Ajker Patrika

পাকিস্তানের সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ

মালিহা লোধি
পাকিস্তানকে একটি বহুমাত্রিক পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। ছবি: এএফপি
পাকিস্তানকে একটি বহুমাত্রিক পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। ছবি: এএফপি

চার দিনব্যাপী পাকিস্তান-ভারত সামরিক সংঘাতে পাকিস্তান শুধু নিজেকে সফলভাবে রক্ষা করতেই সক্ষম হয়নি, বরং পেহেলগামে সন্ত্রাসী ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় সামরিক সমাধান চাপিয়ে দেওয়ার ভারতের উদ্দেশ্যকেও ব্যর্থ করে দিয়েছে। পারমাণবিক যুদ্ধের সীমার নিচে প্রচলিত যুদ্ধের পরিসর বাড়ানোর ভারতীয় অপচেষ্টা সফল হয়নি। পাকিস্তান পাল্টা আক্রমণের মাধ্যমে প্রচলিত প্রতিরোধক্ষমতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছে এবং ভারতের এই বেপরোয়া সামরিক অভিযানের খরচ অনেক বাড়িয়ে তুলেছে।

এই সাফল্য স্বাভাবিকভাবেই দেশে উদ্‌যাপিত হয়েছে এবং জাতীয় আত্মবিশ্বাস পুনর্জাগরণে সহায়তা করেছে। তবে এখন বিজয়ের উচ্ছ্বাস থেকে বেরিয়ে আসা এবং পরবর্তী চ্যালেঞ্জের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার দিকে মনোযোগ দেওয়া জরুরি। কারণ ভারতের নরেন্দ্র মোদির সরকারের বিবেচনাহীন সংঘর্ষমূলক অবস্থান এবং চলমান উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি বজায় রাখা থেকে বোঝা যায়, নতুন সংকট আসবেই। দীর্ঘ সময় ধরে বিজয়ের আত্মতৃপ্তিতে ভোগার ঝুঁকি হলো, এতে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস ও ঢিলেমি তৈরি হতে পারে, যখন সামনে হয়তো আরও বড় কোনো চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। প্রকৃতপক্ষে এই মুহূর্তটি গভীর চিন্তা, সুপরিকল্পনা ও কঠোর পরিশ্রমের কথাই বলে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সংকট শেষ হওয়ার পর থেকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তাঁর বাগ্‌যুদ্ধ আরও জোরদার করেছেন এবং পাকিস্তানবিরোধী উন্মাদনাকে উসকে দিচ্ছেন। একের পর এক ভাষণে তিনি দাবি করেছেন যে ভারতের সামরিক পদক্ষেপের মাধ্যমে একটি ‘নতুন স্বাভাবিকতা’ (নিউ নরমাল) প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং ভবিষ্যতে যেকোনো সন্ত্রাসী হামলাকে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল ধরা হবে এবং এই ‘নতুন’ নীতির আওতায় সামরিকভাবে জবাব দেওয়া হবে। তিনি পাকিস্তানের প্রতি হুমকির কেন্দ্রে সিন্ধু পানিচুক্তিকেও নিয়ে গেছেন। মোদি বারবার বলেছেন, পাকিস্তান ‘ভারতের নদী’ থেকে এক ফোঁটাও পানি পাবে না এবং তিনি পাকিস্তানকে ‘গরমটা বোঝাবেন’ বলে শপথ করেছেন। চুক্তিটি খারাপভাবে সম্পাদিত হয়েছে বলে দাবি করে তিনি পরিষ্কার করে দিয়েছেন, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে পানি ব্যবহার করতে তিনি বদ্ধপরিকর।

এ ধরনের উসকানিমূলক বক্তব্যের একটি অংশ দেশের অভ্যন্তরীণ জনগণের উদ্দেশে দেওয়া হচ্ছে এবং এটি ভারতের সামরিক অভিযানের অপ্রত্যাশিত ও বিব্রতকর ফলাফলের ক্ষতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টারই অংশ। এমন আগ্রাসী বক্তব্যের একটি সুস্পষ্ট রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও আছে, এটি মোদিকে তাঁর মুসলিমবিরোধী ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল করতে সাহায্য করছে। তবে তাঁর এই হুমকিগুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। বিশেষ করে মোদি ইতিমধ্যেই পাকিস্তানের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়ানোর এক উদগ্র বাসনা দেখিয়েছেন। সব দিক বিবেচনায়, ভারত পাকিস্তানের ওপর চাপ অব্যাহত রাখবে। যেমন, পূর্বসতর্কতামূলক যুদ্ধের হুমকি দেবে এবং পানিসম্পদকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করবে।

অতএব, পাকিস্তানকে একটি বহুমাত্রিক পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে, যার অর্থ হলো প্রতিরক্ষা, অর্থনীতি, কূটনীতি এবং জাতীয় ঐক্য ও সংহতি বজায় রাখার ক্ষেত্রে সক্রিয় উদ্যোগ নেওয়া। সামরিক প্রস্তুতির ক্ষেত্রে, প্রথম জরুরি হবে প্রতিরক্ষাব্যবস্থায় যে ঘাটতিগুলো সাম্প্রতিক সংকটে প্রকাশ পেয়েছে তা চিহ্নিত করা এবং ভবিষ্যতের বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জে সম্ভাব্য দুর্বলতার দিকগুলো নির্ধারণ করা। এটি এই বোঝায় যে সরঞ্জামাদি উন্নত করা দরকার–বিশেষ করে বিমানবাহিনী, ক্ষেপণাস্ত্র ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাচালিত ইলেকট্রনিক যুদ্ধ ও বিমান প্রতিরক্ষা সক্ষমতার দিকে নজর দিতে হবে। কারণ সাম্প্রতিক যুদ্ধেই দেখা গেছে ভারত ব্যাপকভাবে মনুষ্যবিহীন বিমানের ব্যবহার করেছে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। ইসলামাবাদ চীন থেকে জে-৩৫ এ, পঞ্চম প্রজন্মের স্টিলথ যুদ্ধবিমান সংগ্রহের বিষয়েও আগ্রহী।

তবে প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়টি অবশ্যই একটি স্পষ্ট প্রতিরক্ষা কৌশলের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে এবং তা এমনভাবে পরিকল্পনা করা উচিত, যাতে গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ সক্ষমতা ও অগ্রাধিকারে দক্ষতার সঙ্গে সম্পদ বরাদ্দ করা যায়।

একটি শক্তিশালী ও টেকসই প্রতিরক্ষাব্যবস্থার জন্য অর্থনীতি মজবুত করাটা একান্ত অপরিহার্য। বাস্তবিক অর্থে, ভারতকে ঘিরে তৈরি হওয়া চ্যালেঞ্জকে সরকার এমন একটি সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করতে পারে, যাতে শুধু আইএমএফ-নির্ধারিত সাময়িক সমন্বয়মূলক পদক্ষেপেই সীমাবদ্ধ না থেকে, সাহসী ও ব্যাপক অর্থনৈতিক সংস্কার গ্রহণ করা যায়। কারণ জাতীয় নিরাপত্তা এমনটাই দাবি করে।

এই সংস্কারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হওয়া উচিত কর-ভিত্তি (ট্যাক্স বেজ) প্রসারিত করা, ভর্তুকি কমানো এবং রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর বেসরকারীকরণ দ্রুততর করা। দেশীয় সম্পদ আহরণকে অবশ্যই অগ্রাধিকার দিতে হবে। কারণ বহির্বিশ্ব থেকে ধার নেওয়ার নীতি ইতিমধ্যে পাকিস্তানকে অসহনীয় ঋণের মধ্যে ফেলে দিয়েছে।

ভারতের পক্ষ থেকে অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করে পাকিস্তানকে দুর্বল করার যে কৌশল থাকতে পারে, তার সর্বোত্তম জবাব হতে পারে এমন অর্থনৈতিক সংস্কার, যা দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে এবং আত্মনির্ভরতার পথে নিয়ে যাবে। ভারতের চ্যালেঞ্জ তাই একটি সম্ভাবনার জানালা, যেটি আর সাবধানী, পুরোনো ধাঁচের অর্থনৈতিক কৌশলের কারণে নষ্ট করা যাবে না।

ভারতের তরফ থেকে সিন্ধু পানিচুক্তি বাতিল বা স্থগিতের হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া সতর্কভাবে মূল্যায়ন ও নির্ধারণ করা উচিত। কারণ এটি নিঃসন্দেহে পাকিস্তানের নিরাপত্তার ও অস্তিত্বের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। এ প্রসঙ্গে সমস্ত আইনি বিকল্প খতিয়ে দেখা জরুরি এবং একবার যেই পথ নির্ধারণ করা হবে, সেটির প্রতি যথাযথ কূটনৈতিক সমর্থন গড়ে তুলে দৃঢ়তার সঙ্গে অনুসরণ করতে হবে।

এ ক্ষেত্রে পাকিস্তানের পক্ষে যেটি কাজ করতে পারে তা হলো, আন্তর্জাতিক মহলে ভারতের চুক্তি স্থগিতের সিদ্ধান্তের প্রতি সমর্থনের চেয়ে বরং অসন্তোষই বেশি দেখা গেছে। এমনকি, যুক্তরাষ্ট্রও ব্যক্তিগত যোগাযোগে নয়াদিল্লিকে সিন্ধু পানিচুক্তি মেনে চলার এবং তা বজায় রাখার পরামর্শ দিয়েছে।

এটিও এমন একটি সময়, যখন কূটনীতি শুধু কথায় নয়, বাস্তব কর্মপন্থায়ও দেশের প্রথম প্রতিরক্ষা স্তর হওয়া উচিত। পাকিস্তানকে টিকে থাকতে হলে এই যুদ্ধ কেবল সামরিক নয়, বরং কূটনৈতিক ময়দানেই লড়তে হবে। আমাদের কূটনৈতিক কৌশল হওয়া উচিত কেবল তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ার ওপর ভিত্তি করে নয়, বরং সুদূরপ্রসারী কৌশলের ওপর। শুধু কয়েকটি পশ্চিমা দেশের রাজধানীতে একটি প্রতিনিধিদল পাঠিয়ে কূটনীতিকে কার্যকর করা সম্ভব নয়। পররাষ্ট্রনীতি হওয়া উচিত কৌশলগত লক্ষ্য পূরণের মাধ্যম, তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ার নয়।

আসলে, এটি উপযুক্ত সময় একটি বিস্তৃত পররাষ্ট্রনীতির পর্যালোচনা করার, যাতে করে একটি সুসংগঠিত কৌশলগত পরিকল্পনা তৈরি করা যায়। এই পর্যালোচনা আরও জরুরি হয়ে উঠেছে, কারণ জেনারেল পারভেজ মোশাররফের সময় থেকে আজ পর্যন্ত কোনো পূর্ণাঙ্গ পররাষ্ট্রনীতির মূল্যায়ন হয়নি। যদিও এই সময়ের মধ্যে বিশ্বরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন এবং ভূরাজনৈতিক পালাবদল ঘটেছে।

একটি পররাষ্ট্রনীতি পর্যালোচনা পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে নীতিকে অভিযোজিত করতে, নতুন সুযোগ কাজে লাগাতে এবং ভারতের চ্যালেঞ্জের পরিপ্রেক্ষিতে অগ্রাধিকারগুলো পুনর্নির্ধারণে সহায়ক হবে। এটি বিদ্যমান নীতিগুলোর কার্যকারিতা মূল্যায়ন করতে, উন্নতির ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করতে এবং নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য নীতি পুনর্গঠন করতেও সাহায্য করবে।

এই পর্যালোচনাটি বিশেষভাবে প্রয়োজনীয়। কারণ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতি মূলত বিভিন্ন আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ঘটনার প্রতি তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ার ভিত্তিতে পরিচালিত হয়েছে, যা কোনো সুসংগঠিত ও সুপরিকল্পিত কৌশলের অংশ ছিল না। একটি পূর্ণাঙ্গ পর্যালোচনা বিদেশে পাকিস্তানের কূটনৈতিক মিশনগুলোকে নীতিগত প্রস্তাব দেওয়ার সুযোগ এনে দেবে।

যেহেতু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পররাষ্ট্রনীতিতে সামরিক বাহিনী প্রধান ভূমিকা পালন করেছে, তাই এই পর্যালোচনা বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রধান প্রধান ইস্যুতে অর্থবহ সংলাপের সুযোগ সৃষ্টি করবে, তাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে আরও ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত করবে এবং সমন্বয় ও তথ্য আদান-প্রদানের মান বাড়াবে।

ভারতের স্থায়ী ও বহুমাত্রিক হুমকির মুখে পাকিস্তানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য যা করতে হবে, তার সম্পূর্ণ তালিকা এটি নয়; তবে সবচেয়ে জরুরি পদক্ষেপগুলো যা নিতে হবে, তা এখানে বর্ণনা করা হয়েছে। এর ওপরও জাতীয় ঐক্য বজায় রাখা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।

(পাকিস্তানের ডন পত্রিকায় প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে অনূদিত)

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গৌণ ইস্যুর চাপে আসলটাই উধাও

দেশে বিদ্যমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় জনগণের কাছ থেকে সংগ্রহ করা অর্থ কারখানার মালিক ও ব্যবসায়ীদের জন্য বিভিন্ন অবকাঠামো ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা গড়ার কাজে ব্যয় করা হলেও বিনিময়ে তাদের কাছ থেকে যথাযথভাবে প্রত্যক্ষ কর আহরণ করা হয় না। শিল্পমালিক ও ব্যবসায়ীরা শ্রমিকদের স্বল্প মজুরি দিয়েই উৎপাদন ও ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারেন।

আজাদুর রহমান চন্দন
জুলাই সনদ, গণভোট, পিআর পদ্ধতি, ইত্যাদি নিয়ে রাজনীতির ময়দান উত্তপ্ত হতে শুরু করেছে।	ছবি: সংগৃহীত
জুলাই সনদ, গণভোট, পিআর পদ্ধতি, ইত্যাদি নিয়ে রাজনীতির ময়দান উত্তপ্ত হতে শুরু করেছে। ছবি: সংগৃহীত

আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণাটা যখন দেওয়া হয়েছিল, তখন থেকে অনেক মানুষকে তা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করতে দেখা যাচ্ছিল। নির্বাচনের ঘোষিত সময়সীমা যত এগোচ্ছে, নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা যেন ততই বাড়ছে। কোনো কোনো দলের নেতারা তো ইদানীং রাখঢাক না করেই বলে দিচ্ছেন, নির্বাচন না-ও হতে পারে, কিংবা নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন না হলেও গণভোট হতেই হবে। কোনো কোনো মহল থেকে আবার তাদের পছন্দমাফিক কাজ না হলে নির্বাচন হতে না দেওয়ার হুমকি আসছে আগে থেকেই। কখনো কখনো মান-অভিমানের খেলা শেষে তাদের সব চাওয়াই পূরণ করা হচ্ছে। রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার পর জুলাই সনদে সই করেছে বামপন্থী চারটি দল ছাড়া অন্যান্য দল। গণ-অভ্যুত্থানের পর গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) কিছু শর্ত আরোপ করে সনদে সই করা থেকে সাময়িকভাবে বিরত থাকে। পরে সনদ বাস্তবায়নের দলিল প্রণয়ন করা হয়। তবে এই সনদে সই করে দেশে ক্রিয়াশীল সবচেয়ে বড় দল বিএনপি যে এখন বিপাকে পড়েছে, তা ধরে নেওয়া যায়।

কয়েক মাস ধরে বিএনপির নেতারা মুক্তিযুদ্ধ ও বাহাত্তরের সংবিধানের মূলভিত্তির পক্ষে মনভোলানো কথাবার্তা বলে এলেও শেষ পর্যন্ত জাতীয় সনদে সই করেছে। অনেকে মনে করেন, ফেব্রুয়ারিতে যাতে নির্বাচনটা হয়ে যায়, সে জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে অনুকূলে রাখতেই দলটি সনদে সই করেছে। ফাঁদে পড়ার বিষয়টি বুঝতে পেরে এখন সুর পাল্টেছে। বিএনপি যে ফাঁদে পড়েছে, তার আভাস মেলে দলীয় কোনো কোনো নেতার বক্তব্যেও। দলটির চেয়ারপারসনের এক উপদেষ্টা গত শনিবার এক আলোচনা সভায় বলেছেন, ‘বিএনপি এখন এমন অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে যে, যাদের প্রয়োজন হয়, তারা নিজেদের স্বার্থে এ দলকে ব্যবহার করে নিচ্ছে। বিএনপি আজ অর্জুনগাছের ছালের মতো—যার দরকার পড়ে, কেটে নেয়।’

বিএনপির নেতাদের অভিযোগ, আলোচনাকালে এবং সনদে সই করার সময় বলা হয়েছিল, সব রাজনৈতিক দল যেসব বিষয়ে একমত, সেগুলো সই হয়ে গেল। যেসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত নয়, তাদের ‘নোট অব ডিসেন্ট’ বা জোরালো আপত্তি আছে, সেগুলোও লিপিবদ্ধ করে রাখা হবে। কিন্তু জাতীয় ঐকমত্য কমিশন যে প্রস্তাব প্রধান উপদেষ্টার কাছে উত্থাপন করেছে, তাতে নোট অব ডিসেন্টের কোনো উল্লেখই নেই। কমিশন আবার নতুন করে কিছু বিষয় জুড়ে দিয়েছে। এটাকে অন্যায় এবং জনগণের সঙ্গে প্রতারণা আখ্যা দিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘জুলাই সনদে আমরা যে অংশে সই করেছি, তার দায়দায়িত্ব আমরা নেব। কিন্তু যেটা আমরা সই করিনি, সেটার দায় আমরা নেব না।’ দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ তো আরও এক ধাপ এগিয়ে বলেছেন, ‘জুলাই সনদ নিয়ে অনেক কথাবার্তা হচ্ছে। আমি একজন ক্ষুদ্র রাজনৈতিক নেতা ও কর্মী হিসেবে মনে করি, জুলাই সনদ দেশের জনগণের প্রয়োজন নেই। কিছু কিছু ব্যক্তি, যাঁরা এখানে উপদেষ্টা হয়েছেন, যাঁরা ভবিষ্যতে বাংলাদেশে বসবাস করতে গেলে অনেক পর্যায়ের সম্মুখীন হবেন, তাঁদের জন্য হয়তো জুলাই সনদের প্রয়োজন আছে।’

অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি দল জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোট অনুষ্ঠানের এবং সংসদে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর পদ্ধতিতে করার দাবিতে মাঠ গরম করছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনও জাতীয় নির্বাচনের আগে অথবা একই দিনে গণভোট অনুষ্ঠানের প্রস্তাব দিয়েছে। জুলাই সনদে এত এত প্রস্তাবের ওপর কীভাবে গণভোট হবে। ধরা যাক, কোনো নাগরিক কোনো বিষয় পুরোটা, কোনো বিষয়ের অর্ধেকটা, আবার কোনোটার সিকিভাগ মানেন। তার পক্ষে কি এককথায় ‘হ্যাঁ’ কিংবা ‘না’ বলে রায় দেওয়া সম্ভব? গণভোট ও পিআর পদ্ধতি প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিবের ভাষ্য, ‘পিআর হবে কি না, ওটা আগামী পার্লামেন্ট সিদ্ধান্ত নেবে। গণভোট প্রসঙ্গে আমরা রাজি হয়েছি। আলাদা করে গণভোটের প্রয়োজন ছিল না; কিন্তু আমরা বলেছি, নির্বাচনের দিনই গণভোট করা হোক, এতে খরচ কমবে। কারণ, আলাদা গণভোটে হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ হবে। তাই নির্বাচনের ব্যালটে দুটি বিষয় থাকবে—

একটি সংসদ নির্বাচন, অন্যটি গণভোট। এটা ছিল একটি যুক্তিসংগত সিদ্ধান্ত। এটা না করে এখন আবার তাঁরা গণভোট আগে হতে হবে, তারপর নির্বাচন হবে—এটা বলছেন।’ জুলাই সনদ, গণভোট, পিআর পদ্ধতি, ইত্যাদি নিয়ে রাজনীতির ময়দান উত্তপ্ত হতে শুরু করেছে।

চলছে পারস্পরিক দোষারোপের খেলা। জামায়াতের নেতারা খোলামেলাভাবে বিএনপিকে সংস্কারবিরোধী হিসেবে চিহ্নিত করছেন। এতে বাড়ছে দুই পক্ষের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি। বিএনপির মহাসচিব বলছেন, ১৯৭১ সালে যারা স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল, তারা এখন চব্বিশের জুলাই আন্দোলনকে বড় করে দেখাতে চায়। বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল তো জামায়াতে ইসলামীর ‘সাংগঠনিক িষিদ্ধকরণ’ এবং মুক্তিযুদ্ধবিরোধী রাজনীতির পুনরুত্থান রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এসবের ফলে জনমনে শুধু নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তাই নয়, আতঙ্কও বাড়ছে।

এমনিতেই এক বছরের বেশি সময়েও উদ্ধার হয়নি পুলিশের লুট হওয়া বিপুলসংখ্যক অস্ত্রের উল্লেখযোগ্য অংশ। বলা হচ্ছে, জাতীয় নিরাপত্তা জোরদার করতে তরুণদের প্রশিক্ষিত করার জন্য এটি পাইলট প্রকল্প। ভবিষ্যতে এ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নাগরিকেরা দেশের রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবে এবং দেশের সংকটকালে প্রয়োজনে শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নিতে পারবে।

দেশের সামরিক ও ভৌগোলিক বাস্তবতায় এটি নাকি অপরিহার্য। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নাগরিকদের জন্য বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্রচলন থাকলেও তা পরিচালিত হয় সে দেশের জাতীয় নীতি-কৌশলের আলোকে। বাংলাদেশে আলোচিত প্রকল্পে সে রকম কোনো জাতীয় কৌশল বা নীতি অনুপস্থিত। জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে এই ধরনের কোনো প্রকল্প যদি নেওয়া হয়, তাহলে তা প্রতিরক্ষা কিংবা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে হওয়াই বাঞ্ছনীয়।

যে সনদ নিয়ে এত জল ঘোলা করা হচ্ছে, সেটি বাস্তবায়িত হলে কি সমাজ ও রাষ্ট্রে বিদ্যমান বৈষম্য আদৌ দূর হবে বা কমবে? কারসাজির মাধ্যমে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় যে সিন্ডিকেট, তার কি বিলোপ ঘটবে? সর্বশেষ গত শনিবার সিলেটে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা শ্রমিকদের আন্দোলনে মদদ দেওয়ার অভিযোগে সিপিবি ও বাসদের ২৩ নেতা-কর্মীকে পুলিশ আটক করেছে।

দেশে বিদ্যমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় জনগণের কাছ থেকে সংগ্রহ করা অর্থ কারখানার মালিক ও ব্যবসায়ীদের জন্য বিভিন্ন অবকাঠামো এবং প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা গড়ার কাজে ব্যয় করা হলেও বিনিময়ে তাদের কাছ থেকে যথাযথভাবে প্রত্যক্ষ কর আহরণ করা হয় না। শিল্পমালিক ও ব্যবসায়ীরা শ্রমিকদের স্বল্প মজুরি দিয়ে উৎপাদন ও ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারেন। কর্মস্থলের নিরাপত্তার পেছনেও যথেষ্ট অর্থ ব্যয় করতে তাঁরা নারাজ। উল্টো তাঁরা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে কিংবা আমদানি-রপ্তানির নামে লুটপাট ও অর্থ পাচার করেন। বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে হলে এই অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বদলানো জরুরি। এ বিষয়ে জুলাই সনদে কোনো দিকনির্দেশনা কিন্তু খুঁজে পাওয়া যায় না। অথচ নব্বইয়ে এরশাদ পতনের পর বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় গঠিত টাস্কফোর্স তিন মাসের মধ্যে যে দলিল প্রণয়ন করেছিল, তাতে আত্মনির্ভর উন্নয়নের রূপরেখা ছিল স্পষ্ট। বৈষম্য কমানোরও নানা পদক্ষেপের প্রস্তাব ছিল।

লেখক: সাংবাদিক ও গবেষক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভবিষ্যৎ গোল্লায় গেলেও রস বেঁচে থাকুক

অজয় দাশগুপ্ত
সেন্ট মার্টিন আমাদের আশার দ্বীপ। অর্থনৈতিক আর পর্যটনের ভরসার দ্বীপ। ছবি: সংগৃহীত
সেন্ট মার্টিন আমাদের আশার দ্বীপ। অর্থনৈতিক আর পর্যটনের ভরসার দ্বীপ। ছবি: সংগৃহীত

হাসির রাজা শিবরাম চক্রবর্তী। তাঁর একটা গল্পের কথা মনে পড়ছে। এক যে ছিল দুই ভাই। হর্ষবর্ধন আর গোবর্ধন। তিন কুলে কেউ নাই তাদের। হর্ষবর্ধন বড় ভাই হলেও পিতৃতুল্য। একদিন কী একটা কাজে ব্যস্ত বড় ভাই। তাকে খুব বিরক্ত করছিল ছোট ভাই গোবর্ধন। বিরক্ত হয়ে বড় ভাই বললেন, ‘তুই এখান থেকে ভাগ, এবার গোল্লায় যা।’ যেই কথা, সেই কাজ। ছোট ভাই ভাবল, ‘দাদা যে বলল গোল্লায় যেতে, তা সেখানে যাব কী করে?’ ভাবতে ভাবতে একসময় ঠান্ডা পানি পান করার জন্য ফ্রিজ খুলতেই দেখল, একটা পাত্রে বেশ কয়েকটা রসে জবজবে রসগোল্লা। সঙ্গে সঙ্গে ব্রেইন বা মগজ খুলে গেল তার। ‘আহা! বড় ভাই বলে কথা! ভাই তো আমাকে এই গোল্লাতেই যেতে বলেছে।’ ভাবল, ‘আমি যেতে না পারি, গোল্লা আমার ভেতর গেলেই তো কেল্লা ফতে!’ টপাটপ সব কটা রসগোল্লা মুখে পুরে নিয়েছিল গোবর্ধন। কাজ শেষে বড় ভাই যখন তার আগত বন্ধুদের আপ্যায়ন করতে রসগোল্লা আনতে ফ্রিজের দুয়ার খুলেছিল এবং তারপরের ঘটনা লেখার চেয়ে অনুমান করে নেওয়াই ভালো।

গল্পটা মনে পড়ল এই কারণে, আমাদের এখন প্রায় সবকিছুই গোল্লায় গেছে অথবা গোল্লা আমাদের ভেতরে চলে গেছে। যেমন ধরুন রাজনীতি। এর কোন দিকটা গোল্লায় আর কোন দিকটা গোল্লার বাইরে, তা নির্ণয় করা খুব কঠিন। আমরা যারা দেশে থাকি না, দেশের বাইরে বসবাস করি, আমাদেরও এই রাজনীতি ছাড় দেয় না। মজার বিষয় হচ্ছে, এখন দেশের চেয়ে দেশের বাইরেই রাজনীতির বাজার জমজমাট। হবে নাই-বা কেন? ভবিষ্যতে যাঁরা দেশ চালাবেন বা চালাতে পারবেন বলে ধারণা করা হয়, চব্বিশের গণজাগরণের বাইরে যেসব নেতা, তাঁদের বেশির ভাগ কিন্তু দেশের বাইরে থাকেন। কেউ লন্ডনে, কেউ আমেরিকায়, কেউবা দিল্লিতে। তাঁদের জনপ্রিয়তাও সে রকম। সবচেয়ে বড় কথা, চব্বিশের তরুণ তুর্কি নামে পরিচিতরা অতি অল্প সময়ে তাঁদের ইমেজ ফিকে করে ফেললেও বাইরে যাঁরা আছেন, তাঁরা টিকে আছেন। শুধু টিকে থাকা কেন বলছি, মাঝে মাঝে তাঁরা অনলাইনে এমন সব ভাষণ-বিবৃতি বা আদেশ-উপদেশ দিয়ে থাকেন, যা দেখে-শুনে-পড়ে জাতি নড়েচড়ে বসতে বাধ্য হয়।

দেশে কি মেধা আর প্রজ্ঞার এতটা আকাল? এ রকম নানা কথা নানা জনে বলে। অত গভীর আলাপে না গিয়েও বলা যায়, এটাও আমাদের গোল্লায় যাওয়ার এক তরিকা। খুব স্বাভাবিকভাবে দেশের ভেতরে থেকে যাঁরা লড়াই করেন বা রাজনীতি করেন, তাঁরা জানেন কত ধানে কত চাল। তাঁদের যা যা বাধাবিপত্তি বা অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়, তার আলোকেই পথ ঠিক করেন তাঁরা। যত মেধাবী আর যত বড় লবিস্টই হন না কেন, উড়ে গিয়ে জুড়ে বসা মানুষ রসগোল্লার রস খাবেন ঠিকই, কিন্তু শেষতক কারও জন্য আর কিছু থাকবে কি না, তার গ্যারান্টি নেই।

বেশ অনেকটা পথ এগিয়ে গিয়েছিলাম আমরা। এটা বললে আবার অনেকে না বুঝে ‘ফ্যাসিস্ট’ নামের এক গোল্লার ভেতরে ঠেলে দিতে চায়। তা দিক। কিন্তু এগিয়ে যাওয়ার প্রমাণগুলো তো আছে। সে যাত্রা স্থগিত বা বন্ধ করার পেছনে যে অপশক্তি বা অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা, সেটার দায় স্বীকার করতেই হবে অপরাধীদের। আগের আমলের যাবতীয় ভালো দিক খারাপ করার জন্য তাঁদের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন একাই এক শ! অথচ তাঁর ভেতরেও কোনো অনুশোচনা নেই। কোনো এক অজানা গর্ত থেকে বেরিয়ে মাথা উঁচু করে বলেন, ‘তোমাদের আমি আবার গোল্লায় নিলেও তোমরা আমাকে মনে রেখো।’ অর্থনীতির কথা বলতে গেলে গোল্লাগুলো শূন্য মনে হবে। তখন তত্ত্ব আর তথ্য বলবে, সব শূন্য যোগ করলেও যোগফলে কোনো সংখ্যার পয়দা করা যায় না।

সেন্ট মার্টিন আমাদের আশার দ্বীপ। অর্থনৈতিক আর পর্যটনের ভরসার দ্বীপ। খবরে দেখলাম, সে-ও এখন গোল্লায় যাওয়ার পথে। কী ঘটছে জানুন:

‘নানা বিধিনিষেধের বেড়াজালে ১ নভেম্বর থেকে প্রবালদ্বীপ সেন্ট মার্টিন পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হলেও কক্সবাজার থেকে একটিও জাহাজ ছাড়েনি। সকালজুড়ে শহরের নুনিয়ারছড়ার বিআইডব্লিউটিএ ঘাটে ছিল সুনসান নীরবতা, পর্যটকের আনাগোনাও ছিল না বললেই চলে।

সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, সকালে মাত্র চারজন যাত্রী ঘাটে এসেছিলেন, পরে তাঁরাও ফিরে যান। তিনি বলেন, ‘কক্সবাজার থেকে এত দীর্ঘ সমুদ্রপথে দিনে গিয়ে দিনে ফেরার সিদ্ধান্তে পর্যটক পাওয়া যাবে না। এই বাস্তবতায় জাহাজ চালানো সম্ভব নয়।’

সরকারের নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, দিনে সর্বোচ্চ ২ হাজার পর্যটক যাতায়াত করতে পারবেন। এতে করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জাহাজমালিকেরা। বাহাদুর বলেন, কক্সবাজার থেকে সেন্ট মার্টিন পৌঁছাতে সময় লাগে সাত থেকে সাড়ে সাত ঘণ্টা; আসা-যাওয়ায় মোট ১৪ থেকে ১৫ ঘণ্টা। ফলে দ্বীপে এক ঘণ্টা অবস্থানের সুযোগে পর্যটকেরা আগ্রহ হারাচ্ছেন। দিনে গিয়ে দিনে ফিরতে আগ্রহী পর্যটক প্রতিদিন গড়ে ১০০ থেকে ১৫০ জন। কিন্তু একটি জাহাজ চালু রাখতে অন্তত ৩৫০ যাত্রী দরকার। একবার যাত্রায় খরচ পড়ে প্রায় ১০ লাখ টাকা। তাই কম যাত্রী নিয়ে জাহাজ চালানো সম্ভব নয়।’

যা! এবার পর্যটন, তা-ও কি না দেশীয় পর্যটন, সে-ও যাওয়ার পথে। ওই যে গল্পটা—এক ভাই রসগোল্লা এনে রাখবে আর এক ভাই বুঝে বা না বুঝে তা সাবাড় করবে, এটাই আমাদের বাঙালিদের নিয়তি।

তবু আমাদের আশা নিয়েই বাঁচতে হয়। দেশের বাইরে যারা, তারা যেমন আশায় দিন গোনে; দেশের ভেতরের লোকজন আশাতেই বেঁচে আছে। রসগোল্লা শেষ হলেও রস তো থাকুক। রসেবশেই বেঁচে থাকে বাঙালি। সেটা যেন ভুলে না যায় কেউ।

লেখক: অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী কলামিস্ট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাংলাদেশের জন্য সুখবর

সম্পাদকীয়
বাংলাদেশের জন্য সুখবর

বাংলাদেশে এখন রাজনীতিতে অস্থিরতা বিরাজ করছে। জুলাই সনদ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনৈক্য দেখা যাচ্ছে। নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের যে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল, সেখানেও হতাশা বিরাজমান। ঘুষ, দুর্নীতি, অপকর্ম, সংঘাত— কোনোটিই যখন স্বস্তি দিচ্ছে না—সমাজ, রাষ্ট্রে যখন নানা নেতিবাচকতায় অস্থিরতা বিরাজ করছে, সে সময়ে বাংলাদেশের জন্য একটা সুখবর কিছুটা হলেও স্বস্তি দিতে পারে।

রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেসের পক্ষে জার্মান বহুজাতিক প্রকাশনা সংস্থা স্প্রিঙ্গারের পরিবেশবিষয়ক সাময়িকী অ্যাম্বিওতে প্রকাশিত একটি গবেষণামতে, বিশ্বের ৬১টি দেশের মধ্যে প্রকৃতির সঙ্গে নিবিড় সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ চতুর্থ স্থান লাভ করেছে। নেপাল তালিকার শীর্ষে আর ইউরোপের স্পেন ও কানাডা, জাপান, ইসরায়েলসহ কয়েকটি দেশ রয়েছে একেবারে তলানিতে। যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রিয়ার একদল বিজ্ঞানীর পরিচালিত এই গবেষণা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, অর্থনৈতিক অগ্রগতি এবং আধুনিকতার ভিড়েও প্রকৃতির প্রতি আমাদের সহজাত টান আজও অমলিন রয়েছে।

৬১টি দেশের ৫৭ হাজার মানুষের অংশগ্রহণে পরিচালিত এই গবেষণায় সামাজিক, অর্থনৈতিক, ভৌগোলিক ও সাংস্কৃতিক বিষয়গুলো কীভাবে প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্ক নির্ধারণ করে, তা অনুসন্ধানের চেষ্টা করা হয়েছে। এটি হচ্ছে বিশ্বে এ বিষয়ের প্রথম গবেষণা।

গবেষণার তথ্যমতে, প্রকৃতির সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক শুধু মানসিক প্রশান্তিই দেয় না, এর সুদূরপ্রসারী ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে। যেসব দেশের মানুষের প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্ক বেশি নিবিড়, তাদের সুস্থ থাকার হারও বেশি। এসব দেশের মানুষ কাজের ক্ষেত্রে পরিবেশবান্ধব উপায়গুলো অনুসরণে বেশি আগ্রহী। অন্যদিকে, যে দেশগুলোর মানুষ এ সম্পর্কে কম নিবিড়, সেসব দেশে জীববৈচিত্র্য বেশি ঝুঁকিতে।

প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের নিবিড় সম্পর্ক পরিবেশ সুরক্ষার একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করে। বাংলাদেশের জন্য এই সফলতা ইঙ্গিত দেয়, অর্থনৈতিক উন্নয়নের ডামাডোলে স্বীকৃতির মর্যাদা যেন আমরা হারিয়ে না ফেলি। আমাদের উন্নয়ন পরিকল্পনায় আগামীতে অবশ্যই এ বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।

শিক্ষার পাঠ্যক্রমে প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক নিয়ে বিষয় যুক্ত করাও একান্ত জরুরি। একই সঙ্গে পরিবেশ-প্রকৃতির কথা বিবেচনায় রেখে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনতে হবে, যার মধ্য দিয়ে আমাদের ঐতিহ্যগত পরিবেশপ্রীতি টেকসই উন্নয়নের চালিকাশক্তি হতে পারে।

যদিও আমরা পরিবেশ-প্রকৃতি ধ্বংস করে বিগত সময়ে নানা উন্নয়নমূলক মেগা প্রকল্প নিয়েছি। নীতিনির্ধারকেরা এখনো সেসবের ক্ষতির দিকগুলো বুঝতে পারছেন না।

এই গবেষণা থেকে শিক্ষণীয় হলো, উচ্চ মাথাপিছু আয় এবং শিল্পায়নের চরম শিখরে পৌঁছানোই প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের নিবিড় সম্পর্ক বিনির্মাণের একমাত্র মানদণ্ড হতে পারে না; বরং

এটি একটি সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার, যা দৈনন্দিন জীবনের অংশ। এই ঐতিহ্য রক্ষা করার জন্য ভবিষ্যতে সবাইকে আরও সচেতন হতে হবে। সেই সঙ্গে পরিকল্পনা, উদ্যোগ গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়নে রাষ্ট্রকে ভূমিকা নিতে হবে। এখন দরকার এই অর্জনকে আরও উঁচুতে নেওয়ার জন্য সব ধরনের করণীয় ও প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সাক্ষাৎকার

প্রশাসন অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেয়নি

মোশাহিদা সুলতানা।

মোশাহিদা সুলতানা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। তিনি ত্রৈমাসিক পত্রিকা ‘সর্বজনকথা’র প্রকাশক এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে চা-দোকানি, ভবঘুরে ও হকার উচ্ছেদের কারণ এবং প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে তিনি কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার মাসুদ রানার সঙ্গে।

মাসুদ রানা
আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০২৫, ১৫: ৪৩

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে চা-দোকানি এবং হকার উচ্ছেদের মূল কারণ কী? শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা, নাকি অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে?

চা-দোকানি ও হকাররা ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করেন, এ রকম তথ্য আমরা এর আগে শুনিনি বা পাইনি। যেটা আমরা জেনেছি, এখানে কিছু ভবঘুরে, পাগল থাকেন; বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীরা তাঁদের কাছে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। এখানে মাদকাসক্তদের আড্ডার বিষয়টা বড় করে উপস্থাপন করা হয়। সেসবের সঙ্গে হকারদের কোনো সম্পর্ক আছে বলে আমাদের ধারণা নেই। ধারণা নেই বলতে বোঝাতে চাচ্ছি, আসলে তাঁদের সঙ্গে এসবের কোনো সম্পর্ক নেই। কারণ, যদি সম্পর্ক থাকত, তাহলে ক্যাম্পাসের পাশে যে শাহবাগ থানা আছে, তারা তা জানত। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কারা মাদক বিক্রি করে, সেটা তারা জানে এবং চাইলে তাদেরকে ধরতে পারে। কিন্তু চা-বিক্রেতা বা হকারদের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।

ডাকসুর কোনো প্রতিনিধি কি এভাবে হকার উচ্ছেদ করতে পারেন? এটা তো প্রশাসনের দায়িত্বে হওয়ার কথা?

সত্যি বলতে কি, ডাকসু প্রতিনিধিদের এগুলো করার কথা নয়। এটা যাঁরা করেছেন, তাঁরা নিয়মবহির্ভূতভাবেই করেছেন। এটা করার কোনো এখতিয়ার তাঁদের নেই। তাঁরা বরং প্রশাসনের কাছে দাবি তুলতে পারেন, আপনারা এখান থেকে চা-দোকানি ও হকারদের সরিয়ে নিন এবং এখানে একটা বিকল্প ব্যবস্থা করুন। এখানে চা-দোকানি বা হকাররা কেন এসেছেন? ক্যাম্পাসে সস্তা খাবারের চাহিদা আছে বলেই তাঁরা এখানে ব্যবসা করতে পারছেন। এখানে মেট্রোরেলের কারণে মানুষের যাতায়াত আছে। দুপুর ও রাতের খাবারের পরেও শিক্ষার্থীদের খিদে লাগাটা স্বাভাবিক ব্যাপার। তাঁরাই কিন্তু এসব দোকানের বড় কনজ্যুমার বা ভোক্তা।

এখন তাঁরা যদি বলেন, এখানে কেন তাঁরা এলেন, কেন তাঁদের ঢুকতে দেওয়া হলো? তাহলে বলতে হবে, সেটা তো দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। তাঁরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছেন। সবার জানা থাকার কথা, জুলাই আন্দোলনের সময় এই মানুষগুলোই শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। অনেক সময় তাঁরা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিয়েছেন। শিক্ষার্থীরা বিপদগ্রস্ত হলে তাঁদের আশ্রয় দিয়েছেন এবং বিভিন্নভাবে শিক্ষার্থীদের সাহায্যও করেছেন। এভাবে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে হকার বা চা-দোকানিদের একটা দীর্ঘ সময়ের সম্পর্ক তৈরি হয়েছে।

আরেকটা বিষয় লক্ষ করার মতো, তাঁদের বেশির ভাগই একসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যানটিন বয় ছিলেন নতুবা ক্যানটিনের অন্য কাজ করেছেন। এ ধরনের লোকজন অবসর সময়ে এই কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। এভাবে তাঁরা আবার ক্যাম্পাসের ইকোসিস্টেমের অংশ হয়ে গেছেন। এঁদেরকে বহিরাগত হিসেবে দেখার কোনো সুযোগ নেই।

উচ্ছেদ করা দোকানি বা হকারদের বিরুদ্ধে ‘মাদক কারবারি’র অভিযোগ আনা হয়েছে। ঢালাওভাবে সবাইকে অভিযুক্ত করা কতটা যৌক্তিক?

ক্যাম্পাসে একটা সিস্টেম থাকা দরকার। কাদেরকে এবং কীভাবে বসার অনুমতি দেওয়া হবে? এই অনুমতি যদি কেউ ভেতরে ভেতরে দিয়ে থাকে, কোনো চাঁদাবাজির ব্যাপার থাকে এবং সেখান থেকে কোনো অর্থ আয়ের ব্যাপার থাকে, তাহলে তাঁরা কোনোভাবেই সিস্টেমের মধ্যে আসতে চাইবেন না। সেটা আইনি পথ নয়। লিখিত অনুমতি না থাকায় মুখে মুখে একধরনের অনুমতি দেওয়ার মতো ব্যাপার। অর্থাৎ মৌখিক চুক্তি।

যেটাকে তাঁরা আইনবহির্ভূত বলছেন, সেটার কি কোনো লিখিত দলিল আছে? লিখিত থাকলে সেটা দেখার বিষয়। যদি কেউ নিয়ন্ত্রণ করতে চায়, তাহলে তার তো একটা নীতিমালা থাকা উচিত। সেই নীতিমালা অনুযায়ী হকারদের বসতে দেওয়া হবে। কিন্তু সেটা তো আমরা দেখতে পাচ্ছি না।

ডাকসুর পক্ষ থেকে উচ্ছেদ অভিযানে সরাসরি যুক্ত হওয়া কি সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব করার চেয়ে প্রশাসন বা অন্য কোনো গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষার ইঙ্গিত দেয় না?

প্রশাসন বা অন্য কোনো গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষার ইঙ্গিত দেয় কি না, সেটা তো আমরা জানি না। তবে অন্য কোনো গোষ্ঠীর স্বার্থ জড়িত থাকতে পারে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের এ ধরনের কাজ করার কথা নয়। এর মধ্যে আরও কিছু ঘটনা ঘটেছে। আমি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখেছি, বিভিন্ন জায়গায় স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে, সেখানে দু-তিন রাতের মধ্যে দোকান বসানো হয়েছে। এই দোকানগুলো বসানো হয়েছে নতুন প্রশাসন আসার পর। তাঁরা কীভাবে এখানে এসে দোকান খুলতে পারলেন? এখানে নিশ্চয় কোনো গোষ্ঠীস্বার্থের ব্যাপার আছে, যারা এই নতুন দোকানিদের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। অনুমান করতে পারি, এখানে কোনো না কোনোভাবে একটা বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থ থাকতে পারে।

যে বামপন্থী ছাত্রনেতারা এসবের বিরোধিতা করেছেন, তাঁদেরকে ‘গাঞ্জাটিয়া’সহ আপত্তিকর শব্দে গালি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ধরনের ভাষার ব্যবহার কি ছাত্ররাজনীতির পরিবেশকে বিব্রত করে না?

যাঁরা এভাবে কথা বলছেন, তাঁদের একটা বিশেষ উদ্দেশ্য আছে। উদ্দেশ্যটা হলো, যাঁরা তাঁদের এসব অপকর্মে বাধা দিচ্ছেন, তাঁদের কোনো না কোনোভাবে মানুষের কাছে হেয় করা। আমাদের সমাজব্যবস্থা অনুযায়ী, কাউকে হেয়, অপমান করা এবং ট্যাগ দেওয়ার মধ্য দিয়ে এমনভাবে চাপ প্রয়োগ করা হয়, যেন তাঁরা ভবিষ্যতে কোনো ঘটনায় প্রতিবাদ করতে না পারেন। সেই উদ্দেশ্য থেকে বামপন্থীদের ‘গাঞ্জাটিয়া’ এবং ভবঘুরে ও হকারদের সক্রিয়ভাবে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে। কোনো বামপন্থী বা সাধারণ শিক্ষার্থী বলেননি যে তাঁরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা চান না। বামপন্থী ছাত্রনেতারা কিন্তু একটা প্রক্রিয়ার কথা বলেছেন।

এখন হকার উচ্ছেদ করা হচ্ছে। কিছুদিন পর অন্য কোনো হকার অন্য প্রক্রিয়ায় ফিরে আসতে পারেন। তাঁরাই যদি আবার নারী শিক্ষার্থীদের গোপনে ছবি তোলেন বা ভিডিও করেন? সেটার কী হবে?

ডাকসু প্রতিনিধি সত্যি সত্যি নিরাপত্তার কথা ভেবে থাকলে আগে তাঁদেরকে জানতে হবে, কোন কোন বিষয় একজন নারী শিক্ষার্থীকে নিরাপত্তাহীন করে তোলে। শিক্ষার্থীরা কি অভিযোগ করেছেন, যাঁরা প্রকাশ্যে খাবার বিক্রি করেন, তাঁরা নারী শিক্ষার্থীদের যৌন কোনো ইঙ্গিত দিয়েছেন কিংবা শ্লীলতাহানি করেছেন? অদ্ভুত ব্যাপার হলো, ডাকসুর যে দুজন প্রতিনিধি হকার ও চা-দোকানিদের পিটিয়েছেন, তাঁরা কিন্তু অভিযোগ করেছেন, তাঁরা মাদকাসক্তি নির্মূল করছেন। ব্যাপারটিকে তাঁরা ঘুরিয়ে এমনভাবে উপস্থাপন করেছেন, যাঁরা এটার বিরুদ্ধে কথা বলেন, তাঁরা (বামপন্থীরা) যেন মুখ খুলতে না পারেন।

এই পুরো ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভূমিকা কতটা নিরপেক্ষ ছিল বলে আপনি মনে করেন?

আমার মনে হয়, ডাকসুতে যাঁরা প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁরা একটা বিশেষ দলের আজ্ঞাবহ হয়ে সুচিন্তিতভাবে এ কাজগুলো করছেন। ডাকসুর প্রতিনিধিরা প্রশাসনের ওপর ধারাবাহিকভাবে চাপ দিয়ে যাচ্ছেন, যাতে প্রশাসন কোনো ভূমিকা না নেয়। এই সুযোগে ছাত্রপ্রতিনিধিরা ভূমিকা গ্রহণ করছেন। এ কারণে আমি এ ঘটনাকে প্রশাসনিক ব্যর্থতা বলব।

ডাকসুর গঠনতন্ত্রে এসব না থাকার পরেও তাঁরা এটা কীভাবে করতে পারলেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তা কি এড়াতে পারে?

এই প্রশাসন কিন্তু আরও অনেক কিছু করেনি। তাদের দায়িত্বের কাজ না করার কারণে এখানে অনেক ঘটনা ঘটেছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সাম্য হত্যাকাণ্ড হয়েছে। ওই সময় কিন্তু ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের আসার নিষেধাজ্ঞা বলবৎ ছিল। তা সত্ত্বেও এ ঘটনা ঘটেছে। সেই হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রশাসন করতে পারেনি।

কোনো বহিরাগত ক্যাম্পাসে এসে কোনো নারী শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানি করেছে, সে রকম কিছু আমরা শুনিনি। কিন্তু আমরা দেখেছি, বিশ্ববিদ্যালয়েরই একজন কর্মচারী একজন নারী শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানি করেছেন। তাঁর অপরাধের কারণে তাঁকে থানায় পাঠানো হয়েছে। পরবর্তী সময়ে তাঁকে থানা থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয়েছে, তাঁকে ফুলের মালাও পরানো হয়েছে।

এই উদাহরণগুলো থেকে বোঝা যায়, প্রশাসন আসলে কোনো ধরনের অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেয়নি। তার কারণে ঘটনাগুলো বারবার ঘটছে।

গত সরকারের সময় ছাত্রলীগ যে অপকর্মগুলো করেছিল, বর্তমান ডাকসু নেতৃত্ব কি সেদিকে অগ্রসর হচ্ছেন বলে আপনি মনে করেন?

আগে ছাত্রলীগ যা করত, এখনকার ডাকসু প্রতিনিধিরা কম কিছু করছেন না। এগুলো নিয়ে তাঁদের মধ্যে কোনো অনুশোচনাও নেই। তাঁরা বলছেন, বামপন্থীদের ঠ্যাং ভেঙে দেবেন। যাঁরা ঘটনাগুলোর প্রতিবাদ করছেন, তাঁদেরকে হেয় করছেন। বিভিন্নভাবে তাঁদেরকে অপমান করা ও অপবাদ দেওয়া হচ্ছে।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, একটা ভিডিওতে দেখা গেছে, একজন ভবঘুরের ব্যক্তিগত ব্যাগ থেকে জিনিসপত্র বের করার সঙ্গে কনডম পাওয়ার ঘটনাটি প্রচার করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থী কি কারও ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন করতে পারেন? কিছুদিন আগে আমাদের একজন শিক্ষার্থী অভিযোগ করেছেন, দুই প্রক্টরিয়াল বডির সদস্য তাঁর মোবাইল ফোন চেক করেছেন। এই যে ধারাটা শুরু হয়েছে, তাতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাবে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভয়ভীতি ঢোকানো হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারবেন না।

সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

আজকের পত্রিকাকেও ধন্যবাদ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত