রুবাইয়া হক
মানুষের ভাব প্রকাশে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে সামাজিক মাধ্যম। ফেসবুককে মানুষ যেমন চিন্তাশীল কাজে ব্যবহার করে, তেমনি বিশ্বের বড় অংশের মানুষ নিছক ব্যক্তিগত আবেগ-অনুভূতি প্রকাশের জন্যও এটি ব্যবহার করে। সোশ্যাল মিডিয়াকে ঠাট্টা, মশকরা, ট্রল করার কাজেও ব্যবহার করা হয়। এটি ব্যক্তির পরিসর পেরিয়ে আন্তর্জাতিক সীমাও ছাড়ায়।
সম্প্রতি পাকিস্তান-ভারত সীমান্তে যখন যুদ্ধের উত্তেজনা তৈরি হয়, তখন ফেসবুক যেন দুই দেশের মধ্যে এক ভার্চুয়াল যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়। কেউ মিম বানায়, কেউ ট্রল করে, কেউ ‘দেশপ্রেম’ দেখানোর নামে অন্য দেশের মানুষের মৃত্যু নিয়েও হাসাহাসি করে। এমন হিউমার বা ঠাট্টার ঢেউ ছড়িয়ে পড়েছে বাংলার সোশ্যাল মিডিয়ায়ও।
এ তো গেল যুদ্ধ নিয়ে উত্তেজনার মধ্যে ঠাট্টা–মশকরা! কিন্তু মানুষের দুরবস্থা বা অসুস্থতা তো বটেই, বাঙালির ভার্চুয়াল ঠাট্টা–মশকরা থেকে বৈশিক মানবিক দুর্যোগও রেহাই পায় না। করোনার মতো নজিরবিহীন মহামারি নিয়ে কয়েক বছরে সারা বিশ্বের মানুষ অনেক সচেতন, সেখানে ভার্চুয়াল পরিসরে বাংলাদেশের মানুষের আচরণ এখনো দায়িত্বহীন।
দেশে করোনার নতুন ধরনের উপস্থিতি, ভাইরাসে আক্রান্তদের সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়া খুললেই দেখা যায়—করোনা, লকডাউন বা কোয়ারেন্টিন নিয়ে নানা রকমের কৌতুক, মিম আর মজা করার কনটেন্ট এখনো ভাইরাল হচ্ছে। কেউ বলে, ‘আবার যদি লকডাউন আসে, ঘরে বসে টিকটকে ক্যারিয়ার বানিয়ে ফেলব।’ কেউ আবার ব্যঙ্গ করে করোনাকে বলে— ‘পুরোনো প্রেমের মতো, নাম শুনলেই বিরক্ত লাগে!’ ‘তাহলে এই করোনাই কেড়ে নিয়েছে লাখো মানুষকে, সেটা কি আমরা ভুলে গেছি?
সেই অনিশ্চয়তার দিন
২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। ওই বছরের ১৮ মার্চ দেশে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম একজনের মৃত্যু হয়। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ২০২০ সালের ২৬ মার্চ থেকে দেশে সাধারণ ছুটি শুরু হয়েছিল। এ সময় ‘কোয়ারেন্টিন’, ‘লকডাউন’, ‘হোম অফিস’, ‘অনলাইন ক্লাস’-এর মতো নতুন নতুন শব্দ যুক্ত হয়ে যায় প্রতিদিনকার নাগরিক জীবনে। টানা ছুটির পর ৩১ মে সীমিত আকারে সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালত ও কলকারখানা খুলে দেওয়া হয়। তবে এরপর কয়েক ধাপে সংক্রমণ বাড়ায় সীমিত, কঠোর, সর্বাত্মকের মতো ভিন্ন নাম ও ধরনের লকডাউনের মুখোমুখি হতে হয় দেশের মানুষকে।
লকডাউন নিয়ে ঠাট্টা
২০২৫ সালে এসে হঠাৎ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ এখানেও করোনার সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে ভাইরাস প্রতিরোধে ১১ দফা নির্দেশনাও দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই লিখছেন, সংক্রমণ বাড়তে থাকলে ফের লকডাউনে ফিরে যেতে পারে দেশ। আর এই লকডাউনকে অনেকে হাসি-তামাশার পাত্র বানিয়েছেন।
কেউ লিখেছেন, ‘এবার করোনায় যদি লকডাউন দেয়, তাহলে মাস্ক আর স্যানিটাইজারের বদলে আমি রিং লাইট আর স্ট্যান্ড কিনে টিকটক শুরু করে দেব।’
আবার কেউ প্ল্যান করেছেন, ‘এবার যদি লকডাউন দেয়, তাহলে আমি টিকটক অ্যাপস ডাউনলোড করে টিকটক শুরু করে দেব। ক্যারিয়ার তৈরি করে নিতে হবে। গত লকডাউনে এই ভুলটাই ছিল, তা পুষিয়ে নিতে হবে।’
কেউ লিখছেন, ‘এইচএসসি পরীক্ষা কি পারবে কোভিড-১৯ ঠেকাতে?’ কিছু পেজ থেকে পোস্ট করা হচ্ছে—এবার Lockdown দিলে Tiktok করে Career Settle করে ফেলব!
এমন হাসি আসে কোথা থেকে
করোনা মহামারির ভয়াবহতা এখনো বহু মানুষের হৃদয়ে কাঁটা হয়ে গাঁথা। করোনা-উত্তর জটিলতায় এখনো অনেকেই ভুগছেন। আমরা কি ভুলে গেছি—এই করোনাই কেড়ে নিয়েছিল আমাদের অনেকের সবচেয়ে প্রিয় মানুষটিকে? কারও বাবা, মা, ভাইবোন, জীবনসঙ্গী কিংবা সন্তান—এখনো অনেকের স্মৃতিতে প্রতিদিনই ফিরে আসে কষ্ট হয়ে।
আক্রান্ত ব্যক্তিকে নিয়ে শয্যার জন্য হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি, তীব্র শ্বাসকষ্টে অক্সিজেনের জন্য হাহাকার, অসুস্থ স্বজনদের পাশে দাঁড়াতে না পারার যন্ত্রণা, লাশ দাফনের দীর্ঘ সারি, কেউ আপনজনের লাশ পর্যন্ত দেখতে পারেনি, সেই ভয়াবহ দিনগুলো কি এত তাড়াতাড়ি ভুলে যাওয়া যায়?
করোনায় শুধু মানুষ মারা যায়নি—স্বপ্ন থেমে গেছে, পরিবার ভেঙে পড়েছে, অনেকেই এখনো মানসিক ও শারীরিকভাবে স্বাভাবিক হতে পারেনি। অনেকে চাকরি হারিয়েছেন, কেউ ব্যবসা হারিয়েছেন, কারও পড়ালেখা থেমে গেছে।
এই করোনা কি নিছক মজার বিষয়? ২০২০ ও ২০২১ সালে বাংলাদেশের হাজারো পরিবার যেসব শোক, দুর্যোগ, অনিশ্চয়তা পেরিয়ে এসেছে—সেগুলোর দুঃসহ স্মৃতি এখনো অনেকের মনে জাগ্রত। এসব কি এত তাড়াতাড়ি ভুলে যাওয়ার মতো? করোনাকে ‘মজার বিষয়’ বানিয়ে ফেলা খুবই সংবেদনশীলতাহীন আচরণ বলেই মনে করেন অনেকে।
করোনাকাল আমাদের শিখিয়েছে:
-জীবন কতটা অনিশ্চিত
-সম্পর্ক কতটা অমূল্য
-আর, সামান্য অসতর্কতা কত বড় ক্ষতি ডেকে আনতে পারে
এই ডিজিটাল যুগে ভাব প্রকাশের মাধ্যম বদলে গেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মানুষ নিজেকে ‘জাহির’ করতে ব্যস্ত। আর হাসি-মজা জীবনেরই অংশ। কনটেন্ট বানানোও খারাপ নয়, কিন্তু সেই কনটেন্ট যদি কারও ক্ষতকে খোঁচায়, কারও কষ্টকে উপহাস করে, তাহলে সেটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
তবে অনুভূতি প্রকাশের আরেকটি দিকও রয়েছে। এ ধরনের হাস্যরসকে মনোবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ‘গ্যালোস হিউমার’—অর্থাৎ, বিপদের মুখেও হাসতে পারা।
চাপ, অনিশ্চয়তা বা মানসিক বিপর্যয়ের সময় অনেকেই ব্যঙ্গ-রসিকতা ব্যবহার করেন একধরনের মানসিক প্রতিরক্ষার কৌশল হিসেবে। চিকিৎসক, সাংবাদিক, পুলিশ বা সৈনিকদের মাঝেও এমন প্রবণতা দেখা যায়, যেখানে ভয়াবহ বাস্তবতা থেকে সাময়িক মুক্তি মেলে হাস্যরসে।
এটি একদিকে যেমন মানসিক ভারসাম্য রক্ষা করে, অন্যদিকে সমাজকেও বাস্তবতার মুখোমুখি হতে কিছুটা সহজ করে তোলে। তবে, এই রসিকতা তখনই গ্রহণযোগ্য, যখন তা অন্যের দুঃখ, ক্ষতি বা শোককে উপহাস করে না।
আজকের পৃথিবী যাচ্ছে অসংখ্য চাপ, সংকট ও অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে। এই প্রেক্ষাপটে ‘ডার্ক হিউমার’ বা ব্যঙ্গ-রসিকতার প্রবণতা বেড়ে যাওয়াটা স্বাভাবিক, কিন্তু তারও একটি সীমা থাকা প্রয়োজন।
কোনো ‘ট্র্যাজেডিকে’ কমেডিতে রূপ দেওয়ার আগে আমাদের ভাবা উচিত—এই হাসির পেছনে কারও কান্না আছে কিনা। মানবিকতা ও সহানুভূতির জায়গা হারিয়ে ফেললে আত্মপ্রকাশের সেই সৃজনশীলতাও শেষ পর্যন্ত হয়ে উঠবে নিষ্ঠুরতা।
করোনাকাল আমাদের শিখিয়েছে জীবন কতটা অনিশ্চিত। আমরা চাই, এই শিক্ষা যাতে ভুলে না যাই এত তাড়াতাড়ি। মজা হোক সচেতনতার সঙ্গে, জীবন ও সম্পর্কের মূল্য মাথায় রেখে, দায়িত্বের সঙ্গে কনটেন্ট তৈরি হোক। এই মিম, মজাই হয়ে উঠতে পারে স্বাস্থ্য সচেতনতার উদ্দেশ্য।
লেখক: সহ সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
মানুষের ভাব প্রকাশে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে সামাজিক মাধ্যম। ফেসবুককে মানুষ যেমন চিন্তাশীল কাজে ব্যবহার করে, তেমনি বিশ্বের বড় অংশের মানুষ নিছক ব্যক্তিগত আবেগ-অনুভূতি প্রকাশের জন্যও এটি ব্যবহার করে। সোশ্যাল মিডিয়াকে ঠাট্টা, মশকরা, ট্রল করার কাজেও ব্যবহার করা হয়। এটি ব্যক্তির পরিসর পেরিয়ে আন্তর্জাতিক সীমাও ছাড়ায়।
সম্প্রতি পাকিস্তান-ভারত সীমান্তে যখন যুদ্ধের উত্তেজনা তৈরি হয়, তখন ফেসবুক যেন দুই দেশের মধ্যে এক ভার্চুয়াল যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়। কেউ মিম বানায়, কেউ ট্রল করে, কেউ ‘দেশপ্রেম’ দেখানোর নামে অন্য দেশের মানুষের মৃত্যু নিয়েও হাসাহাসি করে। এমন হিউমার বা ঠাট্টার ঢেউ ছড়িয়ে পড়েছে বাংলার সোশ্যাল মিডিয়ায়ও।
এ তো গেল যুদ্ধ নিয়ে উত্তেজনার মধ্যে ঠাট্টা–মশকরা! কিন্তু মানুষের দুরবস্থা বা অসুস্থতা তো বটেই, বাঙালির ভার্চুয়াল ঠাট্টা–মশকরা থেকে বৈশিক মানবিক দুর্যোগও রেহাই পায় না। করোনার মতো নজিরবিহীন মহামারি নিয়ে কয়েক বছরে সারা বিশ্বের মানুষ অনেক সচেতন, সেখানে ভার্চুয়াল পরিসরে বাংলাদেশের মানুষের আচরণ এখনো দায়িত্বহীন।
দেশে করোনার নতুন ধরনের উপস্থিতি, ভাইরাসে আক্রান্তদের সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়া খুললেই দেখা যায়—করোনা, লকডাউন বা কোয়ারেন্টিন নিয়ে নানা রকমের কৌতুক, মিম আর মজা করার কনটেন্ট এখনো ভাইরাল হচ্ছে। কেউ বলে, ‘আবার যদি লকডাউন আসে, ঘরে বসে টিকটকে ক্যারিয়ার বানিয়ে ফেলব।’ কেউ আবার ব্যঙ্গ করে করোনাকে বলে— ‘পুরোনো প্রেমের মতো, নাম শুনলেই বিরক্ত লাগে!’ ‘তাহলে এই করোনাই কেড়ে নিয়েছে লাখো মানুষকে, সেটা কি আমরা ভুলে গেছি?
সেই অনিশ্চয়তার দিন
২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। ওই বছরের ১৮ মার্চ দেশে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম একজনের মৃত্যু হয়। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ২০২০ সালের ২৬ মার্চ থেকে দেশে সাধারণ ছুটি শুরু হয়েছিল। এ সময় ‘কোয়ারেন্টিন’, ‘লকডাউন’, ‘হোম অফিস’, ‘অনলাইন ক্লাস’-এর মতো নতুন নতুন শব্দ যুক্ত হয়ে যায় প্রতিদিনকার নাগরিক জীবনে। টানা ছুটির পর ৩১ মে সীমিত আকারে সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালত ও কলকারখানা খুলে দেওয়া হয়। তবে এরপর কয়েক ধাপে সংক্রমণ বাড়ায় সীমিত, কঠোর, সর্বাত্মকের মতো ভিন্ন নাম ও ধরনের লকডাউনের মুখোমুখি হতে হয় দেশের মানুষকে।
লকডাউন নিয়ে ঠাট্টা
২০২৫ সালে এসে হঠাৎ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ এখানেও করোনার সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে ভাইরাস প্রতিরোধে ১১ দফা নির্দেশনাও দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই লিখছেন, সংক্রমণ বাড়তে থাকলে ফের লকডাউনে ফিরে যেতে পারে দেশ। আর এই লকডাউনকে অনেকে হাসি-তামাশার পাত্র বানিয়েছেন।
কেউ লিখেছেন, ‘এবার করোনায় যদি লকডাউন দেয়, তাহলে মাস্ক আর স্যানিটাইজারের বদলে আমি রিং লাইট আর স্ট্যান্ড কিনে টিকটক শুরু করে দেব।’
আবার কেউ প্ল্যান করেছেন, ‘এবার যদি লকডাউন দেয়, তাহলে আমি টিকটক অ্যাপস ডাউনলোড করে টিকটক শুরু করে দেব। ক্যারিয়ার তৈরি করে নিতে হবে। গত লকডাউনে এই ভুলটাই ছিল, তা পুষিয়ে নিতে হবে।’
কেউ লিখছেন, ‘এইচএসসি পরীক্ষা কি পারবে কোভিড-১৯ ঠেকাতে?’ কিছু পেজ থেকে পোস্ট করা হচ্ছে—এবার Lockdown দিলে Tiktok করে Career Settle করে ফেলব!
এমন হাসি আসে কোথা থেকে
করোনা মহামারির ভয়াবহতা এখনো বহু মানুষের হৃদয়ে কাঁটা হয়ে গাঁথা। করোনা-উত্তর জটিলতায় এখনো অনেকেই ভুগছেন। আমরা কি ভুলে গেছি—এই করোনাই কেড়ে নিয়েছিল আমাদের অনেকের সবচেয়ে প্রিয় মানুষটিকে? কারও বাবা, মা, ভাইবোন, জীবনসঙ্গী কিংবা সন্তান—এখনো অনেকের স্মৃতিতে প্রতিদিনই ফিরে আসে কষ্ট হয়ে।
আক্রান্ত ব্যক্তিকে নিয়ে শয্যার জন্য হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি, তীব্র শ্বাসকষ্টে অক্সিজেনের জন্য হাহাকার, অসুস্থ স্বজনদের পাশে দাঁড়াতে না পারার যন্ত্রণা, লাশ দাফনের দীর্ঘ সারি, কেউ আপনজনের লাশ পর্যন্ত দেখতে পারেনি, সেই ভয়াবহ দিনগুলো কি এত তাড়াতাড়ি ভুলে যাওয়া যায়?
করোনায় শুধু মানুষ মারা যায়নি—স্বপ্ন থেমে গেছে, পরিবার ভেঙে পড়েছে, অনেকেই এখনো মানসিক ও শারীরিকভাবে স্বাভাবিক হতে পারেনি। অনেকে চাকরি হারিয়েছেন, কেউ ব্যবসা হারিয়েছেন, কারও পড়ালেখা থেমে গেছে।
এই করোনা কি নিছক মজার বিষয়? ২০২০ ও ২০২১ সালে বাংলাদেশের হাজারো পরিবার যেসব শোক, দুর্যোগ, অনিশ্চয়তা পেরিয়ে এসেছে—সেগুলোর দুঃসহ স্মৃতি এখনো অনেকের মনে জাগ্রত। এসব কি এত তাড়াতাড়ি ভুলে যাওয়ার মতো? করোনাকে ‘মজার বিষয়’ বানিয়ে ফেলা খুবই সংবেদনশীলতাহীন আচরণ বলেই মনে করেন অনেকে।
করোনাকাল আমাদের শিখিয়েছে:
-জীবন কতটা অনিশ্চিত
-সম্পর্ক কতটা অমূল্য
-আর, সামান্য অসতর্কতা কত বড় ক্ষতি ডেকে আনতে পারে
এই ডিজিটাল যুগে ভাব প্রকাশের মাধ্যম বদলে গেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মানুষ নিজেকে ‘জাহির’ করতে ব্যস্ত। আর হাসি-মজা জীবনেরই অংশ। কনটেন্ট বানানোও খারাপ নয়, কিন্তু সেই কনটেন্ট যদি কারও ক্ষতকে খোঁচায়, কারও কষ্টকে উপহাস করে, তাহলে সেটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
তবে অনুভূতি প্রকাশের আরেকটি দিকও রয়েছে। এ ধরনের হাস্যরসকে মনোবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ‘গ্যালোস হিউমার’—অর্থাৎ, বিপদের মুখেও হাসতে পারা।
চাপ, অনিশ্চয়তা বা মানসিক বিপর্যয়ের সময় অনেকেই ব্যঙ্গ-রসিকতা ব্যবহার করেন একধরনের মানসিক প্রতিরক্ষার কৌশল হিসেবে। চিকিৎসক, সাংবাদিক, পুলিশ বা সৈনিকদের মাঝেও এমন প্রবণতা দেখা যায়, যেখানে ভয়াবহ বাস্তবতা থেকে সাময়িক মুক্তি মেলে হাস্যরসে।
এটি একদিকে যেমন মানসিক ভারসাম্য রক্ষা করে, অন্যদিকে সমাজকেও বাস্তবতার মুখোমুখি হতে কিছুটা সহজ করে তোলে। তবে, এই রসিকতা তখনই গ্রহণযোগ্য, যখন তা অন্যের দুঃখ, ক্ষতি বা শোককে উপহাস করে না।
আজকের পৃথিবী যাচ্ছে অসংখ্য চাপ, সংকট ও অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে। এই প্রেক্ষাপটে ‘ডার্ক হিউমার’ বা ব্যঙ্গ-রসিকতার প্রবণতা বেড়ে যাওয়াটা স্বাভাবিক, কিন্তু তারও একটি সীমা থাকা প্রয়োজন।
কোনো ‘ট্র্যাজেডিকে’ কমেডিতে রূপ দেওয়ার আগে আমাদের ভাবা উচিত—এই হাসির পেছনে কারও কান্না আছে কিনা। মানবিকতা ও সহানুভূতির জায়গা হারিয়ে ফেললে আত্মপ্রকাশের সেই সৃজনশীলতাও শেষ পর্যন্ত হয়ে উঠবে নিষ্ঠুরতা।
করোনাকাল আমাদের শিখিয়েছে জীবন কতটা অনিশ্চিত। আমরা চাই, এই শিক্ষা যাতে ভুলে না যাই এত তাড়াতাড়ি। মজা হোক সচেতনতার সঙ্গে, জীবন ও সম্পর্কের মূল্য মাথায় রেখে, দায়িত্বের সঙ্গে কনটেন্ট তৈরি হোক। এই মিম, মজাই হয়ে উঠতে পারে স্বাস্থ্য সচেতনতার উদ্দেশ্য।
লেখক: সহ সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
নব্বই বছরে পা দেওয়া একজন তরুণ পরিব্রাজকের জন্মদিন অতিক্রম করলাম আমরা। সুদীর্ঘ জীবনে তেমন কোনো ব্যাধি এসে তাঁকে জরাগ্রস্ত করেনি, শারীরিক কোনো কারণ এবং মানসিক পীড়া ভারাক্রান্ত করেনি, কখনোই বয়সের ভার এসে চিন্তার তারুণ্যকে অবসাদগ্রস্ত করেনি। বাঙালি অসুস্থতাপরায়ণ, ছোট-বড় অসুখ এসে একবার শয্যাশায়ী করতে পার
১৮ ঘণ্টা আগেবাংলা ভাষায় একটি অতিপরিচিত শব্দ হলো গামছা। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ গামছা। যাপিত জীবনের বিবিধ জীবনাচার, সামাজিকতা, উৎসব-পার্বণ, শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির বহু ক্ষেত্রে এর ব্যবহার আমাদের দৃষ্টি কাড়ে।
১৯ ঘণ্টা আগেআওয়ামী লীগের একটানা শাসন এক যুগ পেরিয়ে দেড় দশকে পৌঁছালে বাংলাদেশের রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জগতে এমন এক বাস্তবতা গড়ে ওঠে—যেখানে ক্ষমতার কেন্দ্রে অবস্থান করাই হয়ে ওঠে একমাত্র সাফল্যের মানদণ্ড।
১৯ ঘণ্টা আগেযুদ্ধবিরতি শুরু হলেও ১২ দিনের ইরান-ইসরায়েল সংঘাত এখন বিশ্বের প্রতিটি দেশকেই ভাবিয়ে তুলছে—বাড়ছে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, আশঙ্কা। আমাদের দেশেও এই সংঘাতের প্রভাব যে পড়বে না, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।
১৯ ঘণ্টা আগে