Ajker Patrika

বজ্রপাতে মৃত্যু

সম্পাদকীয়
বজ্রপাতে মৃত্যু

চৈত্রের শেষে কিংবা বৈশাখের প্রারম্ভেই শুরু হয় ঝড়বৃষ্টির দাপট। আর সেইসঙ্গে বাড়ে বজ্রপাতের সংখ্যাও। ১৫ মে রাজশাহী জেলায় বজ্রপাতে চারজনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া গত কয়েক দিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে বজ্রপাতে আরও বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, ২০১১ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে বাংলাদেশে বজ্রপাতে ২ হাজার ২০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। যদিও বাস্তবে সংখ্যাটা আরও বেশি। অন্য একটি হিসাব থেকে জানা যায়, বছরে গড়ে তিন শতাধিক মানুষের জীবন কেড়ে নেয় বজ্রপাত। এ ছাড়া বিপুলসংখ্যক গবাদিপশুও মারা গেছে। বজ্রপাতে মৃত্যুর বিষয়টিকে এখন অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতোই বিবেচনা করছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর। সাম্প্রতিক সময়গুলোতে বজ্রপাতে প্রাণহানির সংখ্যা অধিক পরিমাণে বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৬ সালের ১৭ মে বজ্রপাতকে জাতীয় দুর্যোগের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে বজ্রপাতের মূল কারণ দেশটির ভৌগোলিক অবস্থান। এর দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর, এরপরই ভারত মহাসাগর। শীতের পর সেখান থেকে উষ্ণ আর আর্দ্র বাতাস আসতে শুরু করে। অন্যদিকে উত্তরে রয়েছে পাহাড়ি এলাকা, যার কিছু দূরেই হিমালয় পর্বতমালা, যেখান দিয়ে প্রবেশ করে ঠান্ডা বাতাস। দক্ষিণের গরম আর উত্তরের ঠান্ডা বাতাসের সংমিশ্রণে অস্থিতিশীল বাতাস তৈরি হয়। আর এর থেকে তৈরি হয় বজ্রমেঘের। এ রকম একটি মেঘের সঙ্গে আরেকটি মেঘের ঘর্ষণে বজ্রের তৈরি হয়। উচ্চ ভোল্টের এই বৈদ্যুতিক তরঙ্গ যখন মাটিতে নেমে আসে, তখন সবচেয়ে কাছে যা পায় তাতেই আঘাত করে। বিশ্বব্যাপী জলবায়ুর পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে বাংলাদেশে বজ্রপাতে হতাহতের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে বলেও বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

আবহাওয়াবিদদের পর্যবেক্ষণে বাংলাদেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল বজ্রপাতপ্রবণ এলাকাগুলোর অন্যতম। গবেষকদের মতে, তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি বাড়লে বজ্রপাতের আশঙ্কা ১২ শতাংশ বেড়ে যায়।

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে ভেনেজুয়েলা ও ব্রাজিলে। কিন্তু সেখানকার তুলনায় বাংলাদেশে মৃত্যুর ঘটনা অনেক বেশি। বজ্রপাতের বিষয়ে অসচেতনতাই এর মূল কারণ। এর সবচেয়ে বেশি শিকার হন খোলা মাঠে কাজ করা কৃষক আর জেলেরা। উন্নত দেশগুলোতে বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যু কমলেও বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এ সংখ্যা বাড়ছে।

বজ্রপাত নিরোধে সবার আগে দরকার জনসচেতনতা। কালো মেঘ দেখা দিলে উন্মুক্ত প্রান্তরে কাজ করা যাবে না। বাসাবাড়িতে আর্থিংয়ের ব্যবস্থা ও মাঠেঘাটে উঁচু গাছ রোপণ করতে হবে।

ভিয়েতনাম এবং থাইল্যান্ডকে অনুসরণ করে বজ্রপাত নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশে নানা প্রকল্প গ্রহণের কথা জানা গেছে। থাইল্যান্ডে তালগাছ লাগিয়ে আর ভিয়েতনামে টাওয়ার নির্মাণ করে বজ্রপাতে প্রাণহানির সংখ্যা কমিয়ে আনা হয়েছে। বাংলাদেশেও বজ্রপাতপ্রবণ কিছু এলাকায় তালগাছ রোপণ ও টাওয়ার নির্মাণের ওপর সমান গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। প্রাথমিকভাবে সারা দেশে ১০ লাখ তালগাছ রোপণ করা হচ্ছে।

প্রকৃতির বিরূপতা রোধে মানুষ এখনো পুরোপুরি সাফল্য পায়নি। তাই প্রাকৃতিক দুর্যোগ মানুষকে শঙ্কিত করে, জীবন কেড়ে নেয়। প্রকৃতি কেন এমন বৈরী আচরণ করে, এর পেছনে মানুষের কোনো দায় আছে কি না—সেসব বিষয় নিয়েও চিন্তাভাবনার সময় এসেছে বলেই মনে হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পুরোনো রাউটার ফেলে না দিয়ে যে কাজে ব্যবহার করতে পারেন

পাকিস্তানের সামরিক ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতার সামনে অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে ভারত: ব্রিটিশ বিশ্লেষক

প্রশাসনিক আদেশে জামায়াত নিষিদ্ধ ভুল, আ.লীগের কার্যক্রম বন্ধ সঠিক: বিএনপি

কী লিখেছিলেন মাহফুজ আলম, ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে ডিলিট করলেন কেন

প্রথম ভাষণে গাজা প্রসঙ্গে যা বললেন পোপ লিও চতুর্দশ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত