Ajker Patrika

মুজিবনগরে স্বাধীনতার সূর্যোদয়

তোফায়েল আহমেদ
মুজিবনগরে স্বাধীনতার সূর্যোদয়

প্রতিবছর আমাদের জাতীয় জীবনে ‘মুজিবনগর দিবস’ ফিরে আসে এবং যথাযোগ্য মর্যাদায় আমরা দিনটি পালন করি। ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর আম্রকাননে স্বাধীনতার যে সূর্য অস্তমিত হয়েছিল, মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের মুজিবনগরের আম্রকাননে স্বাধীনতার সেই সূর্য উদিত হয়েছিল।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকারের শপথ অনুষ্ঠানের স্মৃতিকথা লিখতে বসে কত কথা আমার মানসপটে ভেসে ওঠে। পঁচিশে মার্চ দিনটির কথা বিশেষভাবে মনে পড়ে। এদিন মণি ভাই ও আমি বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে বিদায় নিই। বিদায়ের প্রাক্কালে তিনি বুকে টেনে আদর করে বলেছিলেন, ‘ভালো থেকো। আমার দেশ স্বাধীন হবেই। তোমাদের যে নির্দেশ দিয়েছি তা যথাযথভাবে পালন করো।’ 

পঁচিশে মার্চ রাতে আমরা ছিলাম মতিঝিলের আরামবাগে মণি ভাইয়ের বাসভবনে। রাত ১২টায় অর্থাৎ জিরো আওয়ারে পাকিস্তান সেনাবাহিনী পূর্বপরিকল্পিত ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে গণহত্যা শুরু করে। চারদিকে প্রচণ্ড গোলাগুলি। এক রাতেই পাকিস্তানি বাহিনী লক্ষাধিক লোককে হত্যা করে। যা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। ২৬ মার্চ জাতির উদ্দেশে দেওয়া ইয়াহিয়া খানের ভাষণ শুনি। ভাষণে তিনি জাতির জনককে ‘বিশ্বাসঘাতক’ আখ্যায়িত করে বলেন, ‘শেখ মুজিবকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শেখ মুজিবসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের আরও আগেই গ্রেপ্তার করা উচিত ছিল, আমি ভুল করেছি। দিস টাইম হি উইল নট গো আনপানিশড।’ তারপর কারফিউ জারি হয় এবং ২৬ মার্চেই চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র থেকে সেখানকার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ হান্নান বঙ্গবন্ধু প্রদত্ত ‘স্বাধীনতার ঘোষণা’র কথা বারবার প্রচার করে বলছেন, ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান “স্বাধীনতার ঘোষণা” প্রদান করে বলেছেন, “এটাই হয়তো আমার শেষ বার্তা। আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। বাংলাদেশের মানুষ যে যেখানে আছেন, আপনাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে সেনাবাহিনীর দখলদারির মোকাবিলা করার জন্য আমি আহ্বান জানাচ্ছি। পাকিস্তান দখলদার বাহিনীর শেষ সৈন্যটিকে বাংলাদেশের মাটি থেকে উৎখাত করা এবং চূড়ান্ত বিজয় না হওয়া পর্যন্ত আপনাদেরকে সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে”।’ 

এরপর দুই ঘণ্টার জন্য কারফিউ শিথিল হলে আমরা কেরানীগঞ্জে আমাদের সাবেক সংসদ সদস্য বোরহানউদ্দিন গগনের বাড়িতে আশ্রয় গ্রহণ করি। জাতীয় নেতা ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামারুজ্জামান সাহেব, মণি ভাই, সিরাজ ভাই, রাজ্জাক ভাই, আমিসহ স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের নেতারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। সিদ্ধান্ত হলো মণি ভাই ও আমি, মনসুর আলী সাহেব এবং কামারুজ্জামান সাহেবকে নিয়ে আমরা ভারতের দিকে যাব। আমাদের এই যাত্রাপথ আগেই ঠিক করা ছিল। অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে সিরাজগঞ্জের কাজীপুর থেকে নির্বাচিত এমসিএ ডা. আবু হেনাকে বঙ্গবন্ধু যে পথে কলকাতা পাঠিয়েছিলেন, সেই পথেই আবু হেনা আমাদের নিয়ে গিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু আমাদের জন্য আগেই বাসস্থান নির্ধারণ করে রেখেছেন। ক্ষমতা হস্তান্তর প্রশ্নে ভুট্টো যখন টালবাহানা শুরু করে তখন ’৭১-এর ১৮ ফেব্রুয়ারি ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে জাতির জনক জাতীয় চার নেতার সামনে আমাদের এই ঠিকানা মুখস্থ করিয়েছিলেন, ‘সানি ভিলা, ২১ নম্বর রাজেন্দ্র রোড, নর্দার্ন পার্ক, ভবানীপুর, কলকাতা।’ বলেছিলেন, ‘এখানে তোমরা থাকবে। তোমাদের জন্য সব ব্যবস্থা আমি করে রেখেছি।’ ২৯ মার্চ কেরানীগঞ্জ থেকে দোহার-নবাবগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া হয়ে এপ্রিলের ৪ এপ্রিল আমরা ভারতের মাটি স্পর্শ করি এবং সানি ভিলায় আশ্রয় নিই। এখানে আমাদের সঙ্গে দেখা করতে আসেন পরে বাংলাদেশ সরকারের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ও জাতীয় নেতা তাজউদ্দীন আহমদ এবং ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম।

১০ এপ্রিল জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে নবনির্বাচিত সদস্যদের সমন্বয়ে ‘বাংলাদেশ গণপরিষদ’ গঠন করে, মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলাকে ‘মুজিবনগর’ নামকরণ করে রাজধানী ঘোষণা করা হয় এবং জারি করা হয় ‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র’। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে বঙ্গবন্ধু কর্তৃক ঘোষিত স্বাধীনতার ঘোষণাকে অনুমোদন করা হয়। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে আরও যা ঘোষিত হয় তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ‘সংবিধান প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপ্রধান এবং সৈয়দ নজরুল ইসলাম উপরাষ্ট্রপ্রধান পদে অধিষ্ঠিত থাকিবেন এবং রাষ্ট্রপ্রধান প্রজাতন্ত্রের সশস্ত্র বাহিনীসমূহের সর্বাধিনায়ক পদে অধিষ্ঠিত থাকিবেন।’ রাষ্ট্রপতি শাসিত এই ব্যবস্থায় ‘ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষমতাসহ সর্বপ্রকার প্রশাসনিক ও আইন প্রণয়নের ক্ষমতা’, ‘একজন প্রধানমন্ত্রী এবং প্রয়োজন মনে করিলে মন্ত্রিসভার সদস্যদের নিয়োগের’ ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হস্তে ন্যস্ত করার বিধান রাখা হয়। এ ছাড়াও যেহেতু বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী, সেহেতু স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে এই মর্মে বিধান রাখা হয় যে, ‘কোনো কারণে যদি রাষ্ট্রপ্রধান না থাকেন অথবা যদি রাষ্ট্রপ্রধান কাজে যোগদান করিতে না পারেন অথবা তাঁহার দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে অক্ষম হন, তবে রাষ্ট্রপ্রধান প্রদত্ত সকল ক্ষমতা ও দায়িত্ব উপরাষ্ট্রপ্রধান পালন করিবেন।’ 

‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র’ মোতাবেক উপরাষ্ট্রপ্রধান সৈয়দ নজরুল ইসলাম ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন এবং জাতীয় নেতা তাজউদ্দীন আহমদ প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় নেতা ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী অর্থমন্ত্রী, জাতীয় নেতা এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দান করেন। পরে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রিপরিষদের সভায় কর্নেল ওসমানীকে প্রধান সেনাপতি নিয়োগ করা হয়। ‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র’—এই সাংবিধানিক দলিলটির মহত্তর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে আমরা ‘বাংলাদেশ গণপরিষদ’ সদস্যগণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলাম, ‘আমাদের এই স্বাধীনতার ঘোষণা ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ছাব্বিশে মার্চ হইতে কার্যকর বলিয়া গণ্য হইবে।’ অর্থাৎ যেদিন বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা প্রদান করেছিলেন সেই দিন থেকে কার্যকর হয়। জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতা অনুসারে প্রণীত ‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র’ মোতাবেক স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ও সরকারের শপথ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় ১৭ এপ্রিল ঐতিহাসিক মুজিবনগরে।

 সে সময় তাজউদ্দীন ভাইয়ের সঙ্গে সীমান্ত অঞ্চল পরিদর্শন করেছি। একটি বিশেষ প্লেনে তাজউদ্দীন ভাই, ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম, মণি ভাই এবং আমি যখন শিলিগুড়ি পৌঁছাই, তখন ওখানে পূর্বাহ্ণে ধারণকৃত তাজউদ্দীন ভাইয়ের বেতার ভাষণ শুনলাম। বাংলার মানুষ তখন মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে আপসহীন, এককাতারে দণ্ডায়মান। পরবর্তী সময়ে ১৭ এপ্রিল যেদিন বাংলাদেশের প্রথম সরকারের শপথ গ্রহণের তারিখ নির্ধারিত হয়, তার আগে ১৬ এপ্রিল গভীর রাতে মণি ভাই, সিরাজ ভাই, রাজ্জাক ভাই এবং আমি—আমরা মুজিব বাহিনীর চার প্রধান, একটা গাড়িতে করে রাত ৩টায় নবগঠিত সরকারের সফরসঙ্গী হিসেবে কলকাতা থেকে রওনা করি সীমান্ত সন্নিহিত মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলা তথা স্বাধীন বাংলাদেশের রাজধানী মুজিবনগরের উদ্দেশে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রবেশ করি প্রিয় মাতৃভূমির মুক্তাঞ্চল মেহেরপুরের আম্রকাননে। আমাদের সঙ্গে দেশি-বিদেশি অনেক সাংবাদিক ছিলেন। কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়েছিল। আশঙ্কা ছিল পাকিস্তান বাহিনী সেখানে বোমা হামলা চালাতে পারে। মেহেরপুরসহ আশপাশের এলাকা থেকে প্রচুর লোকসমাগম হয়েছিল। মুহুর্মুহু ‘জয় বাংলা’ রণধ্বনিতে আকাশ-বাতাস তখন মুখরিত। আন্তর্জাতিক বিশ্ব বিস্ময়ের সঙ্গে প্রত্যক্ষ করছিল নবীন এক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের উদ্ভব। 

দিনটি ছিল শনিবার। বেলা ১১টা ১০ মিনিটে পশ্চিম দিক থেকে শীর্ষনেতারা দৃপ্ত পদক্ষেপে মঞ্চের দিকে এলেন। দেশ স্বাধীন করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ সমবেত সংগ্রামী জনতা গগনবিদারী স্বরে ‘জয়বাংলা’ জয়ধ্বনি দিল। মুজিবনগরে শপথ অনুষ্ঠানস্থলে একটি ছোট্ট মঞ্চ স্থাপন করা হয়েছিল। ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপ্রধান সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রথমে মঞ্চে আরোহণ করেন। ঝিনাইদহের এসডিপিও মাহবুবউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি সশস্ত্র দল রাষ্ট্রপ্রধানকে ‘গার্ড অব অনার’ প্রদান করেন। এরপর মঞ্চে আসেন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ এবং প্রধান সেনাপতি কর্নেল ওসমানী। উপস্থিত স্বেচ্ছাসেবকগণ পুষ্পবৃষ্টি নিক্ষেপ করে নেতৃবৃন্দকে প্রাণঢালা অভ্যর্থনা জ্ঞাপন করেন। সরকারের মুখপত্র ‘জয়বাংলা’ পত্রিকার সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি আবদুল মান্নান এমসিএর উপস্থাপনায় শপথ অনুষ্ঠান আরম্ভ হয়। প্রথমেই নতুন রাষ্ট্রের ঐতিহাসিক দলিল ‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র’ পাঠ করেন চিফ হুইপ অধ্যাপক ইউসুফ আলী। পবিত্র ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ করা হয়। আকাশে তখন থোকা থোকা মেঘ। স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলনের সঙ্গে সঙ্গে বাংলা মায়ের চারজন বীর সন্তান প্রাণ ঢেলে গাইলেন জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’। উপস্থিত সবাই তাঁদের সঙ্গে কণ্ঠ মিলালাম। অপূর্ব এক ভাবগম্ভীর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছিল তখন। ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপ্রধান সৈয়দ নজরুল ইসলাম ইংরেজিতে প্রদত্ত ভাষণের শুরুতে বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে আমি তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগ করেছি এবং তাঁর পরামর্শক্রমে আরও তিনজনকে মন্ত্রীরূপে নিয়োগ করেছি।’ এরপর তিনি প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদ সদস্যদের পরিচয় করিয়ে দেন। তারপর ঘোষণা করেন প্রধান সেনাপতি পদে কর্নেল ওসমানী এবং সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ পদে কর্নেল আবদুর রবের নাম। ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপ্রধান সৈয়দ নজরুল ইসলাম তাঁর আবেগময় ভাষণের শেষে দৃপ্তকণ্ঠে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমাদের রাষ্ট্রপতি জনগণনন্দিত ক্ষণজন্মা মহাপুরুষ নির্যাতিত মানুষের মূর্ত প্রতীক শেখ মুজিব বাংলার মানুষের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারের জন্য সংগ্রাম করে আজ বন্দী। তাঁর নেতৃত্বে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম জয়ী হবেই।’ 

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণের পর তাজউদ্দীন আহমদ অভূতপূর্ব ও অবিস্মরণীয় বক্তৃতায় বলেন, ‘পাকিস্তান আজ মৃত এবং অসংখ্য আদম সন্তানের লাশের তলায় তার কবর রচিত হয়েছে। পূর্বপরিকল্পিত গণহত্যায় মত্ত হয়ে ওঠার আগে ইয়াহিয়ার ভাবা উচিত ছিল তিনি নিজেই পাকিস্তানের কবর রচনা করছেন।’ মুক্তিযুদ্ধের সার্বিক পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে বক্তৃতার শেষে তিনি বলেন, ‘আমাদের এই অস্তিত্বরক্ষার সংগ্রামে আমরা কামনা করি বিশ্বের প্রতিটি ছোট-বড় জাতির বন্ধুত্ব। বিশ্ববাসীর কাছে আমরা আমাদের বক্তব্য পেশ করলাম। বিশ্বের আর কোনো জাতি আমাদের চেয়ে স্বীকৃতির বেশি দাবিদার হতে পারে না। কেননা, আর কোনো জাতি আমাদের চেয়ে কঠোরতর সংগ্রাম করেনি, অধিকতর সংগ্রাম করেনি। জয় বাংলা।’ 

ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপ্রধান ও প্রধানমন্ত্রী উভয়েই তৎকালীন বাস্তবতায় যা বলার প্রয়োজন ছিল তা-ই তাঁরা বলেছেন। আমাদের শীর্ষ দুই নেতার এই দিকনির্দেশনামূলক ভাষণ ছিল ঐতিহাসিক এবং অনন্য। জাতীয় নেতৃবৃন্দ, নির্বাচিত এমসিএ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিবৃন্দ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, আন্তর্জাতিক ও জাতীয় খ্যাতিসম্পন্ন সাংবাদিকেরা, পাবনার জেলা প্রশাসক নুরুল কাদের খান, মেহেরপুরের মহকুমা প্রশাসক তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীসহ আরও অনেকেই সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

নিয়মতান্ত্রিকতার মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে প্রতিনিধিদের ইচ্ছার শতভাগ প্রতিফলন ঘটিয়ে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ন রেখে, রাজনৈতিক বৈধতা অর্জন করে সেদিন রাষ্ট্র ও সরকার গঠিত হয়েছিল। আর এসব কিছুর বৈধ ভিত্তি ছিল বঙ্গবন্ধু প্রদত্ত ‘স্বাধীনতার ঘোষণা’। মুক্তিযুদ্ধের সূচনালগ্নে তথা ’৭১-এর এপ্রিলের ১০ ও ১৭ তারিখে প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র ও সরকারের প্রধানতম লক্ষ্য ছিল সাংবিধানিকভাবে রাজনৈতিক বৈধতা নিশ্চিত করে সমগ্র বিশ্বের সমর্থন নিয়ে জনযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে শত্রুমুক্ত করে সুমহান বিজয় ছিনিয়ে আনা। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে দেরাদুনে মুজিব বাহিনীর ট্রেনিং ক্যাম্পে শপথের সময় আমরা সমস্বরে বলতাম, ‘বঙ্গবন্ধু মুজিব, তুমি কোথায় আছ, কেমন আছ আমরা জানি না। কিন্তু যত দিন আমরা প্রিয় মাতৃভূমি এবং তোমাকে মুক্ত করতে না পারব, তত দিন আমরা মায়ের কোলে ফিরে যাব না।’ 

মুক্তিযুদ্ধের রক্তক্ষয়ী দিনগুলোতে বাঙালির চেতনায় বন্দী মুজিব মুক্ত মুজিবের চেয়ে বেশি শক্তিশালী ছিলেন। যারা ষড়যন্ত্রকারী তাদের হোতা খুনি মুশতাক তখনই আমাদের কাছে প্রশ্ন তুলেছিল, ‘জীবিত মুজিবকে চাও, না স্বাধীনতা চাও।’ আমরা বলতাম, ‘আমরা দুটোই চাই। স্বাধীনতাও চাই, বঙ্গবন্ধুকেও চাই।’ ত্রিশ লাখ প্রাণ আর দুই লাখ মা-বোনের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে আমরা বাংলার স্বাধীনতা এবং বঙ্গবন্ধু মুজিবকে মুক্ত করতে পেরেছিলাম।

প্রথম সরকারের শপথ অনুষ্ঠানের এই মহান দিনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা সর্বজনাব সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামারুজ্জামানের অমর স্মৃতি গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করি। জাতীয় চার নেতা জীবনে-মরণে বঙ্গবন্ধুর পাশে থেকেছেন। কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে থেকেছেন, মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছেন, কিন্তু বেইমানি করেননি। ইতিহাসের পাতায় তাঁদের অবদান স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। প্রিয় মাতৃভূমির স্বাধীনতার জন্য তাঁরা যে আত্মদান করেছেন সেই আত্মদানের ফসল স্বাধীন বাংলাদেশ। জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসে জাতীয় নেতাদের বীরত্বপূর্ণ অবদানের কথা সর্বত্র স্মরণ করা উচিত। জাতীয় ইতিহাসের গৌরবময় দিনগুলো স্মরণ করে জাতীয় মর্যাদা ও গৌরব বৃদ্ধিই হোক আমাদের অঙ্গীকার।

লেখক: আওয়ামী লীগের নেতা, সংসদ সদস্য ও সভাপতি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে গুলিতে নিহত মামুন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের প্রধান সহযোগী

গাজীপুরে রাস্তা আটকে চলাচল করা পুলিশ কমিশনার নাজমুল করিম বরখাস্ত

আসিফ ক্ষমা না চাইলে অ্যাকশনে যাওয়ার হুমকি ফুটবলারদের

উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ

দিনদুপুরে রাজধানীতে হাসপাতালের সামনে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ত্রিভুজ সম্পর্কের অনিবার্য পরিণতির অপেক্ষায়

মাসুদ কামাল
নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় নিয়ে সংকট কাটেনি। ছবি: সংগৃহীত
নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় নিয়ে সংকট কাটেনি। ছবি: সংগৃহীত

ত্রিমুখী সম্পর্ক নিয়ে অনেক মুভি হয়েছে। এ রকম মুভি দেখেননি, এমন লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন। কেবল মুভিতেই কেন, বাস্তবেও ত্রিমুখী সম্পর্কের অনেক ঘটনা আমরা দেখে থাকি। সব ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ত্রিভুজ সম্পর্কের শেষ পরিণতি সাধারণত ভালো হয় না।

গত বছরের এ সময়ে আমাদের রাজনীতিতে খুব শক্ত একটা ত্রিভুজ সম্পর্ক দেখা গিয়েছিল। বিএনপি-অন্তর্বর্তী সরকার-জামায়াত—এই তিন পক্ষের দহরম-মহরম। তাদের সবারই লক্ষ্য তখন ছিল রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করা। এর প্রাথমিক ধাপ, কদিন আগে অর্থাৎ ২০২৪-এর অক্টোবরে অর্জিত হয়েছে। সে দিন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে এই সরকার একটা নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ করেছে। এরপর বাকি ছিল মূল দল আওয়ামী লীগকে অকার্যকর ও অপ্রাসঙ্গিক করা। গত বছরের এ সময়ে সেই চেষ্টা আমরা দেখেছি। প্রশাসনিকভাবে যেমন, ঠিক তেমনি সামাজিকভাবেও স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিস্ট দল হিসেবে আওয়ামী লীগবিরোধী প্রচারণা বেশ জোরেশোরেই চলছিল। এ কাজে বিএনপি, জামায়াত, সরকার—সবাই বেশ আন্তরিকও ছিল। সে সময়ে মাঠের শক্তি হিসেবে বেশ বড় একটা ভূমিকা রেখেছে এনসিপি বা জাতীয় নাগরিক পার্টি। তারপর মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে যখন আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলো, আমার বিবেচনায় ত্রিভুজ দহরম-মহরমের সেটাই ছিল পিক-টাইম। এর পর থেকে নিজ নিজ স্বার্থ নিয়ে ধীরে ধীরে সবাই মাঠে নেমে পড়ল। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকল দূরত্ব।

মে মাসের ১২ তারিখে আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ডে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলো, তার মাসখানেক পর জুনের ১৫ তারিখে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস লন্ডনে গিয়ে বৈঠক করলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে। বলতে গেলে ওই বৈঠকটাই যেন সম্পর্কে ভাঙনের ক্ষেত্রে একটা প্রকাশ্য কারণ হতে পারল। জামায়াত অভিযোগ তুলল সরকারের প্রতি—বলল, বিএনপির প্রতি পক্ষপাতিত্ব করছে সরকার। অভিযোগের পেছনের কারণটিও তারা প্রকাশ করল। বলল, ওই বৈঠকের পরই নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় হিসেবে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধের কথাটি বলা হয়েছে। একটিমাত্র দলের শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথার পরিপ্রেক্ষিতে যদি নির্বাচনের সময় নির্ধারিত হয়, তাহলে সেই দলের প্রতি সরকারের পক্ষপাতের বিষয়টি অস্বীকার করা তো সহজ হয় না।

জুনের পর থেকে যত দিন যেতে থাকল, সাধারণ মানুষের কাছেও বিএনপি-জামায়াতের মুখোমুখি অবস্থানটা পরিষ্কার হতে থাকল। ঐকমত্য কমিশনেও দেখা গেল দুই দলের এই বিরোধের প্রকাশ। সংস্কারের অনেক প্রস্তাবেই বিএনপি-জামায়াতকে পরস্পরবিরোধী অবস্থানে দেখা গেল। বিএনপির পক্ষ থেকে একের পর এক আসতে থাকল নোট অব ডিসেন্ট বা আপত্তি। এরপর আবার বিপত্তি দেখা গেল জুলাই সনদ বাস্তবায়নে যে ‘গণভোট’ করার কথা বলা হচ্ছে, সেটি অনুষ্ঠানের তারিখ নিয়ে। বিএনপি বলল, নির্বাচনের দিনই হোক গণভোট, বিপরীতে জামায়াত বলছে—নির্বাচনের আগে, সম্ভব হলে এই নভেম্বরেই গণভোট হতে হবে। গণভোটের রায় নিয়ে, সেটার ওপর ভিত্তি করেই হবে নির্বাচন। আবার জুলাই সনদ বাস্তবায়নের যে আদেশ, তার খসড়া নিয়েও বড় ধরনের আপত্তি তুলল বিএনপি। আপত্তির মাত্রাটা এতটাই প্রবল যে, তারা বলল—জুলাই সনদ নিয়ে ঐকমত্য কমিশন তাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। খেলায় যে রেফারির ওপর সব পক্ষ ভরসা রাখে, সে রেফারিই এবার গোল দিয়ে বসে আছে। অর্থাৎ চরম পক্ষপাতের অভিযোগ। যে কমিশনের প্রধান হচ্ছেন খোদ সরকারপ্রধান ড. ইউনূস, তাঁরই বিরুদ্ধে পক্ষপাত ও প্রতারণার অভিযোগ! বিষয়টি কিন্তু এরপর আর হালকা থাকল না।

তাহলে এখন কী হবে? গণভোট কবে হবে? গণভোটে জনগণের সামনে প্রশ্ন কী থাকবে? এসব প্রশ্নের সমাধান কে দেবে? ঐকমত্য কমিশনের প্রধান ও সক্রিয় দুই ব্যক্তি ড. আলী রীয়াজ ও মনির হায়দার এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছেন। তড়িঘড়ি করে তাঁদের এই চলে যাওয়া নিয়েও নানা ধরনের সন্দেহ উচ্চারিত হতে থাকল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই দুজনকে নিয়ে দেখা গেল নানা ধরনের ট্রল। সমাধানের পথ হিসেবে বলা হলো, সরকারপ্রধান ড. ইউনূস এর সমাধান করবেন। এ প্রবণতা আমরা আগের সরকারের আমলেও দেখেছি। সবকিছুই যেন শেখ হাসিনা করতেন। যত সাফল্য, সব তাঁর। মন্ত্রীদের কিছু জিজ্ঞাসা করা হলে বলতেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় এ সাফল্য এসেছে।’ আবার যদি কোনো জটিলতা দেখা দিত, সবাই মিলে মিটিং করে শেষে সিদ্ধান্ত হতো ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী’ এর সমাধান দেবেন। দল, অঙ্গসংগঠন, কিংবা ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের কোনো কমিটি করতে হবে—অবধারিতভাবেই দায়িত্ব চলে যাবে ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর’ কাছে। এভাবেই একজন ব্যক্তি স্বৈরাচারী হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে তিনি বিশ্বাস করতে শুরু করেন, তিনি ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত কেউ নিতে পারে না। সব কাজ তাঁকেই করতে হয়। তিনি আসলে অন্যদের মতো নয়, তিনি অনেকটা মহাপুরুষের মতো। আমার মতে, এই স্বৈরাচারী মনোভাবের শুরুটা হয় আশপাশে থাকা মোসাহেবদের কারণেই। এবারও তা-ই হয়েছে, মোসাহেবরা বলতে শুরু করেছেন—ড. ইউনূসই দেবেন শেষ সিদ্ধান্ত!

সরকার অবশ্য অদ্ভুত একটা কাজ করেছে। যখন তাদের ওপর দায়িত্ব এল সংকট নিরসনের, তারা একটা বৈঠক করল, আর বলে দিল—সাত দিনের সময় দেওয়া হলো, এর মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজেদের বসে সমস্যার নিরসন করতে হবে। যে বিরোধের নিরসন টানা আট মাস রাজনৈতিক দলগুলো একসঙ্গে বসে সমাধান করতে পারেনি, সেটা সাত দিনে কীভাবে সম্ভব হবে? তা ছাড়া আরেকটি কথাও উচ্চারিত হচ্ছে। জুলাই সনদ নিয়ে এই বিরোধ, বাস্তবায়ন প্রস্তাবে নোট অব ডিসেন্টগুলোকে না রাখা, এটা আসলে কার দায়? এ অপকর্মটি করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। যে কমিশনের প্রধান আবার ড. ইউনূস নিজে। তাহলে যে ক্রাইসিস সৃষ্টি করেছে ড. ইউনূসের কমিশন, সেটির সমাধানের দায়িত্ব রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর দেওয়া কেন? এদিকে আবার সেই সাত দিনও শেষ হয়ে গেছে গতকাল রোববার। কোনো সমাধান কি হয়েছে? এখন কী হবে? যথারীতি সেই একই কথা বলা হচ্ছে—ড. ইউনূসই দেবেন সমাধান। কিন্তু কীভাবে? তিনি কি খুব বড় রাজনীতিবিদ? আবার যদি ড. ইউনূস কিংবা তাঁর পরিষদ যদি কোনো একটা সিদ্ধান্ত দেয়, তাহলে সেটাকে কি আর ঐকমত্যের সিদ্ধান্ত বলা যাবে? এটা তো তাঁর সরকারের সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে। সরকারই যদি সিদ্ধান্ত দেবে, তাহলে আর সংস্কার কমিশনের নামে এত নাটকের কী প্রয়োজন ছিল? এত সময়ক্ষেপণই বা কেন করা হলো?

এতসব প্রশ্নের জবাব আসলে কে দেবে, কী দেবে, কেউ জানে না। হয়তো জবাব কখনোই পাওয়া যাবে না। তবে বিএনপি কিন্তু এরই মধ্যে সরকারের দিকে আঙুল তুলতে শুরু করেছে। এর মধ্যে গত শনিবার দেখলাম বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ সরাসরি সরকারকে সতর্ক করে দিয়ে বললেন—এভাবে সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়ার কোনো এখতিয়ার এই সরকারের নেই। এই সরকার যে কোনো নির্বাচিত সরকার নয়, এটাও তিনি তাদের স্মরণে রাখতে বলেছেন। জামায়াতে ইসলামী আবার এ পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। তারা এরই মধ্যে আট দলের একটা জোট বানিয়ে নিয়েছে। এই আট দলকে নিয়ে রাস্তায়ও নেমে গেছে পাঁচ দফা দাবি আদায়ে। তাদের এক শীর্ষস্থানীয় নেতা প্রকাশ্যে বলেছেন—ঘি তাদের চাই। আর এই ঘি পেতে যদি আঙুল বাঁকা করতে হয়, তারা সেটাই করবে। এ বক্তব্য কি কেবলই রেটরিক, নাকি এর মধ্যে প্রচ্ছন্ন কোনো হুমকি আছে; সেটাও কিন্তু চিন্তার বিষয়। এসবের বিপরীতে বিএনপিও বসে নেই। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী শনিবার এক জায়গায় বললেন, বিএনপির মতো বড় দলের কর্মীরা যদি রাস্তায় নামে, তাহলে সংঘাত হতে পারে।

এ রকম পরিস্থিতিতে জনগণের অবস্থান কোথায়? আমরা এখন বসে আছি ক্লাইমেক্সের অপেক্ষায়! এরই মধ্যে পরস্পরের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ আমরা দেখতে পাচ্ছি।

লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে গুলিতে নিহত মামুন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের প্রধান সহযোগী

গাজীপুরে রাস্তা আটকে চলাচল করা পুলিশ কমিশনার নাজমুল করিম বরখাস্ত

আসিফ ক্ষমা না চাইলে অ্যাকশনে যাওয়ার হুমকি ফুটবলারদের

উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ

দিনদুপুরে রাজধানীতে হাসপাতালের সামনে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শহীদ নূর হোসেন দিবস

গণতন্ত্র কি মুক্তি পেয়েছে

নূর হোসেনের পিঠে লেখা ছিল এই স্লোগান। ছবি: সংগৃহীত
নূর হোসেনের পিঠে লেখা ছিল এই স্লোগান। ছবি: সংগৃহীত

আমরা চব্বিশের আন্দোলন দেখেছি—বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন থেকে যা রূপ নেয় স্বৈরাচার পতনের আন্দোলনে। এর আগপর্যন্ত স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন সম্পর্কে জেনেছি নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থান এবং নূর হোসেনের আত্মত্যাগের কথা। অনেকে দুটো ঘটনারই সাক্ষী। ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর নূর হোসেন শহীদ হন পুলিশের গুলিতে। কারণটা শুধু তাঁর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে যোগ দেওয়া ছিল না, ছিল তাঁর বুকে-পিঠে লেখা স্লোগানও—‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’। নূর হোসেনের এই অদম্য সাহসই যে পরবর্তী সময়ে চব্বিশের জুলাই-আগস্টে তরুণদের মাঝে ছড়িয়ে যায়, সেটা না বললেও চলে। কেননা, ইতিহাস সাক্ষী এবং শিক্ষক—দুটো ভূমিকা পালন করে। শহীদ নূর হোসেন দিবসের নেপথ্যে কী, কেন তিনি শহীদ হন? এসব প্রশ্নের উত্তর না পেলে হয়তো আজকের প্রজন্ম অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে পারত না। তাই নূর হোসেনকে ভুলে যাওয়া যায় না।

বেবিট্যাক্সিচালকের সন্তান নূর হোসেনের জন্ম ঢাকায়, নারিন্দায়, ১৯৬১ সালে। পড়ালেখার দৌড় বেশি দূর যায়নি, অষ্টম শ্রেণিতেই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন। কিন্তু রাজনীতিতে সক্রিয়। আর মোটর ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। ছিলেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের বনগ্রাম শাখার প্রচার সম্পাদক। কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি না নিয়েও রাজনীতির শব্দ নিয়ে খেলায় মেধার পরিচয় দিয়েছিলেন স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সময়। জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনকালে নাখোশ হয়ে আর সবার সঙ্গে রাজনৈতিক মিছিলে যোগ দেওয়ার আগের দিন, অর্থাৎ ১৯৮৭ সালের ৯ নভেম্বর নূর হোসেন ঠিক করে ফেলেছিলেন কী হবে তাঁর স্লোগান। সেদিন পপুলার আর্ট নামের একটি দোকান থেকে সাদা রং দিয়ে নিজের বুকে লিখিয়ে নেন ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক’। আর পিঠে লেখান ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক’। প্রচার সম্পাদকের কাজটা ভালোই জানতেন! এই কাজ করে বাড়ি গেলেন না। দুদিন আগেই ঘরছাড়া হয়েছিলেন যদিও। আশ্রয় নিয়েছিলেন একটি মসজিদে। পরিবার ১০ নভেম্বর সকালে তাঁকে খুঁজে পেলেও তিনি বাড়ি ফিরতে চাননি। গায়ে কাপড় টেনে ঢেকে দিয়েছিলেন সেই কঠোর স্লোগান।

কাজ শেষে বাড়ি ফিরবে বলে মা-বাবাকে বিদায় দিয়েছিলেন নূর হোসেন। কিন্তু ফেরা আর হলো কই? ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর জোটবদ্ধ বিরোধী রাজনৈতিক দলসমূহ ‘ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি’ গ্রহণ করে। কর্মসূচির লক্ষ্য ছিল সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি আদায়। সেদিন স্বৈরাচারবিরোধী যে মিছিলটি পল্টন এলাকার ‘জিরো পয়েন্ট’ অতিক্রম করছিল, সেখানে ছিলেন নূর। কাঁদানে গ্যাস ও গুলি ছুড়ে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ করে দেয় তৎকালীন সরকারের পালিত পুলিশ। নূর হোসেনকে তখন আলাদা করে চেনা যাচ্ছিল খুব সহজে, গায়ে লেখা শ্বেত স্লোগানের কারণে। গুলি এসে বিঁধেছিল সেই গায়ে। তাঁর সঙ্গে সেদিন নিহত হন যুবলীগ নেতা বাবুলও। কিন্তু অষ্টম শ্রেণি পাস নূর হোসেনের গায়ে লেখা স্লোগান তাঁকে আজও অমর করে রেখেছে।

কোঁকড়া চুলের নূর হোসেন তিন দশক পরেও তরুণ, প্রাসঙ্গিক। তাঁর আত্মত্যাগ পরবর্তীকালে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় পথ দেখায়। ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর পতন ঘটে এরশাদ সরকারের। যে গণতন্ত্রকে মুক্তি দিতে নূর প্রাণ দিয়েছিলেন, সেই গণতন্ত্র বন্দী হয়ে গিয়েছিল আবারও। আর আবারও স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন এবং সরকার পতন হলো, কিন্তু গণতন্ত্র কি আজও মুক্তি পেল? কখনো পাবে? এ প্রশ্ন হয়তো নূর হোসেন মনে মনে ভাবছেন, অন্য জগতে বসে। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা।

লেখক: সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে গুলিতে নিহত মামুন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের প্রধান সহযোগী

গাজীপুরে রাস্তা আটকে চলাচল করা পুলিশ কমিশনার নাজমুল করিম বরখাস্ত

আসিফ ক্ষমা না চাইলে অ্যাকশনে যাওয়ার হুমকি ফুটবলারদের

উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ

দিনদুপুরে রাজধানীতে হাসপাতালের সামনে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সম্ভাবনার জটিল পথ

মামুনুর রশীদ
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

গত এক বছরে আমাদের জাতি এক অভূতপূর্ব রাজনৈতিক প্রজ্ঞা লাভ করেছে। জাতীয় গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ঘরের ভেতর থেকে চায়ের দোকান, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়—সর্বত্রই রাজনৈতিক আলোচনা, পর্যালোচনা এবং সেই সঙ্গে যাঁর যাঁর সুচিন্তিত মন্তব্যও দিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিদিনই সকাল-বিকেল কিছু না কিছু ঘটনা ঘটছে, সেসবের ওপরও তাৎক্ষণিক মন্তব্য হয়ে যাচ্ছে। এবারের উচ্চমাধ্যমিকের ফলেও তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। শিক্ষার্থীরাও পড়াশোনায় তেমন মনোযোগী হতে পারছে না। সমগ্র আলোচনা ওই রাজনীতিতে। চায়ের কাপেই বড় বড় সিদ্ধান্ত হয়ে যাচ্ছে।

মধ্যবিত্তের বাজারঘাটে টান পড়লেও তা আলোচনায় খুব একটা জায়গা পাচ্ছে না। রাজনীতিই মুখ্য এবং মুখ্য আলোচনার বিষয়। একটা বিষয় অবশ্য দেখার আছে—ক্লান্তিহীন, আড্ডাবাজ বাঙালি যেকোনো বিষয়ের ওপর আলোচনা করতে এবং সিদ্ধান্ত দিতে বড়ই উৎসাহী। ক্রিকেট খেলা দেখতে দেখতে অবলীলায় বিশ্ববিখ্যাত ব্যাটার বা বোলারদের ভুল ধরতে একটুও বিলম্ব করে না।

বলা হয়ে থাকে, সম্মিলিতভাবে বাঙালি সব সময়ই সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। জাতি যে এত রাজনীতিসচেতন হয়ে পড়ল, সেও ভালো কথা। কিন্তু যখন দেখি কোথাও সড়ক দুর্ঘটনা হলো বা পুলিশের লাঠিপেটায় রক্তাক্ত দেহ পড়ে আছে, কোথাও কোনো নারীর অসম্মান হচ্ছে, তখন তার ফোনের ক্যামেরাটি গর্জে ওঠে বটে কিন্তু মানুষ আগায় না। সবকিছু যে ক্যামেরায় ধারণ করার বিষয় নয়, প্রতিবাদী হওয়া প্রয়োজন, তা বোঝার বোধ হয় এখন আর দরকার নেই।

আমাদের লেখাপড়ার সময়টা ছিল ষাটের দশক, যখন দেশে বিপুল পরিমাণে নানা জায়গায় আন্দোলন চলছিল। তার মধ্যে শিল্প-সাহিত্য, বিজ্ঞানচিন্তা এবং বড় বড় রাজনৈতিক তত্ত্ব নিয়েও কথাবার্তা হতো। মিছিলে যাওয়ার আগে ও পরে এসব বিষয় নিয়ে তর্কের ঝড় উঠত। এই তর্কাতর্কির ফলেই একটা বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু এখন এমন একটা সময় এসেছে, যখন রাজনীতিই একমাত্র আলোচনা, তর্কবিতর্কের বিষয়।

এই সময়ের মধ্যে যে কত মানবিক বিপর্যয় ঘটে গেল, দুর্নীতি সকল সময়ের রেকর্ড অতিক্রম করল। শিক্ষাব্যবস্থা নিম্নমুখী, কতিপয় দুর্বৃত্ত আরও বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠল—তার আলোচনা ভুক্তভোগী ছাড়া কেউ করে না। অসহায় কিছু মানুষকে দেখা যায় কোর্ট-কাচারিতে, জেলখানায় দৌড়াদৌড়ি করতে। আবার থানায় প্রচুর মানুষের ভিড়। মানুষ ভেবেছিল একটা পরিবর্তন আসবে, দুর্নীতির কবর রচনা হবে, সরকার একটি কল্যাণমুখী প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড়িয়ে যাবে, দুর্নীতি বিদায় করতে যেমন কমিশন গঠন করেছে, তা দিয়েই চিরতরে এই অসুখটি নির্মূল হয়ে যাবে। কিন্তু তা হলো না। নির্বাচনই এখন একমাত্র আলোচনার বিষয়। অধিকাংশ লোক ভাবছে নির্বাচন হবে না। এই অবিশ্বাসই-বা কেন? মানুষ একটা আস্থাহীনতা এবং অবিশ্বাসের জায়গায় দাঁড়িয়ে গেল কেন?

বাঙালি চিরকালই সরকারবিরোধী। কারণ আছে অনেক। কিন্তু আস্থাহীনতা যদি সংক্রামক হয়ে জাতির সর্বক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে যায়, তাহলে তার পরিণতি কী হবে? উত্তরের জন্য বহু দূর অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই। এখনই দেখা যাচ্ছে মানবিক মূল্যবোধে ধস নেমেছে, যার হাজার হাজার উদাহরণ খুঁজে পাওয়া যাবে। আরও বহুবার বলেছি, রাষ্ট্রকে আমরা মানবিক করতে পারিনি। সব দল মিলেই ব্যবস্থাটা এমন হয়েছে যে সরকার রাষ্ট্রকে অধিকার করে ফেলেছে, সমাজ কোনোমতে ধিকিধিকি জ্বলছে। তবে সমাজের শক্তি এখনো আছে। নইলে যে নৈরাজ্যকে আমরা দেখেছি, তাতে দেশে বিপুল পরিমাণে দাঙ্গা-হাঙ্গামা হয়ে অনেক কিছুই তছনছ হয়ে যেত। কোনো কোনো ওয়াজ-মাহফিল থেকে যেসব উসকানিমূলক বক্তব্য আসে, তাতে সব জায়গায় অগ্ন্যুৎপাত হওয়ার কথা। কিছু কিছু জায়গায় যে তা হয়নি, তা-ও সত্য নয়। অনেক জায়গায়ই ফেসবুকের একটি পোস্ট অনেক দাঙ্গাবাজির কারণ হয়েছে। সেসব ঘটনায় আমাদের সমাজ সত্যিই একটা ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু এবার কোনো শক্তিই তেমন দুর্বার হয়ে উঠতে পারেনি। আর সমাজের সবচেয়ে বড় শক্তিটি এখনো সোচ্চার হতে পারেনি।

আমাদের অর্ধশতকের শিক্ষাব্যবস্থা মানুষকে সত্য বলতে শেখায়নি। রাজনীতিবিদ, আমলা, বিচারক, শিক্ষক ও শিক্ষাব্যবস্থার নিয়ন্ত্রকও সত্য ভাষাকে উৎসাহিত করেনি। একটা অসুস্থ প্রতিযোগিতা সর্বত্রই উৎসাহিত হয়েছে। আজকে যে শুধু রাজনীতিই একমাত্র আলোচ্য বিষয়, তার কারণও হচ্ছে সমাজের অন্য সমস্যাগুলোর সমাধান না করে একটি দুর্নীতির পথই বেছে নিয়েছে সবাই। যদি সব জায়গায়ই একটা সুস্থ-স্বাভাবিক ধারা অব্যাহত থাকত, তাহলে এ জায়গায় এসে দাঁড়াতাম না আমরা। সমাজের সর্বত্র সত্যকে মূল্যায়ন করার একটা ব্যবস্থাই পারত সমাজকে রক্ষা করতে। রাজনীতির বৃহত্তর অর্থে প্রয়োগটাও হয়নি।

মানুষের মহত্তম কল্যাণের পথটা রাজনীতিই খুলে দেয়। চীন, রাশিয়া, কিউবার বিপ্লবে সে দেশগুলোর জনগণ একটা মুক্তির পথ পেয়েছিল। তুরস্কের কামাল আতাতুর্ক সব ধর্মান্ধতা এবং গোঁড়ামি থেকে একটা মুক্ত সমাজ গড়েছিলেন। আমাদের দেশেও লাখ লাখ মানুষ দেশের জন্য বড় বড় ত্যাগ স্বীকার করেছেন। কিন্তু রাজনৈতিক নেতৃত্ব তা সমাজের কাজে ব্যবহার করতে পারেননি। একটাই বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, তা হলো ক্ষমতা। ক্ষমতার ব্যবহার এবং অপব্যবহার একটি সমাজের জন্য যে কত ভয়ংকর হতে পারে, তা আমরা দেখেছি। এটা সবাই স্বীকার করছেন, আমরা একটি সংকটকাল পার করছি। তার মধ্যেও মানুষের মনে আশা জাগে—একটা সুদিন আসবে। কীভাবে যে সে আশা পূর্ণ হবে আমি জানি না, কেউ জানে কি না জানি না, তবে কেউ না কেউ নিশ্চয়ই জানেন। জেনে থাকলে আমাদের খবর দেবেন।

লেখক: নাট্যব্যক্তিত্ব

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে গুলিতে নিহত মামুন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের প্রধান সহযোগী

গাজীপুরে রাস্তা আটকে চলাচল করা পুলিশ কমিশনার নাজমুল করিম বরখাস্ত

আসিফ ক্ষমা না চাইলে অ্যাকশনে যাওয়ার হুমকি ফুটবলারদের

উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ

দিনদুপুরে রাজধানীতে হাসপাতালের সামনে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নদীপাড়ের মাটি লুট

সম্পাদকীয়
নদীপাড়ের মাটি লুট

দেশে এমনিতেই ফসলি জমি হ্রাস পাচ্ছে। সেটি কমে যাওয়া মানে খাদ্যের উৎপাদনও কমে যাওয়া। যে কারণে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়ে থাকে, কোনো আবাদি জমি যাতে পতিত না থাকে।

সেই ফসলি জমির মাটিই যদি কেটে নেওয়া হয়, তাহলে খাদ্য উৎপাদনের কী হবে! মাদারীপুর সদর উপজেলায় আড়িয়াল খাঁ ও কুমার নদের পাড়ের অন্তত ২০টি স্থান থেকে অবৈধভাবে মাটি কেটে বিক্রি করছেন স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি। তাঁদের একজন হলেন ইলিয়াস চৌকিদার। প্রতিদিন রাত থেকে ভোর পর্যন্ত ট্রলারে করে অবাধে মাটি কেটে নেওয়ার ফলে নদীপাড়ের গ্রামগুলোর মানুষের জীবনে এক বিশাল ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে।

বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০-এর ৪-এর খ ও গ ধারা অনুযায়ী সেতু, কালভার্ট, বাঁধ, সড়ক, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার ১ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে বালু বা মাটি তোলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু যাঁরা মাটি কাটেন তাঁরা এই আইন মানেন না। আইন অমান্য করার জন্য তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। কিন্তু তাঁদের বিরুদ্ধে কম ক্ষেত্রেই ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়। প্রশাসন অবৈধভাবে মাটি কাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় না কেন, সেটা বোধগম্য নয়।

নদীর পাড় থেকে মাটি কাটার কারণে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হচ্ছে, যা ভাঙনে সহায়তা করবে। শুধু নদীভাঙনই নয়, এভাবে মাটি কাটার ফলে একজন কৃষকের সবজিখেত সরাসরি ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে। কয়েকজন কৃষক অভিযোগ করেছেন, ফসলি জমির মাটি কেটে নেওয়ায় জমির উর্বরতা শক্তি হ্রাস পাচ্ছে এবং ফলনও কমে গেছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ সত্ত্বেও ইলিয়াস চৌকিদার মাটি কাটা অব্যাহত রেখেছেন। এমনকি প্রতিবাদ করায় তিনি গ্রামের একজনকে ‘চোখ তুলে ফেলার’ হুমকিও দিয়েছেন। ভুক্তভোগী স্থানীয় বাসিন্দারা বহুবার প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিলেও কোনো আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

অবৈধভাবে এই মাটি কাটা রোধে নদের তীরবর্তী এলাকাগুলোতে নিয়মিত টহলের ব্যবস্থা চালু করা দরকার। কেবল দিনের বেলাতেই নয়, মাটি কাটার মূল সময় অর্থাৎ রাতে ও ভোরে কঠোর নজরদারি বাড়াতে হবে। পাশাপাশি যাঁরা রাজনৈতিক প্রভাবে এ ধরনের অপকর্ম করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। কেবল জরিমানা নয়, মাটি কাটার সরঞ্জাম জব্দ এবং কঠোর কারাদণ্ড নিশ্চিত করতে হবে, যাতে অন্যরা এমন কাজ করার সাহস না পান।

নদীর পাড়ের ফসলি জমি বাঁচানো না গেলে, পুরো গ্রামই একদিন মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে পারে। সে জন্য প্রশাসনকে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, যাতে এই দুই নদ স্বাভাবিকভাবে প্রবাহিত হতে পারে এবং নদের দুই পাড়ের স্থানীয় মানুষজন ভাঙন ও ভূমি হারানোর আতঙ্ক থেকে মুক্তি পান।

অবৈধভাবে মাটি কাটা প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে। মাটি ব্যবস্থাপনা নিয়ে সরকারি যে আইন রয়েছে, আমরা সেই আইনের বাস্তবায়ন দেখতে চাই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে গুলিতে নিহত মামুন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের প্রধান সহযোগী

গাজীপুরে রাস্তা আটকে চলাচল করা পুলিশ কমিশনার নাজমুল করিম বরখাস্ত

আসিফ ক্ষমা না চাইলে অ্যাকশনে যাওয়ার হুমকি ফুটবলারদের

উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ

দিনদুপুরে রাজধানীতে হাসপাতালের সামনে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত