শেখর দত্ত
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সর্বনাশা রূপ নিয়ে দেখা দিচ্ছে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে। রোগী বাড়ছে, হাসপাতালগুলোতে স্থান সংকুলান হচ্ছে না। মৃত্যু বেড়েছে। আবারও লকডাউনে চলে যেতে হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলাবলি করছিলেন, শীতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসবে। তা হয়নি, কমেই আসছিল। টিকা আসার পর মনে হয়েছিল, করোনা দুর্যোগ কাটিয়ে উঠছি আমরা। কিন্তু করোনাভাইরাস কোনো হিসাব মানে না। আবারও আমরা পড়ে গেলাম ভয় ও শঙ্কার মাঝে।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার ৫০ বছর পরপর দুই বছর পাশাপাশি জাতির সামনে সমুপস্থিত হওয়াটাও জাতির জন্য বহুমুখী তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। লক্ষাভিমুখী অগ্রসর হতে সমবেত হয়ে সম্মিলিতভাবে শপথ নেবে জাতি—এটাই তো ছিল কামনা। কিন্তু করোনা তাতে বাদ সাধল। শুধু কি তাই! করোনারূপী সর্বনাশা ভাইরাস যে আছে আমাদের সমাজ ও রাজনীতিতেও। তাই স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবের শুরুতে ওই ভাইরাস জাতির ললাটে এঁকে দিয়েছে কলঙ্কের কালিমা। করোনাভাইরাস আর উগ্রতা ভাইরাস। দুই শত্রু আজ জাতিকে ছোবল দিতে উদ্ধত হয়েছে।
এপ্রিল মাস শুরু হয়েছে। এই মাস গৌরব ও তাৎপর্যের দিক থেকে বাঙালি জাতির কাছে মার্চ, ডিসেম্বর ও ফেব্রুয়ারির মতো সুউচ্চ না হলেও নানা দিক থেকে অনন্য। আজ থেকে ৫০ বছর আগে বাংলা নতুন বছরের শুরুর এই মাসেই মুজিবনগরে প্রথম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল। এখনও সেই সময়ের সচক্ষে দেখা ও নিমজ্জিত হয়ে থাকা ঘটনাপ্রবাহ চোখের সামনে জ্বলজ্বল করে ভেসে ওঠে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ৪ এপ্রিল কাকতালীয়ভাবে ঘটল দুটো ঘটনা। দিল্লিতে তাজউদ্দীন-ইন্দিরা বৈঠক। আর সিলেট তেলিয়াপাড়ায় বাঙালি সেনাদের বৈঠক। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত আর সেনা সিদ্ধান্ত—দুটোরই লক্ষ্য, বিজয় অর্জন পর্যন্ত চালিয়ে যেতে হবে মুক্তিযুদ্ধ।
ওই দুই বৈঠকের ধারাবাহিকতাই ১৭ এপ্রিল শপথ নেওয়ার মধ্য দিয়ে তাজউদ্দীন আহমদ হলেন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী, কর্নেল ওসমানী প্রধান সেনাপতি। ১০ এপ্রিল শিলিগুড়ি বেতার কেন্দ্র থেকে ভেসে এল স্বাধীনতার ঘোষণা। এই দিনটি আরও একদিক থেকে অনন্য, যা স্বাধীনতার রাজনৈতিক ও সামরিক ভিত্তির সাথে আইনি ভিত্তি রচনা করে। আইনের ধারাবাহিকতা বলবৎকরণ আদেশ, ১৯৭১ জারি করা হয়। এই আদেশ আমাদের মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতার স্বাক্ষর বহন করে। বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানেও তাঁর সুযোগ্য সহকর্মীরা নানা ঝড়ঝাপটা, বাধা-বিঘ্ন ও সীমাবদ্ধতার মধ্যে সব একসূত্রে গ্রথিত করে মুক্তিযুদ্ধকে ইপ্সিত লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে নেয়।
সূচনালগ্নে রাজনৈতিক নেতৃত্বে জাতি যখন মুক্তিযুদ্ধ সফল করার কর্মযজ্ঞে ব্যস্ত, তখন স্বাধীনতার শত্রুরা কিন্তু বসে ছিল না। ৫ এপ্রিল পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী জেলায় অতিবাম নকশালপন্থীরা বৈঠক করে শেখ মুজিবকে ‘আমেরিকার দালাল ও সোভিয়েত সংস্কারবাদীদের ক্রীড়নক’ বলে ‘দুই কুকুরের লড়াই’ তত্ত্ব সামনে রেখে স্বাধীনতাবিরোধী তৎপরতায় শামিল হয়। ৭ এপ্রিল বিমানে দুই ডিভিশন সৈন্য নিয়ে আসে হানাদার সরকার। ১৩ এপ্রিল ‘বহিরাক্রমণ থেকে পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষায়’ শামিল হয় চীন। ১৪ এপ্রিল ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয় শান্তি কমিটির উগ্র মিছিল, যার অগ্রভাগে ছিল গোলাম আজম প্রমুখ; ভিত্তি জোগায় রাজাকার-আলবদর-আল শামস বাহিনী গঠন করার। আর ওই সময় দুর্ভাগ্যজনকভাবে ‘ধূর্ত’ খোন্দকার মোশতাক মুজিবনগর সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদে বসেন।
তখনকার বিশ্ব ও উপমহাদেশের পরিস্থিতি ছিল আজকের চেয়ে সম্পূর্ণ বিপরীত; শান্তি-মুক্তি-স্বাধীনতা সমাজতন্ত্রমুখী। তবু শত্রুরা যার যার অবস্থান থেকে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে লড়ে গেছে। পরাজিত হয়েছে ডিসেম্বরে, দেশ স্বাধীন হয়েছে। কিন্তু যেমন মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বপ্রদানকারী জাতীয় চার নেতা, তেমনি বিজয়ের পর বঙ্গবন্ধুও রেখে দিলেন ‘ধূর্ত শত্রু’ মোশতাককে মন্ত্রিসভায়। কেন? স্বাধীনতার পর ওই খুনি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ থেকে অপসারিত হয়ে হলেন বাণিজ্যমন্ত্রী। ভাবা হলো বাঁচা গেছে। কিন্তু যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে খাদ্যসংকটের মধ্যে বাণিজ্য দিয়েই এল আঘাত। উগ্র বাম-প্রতিক্রিয়াশীল ডান তখন ছিল প্রকাশ্যে ও গোপনে, দুই চরম প্রান্ত যেমন একসাথে থাকে তেমনি থাকে জড়াজড়ি করে। রসুনের গোড়াসম ওইসব গোষ্ঠীর পাকিস্তানি কানেকশন আজ প্রমাণিত সত্য।
স্বাধীনতার পর রাজনীতি-কূটনীতি ও বাস্তবতার নানা টানাপোড়েনে সবুর খানরা পর্যন্ত মুক্ত হয়েছিল। তখনকার রাজনৈতিক দৃশ্যপট আর এখানকার বাস্তবতা—কোনো পার্থক্য আছে কি? আছে বড় রকমের এক জায়গায় পার্থক্য। বিশ্ব, উপমহাদেশ, দেশ—সর্বত্র গণমনোস্তত্ত্বের দক্ষিণমুখি অধোগতি। আমাদের দেশে ধর্মীয় উগ্রবাদীরা যতটা গণসম্পৃক্ত, তৃণমূলে যতটা নিজেদের দিকে সাধারণ মানুষকে টানতে পারছে; সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দল-সংগঠন কি ততটুকু গণসম্পৃক্ত, মানুষকে কি ততটুকু টানতে পারে? হেফাজত যখন রাস্তায় নামে, সব লণ্ডভণ্ড করে দিতে থাকে; তখন কি এর প্রতিরোধ করতে গণমানুষ নামে? পুলিশের ছত্রছায়ায় জনগণকে না নিয়ে দলীয় কর্মীরা নামলে তো হবে না। হিতেবিপরীত ফল হবে।
পারত কি এমন ষাটের দশকে উগ্রবাদীরা। এটা আবারও প্রমাণিত, রাজনৈতিক সমস্যা রাষ্ট্রীয় শক্তির জোর দিয়ে সমাধান করা যায় না। কথাটা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন প্রবাস থেকে ফিরে এসে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন, তখন জোর দিয়ে বলতেন। স্বাধীনতার আগে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমাদের জাতীয় নেতারা তেমনটাই বলে জনগণকে লক্ষ্য অর্জনে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। পদ্মা-মেঘনা-যমুনা-কর্ণফুলী তো বয়ে চলেছে। কিন্তু ‘কুলে বসে কত গুণিব ঢেউ/দেখিয়াছি শত দেখিব এও/নিঠুর বিধির লীলা কতই/কই রে আগের মানুষ কই?’
তবু বলব–রক্ষা, ২০০১-২০০৬-এর মতো বিএনপি-জামায়াত-ইসলামী ঐক্যজোট-বিজেপি জোট সরকার ক্ষমতায় নেই। ঘাতক-দালালদের গাড়িতে-বাড়িতে এখন জাতীয় পতাকা ওড়ে না। ‘মন্ত্রিসভায় রাজাকার দেশবাসী হুঁশিয়ার’ স্লোগান দিতে হয় না। রাষ্ট্রযন্ত্র থেকে বঙ্গবন্ধুকে অমর্যাদা করে ‘স্বাধীনতার ঘোষক’ শব্দটি উচ্চারিত হয় না। মুক্তিযুদ্ধ তথা স্বাধীন দেশ প্রতিষ্ঠার আইনি ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয় না। বঙ্গবন্ধুর হত্যা দিবসে ঘটা করে জন্মদিনের বয়সভিত্তিক ওজনের কেক কাটা হয় না। কথায় কথায় মুরতাদ ঘোষণাও নাই।
আর জেএমবি! হরকাতুল জিহাদ! শায়খ আব্দুর রহমান-বাংলাভাই আর মুফতি হান্নান গংদের বোমা-গ্রেনেডবাজির শঙ্কা নাই। আত্মঘাতি বোমা, চকোলেট বোমা, মিষ্টির প্যাকেট বোমা, এনভেলাপ বোমা! আদালত-এনজিও থেকে দরগা-মেলা-সিনেমা হল-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান প্রভৃতি; তখনকার বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা থেকে বুদ্ধিজীবী হুমায়ুন আজাদ-অধ্যাপক ইউনুস, কূটনীতিক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরী প্রমুখ কেউ বাদ যায়নি তখন বোমা-গ্রেনেড হামলা থেকে। বর্তমানে চারদলীয় জোট আর সক্রিয়-সজীব নয়। বিএনপি তো রাজপথে নিষ্ক্রিয়-নির্জীব হয়ে করোনাকালে সাংগঠনিক কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে বলেও খবরে জানলাম।
কিন্তু নতুন রূপে গজিয়ে উঠেছে হেফাজত। শাপলা চত্বরের সেই তাণ্ডবের পর আবারও মাঠে নেমেছে। মাঝে নিজেরা দুই ভাগ হয়ে গাছেরটা খেয়েছে, এখন তলায় কাঁটা বিছাচ্ছে। থানা থেকে লাইব্রেরি প্রভৃতি সব ধ্বংস করতে নেমেছে। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙছে, মুর্যাল ক্ষত-বিক্ষত করছে। নেতার চরিত্র স্খলনের ঘটনায় ওদের কিছু আসে-যায় না। নেতা তরুণীসহ রিসোর্টে জনতা কর্তৃক ধরা পড়ার পরও প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছে। অনৈতিক কাজে নেতা আটক হয়েছে শুনে সুনামগঞ্জের ছাতক থানা আক্রমণ করে সাতজন পুলিশ সদস্যকে আহত পর্যন্তও করেছে। এখন এটা আবারও সত্য বলে প্রমাণিত হলো–দুধ-কলা দিয়ে সাপ পুষলেই তার বিষাক্ত ছোবল একটুও কমে না। কৌশলে বিষ দাঁত ভাঙতে হয়।
এটা তো বাস্তব সত্য, দেশ আজ রয়েছে অর্থনৈতিকভাবে উন্নয়নের মহাসড়কে। করোনার প্রথম ধাক্কা আমরা কাটিয়ে উঠে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রক্রিয়ায় রয়েছি। ৩ এপ্রিল অর্থমন্ত্রী জাতীয় সংসদে ‘বাজেট ২০২০-২০২১: দ্বিতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত বাস্তবায়ন অগ্রগতি ও আয়-ব্যয়ের গতিধারা এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ–সংক্রান্ত প্রতিবেদন তুলে ধরে বলেছেন, ‘মাথাপিছু জাতীয় আয় বাড়ছে, প্রবাসী আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সন্তোষজনক, মুদ্রা বিনিময়ের হারে স্থিতিশীলতা ও মুদ্রাস্ফীতির নিম্নমুখী প্রবণতা নির্দেশ করছে—আমরা করোনাকালীন অর্থনৈতিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠে সমৃদ্ধির ধারায় ফিরে আসতে সক্ষম হব।’ আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনগুলোও সে কথাই বলে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আবার কী অবস্থায় দেশ ও বিশ্বকে ফেলে, তা বোধকরি ত্রিকালদর্শী ভবিষ্যদ্রষ্টাও বলতে পারবেন না।
প্রসঙ্গত, অর্থনৈতিক ক্ষেত্র অগ্রগতি-সমৃদ্ধি নিয়ে নানাধর্মী তর্ক-বিতর্ক থাকতেই পারে। তবে এটা ঠিক, এ ক্ষেত্রে ভরসার জায়গা অবশ্যই আছে।
দেশের সমস্যার মূল হচ্ছে রাজনৈতিক। জামায়েতের শক্তি-সামর্থ্য নিয়ে হেফাজত রাষ্ট্রশক্তিকে, সরকারকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। ক্রমেই রাজনৈতিক শক্তি হয়ে উঠছে। বিএনপি-জামায়াতের জায়গাটা পূরণ করছে। আওয়ামী লীগের ডানে হেফাজত নেতাদের উগ্রতার কারণে প্রচণ্ড ধ্বংসাত্মক শক্তি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এর পরিণতি কি, তা করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের মতোই বলা কঠিন। সরকারবিরোধী বাম শক্তি গণশক্তি বিবেচনায় অতি দুর্বল বটে। প্রায় নিঃশেষিত। এই শক্তি হেফাজতের বিরোধিতা করছে এটাও সত্য।
কিন্তু এটাই দেখা যাচ্ছে, সরকার যখন পুলিশি অ্যাকশন নিচ্ছে, তখন অতি বাম ও উগ্র ডান এক হয়ে প্রতিবাদ করছে। এটা কি রোমান প্রবাদবাক্য ও বহুল ব্যবহৃত দুই চরম প্রান্ত এক হওয়ার কথাটাই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে না? এদিকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনৈতিক-বুদ্ধিজীবী মহল ও রাজনীতি সচেতন একাংশ ধর্মীয় উগ্রতার বিরুদ্ধে নমনীয় অবস্থান ও পদক্ষেপ নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে সমালোচনা করছে, যা আওয়ামী লীগের নীতি-আদর্শ-লক্ষ্য বিবেচনায় নিলে এককথায় উড়িয়ে দেওয়া কঠিন থেকে কঠিনতর হচ্ছে।
এদিকে করোনা ঢেউ যত বাড়বে, ততই প্রথম ঢেউ কীভাবে কত উঠতি-পড়তি প্রচেষ্টার ভেতর দিয়ে কাটানো হয়েছিল, একটা লোকও যে না খেয়ে মরল না, টিকা যে আমরা অনেক উন্নত দেশের চেয়েও আগে পেলাম; তা ছাপিয়ে সমালোচনা বাড়তে থাকবে। ইতিমধ্যে এই লক্ষণ সুস্পষ্ট। তাই নানা দিক থেকে চাপে থাকবে সরকার ও সরকারি দল।
এদিকে সাংগঠনিক দিক থেকে আওয়ামী লীগ তৃণমূলে কতটা সমস্যায় রয়েছে, তা সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনাপ্রবাহ থেকে সুস্পষ্ট। ক্ষমতার স্বাদ পেয়ে ভেতরে ভেতরে যে ঘুণে ধরেছে, তা প্রকাশিত ঘটনাপ্রবাহ থেকে অনেকটা সত্য বলেই প্রতিভাত হচ্ছে। দেখতে দেখতে সরকার মেয়াদকালের অর্ধেক সময় পার করতে চলেছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে জাতীয় চার মূলনীতি সমুন্নত রেখে গণতন্ত্রকে সুরক্ষা ও অগ্রসর করার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ কতটা ভূমিকা রাখতে পারবে, সেটাই করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ এবং মুজিববর্ষ-স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালনের দিনগুলোতে জ্বলন্ত প্রশ্ন!
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সর্বনাশা রূপ নিয়ে দেখা দিচ্ছে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে। রোগী বাড়ছে, হাসপাতালগুলোতে স্থান সংকুলান হচ্ছে না। মৃত্যু বেড়েছে। আবারও লকডাউনে চলে যেতে হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলাবলি করছিলেন, শীতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসবে। তা হয়নি, কমেই আসছিল। টিকা আসার পর মনে হয়েছিল, করোনা দুর্যোগ কাটিয়ে উঠছি আমরা। কিন্তু করোনাভাইরাস কোনো হিসাব মানে না। আবারও আমরা পড়ে গেলাম ভয় ও শঙ্কার মাঝে।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার ৫০ বছর পরপর দুই বছর পাশাপাশি জাতির সামনে সমুপস্থিত হওয়াটাও জাতির জন্য বহুমুখী তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। লক্ষাভিমুখী অগ্রসর হতে সমবেত হয়ে সম্মিলিতভাবে শপথ নেবে জাতি—এটাই তো ছিল কামনা। কিন্তু করোনা তাতে বাদ সাধল। শুধু কি তাই! করোনারূপী সর্বনাশা ভাইরাস যে আছে আমাদের সমাজ ও রাজনীতিতেও। তাই স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবের শুরুতে ওই ভাইরাস জাতির ললাটে এঁকে দিয়েছে কলঙ্কের কালিমা। করোনাভাইরাস আর উগ্রতা ভাইরাস। দুই শত্রু আজ জাতিকে ছোবল দিতে উদ্ধত হয়েছে।
এপ্রিল মাস শুরু হয়েছে। এই মাস গৌরব ও তাৎপর্যের দিক থেকে বাঙালি জাতির কাছে মার্চ, ডিসেম্বর ও ফেব্রুয়ারির মতো সুউচ্চ না হলেও নানা দিক থেকে অনন্য। আজ থেকে ৫০ বছর আগে বাংলা নতুন বছরের শুরুর এই মাসেই মুজিবনগরে প্রথম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল। এখনও সেই সময়ের সচক্ষে দেখা ও নিমজ্জিত হয়ে থাকা ঘটনাপ্রবাহ চোখের সামনে জ্বলজ্বল করে ভেসে ওঠে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ৪ এপ্রিল কাকতালীয়ভাবে ঘটল দুটো ঘটনা। দিল্লিতে তাজউদ্দীন-ইন্দিরা বৈঠক। আর সিলেট তেলিয়াপাড়ায় বাঙালি সেনাদের বৈঠক। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত আর সেনা সিদ্ধান্ত—দুটোরই লক্ষ্য, বিজয় অর্জন পর্যন্ত চালিয়ে যেতে হবে মুক্তিযুদ্ধ।
ওই দুই বৈঠকের ধারাবাহিকতাই ১৭ এপ্রিল শপথ নেওয়ার মধ্য দিয়ে তাজউদ্দীন আহমদ হলেন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী, কর্নেল ওসমানী প্রধান সেনাপতি। ১০ এপ্রিল শিলিগুড়ি বেতার কেন্দ্র থেকে ভেসে এল স্বাধীনতার ঘোষণা। এই দিনটি আরও একদিক থেকে অনন্য, যা স্বাধীনতার রাজনৈতিক ও সামরিক ভিত্তির সাথে আইনি ভিত্তি রচনা করে। আইনের ধারাবাহিকতা বলবৎকরণ আদেশ, ১৯৭১ জারি করা হয়। এই আদেশ আমাদের মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতার স্বাক্ষর বহন করে। বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানেও তাঁর সুযোগ্য সহকর্মীরা নানা ঝড়ঝাপটা, বাধা-বিঘ্ন ও সীমাবদ্ধতার মধ্যে সব একসূত্রে গ্রথিত করে মুক্তিযুদ্ধকে ইপ্সিত লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে নেয়।
সূচনালগ্নে রাজনৈতিক নেতৃত্বে জাতি যখন মুক্তিযুদ্ধ সফল করার কর্মযজ্ঞে ব্যস্ত, তখন স্বাধীনতার শত্রুরা কিন্তু বসে ছিল না। ৫ এপ্রিল পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী জেলায় অতিবাম নকশালপন্থীরা বৈঠক করে শেখ মুজিবকে ‘আমেরিকার দালাল ও সোভিয়েত সংস্কারবাদীদের ক্রীড়নক’ বলে ‘দুই কুকুরের লড়াই’ তত্ত্ব সামনে রেখে স্বাধীনতাবিরোধী তৎপরতায় শামিল হয়। ৭ এপ্রিল বিমানে দুই ডিভিশন সৈন্য নিয়ে আসে হানাদার সরকার। ১৩ এপ্রিল ‘বহিরাক্রমণ থেকে পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষায়’ শামিল হয় চীন। ১৪ এপ্রিল ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয় শান্তি কমিটির উগ্র মিছিল, যার অগ্রভাগে ছিল গোলাম আজম প্রমুখ; ভিত্তি জোগায় রাজাকার-আলবদর-আল শামস বাহিনী গঠন করার। আর ওই সময় দুর্ভাগ্যজনকভাবে ‘ধূর্ত’ খোন্দকার মোশতাক মুজিবনগর সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদে বসেন।
তখনকার বিশ্ব ও উপমহাদেশের পরিস্থিতি ছিল আজকের চেয়ে সম্পূর্ণ বিপরীত; শান্তি-মুক্তি-স্বাধীনতা সমাজতন্ত্রমুখী। তবু শত্রুরা যার যার অবস্থান থেকে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে লড়ে গেছে। পরাজিত হয়েছে ডিসেম্বরে, দেশ স্বাধীন হয়েছে। কিন্তু যেমন মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বপ্রদানকারী জাতীয় চার নেতা, তেমনি বিজয়ের পর বঙ্গবন্ধুও রেখে দিলেন ‘ধূর্ত শত্রু’ মোশতাককে মন্ত্রিসভায়। কেন? স্বাধীনতার পর ওই খুনি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ থেকে অপসারিত হয়ে হলেন বাণিজ্যমন্ত্রী। ভাবা হলো বাঁচা গেছে। কিন্তু যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে খাদ্যসংকটের মধ্যে বাণিজ্য দিয়েই এল আঘাত। উগ্র বাম-প্রতিক্রিয়াশীল ডান তখন ছিল প্রকাশ্যে ও গোপনে, দুই চরম প্রান্ত যেমন একসাথে থাকে তেমনি থাকে জড়াজড়ি করে। রসুনের গোড়াসম ওইসব গোষ্ঠীর পাকিস্তানি কানেকশন আজ প্রমাণিত সত্য।
স্বাধীনতার পর রাজনীতি-কূটনীতি ও বাস্তবতার নানা টানাপোড়েনে সবুর খানরা পর্যন্ত মুক্ত হয়েছিল। তখনকার রাজনৈতিক দৃশ্যপট আর এখানকার বাস্তবতা—কোনো পার্থক্য আছে কি? আছে বড় রকমের এক জায়গায় পার্থক্য। বিশ্ব, উপমহাদেশ, দেশ—সর্বত্র গণমনোস্তত্ত্বের দক্ষিণমুখি অধোগতি। আমাদের দেশে ধর্মীয় উগ্রবাদীরা যতটা গণসম্পৃক্ত, তৃণমূলে যতটা নিজেদের দিকে সাধারণ মানুষকে টানতে পারছে; সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দল-সংগঠন কি ততটুকু গণসম্পৃক্ত, মানুষকে কি ততটুকু টানতে পারে? হেফাজত যখন রাস্তায় নামে, সব লণ্ডভণ্ড করে দিতে থাকে; তখন কি এর প্রতিরোধ করতে গণমানুষ নামে? পুলিশের ছত্রছায়ায় জনগণকে না নিয়ে দলীয় কর্মীরা নামলে তো হবে না। হিতেবিপরীত ফল হবে।
পারত কি এমন ষাটের দশকে উগ্রবাদীরা। এটা আবারও প্রমাণিত, রাজনৈতিক সমস্যা রাষ্ট্রীয় শক্তির জোর দিয়ে সমাধান করা যায় না। কথাটা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন প্রবাস থেকে ফিরে এসে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন, তখন জোর দিয়ে বলতেন। স্বাধীনতার আগে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমাদের জাতীয় নেতারা তেমনটাই বলে জনগণকে লক্ষ্য অর্জনে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। পদ্মা-মেঘনা-যমুনা-কর্ণফুলী তো বয়ে চলেছে। কিন্তু ‘কুলে বসে কত গুণিব ঢেউ/দেখিয়াছি শত দেখিব এও/নিঠুর বিধির লীলা কতই/কই রে আগের মানুষ কই?’
তবু বলব–রক্ষা, ২০০১-২০০৬-এর মতো বিএনপি-জামায়াত-ইসলামী ঐক্যজোট-বিজেপি জোট সরকার ক্ষমতায় নেই। ঘাতক-দালালদের গাড়িতে-বাড়িতে এখন জাতীয় পতাকা ওড়ে না। ‘মন্ত্রিসভায় রাজাকার দেশবাসী হুঁশিয়ার’ স্লোগান দিতে হয় না। রাষ্ট্রযন্ত্র থেকে বঙ্গবন্ধুকে অমর্যাদা করে ‘স্বাধীনতার ঘোষক’ শব্দটি উচ্চারিত হয় না। মুক্তিযুদ্ধ তথা স্বাধীন দেশ প্রতিষ্ঠার আইনি ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয় না। বঙ্গবন্ধুর হত্যা দিবসে ঘটা করে জন্মদিনের বয়সভিত্তিক ওজনের কেক কাটা হয় না। কথায় কথায় মুরতাদ ঘোষণাও নাই।
আর জেএমবি! হরকাতুল জিহাদ! শায়খ আব্দুর রহমান-বাংলাভাই আর মুফতি হান্নান গংদের বোমা-গ্রেনেডবাজির শঙ্কা নাই। আত্মঘাতি বোমা, চকোলেট বোমা, মিষ্টির প্যাকেট বোমা, এনভেলাপ বোমা! আদালত-এনজিও থেকে দরগা-মেলা-সিনেমা হল-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান প্রভৃতি; তখনকার বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা থেকে বুদ্ধিজীবী হুমায়ুন আজাদ-অধ্যাপক ইউনুস, কূটনীতিক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরী প্রমুখ কেউ বাদ যায়নি তখন বোমা-গ্রেনেড হামলা থেকে। বর্তমানে চারদলীয় জোট আর সক্রিয়-সজীব নয়। বিএনপি তো রাজপথে নিষ্ক্রিয়-নির্জীব হয়ে করোনাকালে সাংগঠনিক কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে বলেও খবরে জানলাম।
কিন্তু নতুন রূপে গজিয়ে উঠেছে হেফাজত। শাপলা চত্বরের সেই তাণ্ডবের পর আবারও মাঠে নেমেছে। মাঝে নিজেরা দুই ভাগ হয়ে গাছেরটা খেয়েছে, এখন তলায় কাঁটা বিছাচ্ছে। থানা থেকে লাইব্রেরি প্রভৃতি সব ধ্বংস করতে নেমেছে। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙছে, মুর্যাল ক্ষত-বিক্ষত করছে। নেতার চরিত্র স্খলনের ঘটনায় ওদের কিছু আসে-যায় না। নেতা তরুণীসহ রিসোর্টে জনতা কর্তৃক ধরা পড়ার পরও প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছে। অনৈতিক কাজে নেতা আটক হয়েছে শুনে সুনামগঞ্জের ছাতক থানা আক্রমণ করে সাতজন পুলিশ সদস্যকে আহত পর্যন্তও করেছে। এখন এটা আবারও সত্য বলে প্রমাণিত হলো–দুধ-কলা দিয়ে সাপ পুষলেই তার বিষাক্ত ছোবল একটুও কমে না। কৌশলে বিষ দাঁত ভাঙতে হয়।
এটা তো বাস্তব সত্য, দেশ আজ রয়েছে অর্থনৈতিকভাবে উন্নয়নের মহাসড়কে। করোনার প্রথম ধাক্কা আমরা কাটিয়ে উঠে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রক্রিয়ায় রয়েছি। ৩ এপ্রিল অর্থমন্ত্রী জাতীয় সংসদে ‘বাজেট ২০২০-২০২১: দ্বিতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত বাস্তবায়ন অগ্রগতি ও আয়-ব্যয়ের গতিধারা এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ–সংক্রান্ত প্রতিবেদন তুলে ধরে বলেছেন, ‘মাথাপিছু জাতীয় আয় বাড়ছে, প্রবাসী আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সন্তোষজনক, মুদ্রা বিনিময়ের হারে স্থিতিশীলতা ও মুদ্রাস্ফীতির নিম্নমুখী প্রবণতা নির্দেশ করছে—আমরা করোনাকালীন অর্থনৈতিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠে সমৃদ্ধির ধারায় ফিরে আসতে সক্ষম হব।’ আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনগুলোও সে কথাই বলে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আবার কী অবস্থায় দেশ ও বিশ্বকে ফেলে, তা বোধকরি ত্রিকালদর্শী ভবিষ্যদ্রষ্টাও বলতে পারবেন না।
প্রসঙ্গত, অর্থনৈতিক ক্ষেত্র অগ্রগতি-সমৃদ্ধি নিয়ে নানাধর্মী তর্ক-বিতর্ক থাকতেই পারে। তবে এটা ঠিক, এ ক্ষেত্রে ভরসার জায়গা অবশ্যই আছে।
দেশের সমস্যার মূল হচ্ছে রাজনৈতিক। জামায়েতের শক্তি-সামর্থ্য নিয়ে হেফাজত রাষ্ট্রশক্তিকে, সরকারকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। ক্রমেই রাজনৈতিক শক্তি হয়ে উঠছে। বিএনপি-জামায়াতের জায়গাটা পূরণ করছে। আওয়ামী লীগের ডানে হেফাজত নেতাদের উগ্রতার কারণে প্রচণ্ড ধ্বংসাত্মক শক্তি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এর পরিণতি কি, তা করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের মতোই বলা কঠিন। সরকারবিরোধী বাম শক্তি গণশক্তি বিবেচনায় অতি দুর্বল বটে। প্রায় নিঃশেষিত। এই শক্তি হেফাজতের বিরোধিতা করছে এটাও সত্য।
কিন্তু এটাই দেখা যাচ্ছে, সরকার যখন পুলিশি অ্যাকশন নিচ্ছে, তখন অতি বাম ও উগ্র ডান এক হয়ে প্রতিবাদ করছে। এটা কি রোমান প্রবাদবাক্য ও বহুল ব্যবহৃত দুই চরম প্রান্ত এক হওয়ার কথাটাই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে না? এদিকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনৈতিক-বুদ্ধিজীবী মহল ও রাজনীতি সচেতন একাংশ ধর্মীয় উগ্রতার বিরুদ্ধে নমনীয় অবস্থান ও পদক্ষেপ নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে সমালোচনা করছে, যা আওয়ামী লীগের নীতি-আদর্শ-লক্ষ্য বিবেচনায় নিলে এককথায় উড়িয়ে দেওয়া কঠিন থেকে কঠিনতর হচ্ছে।
এদিকে করোনা ঢেউ যত বাড়বে, ততই প্রথম ঢেউ কীভাবে কত উঠতি-পড়তি প্রচেষ্টার ভেতর দিয়ে কাটানো হয়েছিল, একটা লোকও যে না খেয়ে মরল না, টিকা যে আমরা অনেক উন্নত দেশের চেয়েও আগে পেলাম; তা ছাপিয়ে সমালোচনা বাড়তে থাকবে। ইতিমধ্যে এই লক্ষণ সুস্পষ্ট। তাই নানা দিক থেকে চাপে থাকবে সরকার ও সরকারি দল।
এদিকে সাংগঠনিক দিক থেকে আওয়ামী লীগ তৃণমূলে কতটা সমস্যায় রয়েছে, তা সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনাপ্রবাহ থেকে সুস্পষ্ট। ক্ষমতার স্বাদ পেয়ে ভেতরে ভেতরে যে ঘুণে ধরেছে, তা প্রকাশিত ঘটনাপ্রবাহ থেকে অনেকটা সত্য বলেই প্রতিভাত হচ্ছে। দেখতে দেখতে সরকার মেয়াদকালের অর্ধেক সময় পার করতে চলেছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে জাতীয় চার মূলনীতি সমুন্নত রেখে গণতন্ত্রকে সুরক্ষা ও অগ্রসর করার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ কতটা ভূমিকা রাখতে পারবে, সেটাই করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ এবং মুজিববর্ষ-স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালনের দিনগুলোতে জ্বলন্ত প্রশ্ন!
গত কয়েক দিনে তিনজন জামায়াত নেতার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। এই একটা রাজনৈতিক দল, যাদের নেতাদের মধ্যে পরিমিতিবোধ অসাধারণ। প্রায়ই তাঁরা জানেন, কোথায় থামতে হয়। হাসতে হলে ঠোঁট দুটো কতটুকু প্রসারিত করতে হবে, দাঁত কটা প্রকাশিত হতে পারবে—সে হিসাবও সম্ভবত দল তাদের শিখিয়ে দেয়।
১২ ঘণ্টা আগেইন্দোনেশিয়া আজ বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে স্বীকৃত। প্রায় ২৮ কোটি মানুষের এই বহুজাতিক ও বহু সাংস্কৃতিক দেশটি দীর্ঘ সামরিক শাসন, কর্তৃত্ববাদী রাজনীতি ও দুর্নীতির গভীর সংকট অতিক্রম করে গণতান্ত্রিক ধারায় প্রবেশ করেছে।
১২ ঘণ্টা আগেইদানীং; কেবল ইদানীং কেন, অনেক আগে থেকেই আমার মনে একটি প্রশ্ন বারবার উঁকি দিয়ে ওঠে যে, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ কিংবা সমাজে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্ব কী, তা সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে পারি? জানা আছে কিংবা জানা থেকে থাকলে মনে রাখতে পেরেছি এক একটি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে ওঠা অথবা গড়ে তোলার প্রেক্ষাপট কী?
১২ ঘণ্টা আগেরাজনীতির মাঠটাকে যাঁরা অশ্লীল বাক্যবাণের চারণক্ষেত্র বানিয়েছিলেন, তাঁদেরই একজন গ্রেপ্তার হয়েছে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে। উত্তরা থেকে গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। কাহিনি সেই আগের মতোই।
১২ ঘণ্টা আগে