Ajker Patrika

প্রান্তিকের প্রাথমিক শিক্ষার হাল

আব্দুর রাজ্জাক
প্রান্তিকের প্রাথমিক শিক্ষার হাল

প্রাথমিক শিক্ষার অবস্থা নিয়ে আমি গ্রামাঞ্চলের কয়েকটি বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কথা বলেছি। একবাক্যে সব শিক্ষক স্বীকার করেছেন, স্কুল খোলার পরে তাঁরা বুঝতে পেরেছেন যে গত দেড় বছরে প্রাথমিক শিক্ষার ব্যাপক ক্ষতি হয়ে গেছে গ্রামাঞ্চলে।

২০২০ সালে যেসব শিশু শিশুশ্রেণি ও প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল, তারা যেটুকু শিখেছিল, সবকিছু ভুলে গেছে। শিশু থেকে প্রথম শ্রেণিতে যারা উঠেছে ২০২১ সালে তারা কোনো শিক্ষা পায়নি, এই সময়ে প্রথম থেকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উঠেছে যেসব শিক্ষার্থী, তারাও কোনো রকম শিক্ষা পায়নি। তারা তাদের শিক্ষকদেরও চেনে না। ক্লাসে বসা শিক্ষকদের কথা শোনা, সহপাঠীদের সঙ্গে মেলামেশা–সবকিছুই নতুন করে শুরু করতে হচ্ছে।

দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে যারা তৃতীয় শ্রেণিতে উঠেছে, তারা এখন প্রথম দিকের সবকিছু ভুলে গেছে। এমনকি ভালো করে ‘রিডিং’ও পড়তে পারে না।

উল্লিখিত চিত্র প্রান্তিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের; অর্থাৎ যেসব শিক্ষার্থী শুধু স্কুলের পড়ার ওপর নির্ভরশীল, তাদের ক্ষেত্রে এটা শতভাগ সত্য।

প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষ, তাঁদের আয় রোজগার কমে গিয়েছিল, যেসব গরিব মানুষ নিজেরা যেমন পড়াশোনা জানেন না, আর্থিক অসংগতির কারণে কোনো রকম প্রাইভেট শিক্ষক দিয়ে তাঁদের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেননি, তাঁদের ছেলেমেয়েরা এই দুই বছরে সবকিছু ভুলে গেছে, নতুন করে তাদের শিখতে হচ্ছে।

আগেই বলেছি, প্রান্তিক পর্যায়ের প্রাথমিক স্কুলে যারা এখন দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে, তারা পড়তে পারে না। শিশু ও প্রথম শ্রেণিতে যারা পড়ে, তারা কোনো কিছু লিখতে পারে না, পড়তে পারে না। এই হলো বর্তমানে অধিকাংশ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রাথমিক শিক্ষার হাল-হকিকত।

চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে যারা উঠেছে, ওই প্রান্তিক পর্যায়ে থেকে যারা আর্থিকভাবে অসচ্ছল, তাদের ইংরেজি শিক্ষা ও গণিত শিক্ষা নতুন করে আরম্ভ করতে হচ্ছে। আগে যেটুকু শিখেছিল তার অধিকাংশ ভুলে গেছে। আমি বলছি, এ অবস্থা উপজেলা শহরের বাইরের গ্রামাঞ্চলের স্কুলের প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের। এসব শিক্ষার্থীর সমাপনী পরীক্ষা হবে আগামী ডিসেম্বরে, এই তিন মাসে কতটুকু শিখতে পারবে তারা? এ রকম অবস্থা যদি চলে, সেটা ভেবে দেখা দরকার। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অধিক যত্নশীল না হলে তারা অপর্যাপ্ত শিক্ষা ও জ্ঞান নিয়ে পরবর্তী ক্লাসে উত্তীর্ণ হবে। এই অপূরণীয় ক্ষতি তাদের দীর্ঘদিন বহন করতে হবে; হয়তো সারা জীবনই বহন করতে হবে।

আমি এখানে শুধু সমস্যার কথা উল্লেখ করলাম। এর সমাধান করতে হবে যাঁরা প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত, তাঁদের। আমার মনে হয় সপ্তাহে ছয় দিন স্কুল খোলা রেখে, বিভিন্ন শিফট করে, নিবিড়ভাবে প্রান্তিক পর্যায়ের দরিদ্র শ্রেণির মানুষের সন্তানদের যত্নসহকারে পাঠদান করানো উচিত।
হিসাব করলে দেখা যাবে, এখনো আমাদের দেশে ৫০ শতাংশের বেশি মানুষ এই প্রান্তিক পর্যায়ের শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে সীমাবদ্ধ। তাই ৫০ শতাংশ মানুষের সন্তানদের এ রকম অন্ধকারে রেখে ভবিষ্যতের শিক্ষাক্রম পরিচালনা করা দায়িত্বশীল নাগরিকের কাজ হবে না। এখন সবাই মিলে এর প্রতিকারের চিন্তা করতে হবে। এই সমস্যার দ্রুত সমাধানে সচেষ্ট হতে হবে। সম্ভব না?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নিজের প্রস্রাব পান করে ‘আশিকি’ অভিনেত্রী অনু আগারওয়াল বললেন, ‘আহা অমৃত’

মে. জে. ফজলুরের সেভেন সিস্টার্স দখলের মন্তব্য সমর্থন করে না সরকার: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে স্টারলিংকের প্রস্তাবিত কার্যক্রমের বিস্তারিত চায় ভারত

নির্দেশনা মানেননি পাইলট, মদিনা-ঢাকা ফ্লাইটকে নামতে হলো সিলেটে

গায়ে কেরোসিন ঢেলে কলেজছাত্রীর আত্মহনন, পলাতক ইমাম গ্রেপ্তার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত