
ড. সেলিম জাহান জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন দপ্তর ও দারিদ্র্য দূরীকরণ বিভাগের সাবেক পরিচালক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক তিনি। অর্থনীতি ছাড়াও শিল্প-সাহিত্যের জগতে রয়েছে তাঁর সরব উপস্থিতি। দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং তা থেকে উত্তরণের উপায় নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার মাসুদ রানা।
মাসুদ রানা

একটা গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ব্যাপক সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় আসে অন্তর্বর্তী সরকার। এ সরকার সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?
গণ-অভ্যুত্থানের পর এ সরকার যখন ক্ষমতায় এসেছিল, তখন জনগণের একটা প্রত্যাশা ছিল। সেই প্রত্যাশা ছিল কিছুটা রাজনৈতিক এবং কিছুটা অর্থনৈতিক। গণ-অভ্যুত্থানের পর একটা বিপর্যস্ত অর্থনীতি বাংলাদেশ পেয়েছে। সুতরাং মানুষ আশা করেছিল সেই বিপর্যয় থেকে ধীরে ধীরে উত্তরণ ঘটবে। রাজনৈতিক দিকেও মানুষের প্রত্যাশা ছিল কিছু সংস্কার হবে। মানুষ প্রত্যাশা করেনি যে, রাতারাতি সব বদলে যাবে। কিন্তু প্রত্যাশা ছিল একটা ইতিবাচক দিকে যাবে দেশের রাজনীতি ও অর্থনীতি। আমার কাছে মনে হয়, সেই প্রত্যাশার জায়গায় মানুষ বেশ কিছুটা হতাশ হয়েছে। যেমন, ছয় মাসের মধ্যেও মূল্যস্ফীতি কমেনি।
মানুষের প্রত্যাশা ছিল তাদের দৈনন্দিন জীবনে স্বস্তির এবং আস্থার জায়গা ফিরে আসবে। অর্থনৈতিক দিকে মানুষের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। রাজনৈতিক দিকেও আমরা নানা কথা শুনছি। আমি মনে করি, আগামী পথযাত্রায় এক উত্তরণের কথা মানুষ ভেবেছিল, কিন্তু সেই নির্দেশিকা মানুষ এখনো পায়নি। এ কারণে মানুষের মধ্যে একধরনের নৈরাশ্য কাজ করছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার দেশ তিউনিসিয়াতেও ‘জেসমিন বিপ্লব’ হয়েছিল আমাদের জুলাই আন্দোলনের মতো করে। যে জন-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আন্দোলনটি হয়েছিল, পরবর্তী সময়ে সেটা সফল হয়নি। তাহলে আমরাও কি তিউনিসিয়ার পথে হাঁটছি?
মাত্র ছয় মাস পরে এ রকম একটা চরম উপসংহারের কথাটা বলা ঠিক নয়। তবে, জন-আকাঙ্ক্ষার কতগুলো মাত্রিকতা থাকে। যেমন জনগণকে জানাতে হবে রাষ্ট্র কোন দিকে যাচ্ছে, সরকারের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক রূপরেখা কী। কিছু সংস্কার আছে যেগুলো দীর্ঘ মেয়াদের, সেসব জনপ্রতিনিধিত্ব ছাড়া করা যায় না। আবার কিছু সংস্কার আছে যেগুলো তাৎক্ষণিকভাবে করা সম্ভব। সেই আশু সংস্কারগুলো এ সরকার করছে কি না—এইসব প্রশ্নের উত্তর জনগণকে খুব পরিষ্কারভাবে দিতে হবে। অনেকগুলো সংস্কার কমিশনের মধ্যে কয়েকটি সংস্কার কমিশন তাদের প্রস্তাব জমা দিয়েছে। এরপর সবাই জানতে চাইবে, এইসব প্রস্তাবের ফলাফল কী।
ভবিষ্যতে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে সরকারের আলাপ-আলোচনার বিষয় কী হবে, দলগুলো কী ভূমিকা গ্রহণ করবে, নির্বাচনের ব্যাপারে কোনো রূপরেখা দেওয়া হবে কি না, নির্বাচন কমিশনকে আরও শক্তিশালী করা হবে কি না—এসব নিয়ে প্রশ্ন আছে অনেকের মধ্যে। এগুলো যদি এ সরকার ঠিকমতো বাস্তবায়ন করতে না পারে, তাহলে নিশ্চিতভাবে অভ্যুত্থানের পরে যে আকাঙ্ক্ষা এবং জনপ্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, সেটা বিঘ্নিত হবে।
তিউনিসিয়ায় পরিবর্তনের পর উগ্র ডানপন্থার উত্থান ঘটেছিল। বাংলাদেশেও তো সে রকম অবস্থা দেখা যাচ্ছে। বিষয়টাকে আপনি কীভাবে দেখেন?
একটা অভ্যুত্থানের পর যেকোনো গোষ্ঠী তাদের শক্তি সংহত করতে চাইবে। সেটা বামপন্থী, মধ্যপন্থী ও ডানপন্থী শক্তি, যে-ই হোক না কেন। চূড়ান্ত পর্যায়ে রাজনৈতিক দলগুলো কোন পথ অবলম্বন করে, তারা নিজেদের মধ্যে আঁতাত করে কি না এবং নিজেদের মধ্যে সক্রিয়তা বজায় রাখে কি না—তার ওপরই ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পথরেখা নির্ভর করবে। সুতরাং বর্তমান অবস্থায় দাঁড়িয়ে ডানপন্থী, না মধ্যপন্থীরা সে জায়গায় ধীরে ধীরে অবস্থান নেবে, সেটা বলা যাবে না। এসব নির্ধারিত হবে ভবিষ্যতের গতিময়তার ভিত্তিতে।
সরকারের ছয় মাস পরেও জনজীবনে নাভিশ্বাস প্রশমিত হয়নি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও উচ্চ মূল্যস্ফীতি চলমান, আসছে না দেশি-বিদেশি নতুন বিনিয়োগ। বিষয়গুলো কীভাবে দেখেন?
এটার দুটি দিক আছে। একটি হলো, সরকার কোন বিষয়টাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। অনেকেই মনে করছেন অর্থনৈতিক বিষয়গুলো অগ্রাধিকার পাচ্ছে না। রাজনীতি, সংবিধান, জনপ্রশাসনের বিষয়গুলো নিয়ে সরকার বেশি ব্যস্ত। কিন্তু মনে রাখা দরকার যে সাধারণ মানুষের কাছে অর্থনৈতিক বিষয়গুলোই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তার চাকরি আছে কি না, কম মূল্যে তারা বাজার থেকে জিনিসপত্র ক্রয় করতে পারছে কি না, যানবাহন ঠিকভাবে চলাচল করতে পারছে কি না—এসব নিয়ে সাধারণ মানুষ বেশি চিন্তিত থাকে। এসব জায়গায় সরকারকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এরপর অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে তারা কোন বিষয়গুলোর ওপরে কাজ করবে, সেটা পরের বিষয়।
আমার কাছে মনে হয়, এ মুহূর্তে একটা বিষয়ের ওপর বেশি জোর দিতে হবে, সেটা হলো মূল্যস্ফীতি। আমরা দেখতে পাচ্ছি, জিনিসপত্রের দাম তেমন একটা কমছে না। সুদের হার বাড়ানো হয়েছে, আমদানি শুল্ক কমানো হয়েছে, পণ্য-আমদানি বাড়ানো হয়েছে, কিন্তু দ্রব্যমূল্য কমছে না।
দ্বিতীয়ত, সরকার যে নীতিমালাগুলো গ্রহণ করছে, সেগুলো জনবান্ধব কি না, তা তলিয়ে দেখা দরকার। উদাহরণ দিয়ে বলি, মূল্যস্ফীতি ১১ শতাংশের বেশি। সে সময়েই সরকার ১০০টি পণ্যের ওপর মূল্য সংযোজন কর বৃদ্ধি করল। ফলে জনজীবনে আরও বিপর্যস্ত অবস্থার সৃষ্টি হলো। এতে জনগণের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। তাই সরকার রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য যে এইসব নীতিমালা গ্রহণ করেছে, সেগুলো যে সঠিক বিবেচনাপ্রসূত, তা বলা যাবে না।
অর্থনৈতিক বিষয়ে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান যে সরকার এখনো করতে পারছে না, তার কারণ হলো অগ্রাধিকারের বিষয়ে তাদের কোনো সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই। যে নীতিমালা গ্রহণ করা হচ্ছে, সেগুলো একে অন্যের পরিপন্থী। অর্থনৈতিক বিষয়ে যতখানি অগ্রাধিকার দেওয়া দরকার, আমি মনে করি সরকার সেটা দিচ্ছে না।
নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করা শ্রীলঙ্কা অল্প সময়ের মধ্যে অর্থনীতিতে ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছে। আমরা কেন পারছি না?
আমরা এর জন্য সরকার ও রাষ্ট্রকে একদিকে দায়ী করতে পারি। কিন্তু অন্যদিকে মানুষের দায়িত্বও এড়াতে পারি না। বিপ্লবের পরে শ্রীলঙ্কা আমাদের চেয়েও খারাপ অবস্থায় ছিল। শ্রীলঙ্কায় অভ্যুত্থানের পরে মূল্যস্ফীতি ছিল ৭০ শতাংশ। সেটা এখন তারা ২ শতাংশে নিয়ে এসেছে। এর কারণ হলো সরকারের অঙ্গীকার ছিল। তারা সরকারসহ দল-মতনির্বিশেষে রাষ্ট্রটিকে আবার নতুন করে পুনর্গঠিত করতে প্রয়াসী হয়েছে। একই সঙ্গে তারা নীতিমালা এমনভাবে তৈরি করেছিল, যেগুলো একে অপরের পরিপন্থী ছিল না। শ্রীলঙ্কার জনগণও তাদের ভূমিকা পালন করেছে।
এই পরিপ্রেক্ষিতে আমি একটা বিষয়ের ওপরে গুরুত্ব দিতে চাই। সেটা হলো, আমাদের এখানে একটা দাবি আদায়ের সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। ছয় মাস হয়ে গেল, কিন্তু দাবি-দাওয়ার কারও কোনো কমতি নেই। সরকারি কর্মচারী ভাতা বাড়ানোর দাবি, পদোন্নতির দাবি, কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবি—এভাবে যদি দাবি-দাওয়া চলতে থাকে, তাহলে সরকারের পক্ষে আসল বিষয়ে মনোযোগ দেওয়ার সুযোগ থাকার কথা নয়। শ্রীলঙ্কায় কিন্তু এসব ব্যাপার ছিল না।
আইএমএফের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী এ সরকারও সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, তাহলে বিএনপি-জামায়াত-আওয়ামী লীগের আমলের চেয়ে এই আমল কীভাবে পৃথক?
আইএমএফ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ঋণ দেওয়ার সময় শর্ত আরোপ করে থাকে। তারা যখন ঋণ দেবে তারা কিছু শর্ত দেবে। পৃথিবীর কোনো সংস্থাই শর্ত ছাড়া ঋণ দেয় না। কোনো দেশের স্বার্থের চেয়ে নিজের স্বার্থকে তারা বড় করে দেখে। বর্তমানে আইএমএফ যে শর্ত দিয়েছে বা শর্ত চাপানোর চেষ্টা করছে, সেগুলো নিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলা দরকার। আর শর্ত দিলেই যে তা মানতে হবে, তা তো হতে পারে না।
তবে সম্পদ আহরণের জন্য সরকার নানা পন্থা গ্রহণ করতে পারে। সরকার সবচেয়ে সহজ পন্থাটি বেছে নিয়েছে বিভিন্ন পণ্যের ওপরে কর বসিয়ে। কেন এসব করা হচ্ছে? প্রত্যক্ষ কর বাড়ানোর সুযোগ আছে। আয়কর কি বাড়ানো যায় না? দেশের বহু মানুষ আয়কর দেন না। আয়কর আদায়ের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
সংস্কার করতে হলে কোনো না কোনো গোষ্ঠী বা স্বার্থান্বেষী মহলকে আঘাত করতেই হবে। আমরা আশা করব, অন্তর্বর্তী সরকার এই স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীকে ভাঙতে সাহায্য করবে। তারা তো অরাজনৈতিক একটি সরকার। সুতরাং সবার প্রত্যাশা যে, তারা রাজনৈতিক স্বার্থ না দেখে জনগণের স্বার্থ দেখবে।
বাংলাদেশে তো বৈষম্য বিপজ্জনক জায়গায় পৌঁছেছে। এত তীব্র বৈষম্য জিইয়ে রেখে কীভাবে আমরা সামনে এগোতে পারব?
খুবই চমৎকার প্রশ্ন। যেকোনো বৈষম্য বজায় রেখে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে সামনে এগোনো সম্ভব নয়। এখন সবাই বলছে, গিনি সহগ শূন্য দশমিক পাঁচের কাছাকাছি, যেটা বিপজ্জনক অবস্থায় পৌঁছেছে। তবে বৈষম্যের ক্ষেত্রে শুধু আয় আর সম্পদের বৈষম্য দেখলে হবে না। সেই সঙ্গে আমাদের সুযোগের বৈষম্যও দেখতে হবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবায় বৈষম্য আছে। বৈষম্য বজায় থাকলে কোনো দেশের প্রবৃদ্ধি বাড়বে না। বৈষম্য থাকলে দারিদ্র্য ও বঞ্চনা কমানো সম্ভব না। ফলে অর্থনৈতিকভাবে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বৈষম্য বজায় থাকলে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হতে পারে। কারণ, বৈষম্য ক্রমান্বয়ে বাড়তে
থাকলে জনমনে অসন্তোষ বাড়তে থাকবে এবং বিভিন্ন গোষ্ঠী ও জনগণের মধ্যে মেরুকরণ তৈরি হবে। যারা সুবিধাভোগী নয় এবং সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে নিম্নস্তরে অবস্থান করছে, তারা একসময় বিদ্রোহ করবে।
সামাজিক ক্ষেত্রে বৈষম্য বাড়ার কারণে এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে। ফলে সামাজিক মেরুকরণ অসম্ভব রকম বেড়ে গেছে। যাঁরা বিত্তবান তাঁরা এত বেশি বিত্তবান যে তাঁদের সঙ্গে উন্নত বিশ্বের ধনিক শ্রেণির সঙ্গে তুলনা করা যায়। আবার যাঁরা বিত্তহীন, তাঁরা এত বেশি বঞ্চনার মধ্যে আছে যে তাঁরা সবকিছুতেই অবহেলার শিকার। যদি এভাবে মেরুকরণ চলতে থাকে তাহলে সামাজিক সংহতি, সৌহার্দ্য, শান্তি ও স্থিরতা বিঘ্নিত হতে বাধ্য।
এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ কীভাবে হতে পারে?
এ জন্য অবশ্যই কাঠামোগত সংস্কার দরকার। কাঠামোগত সংস্কারের কতগুলো পন্থা আছে। যেমন যখন আমরা প্রবৃদ্ধি ও উৎপাদনের দিকে তাকাব, তখন দেখব আমাদের প্রবৃদ্ধি ও উৎপাদনপ্রক্রিয়া কি শুধু কৃষিতে, না বিরাট বিরাট শিল্পে? আমরা যে প্রযুক্তি ব্যবহার করছি, সেটা কি শ্রমঘন প্রযুক্তি, নাকি পুঁজিঘন প্রযুক্তি? আমরা যদি কৃষি, গ্রামীণ অর্থনীতি এবং প্রযুক্তির ব্যবহারের ক্ষেত্রে শ্রমঘন প্রযুক্তির দিকে মনোযোগ দিই, তাহলে সাধারণ মানুষ বেশি উপকৃত হবে।
এরপর আমাদের নীতিমালায় কী আছে, সেটা দেখাও খুব বেশি জরুরি। আমরা পণ্য আমদানি করছি এবং নতুন নতুন পণ্যে কর বসাচ্ছি। আর পরোক্ষ করের কারণে এর অভিঘাত পড়ছে দরিদ্র মানুষের ওপর। কারণ, নতুনভাবে যখন কর বসানো হয়, তখন সেসব পণ্য এই দরিদ্র মানুষেরা কিনতে বাধ্য থাকে। এসব জিনিস ছাড়া তাদের জীবন চলে না। পোশাকের ওপর ১৫ শতাংশ কর বৃদ্ধি করা হলে বিত্তবানেরা সেটা কিনতে পারবেন, কিন্তু একজন দরিদ্র মানুষ সেটা কখনো কিনতে পারবেন না। তাই যতক্ষণ পর্যন্ত রাষ্ট্র, সরকার পরোক্ষ করের ওপর নির্ভর করছে, ততক্ষণ পর্যন্ত বৈষম্য কমবে না। বৈষম্য কমানোর জন্য প্রত্যক্ষ কর আদায়ে জোর দিতে হবে। আর কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে আমাদের যে অনানুষ্ঠানিক খাত রয়েছে, মানে ঢাকা শহরের মধ্যে ফুটপাতে যাঁরা বাস করেন, রাষ্ট্র তাঁদের কী ধরনের সাহায্য করছে, ঋণ দিচ্ছে কি না—সেটা খুব জরুরি। মাঝেমধ্যে তাঁদের আবার উচ্ছেদও করা হয়। খুব স্বাভাবিকভাবে এসব দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হন। আমি মনে করি, অর্থনৈতিক নীতিমালা, উৎপাদনপ্রক্রিয়া এবং রাজনৈতিক একটা সমঝোতারও ব্যাপার আছে। এসব যদি একসঙ্গে করা সম্ভব হয়, তাহলে ধীরে ধীরে বৈষম্য কমে যাবে।
একটা গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ব্যাপক সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় আসে অন্তর্বর্তী সরকার। এ সরকার সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?
গণ-অভ্যুত্থানের পর এ সরকার যখন ক্ষমতায় এসেছিল, তখন জনগণের একটা প্রত্যাশা ছিল। সেই প্রত্যাশা ছিল কিছুটা রাজনৈতিক এবং কিছুটা অর্থনৈতিক। গণ-অভ্যুত্থানের পর একটা বিপর্যস্ত অর্থনীতি বাংলাদেশ পেয়েছে। সুতরাং মানুষ আশা করেছিল সেই বিপর্যয় থেকে ধীরে ধীরে উত্তরণ ঘটবে। রাজনৈতিক দিকেও মানুষের প্রত্যাশা ছিল কিছু সংস্কার হবে। মানুষ প্রত্যাশা করেনি যে, রাতারাতি সব বদলে যাবে। কিন্তু প্রত্যাশা ছিল একটা ইতিবাচক দিকে যাবে দেশের রাজনীতি ও অর্থনীতি। আমার কাছে মনে হয়, সেই প্রত্যাশার জায়গায় মানুষ বেশ কিছুটা হতাশ হয়েছে। যেমন, ছয় মাসের মধ্যেও মূল্যস্ফীতি কমেনি।
মানুষের প্রত্যাশা ছিল তাদের দৈনন্দিন জীবনে স্বস্তির এবং আস্থার জায়গা ফিরে আসবে। অর্থনৈতিক দিকে মানুষের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। রাজনৈতিক দিকেও আমরা নানা কথা শুনছি। আমি মনে করি, আগামী পথযাত্রায় এক উত্তরণের কথা মানুষ ভেবেছিল, কিন্তু সেই নির্দেশিকা মানুষ এখনো পায়নি। এ কারণে মানুষের মধ্যে একধরনের নৈরাশ্য কাজ করছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার দেশ তিউনিসিয়াতেও ‘জেসমিন বিপ্লব’ হয়েছিল আমাদের জুলাই আন্দোলনের মতো করে। যে জন-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আন্দোলনটি হয়েছিল, পরবর্তী সময়ে সেটা সফল হয়নি। তাহলে আমরাও কি তিউনিসিয়ার পথে হাঁটছি?
মাত্র ছয় মাস পরে এ রকম একটা চরম উপসংহারের কথাটা বলা ঠিক নয়। তবে, জন-আকাঙ্ক্ষার কতগুলো মাত্রিকতা থাকে। যেমন জনগণকে জানাতে হবে রাষ্ট্র কোন দিকে যাচ্ছে, সরকারের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক রূপরেখা কী। কিছু সংস্কার আছে যেগুলো দীর্ঘ মেয়াদের, সেসব জনপ্রতিনিধিত্ব ছাড়া করা যায় না। আবার কিছু সংস্কার আছে যেগুলো তাৎক্ষণিকভাবে করা সম্ভব। সেই আশু সংস্কারগুলো এ সরকার করছে কি না—এইসব প্রশ্নের উত্তর জনগণকে খুব পরিষ্কারভাবে দিতে হবে। অনেকগুলো সংস্কার কমিশনের মধ্যে কয়েকটি সংস্কার কমিশন তাদের প্রস্তাব জমা দিয়েছে। এরপর সবাই জানতে চাইবে, এইসব প্রস্তাবের ফলাফল কী।
ভবিষ্যতে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে সরকারের আলাপ-আলোচনার বিষয় কী হবে, দলগুলো কী ভূমিকা গ্রহণ করবে, নির্বাচনের ব্যাপারে কোনো রূপরেখা দেওয়া হবে কি না, নির্বাচন কমিশনকে আরও শক্তিশালী করা হবে কি না—এসব নিয়ে প্রশ্ন আছে অনেকের মধ্যে। এগুলো যদি এ সরকার ঠিকমতো বাস্তবায়ন করতে না পারে, তাহলে নিশ্চিতভাবে অভ্যুত্থানের পরে যে আকাঙ্ক্ষা এবং জনপ্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, সেটা বিঘ্নিত হবে।
তিউনিসিয়ায় পরিবর্তনের পর উগ্র ডানপন্থার উত্থান ঘটেছিল। বাংলাদেশেও তো সে রকম অবস্থা দেখা যাচ্ছে। বিষয়টাকে আপনি কীভাবে দেখেন?
একটা অভ্যুত্থানের পর যেকোনো গোষ্ঠী তাদের শক্তি সংহত করতে চাইবে। সেটা বামপন্থী, মধ্যপন্থী ও ডানপন্থী শক্তি, যে-ই হোক না কেন। চূড়ান্ত পর্যায়ে রাজনৈতিক দলগুলো কোন পথ অবলম্বন করে, তারা নিজেদের মধ্যে আঁতাত করে কি না এবং নিজেদের মধ্যে সক্রিয়তা বজায় রাখে কি না—তার ওপরই ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পথরেখা নির্ভর করবে। সুতরাং বর্তমান অবস্থায় দাঁড়িয়ে ডানপন্থী, না মধ্যপন্থীরা সে জায়গায় ধীরে ধীরে অবস্থান নেবে, সেটা বলা যাবে না। এসব নির্ধারিত হবে ভবিষ্যতের গতিময়তার ভিত্তিতে।
সরকারের ছয় মাস পরেও জনজীবনে নাভিশ্বাস প্রশমিত হয়নি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও উচ্চ মূল্যস্ফীতি চলমান, আসছে না দেশি-বিদেশি নতুন বিনিয়োগ। বিষয়গুলো কীভাবে দেখেন?
এটার দুটি দিক আছে। একটি হলো, সরকার কোন বিষয়টাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। অনেকেই মনে করছেন অর্থনৈতিক বিষয়গুলো অগ্রাধিকার পাচ্ছে না। রাজনীতি, সংবিধান, জনপ্রশাসনের বিষয়গুলো নিয়ে সরকার বেশি ব্যস্ত। কিন্তু মনে রাখা দরকার যে সাধারণ মানুষের কাছে অর্থনৈতিক বিষয়গুলোই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তার চাকরি আছে কি না, কম মূল্যে তারা বাজার থেকে জিনিসপত্র ক্রয় করতে পারছে কি না, যানবাহন ঠিকভাবে চলাচল করতে পারছে কি না—এসব নিয়ে সাধারণ মানুষ বেশি চিন্তিত থাকে। এসব জায়গায় সরকারকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এরপর অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে তারা কোন বিষয়গুলোর ওপরে কাজ করবে, সেটা পরের বিষয়।
আমার কাছে মনে হয়, এ মুহূর্তে একটা বিষয়ের ওপর বেশি জোর দিতে হবে, সেটা হলো মূল্যস্ফীতি। আমরা দেখতে পাচ্ছি, জিনিসপত্রের দাম তেমন একটা কমছে না। সুদের হার বাড়ানো হয়েছে, আমদানি শুল্ক কমানো হয়েছে, পণ্য-আমদানি বাড়ানো হয়েছে, কিন্তু দ্রব্যমূল্য কমছে না।
দ্বিতীয়ত, সরকার যে নীতিমালাগুলো গ্রহণ করছে, সেগুলো জনবান্ধব কি না, তা তলিয়ে দেখা দরকার। উদাহরণ দিয়ে বলি, মূল্যস্ফীতি ১১ শতাংশের বেশি। সে সময়েই সরকার ১০০টি পণ্যের ওপর মূল্য সংযোজন কর বৃদ্ধি করল। ফলে জনজীবনে আরও বিপর্যস্ত অবস্থার সৃষ্টি হলো। এতে জনগণের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। তাই সরকার রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য যে এইসব নীতিমালা গ্রহণ করেছে, সেগুলো যে সঠিক বিবেচনাপ্রসূত, তা বলা যাবে না।
অর্থনৈতিক বিষয়ে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান যে সরকার এখনো করতে পারছে না, তার কারণ হলো অগ্রাধিকারের বিষয়ে তাদের কোনো সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই। যে নীতিমালা গ্রহণ করা হচ্ছে, সেগুলো একে অন্যের পরিপন্থী। অর্থনৈতিক বিষয়ে যতখানি অগ্রাধিকার দেওয়া দরকার, আমি মনে করি সরকার সেটা দিচ্ছে না।
নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করা শ্রীলঙ্কা অল্প সময়ের মধ্যে অর্থনীতিতে ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছে। আমরা কেন পারছি না?
আমরা এর জন্য সরকার ও রাষ্ট্রকে একদিকে দায়ী করতে পারি। কিন্তু অন্যদিকে মানুষের দায়িত্বও এড়াতে পারি না। বিপ্লবের পরে শ্রীলঙ্কা আমাদের চেয়েও খারাপ অবস্থায় ছিল। শ্রীলঙ্কায় অভ্যুত্থানের পরে মূল্যস্ফীতি ছিল ৭০ শতাংশ। সেটা এখন তারা ২ শতাংশে নিয়ে এসেছে। এর কারণ হলো সরকারের অঙ্গীকার ছিল। তারা সরকারসহ দল-মতনির্বিশেষে রাষ্ট্রটিকে আবার নতুন করে পুনর্গঠিত করতে প্রয়াসী হয়েছে। একই সঙ্গে তারা নীতিমালা এমনভাবে তৈরি করেছিল, যেগুলো একে অপরের পরিপন্থী ছিল না। শ্রীলঙ্কার জনগণও তাদের ভূমিকা পালন করেছে।
এই পরিপ্রেক্ষিতে আমি একটা বিষয়ের ওপরে গুরুত্ব দিতে চাই। সেটা হলো, আমাদের এখানে একটা দাবি আদায়ের সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। ছয় মাস হয়ে গেল, কিন্তু দাবি-দাওয়ার কারও কোনো কমতি নেই। সরকারি কর্মচারী ভাতা বাড়ানোর দাবি, পদোন্নতির দাবি, কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবি—এভাবে যদি দাবি-দাওয়া চলতে থাকে, তাহলে সরকারের পক্ষে আসল বিষয়ে মনোযোগ দেওয়ার সুযোগ থাকার কথা নয়। শ্রীলঙ্কায় কিন্তু এসব ব্যাপার ছিল না।
আইএমএফের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী এ সরকারও সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, তাহলে বিএনপি-জামায়াত-আওয়ামী লীগের আমলের চেয়ে এই আমল কীভাবে পৃথক?
আইএমএফ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ঋণ দেওয়ার সময় শর্ত আরোপ করে থাকে। তারা যখন ঋণ দেবে তারা কিছু শর্ত দেবে। পৃথিবীর কোনো সংস্থাই শর্ত ছাড়া ঋণ দেয় না। কোনো দেশের স্বার্থের চেয়ে নিজের স্বার্থকে তারা বড় করে দেখে। বর্তমানে আইএমএফ যে শর্ত দিয়েছে বা শর্ত চাপানোর চেষ্টা করছে, সেগুলো নিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলা দরকার। আর শর্ত দিলেই যে তা মানতে হবে, তা তো হতে পারে না।
তবে সম্পদ আহরণের জন্য সরকার নানা পন্থা গ্রহণ করতে পারে। সরকার সবচেয়ে সহজ পন্থাটি বেছে নিয়েছে বিভিন্ন পণ্যের ওপরে কর বসিয়ে। কেন এসব করা হচ্ছে? প্রত্যক্ষ কর বাড়ানোর সুযোগ আছে। আয়কর কি বাড়ানো যায় না? দেশের বহু মানুষ আয়কর দেন না। আয়কর আদায়ের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
সংস্কার করতে হলে কোনো না কোনো গোষ্ঠী বা স্বার্থান্বেষী মহলকে আঘাত করতেই হবে। আমরা আশা করব, অন্তর্বর্তী সরকার এই স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীকে ভাঙতে সাহায্য করবে। তারা তো অরাজনৈতিক একটি সরকার। সুতরাং সবার প্রত্যাশা যে, তারা রাজনৈতিক স্বার্থ না দেখে জনগণের স্বার্থ দেখবে।
বাংলাদেশে তো বৈষম্য বিপজ্জনক জায়গায় পৌঁছেছে। এত তীব্র বৈষম্য জিইয়ে রেখে কীভাবে আমরা সামনে এগোতে পারব?
খুবই চমৎকার প্রশ্ন। যেকোনো বৈষম্য বজায় রেখে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে সামনে এগোনো সম্ভব নয়। এখন সবাই বলছে, গিনি সহগ শূন্য দশমিক পাঁচের কাছাকাছি, যেটা বিপজ্জনক অবস্থায় পৌঁছেছে। তবে বৈষম্যের ক্ষেত্রে শুধু আয় আর সম্পদের বৈষম্য দেখলে হবে না। সেই সঙ্গে আমাদের সুযোগের বৈষম্যও দেখতে হবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবায় বৈষম্য আছে। বৈষম্য বজায় থাকলে কোনো দেশের প্রবৃদ্ধি বাড়বে না। বৈষম্য থাকলে দারিদ্র্য ও বঞ্চনা কমানো সম্ভব না। ফলে অর্থনৈতিকভাবে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বৈষম্য বজায় থাকলে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হতে পারে। কারণ, বৈষম্য ক্রমান্বয়ে বাড়তে
থাকলে জনমনে অসন্তোষ বাড়তে থাকবে এবং বিভিন্ন গোষ্ঠী ও জনগণের মধ্যে মেরুকরণ তৈরি হবে। যারা সুবিধাভোগী নয় এবং সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে নিম্নস্তরে অবস্থান করছে, তারা একসময় বিদ্রোহ করবে।
সামাজিক ক্ষেত্রে বৈষম্য বাড়ার কারণে এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে। ফলে সামাজিক মেরুকরণ অসম্ভব রকম বেড়ে গেছে। যাঁরা বিত্তবান তাঁরা এত বেশি বিত্তবান যে তাঁদের সঙ্গে উন্নত বিশ্বের ধনিক শ্রেণির সঙ্গে তুলনা করা যায়। আবার যাঁরা বিত্তহীন, তাঁরা এত বেশি বঞ্চনার মধ্যে আছে যে তাঁরা সবকিছুতেই অবহেলার শিকার। যদি এভাবে মেরুকরণ চলতে থাকে তাহলে সামাজিক সংহতি, সৌহার্দ্য, শান্তি ও স্থিরতা বিঘ্নিত হতে বাধ্য।
এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ কীভাবে হতে পারে?
এ জন্য অবশ্যই কাঠামোগত সংস্কার দরকার। কাঠামোগত সংস্কারের কতগুলো পন্থা আছে। যেমন যখন আমরা প্রবৃদ্ধি ও উৎপাদনের দিকে তাকাব, তখন দেখব আমাদের প্রবৃদ্ধি ও উৎপাদনপ্রক্রিয়া কি শুধু কৃষিতে, না বিরাট বিরাট শিল্পে? আমরা যে প্রযুক্তি ব্যবহার করছি, সেটা কি শ্রমঘন প্রযুক্তি, নাকি পুঁজিঘন প্রযুক্তি? আমরা যদি কৃষি, গ্রামীণ অর্থনীতি এবং প্রযুক্তির ব্যবহারের ক্ষেত্রে শ্রমঘন প্রযুক্তির দিকে মনোযোগ দিই, তাহলে সাধারণ মানুষ বেশি উপকৃত হবে।
এরপর আমাদের নীতিমালায় কী আছে, সেটা দেখাও খুব বেশি জরুরি। আমরা পণ্য আমদানি করছি এবং নতুন নতুন পণ্যে কর বসাচ্ছি। আর পরোক্ষ করের কারণে এর অভিঘাত পড়ছে দরিদ্র মানুষের ওপর। কারণ, নতুনভাবে যখন কর বসানো হয়, তখন সেসব পণ্য এই দরিদ্র মানুষেরা কিনতে বাধ্য থাকে। এসব জিনিস ছাড়া তাদের জীবন চলে না। পোশাকের ওপর ১৫ শতাংশ কর বৃদ্ধি করা হলে বিত্তবানেরা সেটা কিনতে পারবেন, কিন্তু একজন দরিদ্র মানুষ সেটা কখনো কিনতে পারবেন না। তাই যতক্ষণ পর্যন্ত রাষ্ট্র, সরকার পরোক্ষ করের ওপর নির্ভর করছে, ততক্ষণ পর্যন্ত বৈষম্য কমবে না। বৈষম্য কমানোর জন্য প্রত্যক্ষ কর আদায়ে জোর দিতে হবে। আর কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে আমাদের যে অনানুষ্ঠানিক খাত রয়েছে, মানে ঢাকা শহরের মধ্যে ফুটপাতে যাঁরা বাস করেন, রাষ্ট্র তাঁদের কী ধরনের সাহায্য করছে, ঋণ দিচ্ছে কি না—সেটা খুব জরুরি। মাঝেমধ্যে তাঁদের আবার উচ্ছেদও করা হয়। খুব স্বাভাবিকভাবে এসব দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হন। আমি মনে করি, অর্থনৈতিক নীতিমালা, উৎপাদনপ্রক্রিয়া এবং রাজনৈতিক একটা সমঝোতারও ব্যাপার আছে। এসব যদি একসঙ্গে করা সম্ভব হয়, তাহলে ধীরে ধীরে বৈষম্য কমে যাবে।

ত্রিমুখী সম্পর্ক নিয়ে অনেক মুভি হয়েছে। এ রকম মুভি দেখেননি, এমন লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন। কেবল মুভিতেই কেন, বাস্তবেও ত্রিমুখী সম্পর্কের অনেক ঘটনা আমরা দেখে থাকি। সব ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ত্রিভুজ সম্পর্কের শেষ পরিণতি সাধারণত ভালো হয় না।
১৫ ঘণ্টা আগে
আমরা চব্বিশের আন্দোলন দেখেছি—বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন থেকে যা রূপ নেয় স্বৈরাচার পতনের আন্দোলনে। এর আগপর্যন্ত স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন সম্পর্কে জেনেছি নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থান এবং নূর হোসেনের আত্মত্যাগের কথা। অনেকে দুটো ঘটনারই সাক্ষী। ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর নূর হোসেন শহীদ হন পুলিশের গুলিতে।
১৫ ঘণ্টা আগে
গত এক বছরে আমাদের জাতি এক অভূতপূর্ব রাজনৈতিক প্রজ্ঞা লাভ করেছে। জাতীয় গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ঘরের ভেতর থেকে চায়ের দোকান, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়—সর্বত্রই রাজনৈতিক আলোচনা, পর্যালোচনা এবং সেই সঙ্গে যাঁর যাঁর সুচিন্তিত মন্তব্যও দিয়ে যাচ্ছেন।
১৫ ঘণ্টা আগে
দেশে এমনিতেই ফসলি জমি হ্রাস পাচ্ছে। সেটি কমে যাওয়া মানে খাদ্যের উৎপাদনও কমে যাওয়া। যে কারণে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়ে থাকে, কোনো আবাদি জমি যাতে পতিত না থাকে।
১৫ ঘণ্টা আগেমাসুদ কামাল

ত্রিমুখী সম্পর্ক নিয়ে অনেক মুভি হয়েছে। এ রকম মুভি দেখেননি, এমন লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন। কেবল মুভিতেই কেন, বাস্তবেও ত্রিমুখী সম্পর্কের অনেক ঘটনা আমরা দেখে থাকি। সব ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ত্রিভুজ সম্পর্কের শেষ পরিণতি সাধারণত ভালো হয় না।
গত বছরের এ সময়ে আমাদের রাজনীতিতে খুব শক্ত একটা ত্রিভুজ সম্পর্ক দেখা গিয়েছিল। বিএনপি-অন্তর্বর্তী সরকার-জামায়াত—এই তিন পক্ষের দহরম-মহরম। তাদের সবারই লক্ষ্য তখন ছিল রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করা। এর প্রাথমিক ধাপ, কদিন আগে অর্থাৎ ২০২৪-এর অক্টোবরে অর্জিত হয়েছে। সে দিন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে এই সরকার একটা নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ করেছে। এরপর বাকি ছিল মূল দল আওয়ামী লীগকে অকার্যকর ও অপ্রাসঙ্গিক করা। গত বছরের এ সময়ে সেই চেষ্টা আমরা দেখেছি। প্রশাসনিকভাবে যেমন, ঠিক তেমনি সামাজিকভাবেও স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিস্ট দল হিসেবে আওয়ামী লীগবিরোধী প্রচারণা বেশ জোরেশোরেই চলছিল। এ কাজে বিএনপি, জামায়াত, সরকার—সবাই বেশ আন্তরিকও ছিল। সে সময়ে মাঠের শক্তি হিসেবে বেশ বড় একটা ভূমিকা রেখেছে এনসিপি বা জাতীয় নাগরিক পার্টি। তারপর মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে যখন আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলো, আমার বিবেচনায় ত্রিভুজ দহরম-মহরমের সেটাই ছিল পিক-টাইম। এর পর থেকে নিজ নিজ স্বার্থ নিয়ে ধীরে ধীরে সবাই মাঠে নেমে পড়ল। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকল দূরত্ব।
মে মাসের ১২ তারিখে আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ডে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলো, তার মাসখানেক পর জুনের ১৫ তারিখে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস লন্ডনে গিয়ে বৈঠক করলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে। বলতে গেলে ওই বৈঠকটাই যেন সম্পর্কে ভাঙনের ক্ষেত্রে একটা প্রকাশ্য কারণ হতে পারল। জামায়াত অভিযোগ তুলল সরকারের প্রতি—বলল, বিএনপির প্রতি পক্ষপাতিত্ব করছে সরকার। অভিযোগের পেছনের কারণটিও তারা প্রকাশ করল। বলল, ওই বৈঠকের পরই নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় হিসেবে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধের কথাটি বলা হয়েছে। একটিমাত্র দলের শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথার পরিপ্রেক্ষিতে যদি নির্বাচনের সময় নির্ধারিত হয়, তাহলে সেই দলের প্রতি সরকারের পক্ষপাতের বিষয়টি অস্বীকার করা তো সহজ হয় না।
জুনের পর থেকে যত দিন যেতে থাকল, সাধারণ মানুষের কাছেও বিএনপি-জামায়াতের মুখোমুখি অবস্থানটা পরিষ্কার হতে থাকল। ঐকমত্য কমিশনেও দেখা গেল দুই দলের এই বিরোধের প্রকাশ। সংস্কারের অনেক প্রস্তাবেই বিএনপি-জামায়াতকে পরস্পরবিরোধী অবস্থানে দেখা গেল। বিএনপির পক্ষ থেকে একের পর এক আসতে থাকল নোট অব ডিসেন্ট বা আপত্তি। এরপর আবার বিপত্তি দেখা গেল জুলাই সনদ বাস্তবায়নে যে ‘গণভোট’ করার কথা বলা হচ্ছে, সেটি অনুষ্ঠানের তারিখ নিয়ে। বিএনপি বলল, নির্বাচনের দিনই হোক গণভোট, বিপরীতে জামায়াত বলছে—নির্বাচনের আগে, সম্ভব হলে এই নভেম্বরেই গণভোট হতে হবে। গণভোটের রায় নিয়ে, সেটার ওপর ভিত্তি করেই হবে নির্বাচন। আবার জুলাই সনদ বাস্তবায়নের যে আদেশ, তার খসড়া নিয়েও বড় ধরনের আপত্তি তুলল বিএনপি। আপত্তির মাত্রাটা এতটাই প্রবল যে, তারা বলল—জুলাই সনদ নিয়ে ঐকমত্য কমিশন তাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। খেলায় যে রেফারির ওপর সব পক্ষ ভরসা রাখে, সে রেফারিই এবার গোল দিয়ে বসে আছে। অর্থাৎ চরম পক্ষপাতের অভিযোগ। যে কমিশনের প্রধান হচ্ছেন খোদ সরকারপ্রধান ড. ইউনূস, তাঁরই বিরুদ্ধে পক্ষপাত ও প্রতারণার অভিযোগ! বিষয়টি কিন্তু এরপর আর হালকা থাকল না।
তাহলে এখন কী হবে? গণভোট কবে হবে? গণভোটে জনগণের সামনে প্রশ্ন কী থাকবে? এসব প্রশ্নের সমাধান কে দেবে? ঐকমত্য কমিশনের প্রধান ও সক্রিয় দুই ব্যক্তি ড. আলী রীয়াজ ও মনির হায়দার এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছেন। তড়িঘড়ি করে তাঁদের এই চলে যাওয়া নিয়েও নানা ধরনের সন্দেহ উচ্চারিত হতে থাকল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই দুজনকে নিয়ে দেখা গেল নানা ধরনের ট্রল। সমাধানের পথ হিসেবে বলা হলো, সরকারপ্রধান ড. ইউনূস এর সমাধান করবেন। এ প্রবণতা আমরা আগের সরকারের আমলেও দেখেছি। সবকিছুই যেন শেখ হাসিনা করতেন। যত সাফল্য, সব তাঁর। মন্ত্রীদের কিছু জিজ্ঞাসা করা হলে বলতেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় এ সাফল্য এসেছে।’ আবার যদি কোনো জটিলতা দেখা দিত, সবাই মিলে মিটিং করে শেষে সিদ্ধান্ত হতো ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী’ এর সমাধান দেবেন। দল, অঙ্গসংগঠন, কিংবা ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের কোনো কমিটি করতে হবে—অবধারিতভাবেই দায়িত্ব চলে যাবে ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর’ কাছে। এভাবেই একজন ব্যক্তি স্বৈরাচারী হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে তিনি বিশ্বাস করতে শুরু করেন, তিনি ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত কেউ নিতে পারে না। সব কাজ তাঁকেই করতে হয়। তিনি আসলে অন্যদের মতো নয়, তিনি অনেকটা মহাপুরুষের মতো। আমার মতে, এই স্বৈরাচারী মনোভাবের শুরুটা হয় আশপাশে থাকা মোসাহেবদের কারণেই। এবারও তা-ই হয়েছে, মোসাহেবরা বলতে শুরু করেছেন—ড. ইউনূসই দেবেন শেষ সিদ্ধান্ত!
সরকার অবশ্য অদ্ভুত একটা কাজ করেছে। যখন তাদের ওপর দায়িত্ব এল সংকট নিরসনের, তারা একটা বৈঠক করল, আর বলে দিল—সাত দিনের সময় দেওয়া হলো, এর মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজেদের বসে সমস্যার নিরসন করতে হবে। যে বিরোধের নিরসন টানা আট মাস রাজনৈতিক দলগুলো একসঙ্গে বসে সমাধান করতে পারেনি, সেটা সাত দিনে কীভাবে সম্ভব হবে? তা ছাড়া আরেকটি কথাও উচ্চারিত হচ্ছে। জুলাই সনদ নিয়ে এই বিরোধ, বাস্তবায়ন প্রস্তাবে নোট অব ডিসেন্টগুলোকে না রাখা, এটা আসলে কার দায়? এ অপকর্মটি করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। যে কমিশনের প্রধান আবার ড. ইউনূস নিজে। তাহলে যে ক্রাইসিস সৃষ্টি করেছে ড. ইউনূসের কমিশন, সেটির সমাধানের দায়িত্ব রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর দেওয়া কেন? এদিকে আবার সেই সাত দিনও শেষ হয়ে গেছে গতকাল রোববার। কোনো সমাধান কি হয়েছে? এখন কী হবে? যথারীতি সেই একই কথা বলা হচ্ছে—ড. ইউনূসই দেবেন সমাধান। কিন্তু কীভাবে? তিনি কি খুব বড় রাজনীতিবিদ? আবার যদি ড. ইউনূস কিংবা তাঁর পরিষদ যদি কোনো একটা সিদ্ধান্ত দেয়, তাহলে সেটাকে কি আর ঐকমত্যের সিদ্ধান্ত বলা যাবে? এটা তো তাঁর সরকারের সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে। সরকারই যদি সিদ্ধান্ত দেবে, তাহলে আর সংস্কার কমিশনের নামে এত নাটকের কী প্রয়োজন ছিল? এত সময়ক্ষেপণই বা কেন করা হলো?
এতসব প্রশ্নের জবাব আসলে কে দেবে, কী দেবে, কেউ জানে না। হয়তো জবাব কখনোই পাওয়া যাবে না। তবে বিএনপি কিন্তু এরই মধ্যে সরকারের দিকে আঙুল তুলতে শুরু করেছে। এর মধ্যে গত শনিবার দেখলাম বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ সরাসরি সরকারকে সতর্ক করে দিয়ে বললেন—এভাবে সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়ার কোনো এখতিয়ার এই সরকারের নেই। এই সরকার যে কোনো নির্বাচিত সরকার নয়, এটাও তিনি তাদের স্মরণে রাখতে বলেছেন। জামায়াতে ইসলামী আবার এ পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। তারা এরই মধ্যে আট দলের একটা জোট বানিয়ে নিয়েছে। এই আট দলকে নিয়ে রাস্তায়ও নেমে গেছে পাঁচ দফা দাবি আদায়ে। তাদের এক শীর্ষস্থানীয় নেতা প্রকাশ্যে বলেছেন—ঘি তাদের চাই। আর এই ঘি পেতে যদি আঙুল বাঁকা করতে হয়, তারা সেটাই করবে। এ বক্তব্য কি কেবলই রেটরিক, নাকি এর মধ্যে প্রচ্ছন্ন কোনো হুমকি আছে; সেটাও কিন্তু চিন্তার বিষয়। এসবের বিপরীতে বিএনপিও বসে নেই। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী শনিবার এক জায়গায় বললেন, বিএনপির মতো বড় দলের কর্মীরা যদি রাস্তায় নামে, তাহলে সংঘাত হতে পারে।
এ রকম পরিস্থিতিতে জনগণের অবস্থান কোথায়? আমরা এখন বসে আছি ক্লাইমেক্সের অপেক্ষায়! এরই মধ্যে পরস্পরের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ আমরা দেখতে পাচ্ছি।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক

ত্রিমুখী সম্পর্ক নিয়ে অনেক মুভি হয়েছে। এ রকম মুভি দেখেননি, এমন লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন। কেবল মুভিতেই কেন, বাস্তবেও ত্রিমুখী সম্পর্কের অনেক ঘটনা আমরা দেখে থাকি। সব ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ত্রিভুজ সম্পর্কের শেষ পরিণতি সাধারণত ভালো হয় না।
গত বছরের এ সময়ে আমাদের রাজনীতিতে খুব শক্ত একটা ত্রিভুজ সম্পর্ক দেখা গিয়েছিল। বিএনপি-অন্তর্বর্তী সরকার-জামায়াত—এই তিন পক্ষের দহরম-মহরম। তাদের সবারই লক্ষ্য তখন ছিল রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করা। এর প্রাথমিক ধাপ, কদিন আগে অর্থাৎ ২০২৪-এর অক্টোবরে অর্জিত হয়েছে। সে দিন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে এই সরকার একটা নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ করেছে। এরপর বাকি ছিল মূল দল আওয়ামী লীগকে অকার্যকর ও অপ্রাসঙ্গিক করা। গত বছরের এ সময়ে সেই চেষ্টা আমরা দেখেছি। প্রশাসনিকভাবে যেমন, ঠিক তেমনি সামাজিকভাবেও স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিস্ট দল হিসেবে আওয়ামী লীগবিরোধী প্রচারণা বেশ জোরেশোরেই চলছিল। এ কাজে বিএনপি, জামায়াত, সরকার—সবাই বেশ আন্তরিকও ছিল। সে সময়ে মাঠের শক্তি হিসেবে বেশ বড় একটা ভূমিকা রেখেছে এনসিপি বা জাতীয় নাগরিক পার্টি। তারপর মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে যখন আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলো, আমার বিবেচনায় ত্রিভুজ দহরম-মহরমের সেটাই ছিল পিক-টাইম। এর পর থেকে নিজ নিজ স্বার্থ নিয়ে ধীরে ধীরে সবাই মাঠে নেমে পড়ল। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকল দূরত্ব।
মে মাসের ১২ তারিখে আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ডে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলো, তার মাসখানেক পর জুনের ১৫ তারিখে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস লন্ডনে গিয়ে বৈঠক করলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে। বলতে গেলে ওই বৈঠকটাই যেন সম্পর্কে ভাঙনের ক্ষেত্রে একটা প্রকাশ্য কারণ হতে পারল। জামায়াত অভিযোগ তুলল সরকারের প্রতি—বলল, বিএনপির প্রতি পক্ষপাতিত্ব করছে সরকার। অভিযোগের পেছনের কারণটিও তারা প্রকাশ করল। বলল, ওই বৈঠকের পরই নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় হিসেবে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধের কথাটি বলা হয়েছে। একটিমাত্র দলের শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথার পরিপ্রেক্ষিতে যদি নির্বাচনের সময় নির্ধারিত হয়, তাহলে সেই দলের প্রতি সরকারের পক্ষপাতের বিষয়টি অস্বীকার করা তো সহজ হয় না।
জুনের পর থেকে যত দিন যেতে থাকল, সাধারণ মানুষের কাছেও বিএনপি-জামায়াতের মুখোমুখি অবস্থানটা পরিষ্কার হতে থাকল। ঐকমত্য কমিশনেও দেখা গেল দুই দলের এই বিরোধের প্রকাশ। সংস্কারের অনেক প্রস্তাবেই বিএনপি-জামায়াতকে পরস্পরবিরোধী অবস্থানে দেখা গেল। বিএনপির পক্ষ থেকে একের পর এক আসতে থাকল নোট অব ডিসেন্ট বা আপত্তি। এরপর আবার বিপত্তি দেখা গেল জুলাই সনদ বাস্তবায়নে যে ‘গণভোট’ করার কথা বলা হচ্ছে, সেটি অনুষ্ঠানের তারিখ নিয়ে। বিএনপি বলল, নির্বাচনের দিনই হোক গণভোট, বিপরীতে জামায়াত বলছে—নির্বাচনের আগে, সম্ভব হলে এই নভেম্বরেই গণভোট হতে হবে। গণভোটের রায় নিয়ে, সেটার ওপর ভিত্তি করেই হবে নির্বাচন। আবার জুলাই সনদ বাস্তবায়নের যে আদেশ, তার খসড়া নিয়েও বড় ধরনের আপত্তি তুলল বিএনপি। আপত্তির মাত্রাটা এতটাই প্রবল যে, তারা বলল—জুলাই সনদ নিয়ে ঐকমত্য কমিশন তাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। খেলায় যে রেফারির ওপর সব পক্ষ ভরসা রাখে, সে রেফারিই এবার গোল দিয়ে বসে আছে। অর্থাৎ চরম পক্ষপাতের অভিযোগ। যে কমিশনের প্রধান হচ্ছেন খোদ সরকারপ্রধান ড. ইউনূস, তাঁরই বিরুদ্ধে পক্ষপাত ও প্রতারণার অভিযোগ! বিষয়টি কিন্তু এরপর আর হালকা থাকল না।
তাহলে এখন কী হবে? গণভোট কবে হবে? গণভোটে জনগণের সামনে প্রশ্ন কী থাকবে? এসব প্রশ্নের সমাধান কে দেবে? ঐকমত্য কমিশনের প্রধান ও সক্রিয় দুই ব্যক্তি ড. আলী রীয়াজ ও মনির হায়দার এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছেন। তড়িঘড়ি করে তাঁদের এই চলে যাওয়া নিয়েও নানা ধরনের সন্দেহ উচ্চারিত হতে থাকল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই দুজনকে নিয়ে দেখা গেল নানা ধরনের ট্রল। সমাধানের পথ হিসেবে বলা হলো, সরকারপ্রধান ড. ইউনূস এর সমাধান করবেন। এ প্রবণতা আমরা আগের সরকারের আমলেও দেখেছি। সবকিছুই যেন শেখ হাসিনা করতেন। যত সাফল্য, সব তাঁর। মন্ত্রীদের কিছু জিজ্ঞাসা করা হলে বলতেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় এ সাফল্য এসেছে।’ আবার যদি কোনো জটিলতা দেখা দিত, সবাই মিলে মিটিং করে শেষে সিদ্ধান্ত হতো ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী’ এর সমাধান দেবেন। দল, অঙ্গসংগঠন, কিংবা ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের কোনো কমিটি করতে হবে—অবধারিতভাবেই দায়িত্ব চলে যাবে ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর’ কাছে। এভাবেই একজন ব্যক্তি স্বৈরাচারী হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে তিনি বিশ্বাস করতে শুরু করেন, তিনি ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত কেউ নিতে পারে না। সব কাজ তাঁকেই করতে হয়। তিনি আসলে অন্যদের মতো নয়, তিনি অনেকটা মহাপুরুষের মতো। আমার মতে, এই স্বৈরাচারী মনোভাবের শুরুটা হয় আশপাশে থাকা মোসাহেবদের কারণেই। এবারও তা-ই হয়েছে, মোসাহেবরা বলতে শুরু করেছেন—ড. ইউনূসই দেবেন শেষ সিদ্ধান্ত!
সরকার অবশ্য অদ্ভুত একটা কাজ করেছে। যখন তাদের ওপর দায়িত্ব এল সংকট নিরসনের, তারা একটা বৈঠক করল, আর বলে দিল—সাত দিনের সময় দেওয়া হলো, এর মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজেদের বসে সমস্যার নিরসন করতে হবে। যে বিরোধের নিরসন টানা আট মাস রাজনৈতিক দলগুলো একসঙ্গে বসে সমাধান করতে পারেনি, সেটা সাত দিনে কীভাবে সম্ভব হবে? তা ছাড়া আরেকটি কথাও উচ্চারিত হচ্ছে। জুলাই সনদ নিয়ে এই বিরোধ, বাস্তবায়ন প্রস্তাবে নোট অব ডিসেন্টগুলোকে না রাখা, এটা আসলে কার দায়? এ অপকর্মটি করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। যে কমিশনের প্রধান আবার ড. ইউনূস নিজে। তাহলে যে ক্রাইসিস সৃষ্টি করেছে ড. ইউনূসের কমিশন, সেটির সমাধানের দায়িত্ব রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর দেওয়া কেন? এদিকে আবার সেই সাত দিনও শেষ হয়ে গেছে গতকাল রোববার। কোনো সমাধান কি হয়েছে? এখন কী হবে? যথারীতি সেই একই কথা বলা হচ্ছে—ড. ইউনূসই দেবেন সমাধান। কিন্তু কীভাবে? তিনি কি খুব বড় রাজনীতিবিদ? আবার যদি ড. ইউনূস কিংবা তাঁর পরিষদ যদি কোনো একটা সিদ্ধান্ত দেয়, তাহলে সেটাকে কি আর ঐকমত্যের সিদ্ধান্ত বলা যাবে? এটা তো তাঁর সরকারের সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে। সরকারই যদি সিদ্ধান্ত দেবে, তাহলে আর সংস্কার কমিশনের নামে এত নাটকের কী প্রয়োজন ছিল? এত সময়ক্ষেপণই বা কেন করা হলো?
এতসব প্রশ্নের জবাব আসলে কে দেবে, কী দেবে, কেউ জানে না। হয়তো জবাব কখনোই পাওয়া যাবে না। তবে বিএনপি কিন্তু এরই মধ্যে সরকারের দিকে আঙুল তুলতে শুরু করেছে। এর মধ্যে গত শনিবার দেখলাম বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ সরাসরি সরকারকে সতর্ক করে দিয়ে বললেন—এভাবে সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়ার কোনো এখতিয়ার এই সরকারের নেই। এই সরকার যে কোনো নির্বাচিত সরকার নয়, এটাও তিনি তাদের স্মরণে রাখতে বলেছেন। জামায়াতে ইসলামী আবার এ পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। তারা এরই মধ্যে আট দলের একটা জোট বানিয়ে নিয়েছে। এই আট দলকে নিয়ে রাস্তায়ও নেমে গেছে পাঁচ দফা দাবি আদায়ে। তাদের এক শীর্ষস্থানীয় নেতা প্রকাশ্যে বলেছেন—ঘি তাদের চাই। আর এই ঘি পেতে যদি আঙুল বাঁকা করতে হয়, তারা সেটাই করবে। এ বক্তব্য কি কেবলই রেটরিক, নাকি এর মধ্যে প্রচ্ছন্ন কোনো হুমকি আছে; সেটাও কিন্তু চিন্তার বিষয়। এসবের বিপরীতে বিএনপিও বসে নেই। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী শনিবার এক জায়গায় বললেন, বিএনপির মতো বড় দলের কর্মীরা যদি রাস্তায় নামে, তাহলে সংঘাত হতে পারে।
এ রকম পরিস্থিতিতে জনগণের অবস্থান কোথায়? আমরা এখন বসে আছি ক্লাইমেক্সের অপেক্ষায়! এরই মধ্যে পরস্পরের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ আমরা দেখতে পাচ্ছি।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক

ড. সেলিম জাহান জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন দপ্তর ও দারিদ্র্য দূরীকরণ বিভাগের সাবেক পরিচালক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক তিনি। অর্থনীতি ছাড়াও শিল্প-সাহিত্যের জগতে রয়েছে তাঁর সরব উপস্থিতি।
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
আমরা চব্বিশের আন্দোলন দেখেছি—বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন থেকে যা রূপ নেয় স্বৈরাচার পতনের আন্দোলনে। এর আগপর্যন্ত স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন সম্পর্কে জেনেছি নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থান এবং নূর হোসেনের আত্মত্যাগের কথা। অনেকে দুটো ঘটনারই সাক্ষী। ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর নূর হোসেন শহীদ হন পুলিশের গুলিতে।
১৫ ঘণ্টা আগে
গত এক বছরে আমাদের জাতি এক অভূতপূর্ব রাজনৈতিক প্রজ্ঞা লাভ করেছে। জাতীয় গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ঘরের ভেতর থেকে চায়ের দোকান, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়—সর্বত্রই রাজনৈতিক আলোচনা, পর্যালোচনা এবং সেই সঙ্গে যাঁর যাঁর সুচিন্তিত মন্তব্যও দিয়ে যাচ্ছেন।
১৫ ঘণ্টা আগে
দেশে এমনিতেই ফসলি জমি হ্রাস পাচ্ছে। সেটি কমে যাওয়া মানে খাদ্যের উৎপাদনও কমে যাওয়া। যে কারণে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়ে থাকে, কোনো আবাদি জমি যাতে পতিত না থাকে।
১৫ ঘণ্টা আগেশহীদ নূর হোসেন দিবস
সৈয়দা সাদিয়া শাহরীন

আমরা চব্বিশের আন্দোলন দেখেছি—বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন থেকে যা রূপ নেয় স্বৈরাচার পতনের আন্দোলনে। এর আগপর্যন্ত স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন সম্পর্কে জেনেছি নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থান এবং নূর হোসেনের আত্মত্যাগের কথা। অনেকে দুটো ঘটনারই সাক্ষী। ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর নূর হোসেন শহীদ হন পুলিশের গুলিতে। কারণটা শুধু তাঁর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে যোগ দেওয়া ছিল না, ছিল তাঁর বুকে-পিঠে লেখা স্লোগানও—‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’। নূর হোসেনের এই অদম্য সাহসই যে পরবর্তী সময়ে চব্বিশের জুলাই-আগস্টে তরুণদের মাঝে ছড়িয়ে যায়, সেটা না বললেও চলে। কেননা, ইতিহাস সাক্ষী এবং শিক্ষক—দুটো ভূমিকা পালন করে। শহীদ নূর হোসেন দিবসের নেপথ্যে কী, কেন তিনি শহীদ হন? এসব প্রশ্নের উত্তর না পেলে হয়তো আজকের প্রজন্ম অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে পারত না। তাই নূর হোসেনকে ভুলে যাওয়া যায় না।
বেবিট্যাক্সিচালকের সন্তান নূর হোসেনের জন্ম ঢাকায়, নারিন্দায়, ১৯৬১ সালে। পড়ালেখার দৌড় বেশি দূর যায়নি, অষ্টম শ্রেণিতেই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন। কিন্তু রাজনীতিতে সক্রিয়। আর মোটর ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। ছিলেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের বনগ্রাম শাখার প্রচার সম্পাদক। কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি না নিয়েও রাজনীতির শব্দ নিয়ে খেলায় মেধার পরিচয় দিয়েছিলেন স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সময়। জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনকালে নাখোশ হয়ে আর সবার সঙ্গে রাজনৈতিক মিছিলে যোগ দেওয়ার আগের দিন, অর্থাৎ ১৯৮৭ সালের ৯ নভেম্বর নূর হোসেন ঠিক করে ফেলেছিলেন কী হবে তাঁর স্লোগান। সেদিন পপুলার আর্ট নামের একটি দোকান থেকে সাদা রং দিয়ে নিজের বুকে লিখিয়ে নেন ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক’। আর পিঠে লেখান ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক’। প্রচার সম্পাদকের কাজটা ভালোই জানতেন! এই কাজ করে বাড়ি গেলেন না। দুদিন আগেই ঘরছাড়া হয়েছিলেন যদিও। আশ্রয় নিয়েছিলেন একটি মসজিদে। পরিবার ১০ নভেম্বর সকালে তাঁকে খুঁজে পেলেও তিনি বাড়ি ফিরতে চাননি। গায়ে কাপড় টেনে ঢেকে দিয়েছিলেন সেই কঠোর স্লোগান।
কাজ শেষে বাড়ি ফিরবে বলে মা-বাবাকে বিদায় দিয়েছিলেন নূর হোসেন। কিন্তু ফেরা আর হলো কই? ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর জোটবদ্ধ বিরোধী রাজনৈতিক দলসমূহ ‘ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি’ গ্রহণ করে। কর্মসূচির লক্ষ্য ছিল সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি আদায়। সেদিন স্বৈরাচারবিরোধী যে মিছিলটি পল্টন এলাকার ‘জিরো পয়েন্ট’ অতিক্রম করছিল, সেখানে ছিলেন নূর। কাঁদানে গ্যাস ও গুলি ছুড়ে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ করে দেয় তৎকালীন সরকারের পালিত পুলিশ। নূর হোসেনকে তখন আলাদা করে চেনা যাচ্ছিল খুব সহজে, গায়ে লেখা শ্বেত স্লোগানের কারণে। গুলি এসে বিঁধেছিল সেই গায়ে। তাঁর সঙ্গে সেদিন নিহত হন যুবলীগ নেতা বাবুলও। কিন্তু অষ্টম শ্রেণি পাস নূর হোসেনের গায়ে লেখা স্লোগান তাঁকে আজও অমর করে রেখেছে।
কোঁকড়া চুলের নূর হোসেন তিন দশক পরেও তরুণ, প্রাসঙ্গিক। তাঁর আত্মত্যাগ পরবর্তীকালে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় পথ দেখায়। ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর পতন ঘটে এরশাদ সরকারের। যে গণতন্ত্রকে মুক্তি দিতে নূর প্রাণ দিয়েছিলেন, সেই গণতন্ত্র বন্দী হয়ে গিয়েছিল আবারও। আর আবারও স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন এবং সরকার পতন হলো, কিন্তু গণতন্ত্র কি আজও মুক্তি পেল? কখনো পাবে? এ প্রশ্ন হয়তো নূর হোসেন মনে মনে ভাবছেন, অন্য জগতে বসে। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা।
লেখক: সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

আমরা চব্বিশের আন্দোলন দেখেছি—বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন থেকে যা রূপ নেয় স্বৈরাচার পতনের আন্দোলনে। এর আগপর্যন্ত স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন সম্পর্কে জেনেছি নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থান এবং নূর হোসেনের আত্মত্যাগের কথা। অনেকে দুটো ঘটনারই সাক্ষী। ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর নূর হোসেন শহীদ হন পুলিশের গুলিতে। কারণটা শুধু তাঁর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে যোগ দেওয়া ছিল না, ছিল তাঁর বুকে-পিঠে লেখা স্লোগানও—‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’। নূর হোসেনের এই অদম্য সাহসই যে পরবর্তী সময়ে চব্বিশের জুলাই-আগস্টে তরুণদের মাঝে ছড়িয়ে যায়, সেটা না বললেও চলে। কেননা, ইতিহাস সাক্ষী এবং শিক্ষক—দুটো ভূমিকা পালন করে। শহীদ নূর হোসেন দিবসের নেপথ্যে কী, কেন তিনি শহীদ হন? এসব প্রশ্নের উত্তর না পেলে হয়তো আজকের প্রজন্ম অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে পারত না। তাই নূর হোসেনকে ভুলে যাওয়া যায় না।
বেবিট্যাক্সিচালকের সন্তান নূর হোসেনের জন্ম ঢাকায়, নারিন্দায়, ১৯৬১ সালে। পড়ালেখার দৌড় বেশি দূর যায়নি, অষ্টম শ্রেণিতেই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন। কিন্তু রাজনীতিতে সক্রিয়। আর মোটর ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। ছিলেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের বনগ্রাম শাখার প্রচার সম্পাদক। কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি না নিয়েও রাজনীতির শব্দ নিয়ে খেলায় মেধার পরিচয় দিয়েছিলেন স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সময়। জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনকালে নাখোশ হয়ে আর সবার সঙ্গে রাজনৈতিক মিছিলে যোগ দেওয়ার আগের দিন, অর্থাৎ ১৯৮৭ সালের ৯ নভেম্বর নূর হোসেন ঠিক করে ফেলেছিলেন কী হবে তাঁর স্লোগান। সেদিন পপুলার আর্ট নামের একটি দোকান থেকে সাদা রং দিয়ে নিজের বুকে লিখিয়ে নেন ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক’। আর পিঠে লেখান ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক’। প্রচার সম্পাদকের কাজটা ভালোই জানতেন! এই কাজ করে বাড়ি গেলেন না। দুদিন আগেই ঘরছাড়া হয়েছিলেন যদিও। আশ্রয় নিয়েছিলেন একটি মসজিদে। পরিবার ১০ নভেম্বর সকালে তাঁকে খুঁজে পেলেও তিনি বাড়ি ফিরতে চাননি। গায়ে কাপড় টেনে ঢেকে দিয়েছিলেন সেই কঠোর স্লোগান।
কাজ শেষে বাড়ি ফিরবে বলে মা-বাবাকে বিদায় দিয়েছিলেন নূর হোসেন। কিন্তু ফেরা আর হলো কই? ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর জোটবদ্ধ বিরোধী রাজনৈতিক দলসমূহ ‘ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি’ গ্রহণ করে। কর্মসূচির লক্ষ্য ছিল সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি আদায়। সেদিন স্বৈরাচারবিরোধী যে মিছিলটি পল্টন এলাকার ‘জিরো পয়েন্ট’ অতিক্রম করছিল, সেখানে ছিলেন নূর। কাঁদানে গ্যাস ও গুলি ছুড়ে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ করে দেয় তৎকালীন সরকারের পালিত পুলিশ। নূর হোসেনকে তখন আলাদা করে চেনা যাচ্ছিল খুব সহজে, গায়ে লেখা শ্বেত স্লোগানের কারণে। গুলি এসে বিঁধেছিল সেই গায়ে। তাঁর সঙ্গে সেদিন নিহত হন যুবলীগ নেতা বাবুলও। কিন্তু অষ্টম শ্রেণি পাস নূর হোসেনের গায়ে লেখা স্লোগান তাঁকে আজও অমর করে রেখেছে।
কোঁকড়া চুলের নূর হোসেন তিন দশক পরেও তরুণ, প্রাসঙ্গিক। তাঁর আত্মত্যাগ পরবর্তীকালে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় পথ দেখায়। ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর পতন ঘটে এরশাদ সরকারের। যে গণতন্ত্রকে মুক্তি দিতে নূর প্রাণ দিয়েছিলেন, সেই গণতন্ত্র বন্দী হয়ে গিয়েছিল আবারও। আর আবারও স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন এবং সরকার পতন হলো, কিন্তু গণতন্ত্র কি আজও মুক্তি পেল? কখনো পাবে? এ প্রশ্ন হয়তো নূর হোসেন মনে মনে ভাবছেন, অন্য জগতে বসে। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা।
লেখক: সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

ড. সেলিম জাহান জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন দপ্তর ও দারিদ্র্য দূরীকরণ বিভাগের সাবেক পরিচালক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক তিনি। অর্থনীতি ছাড়াও শিল্প-সাহিত্যের জগতে রয়েছে তাঁর সরব উপস্থিতি।
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
ত্রিমুখী সম্পর্ক নিয়ে অনেক মুভি হয়েছে। এ রকম মুভি দেখেননি, এমন লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন। কেবল মুভিতেই কেন, বাস্তবেও ত্রিমুখী সম্পর্কের অনেক ঘটনা আমরা দেখে থাকি। সব ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ত্রিভুজ সম্পর্কের শেষ পরিণতি সাধারণত ভালো হয় না।
১৫ ঘণ্টা আগে
গত এক বছরে আমাদের জাতি এক অভূতপূর্ব রাজনৈতিক প্রজ্ঞা লাভ করেছে। জাতীয় গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ঘরের ভেতর থেকে চায়ের দোকান, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়—সর্বত্রই রাজনৈতিক আলোচনা, পর্যালোচনা এবং সেই সঙ্গে যাঁর যাঁর সুচিন্তিত মন্তব্যও দিয়ে যাচ্ছেন।
১৫ ঘণ্টা আগে
দেশে এমনিতেই ফসলি জমি হ্রাস পাচ্ছে। সেটি কমে যাওয়া মানে খাদ্যের উৎপাদনও কমে যাওয়া। যে কারণে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়ে থাকে, কোনো আবাদি জমি যাতে পতিত না থাকে।
১৫ ঘণ্টা আগেমামুনুর রশীদ

গত এক বছরে আমাদের জাতি এক অভূতপূর্ব রাজনৈতিক প্রজ্ঞা লাভ করেছে। জাতীয় গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ঘরের ভেতর থেকে চায়ের দোকান, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়—সর্বত্রই রাজনৈতিক আলোচনা, পর্যালোচনা এবং সেই সঙ্গে যাঁর যাঁর সুচিন্তিত মন্তব্যও দিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিদিনই সকাল-বিকেল কিছু না কিছু ঘটনা ঘটছে, সেসবের ওপরও তাৎক্ষণিক মন্তব্য হয়ে যাচ্ছে। এবারের উচ্চমাধ্যমিকের ফলেও তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। শিক্ষার্থীরাও পড়াশোনায় তেমন মনোযোগী হতে পারছে না। সমগ্র আলোচনা ওই রাজনীতিতে। চায়ের কাপেই বড় বড় সিদ্ধান্ত হয়ে যাচ্ছে।
মধ্যবিত্তের বাজারঘাটে টান পড়লেও তা আলোচনায় খুব একটা জায়গা পাচ্ছে না। রাজনীতিই মুখ্য এবং মুখ্য আলোচনার বিষয়। একটা বিষয় অবশ্য দেখার আছে—ক্লান্তিহীন, আড্ডাবাজ বাঙালি যেকোনো বিষয়ের ওপর আলোচনা করতে এবং সিদ্ধান্ত দিতে বড়ই উৎসাহী। ক্রিকেট খেলা দেখতে দেখতে অবলীলায় বিশ্ববিখ্যাত ব্যাটার বা বোলারদের ভুল ধরতে একটুও বিলম্ব করে না।
বলা হয়ে থাকে, সম্মিলিতভাবে বাঙালি সব সময়ই সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। জাতি যে এত রাজনীতিসচেতন হয়ে পড়ল, সেও ভালো কথা। কিন্তু যখন দেখি কোথাও সড়ক দুর্ঘটনা হলো বা পুলিশের লাঠিপেটায় রক্তাক্ত দেহ পড়ে আছে, কোথাও কোনো নারীর অসম্মান হচ্ছে, তখন তার ফোনের ক্যামেরাটি গর্জে ওঠে বটে কিন্তু মানুষ আগায় না। সবকিছু যে ক্যামেরায় ধারণ করার বিষয় নয়, প্রতিবাদী হওয়া প্রয়োজন, তা বোঝার বোধ হয় এখন আর দরকার নেই।
আমাদের লেখাপড়ার সময়টা ছিল ষাটের দশক, যখন দেশে বিপুল পরিমাণে নানা জায়গায় আন্দোলন চলছিল। তার মধ্যে শিল্প-সাহিত্য, বিজ্ঞানচিন্তা এবং বড় বড় রাজনৈতিক তত্ত্ব নিয়েও কথাবার্তা হতো। মিছিলে যাওয়ার আগে ও পরে এসব বিষয় নিয়ে তর্কের ঝড় উঠত। এই তর্কাতর্কির ফলেই একটা বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু এখন এমন একটা সময় এসেছে, যখন রাজনীতিই একমাত্র আলোচনা, তর্কবিতর্কের বিষয়।
এই সময়ের মধ্যে যে কত মানবিক বিপর্যয় ঘটে গেল, দুর্নীতি সকল সময়ের রেকর্ড অতিক্রম করল। শিক্ষাব্যবস্থা নিম্নমুখী, কতিপয় দুর্বৃত্ত আরও বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠল—তার আলোচনা ভুক্তভোগী ছাড়া কেউ করে না। অসহায় কিছু মানুষকে দেখা যায় কোর্ট-কাচারিতে, জেলখানায় দৌড়াদৌড়ি করতে। আবার থানায় প্রচুর মানুষের ভিড়। মানুষ ভেবেছিল একটা পরিবর্তন আসবে, দুর্নীতির কবর রচনা হবে, সরকার একটি কল্যাণমুখী প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড়িয়ে যাবে, দুর্নীতি বিদায় করতে যেমন কমিশন গঠন করেছে, তা দিয়েই চিরতরে এই অসুখটি নির্মূল হয়ে যাবে। কিন্তু তা হলো না। নির্বাচনই এখন একমাত্র আলোচনার বিষয়। অধিকাংশ লোক ভাবছে নির্বাচন হবে না। এই অবিশ্বাসই-বা কেন? মানুষ একটা আস্থাহীনতা এবং অবিশ্বাসের জায়গায় দাঁড়িয়ে গেল কেন?
বাঙালি চিরকালই সরকারবিরোধী। কারণ আছে অনেক। কিন্তু আস্থাহীনতা যদি সংক্রামক হয়ে জাতির সর্বক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে যায়, তাহলে তার পরিণতি কী হবে? উত্তরের জন্য বহু দূর অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই। এখনই দেখা যাচ্ছে মানবিক মূল্যবোধে ধস নেমেছে, যার হাজার হাজার উদাহরণ খুঁজে পাওয়া যাবে। আরও বহুবার বলেছি, রাষ্ট্রকে আমরা মানবিক করতে পারিনি। সব দল মিলেই ব্যবস্থাটা এমন হয়েছে যে সরকার রাষ্ট্রকে অধিকার করে ফেলেছে, সমাজ কোনোমতে ধিকিধিকি জ্বলছে। তবে সমাজের শক্তি এখনো আছে। নইলে যে নৈরাজ্যকে আমরা দেখেছি, তাতে দেশে বিপুল পরিমাণে দাঙ্গা-হাঙ্গামা হয়ে অনেক কিছুই তছনছ হয়ে যেত। কোনো কোনো ওয়াজ-মাহফিল থেকে যেসব উসকানিমূলক বক্তব্য আসে, তাতে সব জায়গায় অগ্ন্যুৎপাত হওয়ার কথা। কিছু কিছু জায়গায় যে তা হয়নি, তা-ও সত্য নয়। অনেক জায়গায়ই ফেসবুকের একটি পোস্ট অনেক দাঙ্গাবাজির কারণ হয়েছে। সেসব ঘটনায় আমাদের সমাজ সত্যিই একটা ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু এবার কোনো শক্তিই তেমন দুর্বার হয়ে উঠতে পারেনি। আর সমাজের সবচেয়ে বড় শক্তিটি এখনো সোচ্চার হতে পারেনি।
আমাদের অর্ধশতকের শিক্ষাব্যবস্থা মানুষকে সত্য বলতে শেখায়নি। রাজনীতিবিদ, আমলা, বিচারক, শিক্ষক ও শিক্ষাব্যবস্থার নিয়ন্ত্রকও সত্য ভাষাকে উৎসাহিত করেনি। একটা অসুস্থ প্রতিযোগিতা সর্বত্রই উৎসাহিত হয়েছে। আজকে যে শুধু রাজনীতিই একমাত্র আলোচ্য বিষয়, তার কারণও হচ্ছে সমাজের অন্য সমস্যাগুলোর সমাধান না করে একটি দুর্নীতির পথই বেছে নিয়েছে সবাই। যদি সব জায়গায়ই একটা সুস্থ-স্বাভাবিক ধারা অব্যাহত থাকত, তাহলে এ জায়গায় এসে দাঁড়াতাম না আমরা। সমাজের সর্বত্র সত্যকে মূল্যায়ন করার একটা ব্যবস্থাই পারত সমাজকে রক্ষা করতে। রাজনীতির বৃহত্তর অর্থে প্রয়োগটাও হয়নি।
মানুষের মহত্তম কল্যাণের পথটা রাজনীতিই খুলে দেয়। চীন, রাশিয়া, কিউবার বিপ্লবে সে দেশগুলোর জনগণ একটা মুক্তির পথ পেয়েছিল। তুরস্কের কামাল আতাতুর্ক সব ধর্মান্ধতা এবং গোঁড়ামি থেকে একটা মুক্ত সমাজ গড়েছিলেন। আমাদের দেশেও লাখ লাখ মানুষ দেশের জন্য বড় বড় ত্যাগ স্বীকার করেছেন। কিন্তু রাজনৈতিক নেতৃত্ব তা সমাজের কাজে ব্যবহার করতে পারেননি। একটাই বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, তা হলো ক্ষমতা। ক্ষমতার ব্যবহার এবং অপব্যবহার একটি সমাজের জন্য যে কত ভয়ংকর হতে পারে, তা আমরা দেখেছি। এটা সবাই স্বীকার করছেন, আমরা একটি সংকটকাল পার করছি। তার মধ্যেও মানুষের মনে আশা জাগে—একটা সুদিন আসবে। কীভাবে যে সে আশা পূর্ণ হবে আমি জানি না, কেউ জানে কি না জানি না, তবে কেউ না কেউ নিশ্চয়ই জানেন। জেনে থাকলে আমাদের খবর দেবেন।
লেখক: নাট্যব্যক্তিত্ব

গত এক বছরে আমাদের জাতি এক অভূতপূর্ব রাজনৈতিক প্রজ্ঞা লাভ করেছে। জাতীয় গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ঘরের ভেতর থেকে চায়ের দোকান, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়—সর্বত্রই রাজনৈতিক আলোচনা, পর্যালোচনা এবং সেই সঙ্গে যাঁর যাঁর সুচিন্তিত মন্তব্যও দিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিদিনই সকাল-বিকেল কিছু না কিছু ঘটনা ঘটছে, সেসবের ওপরও তাৎক্ষণিক মন্তব্য হয়ে যাচ্ছে। এবারের উচ্চমাধ্যমিকের ফলেও তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। শিক্ষার্থীরাও পড়াশোনায় তেমন মনোযোগী হতে পারছে না। সমগ্র আলোচনা ওই রাজনীতিতে। চায়ের কাপেই বড় বড় সিদ্ধান্ত হয়ে যাচ্ছে।
মধ্যবিত্তের বাজারঘাটে টান পড়লেও তা আলোচনায় খুব একটা জায়গা পাচ্ছে না। রাজনীতিই মুখ্য এবং মুখ্য আলোচনার বিষয়। একটা বিষয় অবশ্য দেখার আছে—ক্লান্তিহীন, আড্ডাবাজ বাঙালি যেকোনো বিষয়ের ওপর আলোচনা করতে এবং সিদ্ধান্ত দিতে বড়ই উৎসাহী। ক্রিকেট খেলা দেখতে দেখতে অবলীলায় বিশ্ববিখ্যাত ব্যাটার বা বোলারদের ভুল ধরতে একটুও বিলম্ব করে না।
বলা হয়ে থাকে, সম্মিলিতভাবে বাঙালি সব সময়ই সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। জাতি যে এত রাজনীতিসচেতন হয়ে পড়ল, সেও ভালো কথা। কিন্তু যখন দেখি কোথাও সড়ক দুর্ঘটনা হলো বা পুলিশের লাঠিপেটায় রক্তাক্ত দেহ পড়ে আছে, কোথাও কোনো নারীর অসম্মান হচ্ছে, তখন তার ফোনের ক্যামেরাটি গর্জে ওঠে বটে কিন্তু মানুষ আগায় না। সবকিছু যে ক্যামেরায় ধারণ করার বিষয় নয়, প্রতিবাদী হওয়া প্রয়োজন, তা বোঝার বোধ হয় এখন আর দরকার নেই।
আমাদের লেখাপড়ার সময়টা ছিল ষাটের দশক, যখন দেশে বিপুল পরিমাণে নানা জায়গায় আন্দোলন চলছিল। তার মধ্যে শিল্প-সাহিত্য, বিজ্ঞানচিন্তা এবং বড় বড় রাজনৈতিক তত্ত্ব নিয়েও কথাবার্তা হতো। মিছিলে যাওয়ার আগে ও পরে এসব বিষয় নিয়ে তর্কের ঝড় উঠত। এই তর্কাতর্কির ফলেই একটা বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু এখন এমন একটা সময় এসেছে, যখন রাজনীতিই একমাত্র আলোচনা, তর্কবিতর্কের বিষয়।
এই সময়ের মধ্যে যে কত মানবিক বিপর্যয় ঘটে গেল, দুর্নীতি সকল সময়ের রেকর্ড অতিক্রম করল। শিক্ষাব্যবস্থা নিম্নমুখী, কতিপয় দুর্বৃত্ত আরও বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠল—তার আলোচনা ভুক্তভোগী ছাড়া কেউ করে না। অসহায় কিছু মানুষকে দেখা যায় কোর্ট-কাচারিতে, জেলখানায় দৌড়াদৌড়ি করতে। আবার থানায় প্রচুর মানুষের ভিড়। মানুষ ভেবেছিল একটা পরিবর্তন আসবে, দুর্নীতির কবর রচনা হবে, সরকার একটি কল্যাণমুখী প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড়িয়ে যাবে, দুর্নীতি বিদায় করতে যেমন কমিশন গঠন করেছে, তা দিয়েই চিরতরে এই অসুখটি নির্মূল হয়ে যাবে। কিন্তু তা হলো না। নির্বাচনই এখন একমাত্র আলোচনার বিষয়। অধিকাংশ লোক ভাবছে নির্বাচন হবে না। এই অবিশ্বাসই-বা কেন? মানুষ একটা আস্থাহীনতা এবং অবিশ্বাসের জায়গায় দাঁড়িয়ে গেল কেন?
বাঙালি চিরকালই সরকারবিরোধী। কারণ আছে অনেক। কিন্তু আস্থাহীনতা যদি সংক্রামক হয়ে জাতির সর্বক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে যায়, তাহলে তার পরিণতি কী হবে? উত্তরের জন্য বহু দূর অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই। এখনই দেখা যাচ্ছে মানবিক মূল্যবোধে ধস নেমেছে, যার হাজার হাজার উদাহরণ খুঁজে পাওয়া যাবে। আরও বহুবার বলেছি, রাষ্ট্রকে আমরা মানবিক করতে পারিনি। সব দল মিলেই ব্যবস্থাটা এমন হয়েছে যে সরকার রাষ্ট্রকে অধিকার করে ফেলেছে, সমাজ কোনোমতে ধিকিধিকি জ্বলছে। তবে সমাজের শক্তি এখনো আছে। নইলে যে নৈরাজ্যকে আমরা দেখেছি, তাতে দেশে বিপুল পরিমাণে দাঙ্গা-হাঙ্গামা হয়ে অনেক কিছুই তছনছ হয়ে যেত। কোনো কোনো ওয়াজ-মাহফিল থেকে যেসব উসকানিমূলক বক্তব্য আসে, তাতে সব জায়গায় অগ্ন্যুৎপাত হওয়ার কথা। কিছু কিছু জায়গায় যে তা হয়নি, তা-ও সত্য নয়। অনেক জায়গায়ই ফেসবুকের একটি পোস্ট অনেক দাঙ্গাবাজির কারণ হয়েছে। সেসব ঘটনায় আমাদের সমাজ সত্যিই একটা ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু এবার কোনো শক্তিই তেমন দুর্বার হয়ে উঠতে পারেনি। আর সমাজের সবচেয়ে বড় শক্তিটি এখনো সোচ্চার হতে পারেনি।
আমাদের অর্ধশতকের শিক্ষাব্যবস্থা মানুষকে সত্য বলতে শেখায়নি। রাজনীতিবিদ, আমলা, বিচারক, শিক্ষক ও শিক্ষাব্যবস্থার নিয়ন্ত্রকও সত্য ভাষাকে উৎসাহিত করেনি। একটা অসুস্থ প্রতিযোগিতা সর্বত্রই উৎসাহিত হয়েছে। আজকে যে শুধু রাজনীতিই একমাত্র আলোচ্য বিষয়, তার কারণও হচ্ছে সমাজের অন্য সমস্যাগুলোর সমাধান না করে একটি দুর্নীতির পথই বেছে নিয়েছে সবাই। যদি সব জায়গায়ই একটা সুস্থ-স্বাভাবিক ধারা অব্যাহত থাকত, তাহলে এ জায়গায় এসে দাঁড়াতাম না আমরা। সমাজের সর্বত্র সত্যকে মূল্যায়ন করার একটা ব্যবস্থাই পারত সমাজকে রক্ষা করতে। রাজনীতির বৃহত্তর অর্থে প্রয়োগটাও হয়নি।
মানুষের মহত্তম কল্যাণের পথটা রাজনীতিই খুলে দেয়। চীন, রাশিয়া, কিউবার বিপ্লবে সে দেশগুলোর জনগণ একটা মুক্তির পথ পেয়েছিল। তুরস্কের কামাল আতাতুর্ক সব ধর্মান্ধতা এবং গোঁড়ামি থেকে একটা মুক্ত সমাজ গড়েছিলেন। আমাদের দেশেও লাখ লাখ মানুষ দেশের জন্য বড় বড় ত্যাগ স্বীকার করেছেন। কিন্তু রাজনৈতিক নেতৃত্ব তা সমাজের কাজে ব্যবহার করতে পারেননি। একটাই বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, তা হলো ক্ষমতা। ক্ষমতার ব্যবহার এবং অপব্যবহার একটি সমাজের জন্য যে কত ভয়ংকর হতে পারে, তা আমরা দেখেছি। এটা সবাই স্বীকার করছেন, আমরা একটি সংকটকাল পার করছি। তার মধ্যেও মানুষের মনে আশা জাগে—একটা সুদিন আসবে। কীভাবে যে সে আশা পূর্ণ হবে আমি জানি না, কেউ জানে কি না জানি না, তবে কেউ না কেউ নিশ্চয়ই জানেন। জেনে থাকলে আমাদের খবর দেবেন।
লেখক: নাট্যব্যক্তিত্ব

ড. সেলিম জাহান জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন দপ্তর ও দারিদ্র্য দূরীকরণ বিভাগের সাবেক পরিচালক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক তিনি। অর্থনীতি ছাড়াও শিল্প-সাহিত্যের জগতে রয়েছে তাঁর সরব উপস্থিতি।
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
ত্রিমুখী সম্পর্ক নিয়ে অনেক মুভি হয়েছে। এ রকম মুভি দেখেননি, এমন লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন। কেবল মুভিতেই কেন, বাস্তবেও ত্রিমুখী সম্পর্কের অনেক ঘটনা আমরা দেখে থাকি। সব ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ত্রিভুজ সম্পর্কের শেষ পরিণতি সাধারণত ভালো হয় না।
১৫ ঘণ্টা আগে
আমরা চব্বিশের আন্দোলন দেখেছি—বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন থেকে যা রূপ নেয় স্বৈরাচার পতনের আন্দোলনে। এর আগপর্যন্ত স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন সম্পর্কে জেনেছি নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থান এবং নূর হোসেনের আত্মত্যাগের কথা। অনেকে দুটো ঘটনারই সাক্ষী। ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর নূর হোসেন শহীদ হন পুলিশের গুলিতে।
১৫ ঘণ্টা আগে
দেশে এমনিতেই ফসলি জমি হ্রাস পাচ্ছে। সেটি কমে যাওয়া মানে খাদ্যের উৎপাদনও কমে যাওয়া। যে কারণে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়ে থাকে, কোনো আবাদি জমি যাতে পতিত না থাকে।
১৫ ঘণ্টা আগেসম্পাদকীয়

দেশে এমনিতেই ফসলি জমি হ্রাস পাচ্ছে। সেটি কমে যাওয়া মানে খাদ্যের উৎপাদনও কমে যাওয়া। যে কারণে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়ে থাকে, কোনো আবাদি জমি যাতে পতিত না থাকে।
সেই ফসলি জমির মাটিই যদি কেটে নেওয়া হয়, তাহলে খাদ্য উৎপাদনের কী হবে! মাদারীপুর সদর উপজেলায় আড়িয়াল খাঁ ও কুমার নদের পাড়ের অন্তত ২০টি স্থান থেকে অবৈধভাবে মাটি কেটে বিক্রি করছেন স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি। তাঁদের একজন হলেন ইলিয়াস চৌকিদার। প্রতিদিন রাত থেকে ভোর পর্যন্ত ট্রলারে করে অবাধে মাটি কেটে নেওয়ার ফলে নদীপাড়ের গ্রামগুলোর মানুষের জীবনে এক বিশাল ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে।
বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০-এর ৪-এর খ ও গ ধারা অনুযায়ী সেতু, কালভার্ট, বাঁধ, সড়ক, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার ১ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে বালু বা মাটি তোলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু যাঁরা মাটি কাটেন তাঁরা এই আইন মানেন না। আইন অমান্য করার জন্য তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। কিন্তু তাঁদের বিরুদ্ধে কম ক্ষেত্রেই ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়। প্রশাসন অবৈধভাবে মাটি কাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় না কেন, সেটা বোধগম্য নয়।
নদীর পাড় থেকে মাটি কাটার কারণে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হচ্ছে, যা ভাঙনে সহায়তা করবে। শুধু নদীভাঙনই নয়, এভাবে মাটি কাটার ফলে একজন কৃষকের সবজিখেত সরাসরি ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে। কয়েকজন কৃষক অভিযোগ করেছেন, ফসলি জমির মাটি কেটে নেওয়ায় জমির উর্বরতা শক্তি হ্রাস পাচ্ছে এবং ফলনও কমে গেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ সত্ত্বেও ইলিয়াস চৌকিদার মাটি কাটা অব্যাহত রেখেছেন। এমনকি প্রতিবাদ করায় তিনি গ্রামের একজনকে ‘চোখ তুলে ফেলার’ হুমকিও দিয়েছেন। ভুক্তভোগী স্থানীয় বাসিন্দারা বহুবার প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিলেও কোনো আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
অবৈধভাবে এই মাটি কাটা রোধে নদের তীরবর্তী এলাকাগুলোতে নিয়মিত টহলের ব্যবস্থা চালু করা দরকার। কেবল দিনের বেলাতেই নয়, মাটি কাটার মূল সময় অর্থাৎ রাতে ও ভোরে কঠোর নজরদারি বাড়াতে হবে। পাশাপাশি যাঁরা রাজনৈতিক প্রভাবে এ ধরনের অপকর্ম করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। কেবল জরিমানা নয়, মাটি কাটার সরঞ্জাম জব্দ এবং কঠোর কারাদণ্ড নিশ্চিত করতে হবে, যাতে অন্যরা এমন কাজ করার সাহস না পান।
নদীর পাড়ের ফসলি জমি বাঁচানো না গেলে, পুরো গ্রামই একদিন মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে পারে। সে জন্য প্রশাসনকে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, যাতে এই দুই নদ স্বাভাবিকভাবে প্রবাহিত হতে পারে এবং নদের দুই পাড়ের স্থানীয় মানুষজন ভাঙন ও ভূমি হারানোর আতঙ্ক থেকে মুক্তি পান।
অবৈধভাবে মাটি কাটা প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে। মাটি ব্যবস্থাপনা নিয়ে সরকারি যে আইন রয়েছে, আমরা সেই আইনের বাস্তবায়ন দেখতে চাই।

দেশে এমনিতেই ফসলি জমি হ্রাস পাচ্ছে। সেটি কমে যাওয়া মানে খাদ্যের উৎপাদনও কমে যাওয়া। যে কারণে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়ে থাকে, কোনো আবাদি জমি যাতে পতিত না থাকে।
সেই ফসলি জমির মাটিই যদি কেটে নেওয়া হয়, তাহলে খাদ্য উৎপাদনের কী হবে! মাদারীপুর সদর উপজেলায় আড়িয়াল খাঁ ও কুমার নদের পাড়ের অন্তত ২০টি স্থান থেকে অবৈধভাবে মাটি কেটে বিক্রি করছেন স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি। তাঁদের একজন হলেন ইলিয়াস চৌকিদার। প্রতিদিন রাত থেকে ভোর পর্যন্ত ট্রলারে করে অবাধে মাটি কেটে নেওয়ার ফলে নদীপাড়ের গ্রামগুলোর মানুষের জীবনে এক বিশাল ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে।
বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০-এর ৪-এর খ ও গ ধারা অনুযায়ী সেতু, কালভার্ট, বাঁধ, সড়ক, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার ১ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে বালু বা মাটি তোলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু যাঁরা মাটি কাটেন তাঁরা এই আইন মানেন না। আইন অমান্য করার জন্য তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। কিন্তু তাঁদের বিরুদ্ধে কম ক্ষেত্রেই ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়। প্রশাসন অবৈধভাবে মাটি কাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় না কেন, সেটা বোধগম্য নয়।
নদীর পাড় থেকে মাটি কাটার কারণে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হচ্ছে, যা ভাঙনে সহায়তা করবে। শুধু নদীভাঙনই নয়, এভাবে মাটি কাটার ফলে একজন কৃষকের সবজিখেত সরাসরি ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে। কয়েকজন কৃষক অভিযোগ করেছেন, ফসলি জমির মাটি কেটে নেওয়ায় জমির উর্বরতা শক্তি হ্রাস পাচ্ছে এবং ফলনও কমে গেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ সত্ত্বেও ইলিয়াস চৌকিদার মাটি কাটা অব্যাহত রেখেছেন। এমনকি প্রতিবাদ করায় তিনি গ্রামের একজনকে ‘চোখ তুলে ফেলার’ হুমকিও দিয়েছেন। ভুক্তভোগী স্থানীয় বাসিন্দারা বহুবার প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিলেও কোনো আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
অবৈধভাবে এই মাটি কাটা রোধে নদের তীরবর্তী এলাকাগুলোতে নিয়মিত টহলের ব্যবস্থা চালু করা দরকার। কেবল দিনের বেলাতেই নয়, মাটি কাটার মূল সময় অর্থাৎ রাতে ও ভোরে কঠোর নজরদারি বাড়াতে হবে। পাশাপাশি যাঁরা রাজনৈতিক প্রভাবে এ ধরনের অপকর্ম করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। কেবল জরিমানা নয়, মাটি কাটার সরঞ্জাম জব্দ এবং কঠোর কারাদণ্ড নিশ্চিত করতে হবে, যাতে অন্যরা এমন কাজ করার সাহস না পান।
নদীর পাড়ের ফসলি জমি বাঁচানো না গেলে, পুরো গ্রামই একদিন মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে পারে। সে জন্য প্রশাসনকে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, যাতে এই দুই নদ স্বাভাবিকভাবে প্রবাহিত হতে পারে এবং নদের দুই পাড়ের স্থানীয় মানুষজন ভাঙন ও ভূমি হারানোর আতঙ্ক থেকে মুক্তি পান।
অবৈধভাবে মাটি কাটা প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে। মাটি ব্যবস্থাপনা নিয়ে সরকারি যে আইন রয়েছে, আমরা সেই আইনের বাস্তবায়ন দেখতে চাই।

ড. সেলিম জাহান জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন দপ্তর ও দারিদ্র্য দূরীকরণ বিভাগের সাবেক পরিচালক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক তিনি। অর্থনীতি ছাড়াও শিল্প-সাহিত্যের জগতে রয়েছে তাঁর সরব উপস্থিতি।
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
ত্রিমুখী সম্পর্ক নিয়ে অনেক মুভি হয়েছে। এ রকম মুভি দেখেননি, এমন লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন। কেবল মুভিতেই কেন, বাস্তবেও ত্রিমুখী সম্পর্কের অনেক ঘটনা আমরা দেখে থাকি। সব ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ত্রিভুজ সম্পর্কের শেষ পরিণতি সাধারণত ভালো হয় না।
১৫ ঘণ্টা আগে
আমরা চব্বিশের আন্দোলন দেখেছি—বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন থেকে যা রূপ নেয় স্বৈরাচার পতনের আন্দোলনে। এর আগপর্যন্ত স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন সম্পর্কে জেনেছি নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থান এবং নূর হোসেনের আত্মত্যাগের কথা। অনেকে দুটো ঘটনারই সাক্ষী। ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর নূর হোসেন শহীদ হন পুলিশের গুলিতে।
১৫ ঘণ্টা আগে
গত এক বছরে আমাদের জাতি এক অভূতপূর্ব রাজনৈতিক প্রজ্ঞা লাভ করেছে। জাতীয় গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ঘরের ভেতর থেকে চায়ের দোকান, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়—সর্বত্রই রাজনৈতিক আলোচনা, পর্যালোচনা এবং সেই সঙ্গে যাঁর যাঁর সুচিন্তিত মন্তব্যও দিয়ে যাচ্ছেন।
১৫ ঘণ্টা আগে