Ajker Patrika

দারিদ্র্যের নতুন মানচিত্র

সম্পাদকীয়
দারিদ্র্যের নতুন মানচিত্র

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রকাশিত ‘বাংলাদেশের দারিদ্র্য মানচিত্র ২০২২’ আমাদের সামনে এক নতুন বাস্তবতা উন্মোচন করেছে। দারিদ্র্যের হার ও ভৌগোলিক বিন্যাসের পরিবর্তন একদিকে যেমন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অসামঞ্জস্যতা তুলে ধরে, অন্যদিকে তা আমাদের নীতিনির্ধারকদের জন্য এক গুরুতর সতর্কবার্তা। ৩১ জানুয়ারি আজকের পত্রিকায় এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। দারিদ্র্য নিয়ে আমাদের জানা এত দিনের অনেক তথ্যই বদলে দিয়েছে বিবিএসের নতুন প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা তথ্যাবলি।

এত দিন কুড়িগ্রাম ছিল দেশের সবচেয়ে দরিদ্র জেলা। কিন্তু নতুন প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, মাদারীপুর এখন দারিদ্র্যের শীর্ষে। জেলাটিতে প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ৫৫ জন দরিদ্র। নরসিংদী, পিরোজপুর ও ঝালকাঠিতেও দারিদ্র্যের হার আশঙ্কাজনকভাবে বেশি। অন্যদিকে, সবচেয়ে কম দরিদ্র জেলা এখন নোয়াখালী, যেখানে দারিদ্র্যের হার মাত্র ৬ দশমিক ১ শতাংশ।

এ থেকে স্পষ্ট যে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দারিদ্র্যের চিত্র পরিবর্তন হয়েছে। তবে প্রশ্ন হলো, কেন কিছু অঞ্চলে দারিদ্র্যের হার কমছে আর কিছু অঞ্চলে তা বাড়ছে? উত্তর সহজ—অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে, কিন্তু তা সুষমভাবে বণ্টিত হয়নি।

দারিদ্র্যের বিস্তার শুধু একটি পরিসংখ্যান নয়; এটি উন্নয়ননীতি ও সামাজিক বৈষম্যের প্রতিচ্ছবি। শহর ও গ্রামের মধ্যে আয়বৈষম্য বেড়েছে, যা অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বিশ্বব্যাংকের গাইডলাইন অনুযায়ী, দৈনিক ২ দশমিক ১৫ ডলারের কম আয় করা মানুষ দরিদ্র হিসেবে গণ্য হয়। অথচ দেশে এখনো ২ কোটি মানুষ নতুন করে দারিদ্র্যের শিকার হয়েছে।

দারিদ্র্য নিরসনের জন্য আমাদের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে, যা শুধু প্রবৃদ্ধি নয়, আয়বৈষম্যও কমাবে। কর্মসংস্থান, কৃষিতে ভর্তুকি, শিল্পায়নের সুষম বণ্টন এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো ছাড়া দারিদ্র্য দূর করা সম্ভব নয়।

সরকারের উচিত মাদারীপুরসহ দারিদ্র্যপ্রবণ জেলাগুলোতে বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করা। এসব অঞ্চলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাতকে শক্তিশালী করা, স্থানীয় বাজারব্যবস্থা উন্নত করা, কৃষিভিত্তিক কর্মসংস্থান বাড়ানো এবং অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে বিনিয়োগ আকর্ষণ জরুরি।

বিশ্বের অনেক দেশই আঞ্চলিক বৈষম্য হ্রাসে সফল পরিকল্পনা নিয়েছে। বাংলাদেশকেও সেই পথে হাঁটতে হবে। শুধু মেগা প্রকল্প নয়, দরকার স্থানীয় অর্থনীতি চাঙা করার কার্যকর উদ্যোগ। দারিদ্র্যের এই চিত্র আমাদের জন্য সতর্কবার্তা। এখনই যদি কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে বৈষম্য আরও প্রকট হবে, যা সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে দেখা দিতে পারে।

দেশের উন্নয়নের সুফল যেন সব শ্রেণির মানুষ ভোগ করতে পারে, সেটাই হওয়া উচিত আমাদের নীতিনির্ধারকদের প্রধান অগ্রাধিকার। কিন্তু দুঃখজনকভাবে সত্য এটাই যে মুখে বৈষম্যের বিরুদ্ধে বুলি উচ্চারিত হলেও বাস্তবে অনুসরণ করা হয় বৈষম্যের নীতি। সরকার পরিবর্তন হলেও নীতির পরিবর্তন হয় না। ছাত্র-জনতার ব্যাপক অভ্যুত্থানে আওয়ামী শাসনের অবসান হলেও সুশাসন প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হয়েছে, সেটা কি বলা যাচ্ছে?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সাবেক সিইসি নূরুল হুদার গলায় ‘জুতার মালা’ দিয়ে পুলিশে সোপর্দ

ইরানের পতন হলে, এরপরই রাশিয়া—অভিমত রুশ বিশ্লেষকদের

যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর মোদির সঙ্গে ইরানের প্রেসিডেন্টের ফোনালাপ

অনেক দেশ ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র দিতে প্রস্তুত, দাবি পুতিনের শীর্ষ সহযোগীর

মার্কিন হামলার পর ইসরায়েলে ‘খোররামশহর-৪’ ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ইরান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত