রাজিউল হাসান
সাম্প্রতিক একটি সংবাদ দিয়ে শুরু করছি। জাপানে ২০২৪ সালে যত মানুষ জন্মেছে, তার চেয়ে ৯ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এর অর্থ, দ্রুত কমছে জাপানের জনসংখ্যা। এটি যে কেবল ২০২৪ সালেই ঘটেছে, তা কিন্তু নয়। ধারাবাহিকভাবে প্রতিবছরই দেশটির জনসংখ্যা ছোট হচ্ছে। বিষয়টি জাপানের জন্য অবশ্যই উদ্বেগের, আসন্ন সংকটের পূর্বাভাস। তবে সংকট কারও কারও জন্য সুযোগও সৃষ্টি করে। যেমনটা জাপানের আসন্ন সংকট বাংলাদেশের জন্য সুযোগের পূর্বাভাস দিচ্ছে।
কীভাবে? পরে ব্যাখ্যা করছি। তার আগে অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে দেশে-বিদেশে দাপ্তরিক কাজে, মনোভাব বিনিময়ে ইংরেজি ভাষায় দক্ষ হওয়ার বিকল্প নেই। এই গুরুত্ব অনুধাবন করেই আধুনিক যুগের অভিভাবকেরা সন্তানের পড়ালেখার শুরুতে ইংরেজি শিক্ষায় জোর দেন। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপট বলছে, মাতৃভাষার পাশাপাশি কেবল ইংরেজি ভাষায় দক্ষ হওয়াই যথেষ্ট নয়। কর্মজীবনে প্রবেশের সময় কিংবা উচ্চশিক্ষার দোরগোড়ায় পৌঁছে অনেক তরুণ অনুধাবন করেন, ইংরেজির পাশাপাশি যদি স্প্যানিশ, জার্মানের মতো আরও একটি ভাষা জানা থাকে, তাহলে সম্ভাবনা আরও বেড়ে যায়।
শুধু জার্মান, স্প্যানিশ কিংবা ফ্রেঞ্চ নয়, দিনে দিনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে ম্যান্ডারিন ও জাপানি ভাষাও। বিশেষ করে জাপানে থিতু হতে চাইলে তো জাপানি ভাষা শিখতেই হবে।
আমাদের অর্থনীতি প্রবাসী আয়নির্ভর। যদিও পোশাক খাত থেকে বড় একটি রপ্তানি আয় আসে। তবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও অর্থনীতির প্রেক্ষাপটে পোশাক খাত কত দিন টেকসইভাবে আমাদের অর্থনীতিতে ডলারের জোগান দিয়ে যেতে পারবে, তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারে না। এদিকে বৈদেশিক আয় বাড়াতে আমাদের আর কোনো খাত আজ পর্যন্ত দাঁড়াতে পারেনি। সে ক্ষেত্রে পোশাক খাতের বাইরে বৈদেশিক আয়ের একমাত্র টেকসই পথ প্রবাসী আয়। কাজেই নতুন খাত সৃষ্টি বা প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি আমাদের প্রবাসী আয় আরও বাড়ানোর দিকে আরও বেশি মনোযোগী হতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএনের সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, জাপানের জনসংখ্যা অনেক বছর ধরেই কমছে। সম্প্রতি হ্রাসের হার আরও বেড়েছে। শুধু ২০২৪ সালেই জাপানে জনসংখ্যা কমেছে ৯ লাখের বেশি। দেশটির ইতিহাসে বার্ষিক জনসংখ্যা হ্রাসের হিসাবে ২০২৪ সাল এখন শীর্ষে। গত ৬ আগস্ট জাপানের মিনিস্ট্রি অব ইন্টারনাল অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড কমিউনিকেশনস এ তথ্য প্রকাশ করে জানায়, দেশটির জনসংখ্যা কমে এখন ১২ কোটিতে দাঁড়িয়েছে।
জাপানের সরকারি তথ্য বলছে, নানা কারণেই ২০০৯ সাল থেকে জাপানের জনসংখ্যা কমছে। এর মধ্যে শহুরে উচ্চ ব্যয়বহুল জীবন, সন্তান নিতে তরুণদের মধ্যে অনীহাসহ বিভিন্ন কারণ রয়েছে। ফলে কমছে শ্রমশক্তিও। সরকার যদিও জনসংখ্যা হ্রাসের প্রবণতা ঠেকাতে জোর চেষ্টা চালাচ্ছে, কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। এ ছাড়া দেশটিতে প্রবীণ জনগোষ্ঠীর হারও দিন দিন বাড়ছে। বর্তমান জনসংখ্যার ৩০ শতাংশই প্রবীণ। অর্থাৎ জাপানের ১২ কোটি মানুষের প্রায় ৩ কোটি ৬০ লাখই প্রবীণ।
অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ওইসিডি) তথ্যমতে, জাপানে এখন ১৫ বছর থেকে ৬৪ বছর বয়সী কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর আকার মোট জনসংখ্যার ৫৯ শতাংশ। অর্থাৎ এই বয়সী মানুষের সংখ্যা দেশটিতে ৭ কোটির কিছু বেশি।
যেভাবে জাপানে জনসংখ্যা কমছে, তাতে আগামী বছরগুলোয় দেশটিতে শ্রমশক্তি আরও কমবে। তাদের
তাকাতে হবে অন্য রাষ্ট্রের কর্মীর দিকে। কর্মক্ষেত্রে বিশাল শূন্যতা আর শক্তিশালী অর্থনীতি বিবেচনায় এরই মধ্যে জাপানে বিদেশি অভিবাসীর সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। দেশটির সরকারি তথ্যমতে, ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি নাগাদ সেখানে বিদেশি অভিবাসীর সংখ্যা বেড়ে ৩৬ লাখে ঠেকেছে।
যদিও জাপানের মোট জনসংখ্যার তুলনায় অভিবাসীর হার এখনো ৩ শতাংশের কম।
ঠিক এই বিষয়টিই সুযোগ হিসেবে নিতে পারে বাংলাদেশ। জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের রয়েছে ঐতিহাসিক বন্ধুত্বের সম্পর্ক। কাজেই সরকার চাইলে আগামী ২০ বছরের লক্ষ্য নিয়ে আজকের শিশুদের ইংরেজির পাশাপাশি জাপানি ভাষায় দক্ষ করে তোলার উদ্যোগ নিতে পারে। পাশাপাশি তরুণদের জন্যও জাপানি ভাষা শিক্ষা এবং জাপানের শ্রমবাজারের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা সৃষ্টির জন্য প্রকল্প গ্রহণ করা যেতে পারে। জাপানের সরকার কিন্তু বসে নেই। তারা ২০২৩ সালেই হিসাবনিকাশ সেরে ফেলেছে যে ২০৭০ সাল নাগাদ তাদের জনসংখ্যা ৩০ শতাংশ কমে যাবে। এরপর জনসংখ্যা হ্রাসের হার কিছুটা কমবে, কারণ তত দিনে বিভিন্ন দেশের অভিবাসীরা জাপান ভরিয়ে তুলবে।
জাপান সরকার আসন্ন সংকটের কথা ভেবে যদি আগেভাগেই প্রস্তুতি শুরু করতে পারে, তাহলে বাংলাদেশ কেন সুযোগের পূর্বাভাস পেয়ে বসে থাকবে? সরকার বসে থাকলেও সচেতন অভিভাবকের উচিত, তাঁর সন্তানকে জাপানি ভাষায় দক্ষ করে তোলা। জাপান হলো বিশ্বের চতুর্থ অর্থনীতি (যদিও যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার অর্থনীতির আকার এখন জাপানের চেয়ে বড়। সে হিসাবে জাপান পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি)। কাজেই ইউরোপ-আমেরিকা কিংবা কাছের মালয়েশিয়ার পাশাপাশি জাপানের শ্রমবাজারের জন্যও সন্তানদের প্রস্তুত করতে পারলে মন্দ কিছু হবে না।
শুধু জাপান নয়, জনসংখ্যা কমছে দক্ষিণ কোরিয়াতেও। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির একটি প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, জনসংখ্যা হ্রাসের প্রভাব পড়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার সেনাবাহিনীতেও। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, গত ৬ বছরে সামরিক বাহিনীতে সদস্যসংখ্যা ২০ শতাংশ কমে বর্তমানে প্রায় ৪ লাখ ৫০ হাজারে দাঁড়িয়েছে। এর প্রধান কারণ, দেশের জন্মহার হ্রাস। কয়েক বছর ধরেই দেশটিতে জন্মহার কমছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় এখন প্রতি এক নারীর বিপরীতে শিশু জন্মের হার শূন্য দশমিক ৭৫, যা বিশ্বের সর্বনিম্ন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে ৫ কোটি মানুষের দেশটির জনসংখ্যা ৬০ বছরের মধ্যে অর্ধেক হয়ে যাবে।
জনসংখ্যা হ্রাসের প্রভাব যে কেবল দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনীতে পড়েছে, তা কিন্তু নয়। এর প্রভাব পড়ছে দেশটির শ্রমবাজারেও। জাপানের মতো দক্ষিণ কোরিয়ার এই সংকটকেও সুযোগ হিসেবে নিতে পারে বাংলাদেশ।
তবে কেবল জাপানি কিংবা কোরিয়ান ভাষা শিখেই কিন্তু এই দুই অর্থনীতির সুবিধা নেওয়া যাবে না। সুবিধা পেতে হলে আজকের শিশুকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। কী হতে পারে সেই দক্ষতা? যেকোনো কিছু। তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অগ্রগতির এই যুগে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শেখা হতে পারে দক্ষতা সৃষ্টির প্রাথমিক ধাপ। অনেকে বলতে পারেন, চ্যাটজিপিটি কিংবা জেমিনাই-এর মতো অ্যাপ্লিকেশনগুলো তো এখন উপযুক্ত প্রম্পট লিখতে পারলে প্রয়োজনীয় প্রোগ্রামিং কোড লিখে দিতে পারছে, তারপরও কেন প্রোগ্রামিং শিখতে হবে? এটি নিয়ে যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন এই লেখার উদ্দেশ্য নয়। এই লেখার উদ্দেশ্য জাপানি কিংবা কোরিয়ান ভাষায় সন্তানকে দক্ষ করার যৌক্তিকতা তুলে ধরা। মনে রাখতে হবে, জাপান কিংবা দক্ষিণ কোরিয়া প্রযুক্তিনির্ভর শ্রমবাজার। কাজেই কেবল ভাষা জানলেই এমন শ্রমবাজারে প্রবেশ কঠিন। সেই কঠিনকে সহজ করতে বাড়াতে হবে দক্ষতা। আর সেই দক্ষতা সৃষ্টির প্রস্তুতি শুরু হওয়া উচিত শৈশবেই।
লেকখ: সাংবাদিক
সাম্প্রতিক একটি সংবাদ দিয়ে শুরু করছি। জাপানে ২০২৪ সালে যত মানুষ জন্মেছে, তার চেয়ে ৯ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এর অর্থ, দ্রুত কমছে জাপানের জনসংখ্যা। এটি যে কেবল ২০২৪ সালেই ঘটেছে, তা কিন্তু নয়। ধারাবাহিকভাবে প্রতিবছরই দেশটির জনসংখ্যা ছোট হচ্ছে। বিষয়টি জাপানের জন্য অবশ্যই উদ্বেগের, আসন্ন সংকটের পূর্বাভাস। তবে সংকট কারও কারও জন্য সুযোগও সৃষ্টি করে। যেমনটা জাপানের আসন্ন সংকট বাংলাদেশের জন্য সুযোগের পূর্বাভাস দিচ্ছে।
কীভাবে? পরে ব্যাখ্যা করছি। তার আগে অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে দেশে-বিদেশে দাপ্তরিক কাজে, মনোভাব বিনিময়ে ইংরেজি ভাষায় দক্ষ হওয়ার বিকল্প নেই। এই গুরুত্ব অনুধাবন করেই আধুনিক যুগের অভিভাবকেরা সন্তানের পড়ালেখার শুরুতে ইংরেজি শিক্ষায় জোর দেন। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপট বলছে, মাতৃভাষার পাশাপাশি কেবল ইংরেজি ভাষায় দক্ষ হওয়াই যথেষ্ট নয়। কর্মজীবনে প্রবেশের সময় কিংবা উচ্চশিক্ষার দোরগোড়ায় পৌঁছে অনেক তরুণ অনুধাবন করেন, ইংরেজির পাশাপাশি যদি স্প্যানিশ, জার্মানের মতো আরও একটি ভাষা জানা থাকে, তাহলে সম্ভাবনা আরও বেড়ে যায়।
শুধু জার্মান, স্প্যানিশ কিংবা ফ্রেঞ্চ নয়, দিনে দিনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে ম্যান্ডারিন ও জাপানি ভাষাও। বিশেষ করে জাপানে থিতু হতে চাইলে তো জাপানি ভাষা শিখতেই হবে।
আমাদের অর্থনীতি প্রবাসী আয়নির্ভর। যদিও পোশাক খাত থেকে বড় একটি রপ্তানি আয় আসে। তবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও অর্থনীতির প্রেক্ষাপটে পোশাক খাত কত দিন টেকসইভাবে আমাদের অর্থনীতিতে ডলারের জোগান দিয়ে যেতে পারবে, তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারে না। এদিকে বৈদেশিক আয় বাড়াতে আমাদের আর কোনো খাত আজ পর্যন্ত দাঁড়াতে পারেনি। সে ক্ষেত্রে পোশাক খাতের বাইরে বৈদেশিক আয়ের একমাত্র টেকসই পথ প্রবাসী আয়। কাজেই নতুন খাত সৃষ্টি বা প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি আমাদের প্রবাসী আয় আরও বাড়ানোর দিকে আরও বেশি মনোযোগী হতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএনের সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, জাপানের জনসংখ্যা অনেক বছর ধরেই কমছে। সম্প্রতি হ্রাসের হার আরও বেড়েছে। শুধু ২০২৪ সালেই জাপানে জনসংখ্যা কমেছে ৯ লাখের বেশি। দেশটির ইতিহাসে বার্ষিক জনসংখ্যা হ্রাসের হিসাবে ২০২৪ সাল এখন শীর্ষে। গত ৬ আগস্ট জাপানের মিনিস্ট্রি অব ইন্টারনাল অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড কমিউনিকেশনস এ তথ্য প্রকাশ করে জানায়, দেশটির জনসংখ্যা কমে এখন ১২ কোটিতে দাঁড়িয়েছে।
জাপানের সরকারি তথ্য বলছে, নানা কারণেই ২০০৯ সাল থেকে জাপানের জনসংখ্যা কমছে। এর মধ্যে শহুরে উচ্চ ব্যয়বহুল জীবন, সন্তান নিতে তরুণদের মধ্যে অনীহাসহ বিভিন্ন কারণ রয়েছে। ফলে কমছে শ্রমশক্তিও। সরকার যদিও জনসংখ্যা হ্রাসের প্রবণতা ঠেকাতে জোর চেষ্টা চালাচ্ছে, কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। এ ছাড়া দেশটিতে প্রবীণ জনগোষ্ঠীর হারও দিন দিন বাড়ছে। বর্তমান জনসংখ্যার ৩০ শতাংশই প্রবীণ। অর্থাৎ জাপানের ১২ কোটি মানুষের প্রায় ৩ কোটি ৬০ লাখই প্রবীণ।
অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ওইসিডি) তথ্যমতে, জাপানে এখন ১৫ বছর থেকে ৬৪ বছর বয়সী কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর আকার মোট জনসংখ্যার ৫৯ শতাংশ। অর্থাৎ এই বয়সী মানুষের সংখ্যা দেশটিতে ৭ কোটির কিছু বেশি।
যেভাবে জাপানে জনসংখ্যা কমছে, তাতে আগামী বছরগুলোয় দেশটিতে শ্রমশক্তি আরও কমবে। তাদের
তাকাতে হবে অন্য রাষ্ট্রের কর্মীর দিকে। কর্মক্ষেত্রে বিশাল শূন্যতা আর শক্তিশালী অর্থনীতি বিবেচনায় এরই মধ্যে জাপানে বিদেশি অভিবাসীর সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। দেশটির সরকারি তথ্যমতে, ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি নাগাদ সেখানে বিদেশি অভিবাসীর সংখ্যা বেড়ে ৩৬ লাখে ঠেকেছে।
যদিও জাপানের মোট জনসংখ্যার তুলনায় অভিবাসীর হার এখনো ৩ শতাংশের কম।
ঠিক এই বিষয়টিই সুযোগ হিসেবে নিতে পারে বাংলাদেশ। জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের রয়েছে ঐতিহাসিক বন্ধুত্বের সম্পর্ক। কাজেই সরকার চাইলে আগামী ২০ বছরের লক্ষ্য নিয়ে আজকের শিশুদের ইংরেজির পাশাপাশি জাপানি ভাষায় দক্ষ করে তোলার উদ্যোগ নিতে পারে। পাশাপাশি তরুণদের জন্যও জাপানি ভাষা শিক্ষা এবং জাপানের শ্রমবাজারের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা সৃষ্টির জন্য প্রকল্প গ্রহণ করা যেতে পারে। জাপানের সরকার কিন্তু বসে নেই। তারা ২০২৩ সালেই হিসাবনিকাশ সেরে ফেলেছে যে ২০৭০ সাল নাগাদ তাদের জনসংখ্যা ৩০ শতাংশ কমে যাবে। এরপর জনসংখ্যা হ্রাসের হার কিছুটা কমবে, কারণ তত দিনে বিভিন্ন দেশের অভিবাসীরা জাপান ভরিয়ে তুলবে।
জাপান সরকার আসন্ন সংকটের কথা ভেবে যদি আগেভাগেই প্রস্তুতি শুরু করতে পারে, তাহলে বাংলাদেশ কেন সুযোগের পূর্বাভাস পেয়ে বসে থাকবে? সরকার বসে থাকলেও সচেতন অভিভাবকের উচিত, তাঁর সন্তানকে জাপানি ভাষায় দক্ষ করে তোলা। জাপান হলো বিশ্বের চতুর্থ অর্থনীতি (যদিও যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার অর্থনীতির আকার এখন জাপানের চেয়ে বড়। সে হিসাবে জাপান পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি)। কাজেই ইউরোপ-আমেরিকা কিংবা কাছের মালয়েশিয়ার পাশাপাশি জাপানের শ্রমবাজারের জন্যও সন্তানদের প্রস্তুত করতে পারলে মন্দ কিছু হবে না।
শুধু জাপান নয়, জনসংখ্যা কমছে দক্ষিণ কোরিয়াতেও। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির একটি প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, জনসংখ্যা হ্রাসের প্রভাব পড়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার সেনাবাহিনীতেও। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, গত ৬ বছরে সামরিক বাহিনীতে সদস্যসংখ্যা ২০ শতাংশ কমে বর্তমানে প্রায় ৪ লাখ ৫০ হাজারে দাঁড়িয়েছে। এর প্রধান কারণ, দেশের জন্মহার হ্রাস। কয়েক বছর ধরেই দেশটিতে জন্মহার কমছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় এখন প্রতি এক নারীর বিপরীতে শিশু জন্মের হার শূন্য দশমিক ৭৫, যা বিশ্বের সর্বনিম্ন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে ৫ কোটি মানুষের দেশটির জনসংখ্যা ৬০ বছরের মধ্যে অর্ধেক হয়ে যাবে।
জনসংখ্যা হ্রাসের প্রভাব যে কেবল দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনীতে পড়েছে, তা কিন্তু নয়। এর প্রভাব পড়ছে দেশটির শ্রমবাজারেও। জাপানের মতো দক্ষিণ কোরিয়ার এই সংকটকেও সুযোগ হিসেবে নিতে পারে বাংলাদেশ।
তবে কেবল জাপানি কিংবা কোরিয়ান ভাষা শিখেই কিন্তু এই দুই অর্থনীতির সুবিধা নেওয়া যাবে না। সুবিধা পেতে হলে আজকের শিশুকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। কী হতে পারে সেই দক্ষতা? যেকোনো কিছু। তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অগ্রগতির এই যুগে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শেখা হতে পারে দক্ষতা সৃষ্টির প্রাথমিক ধাপ। অনেকে বলতে পারেন, চ্যাটজিপিটি কিংবা জেমিনাই-এর মতো অ্যাপ্লিকেশনগুলো তো এখন উপযুক্ত প্রম্পট লিখতে পারলে প্রয়োজনীয় প্রোগ্রামিং কোড লিখে দিতে পারছে, তারপরও কেন প্রোগ্রামিং শিখতে হবে? এটি নিয়ে যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন এই লেখার উদ্দেশ্য নয়। এই লেখার উদ্দেশ্য জাপানি কিংবা কোরিয়ান ভাষায় সন্তানকে দক্ষ করার যৌক্তিকতা তুলে ধরা। মনে রাখতে হবে, জাপান কিংবা দক্ষিণ কোরিয়া প্রযুক্তিনির্ভর শ্রমবাজার। কাজেই কেবল ভাষা জানলেই এমন শ্রমবাজারে প্রবেশ কঠিন। সেই কঠিনকে সহজ করতে বাড়াতে হবে দক্ষতা। আর সেই দক্ষতা সৃষ্টির প্রস্তুতি শুরু হওয়া উচিত শৈশবেই।
লেকখ: সাংবাদিক
খবরটি শুনতে অসম্ভব বলে মনে হলেও, বাস্তবতা এই যে প্রযুক্তির রমরমা বিকাশের সময়ে বাংলাদেশের প্রান্তিক এক জনপদে এখনো বিশুদ্ধ খাওয়ার পানির ব্যবস্থা নেই। ২ সেপ্টেম্বর আজকের পত্রিকার প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, রাঙামাটির ভারত সীমান্তবর্তী বরকল ও জুরাছড়ি উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের প্রায় ৪০ হাজার মানুষ...
১১ ঘণ্টা আগেদ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্তিমে জাপানের আনুষ্ঠানিক আত্মসমর্পণের ৮০তম বার্ষিকীতে সম্প্রতি বেইজিংয়ে হয়ে গেল চীনের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সামরিক কুচকাওয়াজ। চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের আমন্ত্রণে সেই কুচকাওয়াজ দেখতে উপস্থিত ছিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উন।
১১ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশে বর্তমানে পাবলিক (সরকারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৫৮টি। এর মধ্যে ১৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নেই। সেগুলোতে ভাড়া করা ভবনে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। তেমনি একটি—সিরাজগঞ্জের রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়। স্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্য শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়...
১২ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশে দুর্নীতি একটি বহুমাত্রিক সমস্যা হিসেবে হাজির হয়েছে। প্রায় সব আন্তর্জাতিক র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশ বারবার বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে স্থান পায়, যা দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, আর্থসামাজিক উন্নয়ন এবং গণতান্ত্রিক চর্চাকে বাধাগ্রস্ত করছে।
১২ ঘণ্টা আগে