Ajker Patrika

মাদকের রেস্তোরাঁ

সম্পাদকীয়
মাদকের রেস্তোরাঁ

নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি মানুষের আকর্ষণ বেশি, এ কথা নতুন নয়। এবং এ ব্যাপারে প্রমাণের অভাব নেই। একটা কিছু নিষিদ্ধ করলেই যে তা ব্যবহার করা বন্ধ হয়ে যাবে, এমন ভাবাটাই ভুল। ধরুন, একটি রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলে সেই দলটি যে ছদ্মবেশে বা তলে তলে রাজনীতি করবে না, সেই গ্যারান্টি কে দিতে পারে? তেমনি কেউ গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারে না যে মাদক সেবন, পাচার কিংবা এর বাণিজ্য করা নিষিদ্ধ এবং আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ হলেও তা কেউ মান্য করে চলবে। আর যারা মানে না তারা তো খবরের শিরোনাম হয় প্রায়ই। খবরের বিস্তারিত পড়তে গেলে জানা যায় কত অভিনব কৌশলে হয় এসব মাদক কারবার। যেমন কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে অবৈধ রেস্তোরাঁ অর্থাৎ খাবারের দোকানের আড়ালে চলছে মাদক কারবার। ১২ মে আজকের পত্রিকার একটি সংবাদে উঠে এসেছে এক অন্য রকম মাদক কারবারের গল্প।

মহাসড়কের পাশে খাবারের দোকান থাকা অস্বাভাবিক কোনো ব্যাপার নয়। দূর যাত্রার বিরতিতে ভ্রমণপিপাসুরা এখানে খাওয়াদাওয়ার পাশাপাশি স্বল্প সময় একটু জিরিয়ে নিতে পারেন। কিন্তু সেই দোকান যদি হয় দখল করা জমির ওপর এবং সেখানে মূল ব্যবসার আড়ালে চলে নিষিদ্ধ মাদকের কারবার, তা মোটেও স্বাভাবিক কোনো ঘটনা নয়।

চৌদ্দগ্রামে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সড়ক ও জনপথের কয়েক শ কোটি টাকার জায়গা দখল করে একশ্রেণির প্রভাবশালী মহল গড়ে তুলেছে এ ধরনের শতাধিক রেস্তোরাঁ। ‘ট্রাক হোটেল’ নামে পরিচিত এসব রেস্তোরাঁ থেকে প্রতিদিন মালপত্র বহনকারী ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানে করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কয়েক লাখ টাকার মাদক সরবরাহ হচ্ছে। অন্ধকারে অপরাধ করা সহজ। তাই রাতে রেস্তোরাঁগুলোতে ট্রাক-ভ্যানের ভিড় থাকে বেশি। আর অনেক অসাধু চালক এখানে বিরতি নিতে এসে খাবার হিসেবে মাদক গ্রহণ করেন!

এই খাবারের দোকানগুলো এমন জায়গায় অবস্থিত, যেখান থেকে ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকা কাছে। ফলে কারবারিদের জন্য এখানে ভারত থেকে আনা মাদক মজুত করে রাখা সহজ। নিশ্চয়ই এসবে জড়িত আছেন দোকানমালিক ও কর্মচারীরা। তাঁদের চোখের আড়ালে তো আর অনৈতিক কাজ হওয়া সম্ভব নয়। তাই এমন ‘মহান’ কাজের গুরুদায়িত্ব পালন করেন নিজেরাই!

২৭ এপ্রিল একটি রেস্তোরাঁ থেকে ইয়াবা-গাঁজাসহ চারজনকে আটক করেছিল র‍্যাব। তবু মাদক কারবারিরা বিষয়টিকে কোনো পাত্তাই দেয়নি। ৮ মে আবার আরেকটি রেস্তোরাঁ থেকে বিপুলসংখ্যক মাদকসহ চারজনকে আটক করে সেনাবাহিনী। এখন দেখার বিষয় এই যে আটক ব্যক্তিরা দণ্ডটা ঠিকঠাক ভোগ করে নাকি আইনের ফাঁক-ফোকর গলে ফসকে যায়। তাদের কঠোর শাস্তি না হলে কিন্তু এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা সম্ভব হবে না।

সবচেয়ে জরুরি—অবৈধভাবে গড়ে ওঠা এই রেস্তোরাঁগুলো উচ্ছেদ করা। যদিও কোরবানি ঈদের পর উচ্ছেদ অভিযান চলবে বলে কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়েছে, কিন্তু সেটি যেন কোনো ‘রাজনৈতিক’ বাণী না হয়। আমরা ওই কথায় ভরসা করতে চাই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত