Ajker Patrika

বিএনপি কি বেসামাল হয়ে পড়ছে

সম্পাদকীয়
বিএনপি কি বেসামাল হয়ে পড়ছে

সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির কিছু নেতা-কর্মী একের পর এক সহিংস ও অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ায় রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে, দলটি কি নিজের ওপর থেকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে, নাকি কোনো বিশেষ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে নানা দুষ্কর্মের সঙ্গে বিএনপিকে জড়িয়ে বদনামের ভাগিদার করা হচ্ছে? মাঠপর্যায়ে শৃঙ্খলার অভাব, অপরাধের প্রতি নীরব প্রশ্রয় এবং দলীয় পরিচয়কে অপরাধের ঢাল হিসেবে ব্যবহারের যে চিত্র ধীরে ধীরে স্পষ্ট হচ্ছে, তা তো বিএনপির জন্য আত্মঘাতী হয়ে উঠছে।

অতিসম্প্রতি তিনটি ভিন্ন ঘটনা বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে সমালোচনার মুখে ফেলেছে। ৯ জুলাই পুরান ঢাকার মিটফোর্ড এলাকায় ব্যবসায়ী সোহাগকে প্রকাশ্যে পাথর দিয়ে মাথা থেঁতলে হত্যার ঘটনার ভিডিওচিত্র যাঁরা দেখেছেন, তাঁরা বিচলিত বোধ না করে পারেননি। যারা এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছে তারা সবাই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গেই জড়িত। সোহাগ নিজেও ছিলেন বিএনপির সমর্থক। অসংখ্য মানুষের সামনে সংঘটিত এই নির্মম ঘটনা আইন, সমাজবোধ ও মানবতাবোধ—সবকিছুই তছনছ করেছে।

১১ জুলাই দুপুরে খুলনায় ঘটে আরেক রক্তাক্ত ট্র্যাজেডি—একসময়ের রামদা হাতে ভাইরাল হওয়া যুবদল নেতা মাহবুবুর রহমান নিজ বাড়ির সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। একের পর এক গুলি, তারপর দুই পায়ের রগ কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। মাহবুবের বিরুদ্ধে আটটি মামলা ছিল, মাদক বিক্রির অভিযোগে তাঁর সঙ্গে এলাকার একাধিক পক্ষের দ্বন্দ্ব চলছিল, অথচ তিনি দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েও নিয়মিত রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছিলেন।

তৃতীয় ঘটনাটি ঘটেছে ১১ জুলাই বরিশালের গৌরনদীতে। উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক বদিউজ্জামান মিন্টু চিকিৎসা মনঃপূত না হওয়ায় চিকিৎসকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন। তাঁর আচরণে বাধা দিলে প্রকাশ্যেই এক নারী রোগীকে থাপ্পড় দেন, গালাগাল করেন, চিকিৎসকের টেবিলে ব্যবস্থাপত্র ছুড়ে মারেন।

এসব ঘটনা থেকে স্পষ্ট হচ্ছে যে—বিএনপির কর্মী-সমর্থকেরা যেন বেসামাল হয়ে উঠছেন। এটি সাংগঠনিক দুর্বলতা, নাকি মূল্যবোধগত বিচ্যুতিরও সংকেত? এই দলটির ভেতরে কি এখন আত্মসমালোচনার জায়গা অবশিষ্ট আছে? তাদের নেতারা কি মাঠের কর্মীদের শৃঙ্খলা রক্ষা করতে পারছেন?

নাকি পৃষ্ঠপোষকতা ও নীরব প্রশ্রয়ের রাজনীতিতে মত্ত হয়ে তাঁরা নিজ দলকেই অপরাধীদের আখড়া হতে দিচ্ছেন?

অবশ্য কথা আরও আছে। রাজনীতিতে মাইনাস আওয়ামী লীগের পর বিএনপিকে মাইনাস করার একটি তৎপরতার কথাও বাজারে চালু আছে। মনে করা হচ্ছে, পরিকল্পিতভাবেই বিএনপিকে কার্যত অপরাধ করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে বা হচ্ছে। এটাও মেটিকুলাস প্রজেক্টের অংশ কি না, সে প্রশ্নও আছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কিংবা সরকারের ব্যর্থতাকে তারেক রহমানের ব্যর্থতা হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করেছেন মিটফোর্ডের ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার রাতে মিছিল করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা।

যদি বিএনপিকে চাপে রেখে এনসিপিকে সামনে আনার পরিকল্পনা থেকেই কোনো ফাঁদ পাতা হয়ে থাকে, তাহলে তা বিএনপির অভিজ্ঞ নেতারাও কেন বুঝতে পারছেন না? বিএনপির হাতে কলকে রেখে কেউ তামাক সেবন করবে, সেটা কি খুব স্বাভাবিক?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত