প্রশান্ত মৃধা, সাহিত্যিক
অন্ধ বাউল আর অন্ধ সুন্দরী–শোনামাত্র কানে লাগে। বাউল, কল্পনায় সাদা আলখাল্লা অথবা জোব্বা পরা, হাতে একতারা, মাথায় নারীদের মতো একরাশ চুল, পেছনে খোঁপা বাঁধা।
বৈরাগী কিংবা বৈষ্ণব অথবা সন্ন্যাসীর চেহারার সঙ্গে সেই লোকটির চেহারার বেশ মিল আছে। কোনো দিন তাঁর দেখা পাওয়া যাক বা না-ই যাক, সাহিত্যের চরিত্র হিসেবে সে বেশ বিখ্যাত। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ফাল্গুনী’ নাটকে অন্ধ বাউল গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। রচয়িতা স্বয়ং সেই চরিত্রে অভিনয় করেছেন। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আঁকা অভিনেতা রবীন্দ্রনাথের একটি ছবিও আছে। সাহিত্যিক চরিত্র হিসেবে অন্ধ বাউল আছেন, বাস্তবে আমাদের সঙ্গে তাঁর দেখা-সাক্ষাৎ ঘটুক বা না-ই ঘটুক।
দ্বিতীয়টি, অন্ধ সুন্দরীর দেখা পাওয়া অতি দুষ্কর ঘটনা। কারও সে সুযোগ কখনো না হওয়ারই কথা। তবে শামসুর রাহমানের একটি কাব্যগ্রন্থের নাম, যে অন্ধ সুন্দরী কাঁদে। চোখ থাকলেই কাঁদা যায়, যদি তাতে অশ্রু তৈরি হয়। এমনিতে শোনা যায়, অনেকের গোটা জনমই গেল কাঁদতে কাঁদতে, একসময় সেখানকার জলও শুকিয়ে গেছে, এখন আর কাঁদবে কী করে। ওদিকে অন্ধ সুন্দরী দৃষ্টিশক্তিহীন, তিনি কীভাবে কাঁদবেন? কিন্তু চোখ দুটো তো যথাস্থানে আছে তাঁর। সে চোখে জলও আছে। তাই কাঁদছেন। নিদারুণ কষ্টকল্পনা বটে! সাহিত্যে অপ্রচলিত উপমা কল্পনা করে নেওয়া যায়, কখনো তা অতি অনায়াসে, কখনো কখনো বাস্তবসম্পন্ন, কিন্তু বিরল কোনো কোনো উপমা কল্পনা করা ভীষণ কষ্টকর! যেমন শামসুর রাহমানের এই অন্ধ সুন্দরীর কান্না। একবার তাঁকে খুব সংকোচের সঙ্গে জিজ্ঞাসা করেছিলাম সে কথা। ‘কোনো অন্ধ সুন্দরীকে কাঁদতে দেখেছেন আপনি?’ শামসুর রাহমান শুধু স্মিত হেসেছিলেন। সে কথা যেমন জানা হয়নি আর, দেখারও কোনো সুযোগ কখনো ঘটেনি। জানি, জানতাম এ প্রায় অসম্ভব, ডুমুরের ফুল যেমন। তবে এ কথা ভেবে মনটা বিষাদে খুব ভরে উঠেছিল, যদি তেমন কোনো মানুষ থাকেনই, প্রচলিত চোখে সুন্দরী—তিনি কেনই-বা অন্ধ হতে যাবেন? আর অন্ধ হলেও তিনি তো সুন্দরী। হায়, যদি চক্ষুষ্মান থাকতেন তিনি! তা যখন নন, সেই দুঃখের তো কোনো শেষ নেই তাঁর।
একবার কুয়াকাটায় এক অন্ধ বাউলকে দেখার সুযোগ হয়েছিল। বাউলতত্ত্ব ইত্যাদি বিবেচনা করলে তিনি বাউল নন। ধরেছেন খানিকটা বাউলের বেশ। তবে ফকির তো বটেই। ভিক্ষে করে খাওয়াও একধরনের ফকিরি। যদিও লালন সাঁইজি বর্ণিত ও নির্দেশিত ফকিরিবিদ্যা একেবারেই ভিন্ন জিনিস। তবু এই অন্ধ ভিখিরি, যিনি লালনের গান গেয়ে জীবিকাবহন করেন, তাঁকে ফকির বলা যাক। কুয়াকাটার অন্ধকার সমুদ্রতটে কিশোরীকন্যার হাত ধরে তিনি গান বাউলাঙ্গের গান। একটু ভদ্দরলোক গোছের মানুষ দেখলে, তাঁদের কাছে বাপের হাত ধরে নিয়ে এসে মেয়েটি আবদার করে, ‘গান শুনবেন? লালন ফকিরের গান।’ শ্রোতার তো সব সময় লালনের গান শোনার আগ্রহ না-ও থাকতে পারে। কিন্তু তাদের পক্ষ থেকে ওই একটাই আবদার, কিংবা নিচু গলার অনুরোধ।
সেই অন্ধ বাউল অথবা ভিখিরি গান ধরেন, চাঁদের গায়ে চাঁদ লেগেছে! দক্ষিণ সাগর থেকে উঠে আসা বাতাসে তখন কৃষ্ণপক্ষের চাঁদহীন রাতের আবহ মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়।
অন্ধ এ মানুষটির গলা ‘কোনটা করবে ফকিরি’ বলে যেন খুব ধরে আসে। আর সে গান থামলে, পাশ থেকে কেউ যদি আর একখানি লালন ধরতে বলেন, যদি বলেই দেন তাঁকে প্রথম পঙ্ক্তিটিও: জাত গেল জাত গেল বলে, তখন চোখহীন লোকটি অন্ধকারে মেয়ের হাতটা একটু শক্ত করে ধরে, ওই অন্ধ চোখে কী জানি কী সংশয় মেখে বিনয়ে প্রায় বুজে গিয়ে তাঁকে জানান, ‘এখন তো আর কেউ এই গান শুনতে চায় না, বোন!’
এ সংশয় না মন্তব্য। এই আধো প্রশ্ন আধো মন্তব্যের তো কোনো উত্তর হয় না। সামনের লোকটি অন্ধ হয়ে বাঁচিয়েই দিয়েছেন। আমাদের চোখে তাঁকে দেখতে হচ্ছে না।
অন্ধ বাউল আর অন্ধ সুন্দরী–শোনামাত্র কানে লাগে। বাউল, কল্পনায় সাদা আলখাল্লা অথবা জোব্বা পরা, হাতে একতারা, মাথায় নারীদের মতো একরাশ চুল, পেছনে খোঁপা বাঁধা।
বৈরাগী কিংবা বৈষ্ণব অথবা সন্ন্যাসীর চেহারার সঙ্গে সেই লোকটির চেহারার বেশ মিল আছে। কোনো দিন তাঁর দেখা পাওয়া যাক বা না-ই যাক, সাহিত্যের চরিত্র হিসেবে সে বেশ বিখ্যাত। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ফাল্গুনী’ নাটকে অন্ধ বাউল গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। রচয়িতা স্বয়ং সেই চরিত্রে অভিনয় করেছেন। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আঁকা অভিনেতা রবীন্দ্রনাথের একটি ছবিও আছে। সাহিত্যিক চরিত্র হিসেবে অন্ধ বাউল আছেন, বাস্তবে আমাদের সঙ্গে তাঁর দেখা-সাক্ষাৎ ঘটুক বা না-ই ঘটুক।
দ্বিতীয়টি, অন্ধ সুন্দরীর দেখা পাওয়া অতি দুষ্কর ঘটনা। কারও সে সুযোগ কখনো না হওয়ারই কথা। তবে শামসুর রাহমানের একটি কাব্যগ্রন্থের নাম, যে অন্ধ সুন্দরী কাঁদে। চোখ থাকলেই কাঁদা যায়, যদি তাতে অশ্রু তৈরি হয়। এমনিতে শোনা যায়, অনেকের গোটা জনমই গেল কাঁদতে কাঁদতে, একসময় সেখানকার জলও শুকিয়ে গেছে, এখন আর কাঁদবে কী করে। ওদিকে অন্ধ সুন্দরী দৃষ্টিশক্তিহীন, তিনি কীভাবে কাঁদবেন? কিন্তু চোখ দুটো তো যথাস্থানে আছে তাঁর। সে চোখে জলও আছে। তাই কাঁদছেন। নিদারুণ কষ্টকল্পনা বটে! সাহিত্যে অপ্রচলিত উপমা কল্পনা করে নেওয়া যায়, কখনো তা অতি অনায়াসে, কখনো কখনো বাস্তবসম্পন্ন, কিন্তু বিরল কোনো কোনো উপমা কল্পনা করা ভীষণ কষ্টকর! যেমন শামসুর রাহমানের এই অন্ধ সুন্দরীর কান্না। একবার তাঁকে খুব সংকোচের সঙ্গে জিজ্ঞাসা করেছিলাম সে কথা। ‘কোনো অন্ধ সুন্দরীকে কাঁদতে দেখেছেন আপনি?’ শামসুর রাহমান শুধু স্মিত হেসেছিলেন। সে কথা যেমন জানা হয়নি আর, দেখারও কোনো সুযোগ কখনো ঘটেনি। জানি, জানতাম এ প্রায় অসম্ভব, ডুমুরের ফুল যেমন। তবে এ কথা ভেবে মনটা বিষাদে খুব ভরে উঠেছিল, যদি তেমন কোনো মানুষ থাকেনই, প্রচলিত চোখে সুন্দরী—তিনি কেনই-বা অন্ধ হতে যাবেন? আর অন্ধ হলেও তিনি তো সুন্দরী। হায়, যদি চক্ষুষ্মান থাকতেন তিনি! তা যখন নন, সেই দুঃখের তো কোনো শেষ নেই তাঁর।
একবার কুয়াকাটায় এক অন্ধ বাউলকে দেখার সুযোগ হয়েছিল। বাউলতত্ত্ব ইত্যাদি বিবেচনা করলে তিনি বাউল নন। ধরেছেন খানিকটা বাউলের বেশ। তবে ফকির তো বটেই। ভিক্ষে করে খাওয়াও একধরনের ফকিরি। যদিও লালন সাঁইজি বর্ণিত ও নির্দেশিত ফকিরিবিদ্যা একেবারেই ভিন্ন জিনিস। তবু এই অন্ধ ভিখিরি, যিনি লালনের গান গেয়ে জীবিকাবহন করেন, তাঁকে ফকির বলা যাক। কুয়াকাটার অন্ধকার সমুদ্রতটে কিশোরীকন্যার হাত ধরে তিনি গান বাউলাঙ্গের গান। একটু ভদ্দরলোক গোছের মানুষ দেখলে, তাঁদের কাছে বাপের হাত ধরে নিয়ে এসে মেয়েটি আবদার করে, ‘গান শুনবেন? লালন ফকিরের গান।’ শ্রোতার তো সব সময় লালনের গান শোনার আগ্রহ না-ও থাকতে পারে। কিন্তু তাদের পক্ষ থেকে ওই একটাই আবদার, কিংবা নিচু গলার অনুরোধ।
সেই অন্ধ বাউল অথবা ভিখিরি গান ধরেন, চাঁদের গায়ে চাঁদ লেগেছে! দক্ষিণ সাগর থেকে উঠে আসা বাতাসে তখন কৃষ্ণপক্ষের চাঁদহীন রাতের আবহ মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়।
অন্ধ এ মানুষটির গলা ‘কোনটা করবে ফকিরি’ বলে যেন খুব ধরে আসে। আর সে গান থামলে, পাশ থেকে কেউ যদি আর একখানি লালন ধরতে বলেন, যদি বলেই দেন তাঁকে প্রথম পঙ্ক্তিটিও: জাত গেল জাত গেল বলে, তখন চোখহীন লোকটি অন্ধকারে মেয়ের হাতটা একটু শক্ত করে ধরে, ওই অন্ধ চোখে কী জানি কী সংশয় মেখে বিনয়ে প্রায় বুজে গিয়ে তাঁকে জানান, ‘এখন তো আর কেউ এই গান শুনতে চায় না, বোন!’
এ সংশয় না মন্তব্য। এই আধো প্রশ্ন আধো মন্তব্যের তো কোনো উত্তর হয় না। সামনের লোকটি অন্ধ হয়ে বাঁচিয়েই দিয়েছেন। আমাদের চোখে তাঁকে দেখতে হচ্ছে না।
ডাকসু নির্বাচন ঘিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আজ সরগরম। একাধিক প্যানেল, অসংখ্য পোস্টার, ব্যানার ও স্লোগানে মুখরিত ক্যাম্পাস। দীর্ঘদিন অবহেলিত এই কেন্দ্রীয় সংসদকে শিক্ষার্থীরা আবার আলোচনায় টেনে এনেছেন, আবারও সামনে এসেছে জাতীয় রাজনীতিতে এর সম্ভাব্য প্রভাব। আসলে ডাকসুর নাম এলেই চোখে ভেসে ওঠে এর গৌরবোজ্জ্বল..
১ দিন আগেযে বিষয়ে আজ লিখব বলে ভাবছি, সে সম্পর্কে আমার জ্ঞান অতি সামান্য, প্রায় শূন্যের কাছাকাছি। তবু দুই দিন যাবৎ মনটা খুবই খারাপ হয়ে আছে পারিপার্শ্বিক অবস্থা দেখে। বলে রাখা ভালো, ক্লাস থ্রি পর্যন্ত আমি মাদ্রাসায় পড়েছি। আমার বড় চাচা ছিলেন একজন ইসলামিক জ্ঞানসম্পন্ন মানুষ।
১ দিন আগেভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলায় এক নারকীয় ঘটনা ঘটেছে। বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের অভিযোগ তুলে এক নারীকে গাছের সঙ্গে বেঁধে, চুল কেটে, গলায় জুতার মালা পরিয়ে হেনস্তা করা হয়েছে। আর এই অপকর্মে নেতৃত্ব দিয়েছেন এক বিএনপি নেতা!
১ দিন আগেমুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কথা বললেই আওয়ামী লীগ ও ফ্যাসিস্টের ‘দোসর’ তকমা দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হেনস্তা তো বটেই, কখনো কখনো ব্যক্তি বা জনসমষ্টির ওপর সরাসরি আক্রমণের ঘটনাও ঘটানো হচ্ছে। একই রকমভাবে আক্রান্ত হচ্ছে সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মীয় বিশেষ মতবাদের বিপক্ষের ব্যক্তি-গোষ্ঠী এবং নারীসমাজসহ ধর্মীয়...
২ দিন আগে