Ajker Patrika

খালেদা জিয়ার বিদেশ গমন, দেশের রাজনীতির নতুন বিন্যাস

আপডেট : ০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮: ৩৫
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

জাতীয় স্বার্থ, মতাদর্শগত দ্বন্দ্ব এবং শাসনকাঠামোর পুনর্বিন্যাসের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনীতি আগামী দিনে ঠিক কোন অবয়ব লাভ করবে, তা এই মুহূর্তে নিশ্চিত করে বলা যাবে না। তবে গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে রাজনীতিতে যে রূপ বদলের আঁচ লেগেছে, তা বলা যেতেই পারে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে একদিকে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের তৎপরতা চলছে, অন্যদিকে পুরোনো রাজনৈতিক দলগুলো নিজের অবস্থান পুনর্বিবেচনা করছে এবং নতুন প্রেক্ষাপটে নিজেদের অভিযোজনের চেষ্টাও লক্ষণীয়। এই পরিবর্তনের ধারায় মুক্তিযুদ্ধ ও বাহাত্তরের সংবিধান প্রশ্নে বিএনপির প্রকাশ্য অবস্থান এবং জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে মতভিন্নতা রাজনীতিতে নতুন মাত্রা সংযোজনের ইঙ্গিতবাহী। উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার লন্ডন যাওয়াও মোটেই তাৎপর্যহীন নয়।

গত ৩১ ডিসেম্বর শহীদ মিনারে সমাবেশ ডেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে মুজিববাদী সংবিধানের কবর রচিত হবে’ বলে হুংকার দিয়েও শেষ পর্যন্ত তাদের অবস্থানে দৃঢ় থাকতে পারেনি। ৩১ ডিসেম্বর তাদের পূর্বঘোষিত এবং বহুল আলোচিত ‘জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র’ জারি করা হয়নি। বরং তারা কর্মসূচি পরিবর্তন করে ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ পালন করেছে। ফলে সংবিধান বাতিল কিংবা বিপ্লবী সরকার গঠনের ঘোষণা আসতে পারে বলে যে গুঞ্জন ছিল, তা সত্য হয়নি। যে কারণে বাহাত্তরের ‘সংবিধানের কবর’ও রচিত হয়নি! তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সাময়িকভাবে পিছু হটলেও তারা আসলে কোথায় গিয়ে তাদের ‘আন্দোলন’ শেষ করবে, তা নিশ্চিত করে কে বলতে পারবে? রাজনীতিতে শেষ কথা নেই বলে যে প্রচারণা আছে, আপাতত তাতে আস্থা রাখা ছাড়া আর কী বিকল্প আছে?

১৯৭৫-পরবর্তী বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামী ও বিএনপির মধ্যে রাজনৈতিক ঐক্য সুবিধাজনক বলে মনে করা হলেও বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই ঐক্যে ফাটল ধরেছে। সরকারের রিসেট বাটন টেপার পটভূমিতে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শিক প্রশ্নে বিএনপি নতুন প্রজন্মকে কাছে টানার চেষ্টা করছে বলে মনে হচ্ছে। বিএনপির অনেক নেতাই এখন একাত্তরের পক্ষে কথা বলছেন।

বহু বছর ধরে বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় অধ্যায়কে নিজেদের রাজনীতিতে অন্তর্ভুক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে। আওয়ামী লীগ দীর্ঘ সময় ধরে মুক্তিযুদ্ধকে তার দলীয় পরিচয়ের কেন্দ্রে রেখেছিল এবং বিএনপিকে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি হিসেবে আখ্যা দিয়েছিল। তবে সাম্প্রতিককালে বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সমর্থন এবং বাহাত্তরের সংবিধানের পক্ষে কথা বলছে।

বাহাত্তরের সংবিধানের অন্যতম স্তম্ভ ছিল ধর্মনিরপেক্ষতা, যা একসময় বিএনপির মতাদর্শের সঙ্গে সাংঘর্ষিক মনে করা হতো। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কথা বলার একক অধিকার আওয়ামী লীগ নিয়েছিল। এখন আওয়ামী লীগ মাঠছাড়া। কিন্তু একাত্তর তো বাঙালির সবচেয়ে বড় গৌরবের ঠিকানা। বিএনপির নেতৃত্ব এখন সম্ভবত একাত্তরের সঙ্গে অধিক মাত্রায় সংলগ্ন হওয়ার চেষ্টা করে মুক্তিযুদ্ধকেন্দ্রিক রাজনৈতিক সুবিধা ঝুলিতে ভরার চেষ্টা করছেন।

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে একটি ছাত্র-গণজাগরণ তথা অভ্যুত্থানের কারণে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা থেকে সরে যেতে বাধ্য হয়। সরকার পরিবর্তনের ওই মুহূর্তে একদিকে বিএনপির কাছে নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়, অন্যদিকে দেশে রাজনৈতিক শূন্যতাও প্রবল হয়ে ওঠে।

আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনামলে যে দুর্নীতি, দমননীতি ও স্বৈরতন্ত্রের অভিযোগ উঠেছিল, তা থেকে শিক্ষার্থীরা এবং সাধারণ জনগণ বিকল্প রাজনৈতিক ভবিষ্যতের সন্ধানে রয়েছে। তবে আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতে একটি কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রক শক্তির অভাব দেখা দিচ্ছে, যা রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ডেকে আনতে পারে। বিএনপিকে এই শূন্যতা পূরণের জন্য তাদের মতাদর্শ এবং সাংগঠনিক শক্তিকে পুনর্গঠিত করতে হবে।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ছাত্ররাজনীতি সব সময় একটি প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করেছে। তবে গত কয়েক দশকে ছাত্ররাজনীতি অনেকটাই সহিংসতা ও ব্যক্তিস্বার্থের প্রতীক হয়ে উঠেছিল। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের পটভূমিতে শিক্ষার্থীরা একটি নতুন রাজনৈতিক কাঠামোর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

এই প্রজন্মের ছাত্রনেতারা পুরোনো রাজনৈতিক দলের অনুশাসন এবং বিতর্কিত ইতিহাস থেকে বেরিয়ে এসে নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠনের পরিকল্পনা করছে। কিন্তু তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, স্বচ্ছতা এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে তাদের মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করতে কতটা আগ্রহী, সেটা অনেকের কাছে স্পষ্ট নয়।

এটি বিশেষত বিএনপির জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে। কারণ, ঐতিহাসিকভাবে ছাত্ররাজনীতি বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ মিত্র ছিল। ছাত্রদের নতুন উদ্যোগ বিএনপির জন্য বাড়তি চাপ হিসেবে এসেছে। সে জন্যই বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন নতুন দিকনির্দেশনা দরকার। ক্ষমতার পালাবদল, ছাত্ররাজনীতির পুনর্গঠন এবং জামায়াতের মতো বিতর্কিত দল থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার মধ্য দিয়ে বিএনপির সামনে সুযোগ এসেছে নিজেদের মতাদর্শ পুনর্গঠন করার।

তবে এই সম্ভাবনার সঠিক বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন মুক্তিযুদ্ধের গৌরবকে সর্বজনীনভাবে প্রতিষ্ঠা করা, গণতন্ত্রের জন্য সত্যিকারের প্রতিশ্রুতি দেওয়া এবং তরুণ প্রজন্মের স্বপ্ন ও চাহিদার সঙ্গে নিজেদের একীভূত করা।

এটি পরিষ্কার যে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে পুরোনো মতপার্থক্যের পরিবর্তে এখন দরকার একটি নতুন ঐক্য ও মানসিকতার পরিবর্তন। আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতি, ছাত্রদের নতুন দৃষ্টিভঙ্গি এবং জামায়াতের সঙ্গে বিভেদ এই প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে পারে। একটি নির্মোহ এবং ইতিবাচক রাজনীতি গড়ে উঠলে তা কেবল বিএনপির জন্য নয়, বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে।

দুই.

দেশের রাজনীতি যখন কিছুটা ভারসাম্যহীন, ঠিক তখন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনযাত্রা শুধু একটি মানবিক কিংবা চিকিৎসাবিষয়ক ঘটনা নয়; এটি সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের রাজনীতিকেও নতুন এক মোড় এনে দিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং বিএনপির চেয়ারপারসনের স্বাস্থ্যসংকট বরাবরই রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয় ছিল। তবে ৫ আগস্টের পটপরিবর্তন, ছাত্র-জনতার গণজাগরণ এবং ক্ষমতা বদলের পর তাঁর বিদেশযাত্রা একটি নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতার প্রতিফলন। তাঁর সঙ্গে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের আকস্মিক সৌজন্য সাক্ষাৎ পুরো বিষয়টিকে তাৎপর্যময় করে তুলেছে।

২০১৮ সালে কারাদণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ার পর থেকে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে আলোচনা কখনোই থেমে থাকেনি। তাঁর মুক্তি কিংবা বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে পরিবারের পাশাপাশি দলও বারবার সোচ্চার হয়েছে। তবে তৎকালীন সরকার এ দাবিতে সাড়া না দিয়ে প্রমাণ করেছে যে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা মানবিকতাকে ছাপিয়ে যেতে পারে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রপতির আদেশে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহার একটি নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতার ইঙ্গিত দেয়, যেখানে মানবিক ইস্যুকে রাজনৈতিক অন্তরায় হিসেবে ব্যবহার না করে সমাধানের চেষ্টা দেখা যায়।

খালেদা জিয়ার বিদেশযাত্রার প্রাক্কালে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সাক্ষাৎকে অনেকেই সৌজন্য সাক্ষাৎ হিসেবে দেখলেও, এটি দেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় একটি কৌশলগত বার্তা দিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী সেনাবাহিনী কর্তৃক জনগণের দাবির প্রতি সংবেদনশীল হয়ে ওঠা এবং রাজনৈতিক নিরপেক্ষতার প্রতিশ্রুতি দেওয়া বর্তমান বাস্তবতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়। বিএনপি বা তার সমর্থকেরা এটিকে তাদের প্রতি সেনাবাহিনীর আন্তরিকতা হিসেবে দেখতেই পারেন। এই সাক্ষাৎ বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব ও সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে আস্থা তৈরির একটি পদক্ষেপ হিসেবেও বিবেচিত হতে পারে।

খালেদা জিয়ার লন্ডনযাত্রার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো বড় ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে দীর্ঘদিন পর পুনর্মিলন। তারেক রহমানের সঙ্গে খালেদা জিয়ার এই সাক্ষাৎ শুধু একটি মা-ছেলের আবেগঘন মুহূর্ত হিসেবে সীমাবদ্ধ নয়; এটি বিএনপির ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা নির্ধারণে কৌশলগত আলোচনার ক্ষেত্রও হতে পারে। যুক্তরাজ্যে অবস্থানকারী তারেক রহমান প্রায় এক যুগ ধরে দল পরিচালনা করলেও দলটির বেশির ভাগ নেতা ও সমর্থকের কাছেই তাঁকে দূরবর্তী বলে মনে হয়। খালেদা জিয়ার সক্রিয় নির্দেশনা এবং নতুন দিকনির্দেশনার মাধ্যমে তারেক রহমানের গ্রহণযোগ্যতা এবং দলীয় কাঠামো পুনর্গঠনের বিষয়ে নতুন পরিকল্পনা করা হতে পারে।

খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য কাতারের আমিরের বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাঠানো একটি আন্তর্জাতিক সমীকরণেরও ইঙ্গিত। মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী দেশ হিসেবে কাতারের এই পদক্ষেপ শুধু মানবিকতার চেয়ে বেশি কিছু। এটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে তাদের দীর্ঘমেয়াদি আগ্রহ এবং সম্পর্ক উন্নয়নের এক কৌশল হিসেবেও দেখা যেতে পারে। অন্যদিকে, যুক্তরাজ্যে চিকিৎসার পাশাপাশি জনস হপকিন্স হসপিটালে সম্ভাব্য চিকিৎসার পরিকল্পনা বিশ্ব মঞ্চে খালেদা জিয়া এবং বিএনপির গুরুত্বকে তুলে ধরছে।

বিদেশে উন্নত চিকিৎসা শেষে বিএনপির চেয়ারপারসনের পবিত্র ওমরাহ পালন এবং সুস্থ হয়ে দেশে ফেরার পরিকল্পনা একদিকে তাঁর পুনরুত্থানের বার্তা দেয়, অন্যদিকে গণতন্ত্রের প্রতি দলের দায়বদ্ধতাও দৃশ্যমান করে। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের পরবর্তী পরিস্থিতিতে বিএনপির রাজনীতিতে নতুন গতিশীলতা আসতে পারে। আর বিএনপির নেতা-কর্মীরা আশাবাদী যে খালেদা জিয়ার প্রত্যাবর্তন দলের ঐক্য আরও দৃঢ় করবে এবং দীর্ঘ মেয়াদে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে তাঁকে পুনরায় শক্ত অবস্থানে নিয়ে যাবে।

তবে খালেদা জিয়ার লন্ডন যাওয়া নিয়ে রাজনৈতিক মহলে বিপরীতমুখী আলোচনাও আছে। চিকিৎসার জন্য বিদেশযাত্রায় বিলম্ব এবং তারেক রহমানের দেশে না ফেরা নিয়েও নানা ধরনের গুঞ্জন আছে। বিশ্লেষকদের কেউ মনে করছেন, চিকিৎসা শেষে দেশে ফেরার নিশ্চয়তা তিনি সেনাপ্রধানের কাছ থেকে পেয়েছেন। আবার চিকিৎসা শেষে তাঁর দেশে ফেরার অনিশ্চয়তাও কেউ কেউ দেখছেন। কারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের অনিশ্চয়তা দূর হয়নি। এ নিয়ে স্পষ্ট ঘোষণা অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে এখনো দেওয়া হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

অবিভক্ত বঙ্গের নেতৃত্ব বাঙালির ছিল না

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
অবিভক্ত বঙ্গের নেতৃত্ব বাঙালির ছিল না

গত এক শতাব্দীতে বাঙালির জন্য রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা কম কিছু ঘটেনি। কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটছে ১৯৪৭ সালে, বঙ্গভঙ্গের সময়। দেশভাগের চেষ্টা আগেও একবার হয়েছিল, ১৯০৫ সালে; তখন তা কার্যকর হয়নি। ৪২ বছর পরে আবার চেষ্টা হলো, এবার তা সফল হলো। সাতচল্লিশে ভঙ্গ হলো বঙ্গ।

সেটা যেন শুধু মাটির বিভাজন নয়, মানুষেরও বিভাজন হলো প্রথম। এই বিভাজন একদা অখণ্ড বঙ্গদেশের একাংশকে যুক্ত করে দিল ভারতের সঙ্গে। সেখানকার বাঙালির রাজনৈতিক পরিচয় দাঁড়াল ভারতীয় বলে; আরেক অংশকে শামিল করে দিল পাকিস্তানের সঙ্গে, সেখানকার বাঙালির পরিচয় দাঁড়াল পাকিস্তানি বলে। এপারের মানুষ ওপারে গেছে, ওপারের মানুষ এসেছে এপারে, মানুষের রক্তে রঙিন হয়েছে বিভক্ত মাটি ও নদী। দুই রাষ্ট্র—ভারত ও পাকিস্তান। দেশ দুটি মিত্র হলো না পরস্পরের এবং সেই বৈরিতা ছড়িয়ে পড়ল দুই পাশের বাঙালির মনেও। ভারতের অংশ হয়ে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি যতটা না অসন্তুষ্ট হয়েছে, পাকিস্তানে বিলীন হওয়ার আশঙ্কায় পূর্ববঙ্গের বাঙালি অসন্তুষ্ট হয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি। ফলে সে আরও এক বিভাজন ঘটিয়েছে, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ত্যাগ-আত্মত্যাগে, রক্তের বিনিময়ে।

স্বাধীন বাংলাদেশের ভৌগোলিক কাঠামো আসলে সাতচল্লিশেই তৈরি হয়ে গেছে। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠাকে ইদানীং বেশি করে ধর্মতন্ত্রী মৌলবাদী এবং আধা মৌলবাদীরা তথাকথিত লাহোর প্রস্তাবের বাস্তবায়ন বলতে পছন্দ করে। কথাটা মিথ্যা, আদতেই।

কেননা, লাহোর প্রস্তাব ছিল অস্পষ্ট, হয়তো তাকে ইচ্ছা করেই অস্পষ্ট করে রাখা হয়েছিল। তাতে পাকিস্তানের কিংবা ভারত বিভাজনের কথা স্পষ্ট করে উল্লেখ পর্যন্ত করা হয়নি এবং দুই অঞ্চলে দুটি ‘স্বাধীন’ রাষ্ট্রের কথা বলা হলেও পরে দিল্লি সম্মেলনে প্রস্তাবটি সংশোধন করে একটা রাষ্ট্রের পক্ষেই বক্তব্য দাঁড় করানো হয়েছিল। কিন্তু একাত্তরে একটা পাকিস্তান ভেঙে দুটি পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠা ঘটেনি। বাংলাদেশ একটা স্বাধীন, ধর্মনিরপেক্ষ ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের মর্যাদা নিয়ে রক্তের মধ্য দিয়ে নতুন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে এবং সেটা করেছে দ্বিজাতিতত্ত্বকে প্রত্যাখ্যান করে, বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে।

আমরা বলি এবং মিথ্যা বলি না যে বঙ্গবিভাগের পেছনে ইংরেজদের কারসাজি ছিল। যেমন সেটা ১৯০৫ সালে, তেমনি ১৯৪৭ সালেও বোঝা গেছে। সে সময়ের ব্রিটিশ হোম সেক্রেটারি তাঁর নোটে লিখেছিলেন, ‘ঐক্যবদ্ধ বঙ্গ একটা শক্তি, বিভক্ত বঙ্গ নানা দিকে টানবে এবং সেটাই হবে ওই পরিকল্পনার (বঙ্গবিভাগের) একটা বড় গুণ।’ এ ছিল ইংরেজের অভিপ্রায়, কিন্তু বঙ্গদেশের নিজের মধ্যেও নিশ্চয় সেই উপাদানগুলো বিদ্যমান ছিল, যাদের অস্তিত্ব ওই আশাবাদকে সমর্থন করেছে। নানা দিকে টানাপোড়েন ছিল। আর তার কারণ অন্য কিছু নয়—মধ্যবিত্ত শ্রেণি। মধ্যবিত্ত সর্বত্রই একটা অগোছালো ব্যাপার। তার একেক অংশে একেক প্রবণতা, তার একদিকের সঙ্গে অপর দিকের বিরোধ; পরাধীন বাংলায় পরাধীনতার কারণেই পরস্পর বিরোধিতাটা ছিল বরং বেশি। এই মধ্যবিত্ত মোটেই স্বাধীন ছিল না। তার ভিত প্রোথিত ছিল চাকরিতে, পেশায় এবং কিছুটা ভূমিরাজস্বে। শিল্প ও বাণিজ্যের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্কই ছিল না। দুর্বল মেরুদণ্ডের এই শ্রেণির একাংশ তাই আত্মসমর্পণ করেছিল। আত্মসমর্পণকারীরা আবার দুই ভাগে বিভক্ত, এক ভাগ সাহেবমুখী; অপর ভাগ ইয়ং বেঙ্গল। অর্থাৎ একই সঙ্গে সাহেবমুখী ও সামন্তবাদবিরোধী। আর যে অংশটি ছিল সর্বাধিক প্রভাবশালী, সেটা ছিল অধীনতার বিষয়ে সচেতন এবং তাদেরকে জাতীয়তাবাদীও বলতে হবে। কিন্তু এরা মূলত সংস্কারপন্থী এবং চূড়ান্ত বিচারে, নিজেদের শ্রেণিগত স্বার্থের জন্য আপসপন্থী ছিল। এর সূত্রপাতে আছেন রামমোহন এবং মাঝখানে বঙ্কিমচন্দ্র।

বঙ্কিমচন্দ্রের নাম বিশেষভাবে করতে হয়, কেননা তিনি ছিলেন মধ্যবিত্তের এই ধারার সবচেয়ে উজ্জ্বল ও প্রভাবশালী মুখপাত্র। বঙ্কিম ছিলেন অত্যন্ত আধুনিক এবং পরাধীনতার গ্লানিতে অত্যধিক পীড়িত। কিন্তু শ্রেণিগত কারণেই তিনিও আটকা পড়ে গেলেন একটা গণ্ডিতে। তিনি বলেছেন, ‘আমরা সামাজিক বিপ্লবের অনুমোদক নহি’। তাঁর এই বক্তব্য ছিল বড় স্পষ্ট। এই অনুমোদন ছিল না বলেই বঙ্কিমচন্দ্র চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের হৃদয়হীনতার কথা জেনেও তার পুরোপুরি উচ্ছেদ চাননি। ইংরেজ অসন্তুষ্ট হবে ভেবে, স্বাধীনতার জন্য প্রবল আকাঙ্ক্ষা সত্ত্বেও প্রকাশ্যে ইংরেজদের বিরুদ্ধে লিখতে পারেননি। ইংরেজের বদলে তিনি যবনকে দাঁড় করালেন এবং সেই মৃত অশ্বকে যখন প্রহার শুরু করলেন, তখন সেই প্রহারের ভেতরে ইংরেজের প্রতি অক্ষম অসন্তোষ ছিল ঠিকই, কিন্তু তা প্রকাশ পেল না। বিকাশে আগ্রহী মুসলমান বাঙালি মনে করল এ আর এমন কিছু নয়, তার প্রতি ঘৃণা বটে।

এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, বাংলায় সাম্প্রদায়িকতা কৃষকদের মধ্যে ছিল না, তা ছিল মধ্যবিত্তেরই ব্যাধি। তবে পরাধীন বঙ্গে জাতীয়তাবাদীরা আন্তরিক ছিলেন। কিন্তু জাতীয় ছিলেন না, তাঁরা সাম্প্রদায়িক হয়ে পড়েছিলেন। তাদের কাছে জাতি হয়ে দাঁড়িয়েছিল এক অংশের জন্য হিন্দু জাতি, আরেক অংশের জন্য মুসলিম জাতি। তাদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল। তবে সেটা ছিল জনগণের সঙ্গে নয়। তা ছিল দুটি মধ্যবিত্ত শ্রেণির মধ্যে—যাদের একটা উঠেছে, আরেকটা উঠতে চাইছে।

একটা দ্বন্দ্ব ছিল ইংরেজের সঙ্গে বাঙালির; আরেকটা দ্বন্দ্ব গড়ে উঠেছিল বাঙালি হিন্দুর সঙ্গে বাঙালি মুসলমানের। প্রথম দ্বন্দ্বটা তার তীব্রতা অক্ষুণ্ন রাখতে পারেনি দ্বিতীয় দ্বন্দ্বের কারণে। আর হিন্দু-মুসলিম দ্বন্দ্ব ছিল বলেই দেশভাগ হলো। না হলে বাইরে থেকে চতুর ইংরেজ যতই কলকাঠি নাডুক না কেন, ঘটনাটি ঘটত না। ১৯০৫-এ কাজ হয়নি, তখন অগ্রসর হিন্দু মধ্যবিত্ত এটা চায়নি। তারা অখণ্ড বঙ্গ সংস্কৃতির ব্যবচ্ছেদের আশঙ্কা করেছে। সে আশঙ্কা মোটেই অন্যায় ছিল না। কিন্তু অন্তরে ছিল আরও এক গভীর শঙ্কা, সে হচ্ছে খণ্ডিত বঙ্গে পেশাগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ও জমির মালিকানা থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার শঙ্কা। ১৯৪৭ সালে সেই শ্রেণিই আবার বঙ্গভঙ্গে বিশ্বাসী হয়ে পড়ল, মূলত সেই অর্থনৈতিক শঙ্কাতেই। এবারের ভয়টা ছিল অবিভক্ত বঙ্গে মুসলিম সংখ্যাধিক্যের। অপর দিকে মুসলিম সম্প্রদায়ের যে অংশ উঠতে চাচ্ছিল, তারা ১৯০৫ সালেও বঙ্গভঙ্গ চেয়েছে, যেভাবে চেয়েছে সাতচল্লিশেও। সেটা ছিল নিজেদের শ্রেণিস্বার্থে।

ভারতের অন্তর্ভুক্ত বাঙালি তার সংস্কৃতির ওপর হিন্দির চাপ কম পোহায়নি। ওই চাপ, বলা বাহুল্য, ক্রমাগত বেড়েছে। কংগ্রেসের শাসন পশ্চিমবঙ্গের জন্য দুঃশাসনই ছিল। হিন্দু জাতীয়তাবাদী বিজেপির শাসনামল তো দুঃশাসনের সীমা-পরিসীমা অতিক্রম করে হিন্দু রাষ্ট্রের পথে এগোতে চাচ্ছে।

লক্ষ করার বিষয়, অবিভক্ত বঙ্গে নেতৃত্ব ছিল মধ্যবিত্তের হাতেই। কিন্তু বাঙালি মধ্যবিত্ত বাংলার রাজনীতিকে ভারতবর্ষের রাজনীতি থেকে আলাদা রাখতে পারেনি। একদিক দিয়ে প্রবেশ করেছেন গান্ধী, আরেক দিক দিয়ে জিন্নাহ। বাংলার রাজনীতি অংশ হয়ে গেছে সর্বভারতীয় রাজনীতির এবং তার চাবিকাঠি বাংলার এ কে ফজলুল হক কিংবা সুভাষচন্দ্র বসুর হাতে থাকেনি, থেকেছে অবাঙালিদের হাতেই। এর কারণও শ্রেণিগত। বাঙালি মধ্যবিত্ত অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল ছিল, অবাঙালি মধ্যবিত্তের তুলনায়। শ্রেণি অবস্থান এসব ঘটনার সুন্দর ব্যাখ্যা দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হতে পারত কিন্তু হয়নি এখনো

মাসুদ-উর রহমান
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পেরিয়ে বাংলাদেশ এখন উন্নয়ন ও সম্ভাবনার এক নতুন যুগে প্রবেশ করেছে। পদ্মা সেতু, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও মেট্রোরেল—অবকাঠামোগত উন্নয়নের এ দৃশ্যপট আজ অনেকের কাছে বিস্ময়ের ব্যাপার। তবু উন্নয়নের এই ঝলমলে রূপের আড়ালে লুকিয়ে আছে কিছু অপূর্ণ প্রতিশ্রুতি, কিছু অপূর্ণ আশার গল্প। নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে গঠিত হওয়া অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর জনগণের প্রত্যাশা ছিল—এই সরকার শুধু উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে না, বরং দীর্ঘদিন ধরে অমীমাংসিত থেকে যাওয়া কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দৃঢ় পদক্ষেপ নেবে।

কিন্তু এক বছরের বেশি সময় পরেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে হয়তো অগ্রসর হওয়া গেছে, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে ধীরগতিতে, অথবা কোনো কোনো ক্ষেত্রে উদ্যোগই নেওয়া হয়নি। যেমন ধরা যাক, আমাদের সবচেয়ে গর্বের অর্জন ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ। এই যুদ্ধের মাধ্যমে আমরা অর্জন করেছিলাম স্বাধীনতা উপভোগের স্বাদ। কিন্তু জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের সনদ নিয়ে বিগত সরকারের সময়ে নানা অপকর্ম করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধার নামের পাশে মিথ্যা সনদ জুড়ে দেওয়া শুধু প্রতারণা নয়, এটি একধরনের অপরাধ—ইতিহাস ও জাতির প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা।

এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের সনদ বাতিল ও শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে’।

এটি এমন এক ঘোষণা ছিল, যা মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনাকে পুনরুদ্ধারের প্রতিশ্রুতি বলা যায়। কিন্তু সময় গড়িয়েছে, বছর পেরিয়েছে, অথচ বাস্তব অগ্রগতি দেখা যায়নি। আজও বহু ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা রাষ্ট্রীয় সুবিধা নিচ্ছেন, বিপরীতে অনেক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা কোনো রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিই পাননি। একটি জাতির আত্মপরিচয়ের ভিত্তি যদি মিথ্যার ওপর দাঁড়ায়, তাহলে সেই ভিত্তি দুর্বল হয়ে যায়। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের চিহ্নিত করতে পারলে রাষ্ট্রের নৈতিক ভিত্তিটি যেমন মজবুত হতো, তেমনি রাষ্ট্রের অর্থের অপচয় হতো না।

২০২৫ সালের ৪ এপ্রিল দেশের প্রথম সারির জাতীয় দৈনিকগুলোর খবর ছিল—‘প্রাথমিকভাবে ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসনের কথা নিশ্চিত করেছে মিয়ানমার।’ সেই সময় অনেকে মনে করেছিলেন, অবশেষে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা সফল হচ্ছে। কিন্তু বছরের শেষে দেখা গেল, একজন রোহিঙ্গাকেও ফিরিয়ে নেওয়া হয়নি; বরং আরও অনেকে সীমান্ত পেরিয়ে এসেছে।

কক্সবাজার ও টেকনাফের আশ্রয়শিবিরগুলোতে এখন ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছে, যাদের কারণে স্থানীয় অর্থনীতি, সমাজব্যবস্থা ও নিরাপত্তা—সবই চাপে রয়েছে। আন্তর্জাতিক পরিসরে মিয়ানমারের প্রতি চাপ অব্যাহত থাকলেও বাংলাদেশের পক্ষে একক প্রচেষ্টায় এই জটিল সমস্যার সমাধান করা কঠিন। তবু জনগণের প্রত্যাশা ছিল—সরকার অন্তত প্রত্যাবাসনের দৃশ্যমান সূচনা করবে। কিন্তু তা হয়নি।

প্রতিনিয়ত আমরা দেখছি, নদী দূষিত হচ্ছে, বনভূমি হারিয়ে যাচ্ছে, গ্রাম ও শহর প্লাস্টিকে ভরে যাচ্ছে। পরিবেশের এই সংকট রোধে ২০২৪ সালের ১ নভেম্বর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ঘোষণা দেয়, ‘কাঁচাবাজারেও আজ থেকে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ’। সেই ঘোষণায় বলা হয়েছিল, আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু বাস্তবায়নে তার ছিটেফোঁটাও দেখা যায়নি। এখন বহাল তবিয়তে প্রতিটি বাজারে, এমনকি পাড়ার ছোট দোকানেও পলিথিন ব্যাগ আগের মতোই ব্যবহৃত হচ্ছে।

বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ তরুণদের হাতে। অথচ কর্মসংস্থানের অভাব আজ তরুণদের সবচেয়ে বড় হতাশার কারণ। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে একটি দৈনিকের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ‘২৬ লাখ শিক্ষিত বেকারের দেশে ২৬ লাখ ভারতীয় কী করে চাকরি করে’। প্রতিবেদকের ভাষ্যমতে, ‘একটা স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রকে আরেকটি রাষ্ট্র কি এভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে? বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের “দুরভিসন্ধির” পরিকল্পনাগুলোর একটি এটি। এমন কোনো সেক্টর নেই, যেখানে ভারতীয়দের সুকৌশলে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়নি। অথচ দেশে শিক্ষিত বেকার ২৬ লাখ ৪০ হাজার!’ এমন প্রতিবেদন কেবল পরিসংখ্যান নয়, এটি এক তীব্র প্রশ্ন—দেশে যদি এত বেকার তরুণ থাকে, তবে বিদেশিরা কেন চাকরি পাবে? এমন বাস্তবতায় প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস তখন ঘোষণা দিয়েছিলেন, দেশে এমন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে, যাতে বিদেশি কর্মীদের আর সুযোগ না থাকে। এক বছর পার হয়ে গেলেও ২৬ লাখ ভারতীয়কে চাকরিচ্যুত করার কোনো খবর এখনো গণমাধ্যমে দেখা যায়নি।

এরপর একটি স্বাধীন দেশের জন্য সার্বভৌমত্বের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু নেই। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পরপরই গণমাধ্যমে বলা হয়েছিল, ‘হাসিনা সরকারের আমলে করা সকল গোপন চুক্তি বাতিল করা হবে।’ কিন্তু এ বছরের ২১ অক্টোবর পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ঘোষণা দেন, ‘ভারতের সঙ্গে ১০ চুক্তি বাতিলের দাবি সত্য নয়’। এরপর ২৬ অক্টোবরের আরেকটি সংবাদ থেকে জানা গেল, ‘দ্বিগুণ মূল্যে কমলাপুর মেট্রোরেলের কাজ পেয়েছে ভারতীয় কোম্পানি’। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক সব সময় গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু সেই সম্পর্ক যেন কখনোই সমমর্যাদার বাইরে না যায়। দেশের স্বার্থ ও অর্থনৈতিক ন্যায্যতা রক্ষা করার জন্য বিষয়গুলো স্বচ্ছ ও জবাবদিহি অপরিহার্য।

তারপর বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ চিকিৎসার জন্য প্রতিবছর বিপুল অর্থ ব্যয় করে বিদেশে, বিশেষত ভারতে যায়। এই পরিস্থিতি বদলানোর আশায় সরকার ঘোষণা দিয়েছিল, চীন বাংলাদেশে চারটি বৃহৎ বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণ করবে। চলতি বছরের ১৩ এপ্রিল একটি দৈনিকের শিরোনাম ছিল, ‘বড় হাসপাতাল করতে চায় চীন’। এই হাসপাতালগুলোর একটি নামও ঠিক করা হয়েছিল ‘চায়না-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ জেনারেল হাসপাতাল’। প্রতিশ্রুতি ছিল, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও উত্তরবঙ্গে হাসপাতাল নির্মিত হবে, যাতে জনগণ উন্নত চিকিৎসা পায় এবং আর বিদেশে যেতে না হয়। কিন্তু আজও সেই হাসপাতালের জমি নির্ধারণের কাজই শুরু হয়নি, হাসপাতাল তো দূরের কথা!

এই তালিকা এখানেই শেষ নয়। এমন আরও অনেক প্রতিশ্রুতি আছে, যেগুলো বাস্তবায়িত হলে দেশের চেহারা বদলে যেত। কিন্তু দুঃখের বিষয়, অনেক কিছুই পরিকল্পনার স্তর পেরোতে পারছে না। অথচ এসব কাজের জন্য বিপুল অর্থের প্রয়োজন নেই—প্রয়োজন শুধু সদিচ্ছা, দৃঢ়তা

আর দায়িত্ববোধ।

তবু হতাশ হইনি। কারণ, পরিবর্তনের প্রক্রিয়া এক দিনে ঘটে না, সময় লাগে। হয়তো সরকার এখনো প্রস্তুতি নিচ্ছে, হয়তো নীতিগত বাধা কাটানোর চেষ্টা করছে। তাই বিশ্বাস রাখতে চাই, একদিন এই ‘হতে পারত’গুলো সত্যি হবে, বাস্তবে রূপ নেবে সেই সব প্রতিশ্রুতি।

আমরা যারা এই দেশের নাগরিক, আমাদেরও দায়িত্ব শুধু সমালোচনা নয়, সচেতন থাকা, দাবি জানানো এবং প্রয়োজনে ইতিবাচক চাপ সৃষ্টি করা। কারণ, সরকার, রাষ্ট্র, জাতি—সবই আমাদের সম্মিলিত সত্তা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভোগবাদী সমাজে মূল্যবোধের মৃত্যু

হেনা শিকদার
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

একবিংশ শতাব্দীর এই সময়ে যেন এক অদ্ভুত বৈপরীত্যের মুখোমুখি আমরা দাঁড়িয়ে আছি। একদিকে প্রযুক্তির বিস্ময়কর অগ্রগতি, আকাশচুম্বী অট্টালিকা, শপিং মলের উজ্জ্বল আলো আর বিলাসবহুল জীবনের হাতছানি; অন্যদিকে এক গভীর অন্ধকার, যা নিঃশব্দে গ্রাস করছে আমাদের মানবিক সত্তাকে। এই অন্ধকারের নাম ‘ভোগবাদ’। এটি শুধু সামাজিক ধারণা নয়, একটি সর্বগ্রাসী জীবনদর্শনে পরিণত হয়েছে, যার করাল গ্রাসে আমাদের শত শত বছরের সঞ্চিত মূল্যবোধগুলো হারিয়ে যাচ্ছে।

‘ভোগবাদ’ আমাদের শেখায়, তোমার পরিচয় তোমার অধিকারে, তোমার ব্যক্তিত্ব তোমার পরিধেয় ব্র্যান্ডে, আর তোমার জীবনের সার্থকতা তোমার ব্যাংক ব্যালেন্সে। এই দর্শন অনুযায়ী, জীবনের একমাত্র লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায় আরও বেশি ভোগ করা, আরও বেশি সঞ্চয় করা নয় এবং আরও বেশি ক্রয় করা। আমাদের এই অন্তহীন ‘আরও চাই’ সংস্কৃতি এমন এক মরীচিকার পেছনে ধাবিত করছে, যেখানে তৃষ্ণা মেটে না, কেবল বাড়ে। আর এই উন্মত্ত দৌড়ে আমরা যা কিছু পেছনে ফেলে আসছি, তা হলো আমাদের মনুষ্যত্বের অলংকার—আমাদের মূল্যবোধ।

মূল্যবোধের এই মৃত্যুর প্রথম ও প্রধান লক্ষণ হলো মানবিক সম্পর্কের অবমূল্যায়ন। যে সমাজে একজন মানুষের মূল্যায়ন তার চরিত্র, প্রজ্ঞা বা সহানুভূতির পরিবর্তে তার ব্যবহৃত গাড়ি, দামি মোবাইল ফোন অথবা বাড়ির আকার দিয়ে নির্ধারিত হয়, সে সমাজে সম্পর্কের উষ্ণতা আশা করা বৃথা। সম্পর্কগুলো ক্রমেই যেন ‘লেনদেনভিত্তিক’ হয়ে উঠছে। ভালোবাসা, বন্ধুত্ব, আত্মীয়তার মতো পবিত্র বন্ধনগুলোও আজ লাভ-ক্ষতির নিক্তিতে মাপা হয়। ‘আমার এতে কী লাভ?’—এ প্রশ্নই যখন সবকিছুর আগে চলে আসে, তখন নিঃস্বার্থপরতা, ত্যাগ বা মমত্ববোধের মতো শব্দগুলো অভিধান থেকে নির্বাসিত হতে বাধ্য।

ভোগবাদী সমাজ আত্মকেন্দ্রিকতাকে উসকে দেয়। ‘আমি’ এবং ‘আমার’—এই দুটি শব্দ আমাদের চেতনার কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করে। এই আত্মকেন্দ্রিকতার ফলে ‘আমরা’ বা ‘সমাজ’ ধারণাটি ফিকে হয়ে যায়। অন্যের প্রতি সহানুভূতি কিংবা সহমর্মিতা প্রদর্শনের অবকাশ কোথায়, যখন আমরা প্রত্যেকেই নিজের সুখের নীড় নির্মাণে ব্যস্ত? এই সমাজ আমাদের শিখিয়ে দেয়, পাশের বাড়ির মানুষটি অনাহারে থাকলেও তোমার কিছু যায় আসে না, যদি তোমার ফ্রিজ ভর্তি থাকে। এই যে সামষ্টিক চেতনার মৃত্যু, এটাই মূল্যবোধের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেয়।

নৈতিকতা ও সততার ধারণাটিও এই ভোগবাদী দর্শনের কাছে শোচনীয়ভাবে পরাজিত। যখন সাফল্যের একমাত্র মাপকাঠি হয় অর্থ ও প্রতিপত্তি, তখন সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর পথটি বৈধ না অবৈধ, তা বিবেচ্য বিষয় থাকে না। ‘দ্য ইন্ড জাস্টিফাইস দ্য মিনস’ অর্থাৎ, উদ্দেশ্য সফল হলেই উপায় যেকোনো কিছু হতে পারে। ফলে দুর্নীতি, প্রবঞ্চনা, মিথ্যাচার সামাজিক ব্যাধি থেকে একধরনের ‘স্মার্টনেস’ বা ‘দক্ষতা’ হিসেবে স্বীকৃতি পেতে শুরু করে। যে তরুণসমাজ সততাকে ‘বোকামি’ এবং অসদুপায় অবলম্বনকে ‘চালাকি’ বলে মনে করে, তাদের হাতে ভবিষ্যতের মূল্যবোধ কতটা সুরক্ষিত, তা সহজেই অনুমেয়।

ভোগবাদ আমাদের একটি গভীর মনস্তাত্ত্বিক সংকটেও নিমজ্জিত করছে। বিজ্ঞাপনের মায়াজাল আর সোশ্যাল মিডিয়ার লোকদেখানো জীবনের চাকচিক্য আমাদের মধ্যে একধরনের স্থায়ী অতৃপ্তি তৈরি করছে। নিজের যা আছে, তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকার পরিবর্তে অন্যের যা আছে, তা না পাওয়ার হতাশায় আমরা নিমজ্জিত হচ্ছি। এই অন্তহীন তুলনা আর প্রতিযোগিতার ফলে বাড়ছে বিষণ্ণতা, একাকিত্ব ও মানসিক অস্থিরতা। আমরা ভুলে যাচ্ছি, জীবনের প্রকৃত সুখ বস্তুগত প্রাপ্তিতে নয়, বরং আত্মিক প্রশান্তি, জ্ঞানার্জন এবং অর্থপূর্ণ সম্পর্কের মধ্যে নিহিত।

পরিবেশগত বিপর্যয়ের পেছনেও এই ভোগবাদী সংস্কৃতির দায় অপরিসীম। আরও নতুন পণ্য, আরও নতুন ফ্যাশনের চাহিদা মেটাতে গিয়ে আমরা প্রকৃতির ওপর যে অপরিসীম অত্যাচার চালাচ্ছি, তার ফল আমরা এরই মধ্যে পেতে শুরু করেছি। যে মূল্যবোধ আমাদের শেখাত প্রকৃতির সঙ্গে সহাবস্থান করতে, সেই মূল্যবোধকে বিসর্জন দিয়ে আমরা এক আত্মঘাতী খেলায় মেতেছি।

তাহলে প্রশ্ন হলো, এই অবক্ষয়ের শেষ কোথায়? আমরা কি শুধুই পণ্যের দাস হয়ে থাকব? এর উত্তর আমাদেরই খুঁজে বের করতে হবে। ভোগবাদ হলো জীবনের প্রয়োজন মেটানোর উপকরণমাত্র, তাকে জীবনের লক্ষ্যে পরিণত করা এক বিরাট প্রমাদ। আমাদের সন্তানদের শেখাতে হবে, জীবনের সার্থকতা দামি পোশাকে নয়, পরিচ্ছন্ন চরিত্রে; বিলাসবহুল বাড়িতে নয়, ভালোবাসাপূর্ণ পরিবারে; এবং অফুরন্ত সম্পদে নয়, অন্যের জন্য কিছু করতে পারার তৃপ্তিতে।

আমাদের উচিত বস্তুগত সমৃদ্ধি এবং আত্মিক বা মানবিক মূল্যবোধের মধ্যে একটি ভারসাম্য খোঁজা। অন্যথায়, আমরা এমন এক ‘সোনার খাঁচা’ তৈরি করব, যেখানে সব থাকবে, শুধু থাকবে না সেই পাখি—যার নাম ‘মানবতা’। কিন্তু এই ভোগবাদের উৎপত্তি ও বিকাশ ঘটেছে পুঁজির দাসত্বের কারণে। কোনোভাবেই এটাকে এড়ানোর সুযোগ নেই। মূল্যবোধের এই মৃত্যু রোধ করতে না পারলে, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এক বিত্তশালী কিন্তু দেউলিয়া সমাজে বাস করবে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পিটিয়ে হত্যা

সম্পাদকীয়
পিটিয়ে হত্যা

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে চোর সন্দেহে তিনজনকে পিটিয়ে মেরেছে এলাকার উত্তেজিত জনতা। গত শনিবার কাটাবাড়ি ইউনিয়নের নাসিরাবাদ গ্রামে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।

এলাকাবাসী বলছেন, তিনটি গরু চুরি করে এরা পিকআপে তুলে নিয়েছিল। জানাজানি হলে বাড়ির লোকজন এবং পাড়াপড়শিরা একত্র হয়ে পিকআপটিকে ধাওয়া করে।

একপর্যায়ে পিকআপ থেকে তিন চোর পুকুরে ঝাঁপ দেয়। এরপর তারা ধরা পড়ে এবং মার খায়। উত্তেজিত লোকজন তাদের এমন মার দেয় যে তিনজনেরই মৃত্যু হয়।

যে তিনজনকে হত্যা করা হলো, তারা যদি সত্যিই গরু চুরি করতে এসে থাকে, তাহলে শাস্তি তাদের অবশ্যই প্রাপ্য। প্রচলিত আইনে তাদের শাস্তি হওয়ার কথা। যে কেউ জানেন, এ রকম ক্ষেত্রে অপরাধীকে ধরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে সোপর্দ করতে হয়। কিন্তু বাস্তবে কী দেখা গেল। যে যেভাবে পেরেছে, সেভাবেই তাদের শরীরে আঘাত করেছে। আঘাত এতটাই গুরুতর ছিল যে তাৎক্ষণিকভাবে দুজনের মৃত্যু হয়, এবং একজন মৃত্যুবরণ করে হাসপাতালে নেওয়ার পর।

লক্ষ করলে দেখা যায়, মানুষ দিন দিন অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে। তারা আইন নিজের হাতেই তুলে নিচ্ছে। কেন এ ধরনের ঘটনা ঘটবে? কেন মানুষ পুলিশ কিংবা আদালতের কাজকে নিজের কাজ হিসেবে মনে করবে?

একটা প্রবণতা তৈরি হয়েছে যে কাউকে দোষী সাব্যস্ত করে ফেললেই আর কোনো দিক বিবেচনা না করে তাকে আঘাত করা শুরু হয়ে যায়। কোনো একজন কাউকে অপরাধী হিসেবে ঘোষণা করে দেওয়ার অপেক্ষা শুধু, এরপর দলেবলে পেটানোর সুখ খুঁজে ফেরা!

আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই, এ ধরনের ঘটনা অবশ্যই অন্যায়। আমরা গত শতাব্দীর সিনেমাগুলোয় দেখেছি, মেলোড্রামার শেষ দৃশ্যে পুলিশ সংলাপ আওড়াচ্ছে, ‘আইন নিজের হাতে কোনোভাবেই তুলে নেবেন না।’ এই সংলাপ নিয়ে বহু হাসাহাসি করা হয়েছে। কিন্তু বর্তমান সমাজে যেসব কারণ মানুষকে নিষ্ঠুর, নির্মম, অভদ্র, অসহিষ্ণু, অমানবিক করে তুলছে, সেগুলো আমাদের চিহ্নিত করা দরকার সবার আগে। ‘আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া’ থেকে আমাদের বিরত থাকতে হবে। আমরা এ রকম এক অমানবিক পরিস্থিতি কেন তৈরি করলাম, তার সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষণও জরুরি।

মানুষ কতটা অমানুষ হয়ে উঠেছে, ভিন্ন দুটি উদাহরণের মাধ্যমে তা দেখার চেষ্টা করব। ২০২৪ সালের ২৭ মার্চের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে একটি ছাগল কলা খেয়ে ফেলেছে। তাই ছাগলটিকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছিল এক কলাবিক্রেতা।

মৃত ছাগল-মাতার আশপাশে ঘুরছিল তখন দুই অবোধ ছাগলছানা। দ্বিতীয়টিও ছাগল হত্যার ঘটনা। বগুড়ার শেরপুরে গাছের পাতা খাওয়ার কারণে রামদা দিয়ে কুপিয়ে একটি ছাগলকে মেরে ফেললেন এক যুবক। ২০২৫ সালের ১৪ আগস্টের ঘটনা এটি। ঘটেছিল চকধলী গ্রামে।

এবার তিনটি অপরাধে যে ধরনের শাস্তি পেল অপরাধীরা, তা বিবেচনা করে দেখুন। আর ভাবুন, কোন পথে আমরা চলেছি!

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত