সাঈদ আহসান খালিদ
সরকারি সংস্থা হিসেবে দেশে দখল ও বেদখল মিলিয়ে সবচেয়ে বেশি ভূমির মালিক বাংলাদেশ রেলওয়ে। বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামে কোনো স্পেশালাইজড শিশু হাসপাতাল না থাকায় সরকার ২০১৭ সালে একটি শিশু হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়ে রেলওয়ের কাছে ২ একর খালি জমি চেয়ে পায়নি। ৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া সত্ত্বেও রেলওয়ের অসম্মতির কারণে সরকারি প্রকল্পটি এখনো আলোর মুখ দেখছে না।
কিন্তু, বিস্ময়করভাবে সরকারি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায় জমি বরাদ্দ দিতে অস্বীকার করলেও, এই রেলওয়ে কর্তৃপক্ষই বর্তমানে ইউনাইটেড হাসপাতাল লিমিটেড-এর পরিচালনায় বেসরকারি হাসপাতালের জন্য ৬ একর জমি বরাদ্দ দিয়েছে, সেটিও আবার ‘চট্টগ্রামের ফুসফুস’খ্যাত ছায়া সুনিবিড় ঐতিহাসিক সিআরবি এলাকায়!
জানা গেছে, ৫০০ শয্যার একটি বেসরকারি হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ গড়ে তোলা হবে সিআরবি এলাকায় বাংলাদেশ রেলওয়ের জমিতে। সিআরবি এলাকায় ৬ একর জমিজুড়ে এই হাসপাতাল ও কলেজ গড়ে তোলা হবে। পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের আওতায় ৪৮৬ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। ইতিমধ্যে সাইনবোর্ডও লেগেছে। কিন্তু সরকারি জমিতে হলেও এই হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজের ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা হবে সম্পূর্ণ বেসরকারি কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে। প্রাইভেট মালিকানায় পরিচালিত এই হাসপাতালের চিকিৎসাব্যয় চট্টগ্রামের সাধারণ ও প্রান্তিক জনগণের নাগালের বাইরে থাকবে–এই আশঙ্কার দৃঢ় ভিত্তি রয়েছে।
চিকিৎসা মানুষের সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার। চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা ব্যবস্থার অপ্রতুলতা রয়েছে সত্য, বিশেষায়িত সরকারি হাসপাতালও প্রয়োজন; কিন্তু সরকারি চিকিৎসাসুবিধা সম্প্রসারণের প্রকল্পে অসম্মতি দিয়ে, সরকারি জমিতে বেসরকারি হাসপাতাল বানিয়ে চিকিৎসাকে বাণিজ্যিকীকরণ বা ব্যয়বহুল করে তোলার উদ্দেশ্যসংবলিত এই পুঁজিবাদী প্রকল্প চিকিৎসাসেবার নাগরিক অধিকারকে খর্ব করবে এবং এর প্রতিবাদ করা নৈতিক কর্তব্য।
আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, বেসরকারি পরিচালনার হাসপাতাল সিআরবি-তে কেন করতে হবে? সিআরবি অর্থ সেন্ট্রাল রেলওয়ে বিল্ডিং, যেটি বর্তমানে রেলের পূর্বাঞ্চলীয় সদর দপ্তর। তবে এটি একসময় ছিল আসাম-বেঙ্গল রেলের সদর দপ্তর। ১৮৭২ সালে সম্পন্ন হওয়া সিআরবির ভবনটি চট্টগ্রামের প্রাচীনতম ভবন বলে মনে করা হয়। এটি একটি ঐতিহাসিক এলাকা, যা ছায়া সুনিবিড় অজস্র শতবর্ষী বৃক্ষ আচ্ছাদিত জায়গা। এটি নগরীর ফুসফুস, যা আমাদের অক্সিজেন দেয়। এখানের শিরীষগাছের তলায় বছরব্যাপী নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়, এখানকার মাঠটিতে শিশু-কিশোরেরা প্রতিদিন খেলাধুলা করে, স্বাস্থ্যসচেতন নাগরিক ও বয়স্করা এই সিআরবি এলাকায় হাঁটাহাঁটি ও ব্যায়াম করেন, বিকেল ও সন্ধ্যায় চট্টগ্রামবাসী এখানে এসে খোলা আকাশের নিচে খানিক দম নেন, আড্ডা মারেন।
চট্টগ্রাম মহানগরীর ১ হাজার ১৫২ বর্গকিলোমিটার এলাকার স্ট্রাকচার প্ল্যান ও ডিটেইল এরিয়া প্ল্যানে সিআরবিকে কালচার অ্যান্ড হেরিটেজ হিসেবে সংরক্ষণের কথা বলা আছে। এখানে হাসপাতাল তৈরি হলে এই এলাকায় গড়ে উঠবে নতুন দালান অবকাঠামো, দোকানপাট, ফার্মেসি, পার্কিং, আবাসিক ভবন। কাটা পড়বে শতবর্ষ প্রাচীন বৃক্ষ, পরিবেশদূষণ ও আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হবে এই স্থান।
বেসরকারি হাসপাতাল বানানোর জন্য অনেক বিকল্প স্থান চট্টগ্রামে পাওয়া যাবে; কিন্তু চট্টগ্রামবাসীর জন্য এই একটাই সিআরবি। সিলিন্ডার থেকে নয়, আমরা গাছ থেকে অক্সিজেন নিতে চাই। সিআরবিকে এভাবে বাণিজ্যের জন্য ধ্বংস হতে দেওয়া যায় না।
অবিলম্বে এই প্রকল্প বাতিল করা হোক। চট্টগ্রামের অন্য কোনো স্থানে সরকারি উদ্যোগ ও পরিচালনায় বিশেষায়িত হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হোক, যাতে মানুষ স্বল্পমূল্যে চিকিৎসাসেবা পেতে পারে। দেশের সব নাগরিক বিশেষত, চট্টগ্রামের অধিবাসীদের সচেতনতা ও প্রতিবাদ জরুরি–নিজেদের নিশ্বাসের স্বার্থেই।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক
আইন বিভাগ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
সরকারি সংস্থা হিসেবে দেশে দখল ও বেদখল মিলিয়ে সবচেয়ে বেশি ভূমির মালিক বাংলাদেশ রেলওয়ে। বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামে কোনো স্পেশালাইজড শিশু হাসপাতাল না থাকায় সরকার ২০১৭ সালে একটি শিশু হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়ে রেলওয়ের কাছে ২ একর খালি জমি চেয়ে পায়নি। ৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া সত্ত্বেও রেলওয়ের অসম্মতির কারণে সরকারি প্রকল্পটি এখনো আলোর মুখ দেখছে না।
কিন্তু, বিস্ময়করভাবে সরকারি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায় জমি বরাদ্দ দিতে অস্বীকার করলেও, এই রেলওয়ে কর্তৃপক্ষই বর্তমানে ইউনাইটেড হাসপাতাল লিমিটেড-এর পরিচালনায় বেসরকারি হাসপাতালের জন্য ৬ একর জমি বরাদ্দ দিয়েছে, সেটিও আবার ‘চট্টগ্রামের ফুসফুস’খ্যাত ছায়া সুনিবিড় ঐতিহাসিক সিআরবি এলাকায়!
জানা গেছে, ৫০০ শয্যার একটি বেসরকারি হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ গড়ে তোলা হবে সিআরবি এলাকায় বাংলাদেশ রেলওয়ের জমিতে। সিআরবি এলাকায় ৬ একর জমিজুড়ে এই হাসপাতাল ও কলেজ গড়ে তোলা হবে। পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের আওতায় ৪৮৬ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। ইতিমধ্যে সাইনবোর্ডও লেগেছে। কিন্তু সরকারি জমিতে হলেও এই হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজের ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা হবে সম্পূর্ণ বেসরকারি কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে। প্রাইভেট মালিকানায় পরিচালিত এই হাসপাতালের চিকিৎসাব্যয় চট্টগ্রামের সাধারণ ও প্রান্তিক জনগণের নাগালের বাইরে থাকবে–এই আশঙ্কার দৃঢ় ভিত্তি রয়েছে।
চিকিৎসা মানুষের সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার। চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা ব্যবস্থার অপ্রতুলতা রয়েছে সত্য, বিশেষায়িত সরকারি হাসপাতালও প্রয়োজন; কিন্তু সরকারি চিকিৎসাসুবিধা সম্প্রসারণের প্রকল্পে অসম্মতি দিয়ে, সরকারি জমিতে বেসরকারি হাসপাতাল বানিয়ে চিকিৎসাকে বাণিজ্যিকীকরণ বা ব্যয়বহুল করে তোলার উদ্দেশ্যসংবলিত এই পুঁজিবাদী প্রকল্প চিকিৎসাসেবার নাগরিক অধিকারকে খর্ব করবে এবং এর প্রতিবাদ করা নৈতিক কর্তব্য।
আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, বেসরকারি পরিচালনার হাসপাতাল সিআরবি-তে কেন করতে হবে? সিআরবি অর্থ সেন্ট্রাল রেলওয়ে বিল্ডিং, যেটি বর্তমানে রেলের পূর্বাঞ্চলীয় সদর দপ্তর। তবে এটি একসময় ছিল আসাম-বেঙ্গল রেলের সদর দপ্তর। ১৮৭২ সালে সম্পন্ন হওয়া সিআরবির ভবনটি চট্টগ্রামের প্রাচীনতম ভবন বলে মনে করা হয়। এটি একটি ঐতিহাসিক এলাকা, যা ছায়া সুনিবিড় অজস্র শতবর্ষী বৃক্ষ আচ্ছাদিত জায়গা। এটি নগরীর ফুসফুস, যা আমাদের অক্সিজেন দেয়। এখানের শিরীষগাছের তলায় বছরব্যাপী নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়, এখানকার মাঠটিতে শিশু-কিশোরেরা প্রতিদিন খেলাধুলা করে, স্বাস্থ্যসচেতন নাগরিক ও বয়স্করা এই সিআরবি এলাকায় হাঁটাহাঁটি ও ব্যায়াম করেন, বিকেল ও সন্ধ্যায় চট্টগ্রামবাসী এখানে এসে খোলা আকাশের নিচে খানিক দম নেন, আড্ডা মারেন।
চট্টগ্রাম মহানগরীর ১ হাজার ১৫২ বর্গকিলোমিটার এলাকার স্ট্রাকচার প্ল্যান ও ডিটেইল এরিয়া প্ল্যানে সিআরবিকে কালচার অ্যান্ড হেরিটেজ হিসেবে সংরক্ষণের কথা বলা আছে। এখানে হাসপাতাল তৈরি হলে এই এলাকায় গড়ে উঠবে নতুন দালান অবকাঠামো, দোকানপাট, ফার্মেসি, পার্কিং, আবাসিক ভবন। কাটা পড়বে শতবর্ষ প্রাচীন বৃক্ষ, পরিবেশদূষণ ও আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হবে এই স্থান।
বেসরকারি হাসপাতাল বানানোর জন্য অনেক বিকল্প স্থান চট্টগ্রামে পাওয়া যাবে; কিন্তু চট্টগ্রামবাসীর জন্য এই একটাই সিআরবি। সিলিন্ডার থেকে নয়, আমরা গাছ থেকে অক্সিজেন নিতে চাই। সিআরবিকে এভাবে বাণিজ্যের জন্য ধ্বংস হতে দেওয়া যায় না।
অবিলম্বে এই প্রকল্প বাতিল করা হোক। চট্টগ্রামের অন্য কোনো স্থানে সরকারি উদ্যোগ ও পরিচালনায় বিশেষায়িত হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হোক, যাতে মানুষ স্বল্পমূল্যে চিকিৎসাসেবা পেতে পারে। দেশের সব নাগরিক বিশেষত, চট্টগ্রামের অধিবাসীদের সচেতনতা ও প্রতিবাদ জরুরি–নিজেদের নিশ্বাসের স্বার্থেই।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক
আইন বিভাগ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
রাজনীতির মাঠে অশালীন শব্দ ব্যবহার করলে আর মিথ্যা কথা বললে জনপ্রিয়তা বাড়ে—এ রকম বক্তব্যসহ সহকর্মী জাহাঙ্গীর আলমের লেখা একটি উপসম্পাদকীয় প্রকাশিত হয়েছে বৃহস্পতিবারের আজকের পত্রিকায়। ব্যাপারটা বেশ কৌতূহলোদ্দীপক।
৫ ঘণ্টা আগেসম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটা ভাইরাল নিউজ চোখে পড়ল। একটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজন ক্লিনার বকশিশ চেয়ে না পেয়ে অসুস্থ শিশুর মুখ থেকে অক্সিজেনের মাস্ক খুলে ফেলেন। এতে সেই শিশুর একপর্যায়ে করুণ মৃত্যু হয়। এমন অভিযোগ শিশুর মায়ের।
৫ ঘণ্টা আগেবাগছাস নেতা এসে স্কুলের ফেল করা শিক্ষার্থীদের বেধড়ক পিটিয়ে যাচ্ছেন—এটাকে কি রূপকথার গল্প বলে মনে হচ্ছে? মনে হচ্ছে কারও অলীক কল্পনা? চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে হারাটি উচ্চবিদ্যালয়ের অস্থায়ী (অ্যাডহক) কমিটির আহ্বায়ক হন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ আহম্মদ।
৫ ঘণ্টা আগেদেশের দু’টি সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ—ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবিরের অভাবনীয় উত্থান সাম্প্রতিক ছাত্রসংসদ নির্বাচনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। যে সংগঠনটি অতীতে রাজনৈতিক সহিংসতা, সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতির কারণে নিষিদ্ধ ছিল, তারাই কীভাবে এত সংখ্যক পদে জয়ী হলো—এই প্রশ্ন শিক্ষিত সমাজকে
১১ ঘণ্টা আগে