে।

সত্যিকার অর্থে আমাদের টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনার অভাবেই ঢাকা বাসযোগ শহর হতে পারছে না। একটি শহরকে শুধু ইটের খাঁচা বানালে হয় না। শুধু শুধু সড়কে টাকা ঢাললেই আধুনিক স্নিগ্ধ শহর গড়ে তোলা যায় না। একটি সুন্দর ও বাস্তবায়নযোগ্য পরিকল্পনা করতে হয়। একটি সমন্বিত উন্নয়ন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করতে হয়। এর পরিবেশ, অবকাঠামো, শিক্ষা, সংস্কৃতি, স্বাস্থ্যসেবাকে এমনভাবে বিন্যস্ত করতে হবে, যাতে এর বাস্তবায়ন হয় টেকসই। এর প্রভাব যেন হয় সুদূরপ্রসারী।

আমাদের ঢাকায় সত্যি কি আমরা প্রাণ খুলে নিশ্বাস নিতে পারি? আমরা কি চাইলেই এই শহরে নির্মল আলো-বাতাসের সঙ্গে দেহমনের উচ্ছ্বাস মাখাতে পারি? এই শহরে এমন কী সবুজ নিসর্গ আছে, যেখানে চোখের আগল খুলে দেখার অতৃপ্তি মেটাতে পারি? না, তেমন প্রশান্তিময় শহর নয় এটি। আইনশৃঙ্খলা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় অনেক পিছিয়ে আমরা। শহরময় তীব্র থেকে তীব্রতর যানজট। নিরাপত্তাহীনতা এ শহরের নিয়তি। একটু বৃষ্টি হলেই ডুবে যায় শহরটি। উন্নয়নের অপরিকল্পিত কর্মযজ্ঞ এ শহরের মানুষের ভোগান্তির আরেক নাম। আমাদের নাগরিক মূল্যবোধ ও সচেতনতার অভাবও এ শহরকে টেনে ধরে রেখেছে। সত্যিকার অর্থে এভাবে একটি শহর আসলেও বাসযোগ্য হতে পারে না। সরকার, নাগরিক সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টাই পারে একটি বাসযোগ্য শহর গড়ে তুলতে। এখানে শর্টকাট কোনো উপায় নেই।

আমরা মনে করি, সরকার যে উন্নয়ন পরিকল্পনা করে, তা এই শহরের সব সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে করতে হবে। শহরের নাগরিক সেবার মান বাড়ানো এবং সেবা দেওয়ার গতানুগতিক ধারা পরিবর্তন করে এমনভাবে সাজাতে হবে, যাতে তা টেকসই হয়। মানুষের মধ্যে সচেতনতাবোধ গড়ে তুলতে হবে। অন্যথায় শুধু টাকা খরচ করে, বাজেট বাড়িয়ে শহরকে বাসযোগ্য করা যাবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

লাহোরে পাল্টা আঘাত হেনে পাকিস্তানকে জবাব দিল ভারত

পাকিস্তানের চীনা জে-১০ দিয়ে ভারতের রাফাল যুদ্ধবিমান ধ্বংস, যুক্তরাষ্ট্রের কড়া নজরে এই টক্বর

একটি দলের ওপর ভরসার বিনিময়ে পেয়েছি অশ্বডিম্ব: মাহফুজ আলম

গতকাল রাতে ৪৮টি ভারতীয় ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি পাকিস্তানের

অহনার দাবি, নিজের দোষ ঢাকতে ডাবল টাইমিংয়ের কথা বলেছেন শামীম

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত