আলতাফ পারভেজ লেখক ও গবেষক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনে স্নাতকোত্তর। ডাকসুর নির্বাচিত সদস্য ছিলেন। ‘মুজিব বাহিনী থেকে গণবাহিনী: ইতিহাসের পুনঃপাঠ’, ‘বার্মা: জাতিগত সংঘাতের সাত দশক’, ‘শ্রীলঙ্কার তামিল ইলম’, ‘গ্রামসি ও তাঁর রাষ্ট্রচিন্তা’ প্রভৃতি তাঁর গুরুত্বপূর্ণ বই। পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের বাংলাদেশ সফর নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার মাসুদ রানা।
মাসুদ রানা
পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার বাংলাদেশ সফরের সময় বাঙালিদের মন পরিষ্কার করতে বলেছেন। বাঙালিদের মনে কোন বিষয়ে ময়লা লেগে আছে?
হ্যাঁ, পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী এসে ফিরে যাওয়ার সময় এটা বলে গেলেন। তিনি এই কথা বলার সময় ইসলাম ধর্মেরও রেফারেন্স দিলেন। বললেন, ‘ইসলাম বলেছে দিল পরিষ্কার রাখতে।’
এটার উত্তরে কী বলব! ইসলাম তো আরও অনেক কিছু বলেছে। জুলুমের বিরুদ্ধেও বলেছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রায় সবাই তো ইসলাম ধর্মাবলম্বীই ছিল। তারা একাত্তরে পূর্ব পাকিস্তানের নিজ জনগণের বিরুদ্ধে কী করে গেল? সেটা কি ইসলামসম্মত হয়েছে? পরিষ্কার দিলে হয়েছে?
বাংলাদেশের মানুষের দিলে তো কোনো ময়লা নেই। বরং আমি বলব, প্রয়োজনের অতিরিক্ত উদারতা বাংলাদেশ প্রদর্শন করেছে পাকিস্তানের প্রতি। বিষয়টা ব্যাখ্যা করতে চাই।
ভারতের হাতে আটক পাকিস্তানের সেনাদের অনেকের বিরুদ্ধে তো যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ ছিল। বাংলাদেশের শক্ত অবস্থান থাকলে ভারত তাদের ছেড়ে দিতে পারত না। বাংলাদেশের তখনকার সরকার এ বিষয়ে শক্ত অবস্থান নেয়নি, কারণ তারা আন্তর্জাতিকভাবে সবাইকে নিয়ে, সবার সঙ্গে সামনে এগোতে চেয়েছিল। ভেবেছিল দক্ষিণ এশিয়ার পুরোনো তিক্ততা ভুলে সামনে এগোনো দরকার। কিন্তু কথা হলো, যেসব সাধারণ বেসামরিক বাংলাদেশি পরিবারের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ঘটেছে, তাদের তো পাকিস্তানি সেনাদের ক্ষমার সিদ্ধান্ত বেদনার্ত করেছে। ক্ষুব্ধ করেছে।
যে পরিবার যুদ্ধে কাউকে হারিয়েছে, তারা তো আন্তর্জাতিক কূটনীতির স্বার্থে তাদের দুঃখ ভুলে যেতে পারে না। তাদের দিলে পাকিস্তানের সেনাদের অপকর্মের ময়লা তো অবশ্যই রয়ে গেছে। এ ময়লা পাকিস্তানের নীতিনির্ধারকদের পরিষ্কার করতে হবে। এটা তাদের ঐতিহাসিক দায়।
১৯৭১ সালের বর্বরতার জন্য বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা চাওয়ার ব্যাপারটিকে এভাবে কেন রহস্যাবৃত রাখতে চাইছে পাকিস্তান? কেন ক্ষতিপূরণের আলোচনা এগোচ্ছে না? পাকিস্তানের কাছে ৪ বিলিয়নের বেশি অর্থ বাংলাদেশ পায়। কেন তার কোনো সুরাহা হচ্ছে না?
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সম্পর্কের ৫১ বছর পেরিয়ে গেছি আমরা। ৫৪ বছর হলো আমরা আলাদা হয়েছি। তার আগে ২৪ বছর আমরা একসঙ্গে ছিলাম।
এখন ২০২৫ সাল। আমরা তো ১৯৭১-এ দাঁড়িয়ে থাকতে পারি না। আমাদের সম্মুখপানে চাইতে হবে। কিন্তু সমস্যা হলো খোলা মনে, স্বস্তির সঙ্গে, আনন্দ চিত্তে সামনে এগোতে হলে পুরোনো বিষয়গুলো মিটমাট করেই এগোতে হবে। এটা যেকোনো সম্পর্কের বেলায় স্বাভাবিক কৌশল।
বাংলাদেশের পাকিস্তানকে দরকার আছে। দক্ষিণ এশিয়ার সবাইকেই বাংলাদেশের দরকার আছে। এখানে একটা বিরাট বাজার। বাংলাদেশ-পাকিস্তান মিলে ৪০ কোটি লোক। এই বাজারটা তারা উভয়ে যৌথভাবে কাজে লাগাতে পারে। কিন্তু এর জন্য পুরোনো বিষয় হিসেবে তিনটা জিনিস পাকিস্তানকে ফয়সালা করে দিতে হবে। প্রথমত, ১৯৭১-এর পূর্বেকার দায়দেনার মীমাংসা। সে সময়ের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ভাগ করে বাংলাদেশকে পাওনা অংশ দিতে হবে। আবার সে সময়ের বৈদেশিক দেনার অংশও বাংলাদেশকে ভাগ নিতে হবে। যুদ্ধাপরাধের জন্য শর্তহীন ক্ষমা চাওয়ার ব্যাপার আছে। এমনকি ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের বিষয়ও আসতে পারে। এর বাইরে আটকে পড়া উর্দুভাষীদের জন্যও পাকিস্তানের কিছু করার আছে। যদিও এই মানুষদের বাংলাদেশ পরিচয়পত্র ও ভোটাধিকার দিয়েছে, কিন্তু তাদের পুনর্বাসনে পাকিস্তান সাহায্য করতে পারে। এটা তাদের নৈতিক দায়।
এখন প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশ চাইলেও পাকিস্তান যদি এসব বিষয় অগ্রাহ্য করেই কেবল সম্পর্ক এগিয়ে নিতে চায়, তাহলে করণীয় কী? বাংলাদেশ সে ক্ষেত্রেও সম্পর্কের ব্যাপারে ইতিবাচক, কিন্তু সেই সম্পর্ক তেমন টেকসই হবে না।
ইসহাক দারের সফরের মাধ্যমে আমরা যেটা দেখলাম, পাকিস্তান পুরোনো বিষয়গুলো এড়িয়ে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে ইচ্ছুক। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী হয়তো চায় না তাদের রাজনীতিবিদেরা এখানে এসে একাত্তরের ঘটনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুক। আবার দেনাপাওনার ইস্যুতে তারা পশ্চিম পাকিস্তানের শিল্পপতিদের ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে শিল্পপ্রতিষ্ঠান খোয়ানোর বিষয়ও যুক্ত করতে চায়।
আসলে এ রকম সব বিষয় নিয়েই আলোচনা হতে হবে এবং সেসবের মীমাংসা করেই সামনে এগোতে হবে। লুকোছাপা করে সামনে এগোনো যায় না। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানকে অতীতের দায় মিটিয়েই সামনে হাঁটতে হবে।
ভুট্টো ও পারভেজ মোশাররফ কি আদতেই বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন, নাকি দুঃখপ্রকাশ করেছিলেন? ক্ষমা চাওয়ার তো নির্দিষ্ট পদ্ধতি আছে। সংসদে আলোচনার ব্যাপার আছে। সেগুলো না করেই কীভাবে এই প্রশ্নের সুরাহা হবে?
পারভেজ মোশাররফ দুঃখপ্রকাশ করেছিলেন। বলেছিলেন, যদি বাড়াবাড়ি হয়ে থাকে তাহলে তাঁর দেশ দুঃখিত। আসলে একাত্তরে যা হয়েছে তার বিপরীতে এই কথাটুকু যথেষ্ট নয়।
ভুট্টোও কখনো সরাসরি স্পষ্ট করে ক্ষমা চেয়েছেন বলে আমার জানা নেই। ১৯৭৪ সালে ভারতে আটক সেনাদের ছাড়িয়ে নিতে তিনি সেই বিষয়ে একধরনের ক্ষমা চাওয়াসুলভ নমনীয় ভঙ্গি নিয়েছিলেন কেবল। তার ফল হিসেবে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি হয় তখন।
আসলে ৫১ বছর ধরে এসব ইস্যুতে আমরা যেটা দেখছি পাকিস্তানে জাতীয় ঐকমত্য নেই। তারা সম্মিলিতভাবে একাত্তরের ভূমিকার জন্য অনুতপ্ত ও লজ্জিতও নয়। হয়তো তাদের জাতীয়তাবাদী অহংয়ের কারণেই এমনটি ঘটছে।
বাংলাদেশের দিক থেকে যেটা বাড়তি বিস্ময়কর সেটা হলো, পাকিস্তান এখানে এখনো সেসব রাজনৈতিক শক্তিকে মিত্র ভাবে, যারা একাত্তরে তাদের সশস্ত্র বাহিনীকে সহযোগিতা করেছে। তাদের সংলাপ ও যোগাযোগের ধরন দেখে সে রকমই মনে হয়।
এর মানে তো এই দাঁড়ায় যে, পাকিস্তানের নীতিনির্ধারকেরা তাঁদের একাত্তরের পলিসিতে সমস্যা দেখছেন না। এটা বাংলাদেশের জন্য অসহনীয়। পাকিস্তানকে তো তার দিল পরিষ্কার করতে হবে আগে। একদিকে তারা বিবাদিত বিষয় এড়িয়ে যেতে চায়, অন্যদিকে একাত্তরের মাইন্ডসেটে আটকে আছে তারা। তাহলে বাংলাদেশ কী বার্তা পাচ্ছে? পাকিস্তান কি মনে করছে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে বাংলাদেশ বাধ্য?
পাকিস্তানের এ রকম মনোভাবের একটা কারণ হতে পারে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বাস্তবতা। হয়তো বাংলাদেশের নতুন বাস্তবতায় পাকিস্তান ভাবছে তার বন্ধু-সংগঠনগুলো এমন পরিস্থিতিতে চালকের আসনে থাকবে, ফলে তার পক্ষে নিজের মতো করে একটা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক তৈরি করে নেওয়া যাবে।
এ ক্ষেত্রে আমি আওয়ামী লীগ সরকারের গত সাড়ে ১৫ বছরের সময় ভারতীয় আচরণকে বিবেচনায় নিতে বলব। ভারতও ঠিক একইভাবে তাদের পছন্দের শক্তিসমূহকে বিবেচনায় নিয়ে, আস্থায় নিয়ে, জনমতের তোয়াক্কা না করে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক ‘অনেক উচ্চতায়’ নিয়েছিল, সেটা কিন্তু টেকসই হয়নি। ফলে ভারতকেও বাংলাদেশ বিষয়ে দিল পরিষ্কারের চাপ তৈরি হয়েছে এখন।
বাংলাদেশের কোনো কোনো রাজনৈতিক দলও বলার চেষ্টা করছে অতীত ভুলে যেতে। এ বিষয়ে বিভিন্ন দেশের ক্ষমা চাওয়া নিয়ে তারা মিথ্যাচার করেছে। এ বিষয়ে আপনার মত কী?
বাংলাদেশ কেন অতীত ভুলে যাবে? বাংলাদেশের সমস্যা কী? বাংলাদেশের মানুষ কি অতীতে ভুল করেছে? ভিয়েতনাম যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক করেছে, ব্যবসা করছে, তার মানে কি তারা নিজ দেশে যুক্তরাষ্ট্রের বর্বরতা ভুলে গেছে? কোরিয়ায় নিষ্ঠুরতার জন্য জাপান হরহামেশা লজ্জার কথা জানায়। আবার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কও এগোচ্ছে তাদের।
বাংলাদেশের দুর্ভাগ্যের দিক—এখানে আজও মুক্তিযুদ্ধের আবেগকে অমর্যাদা করে রাজনীতি করা যায়, কথা বলা যায়। নইলে অতীত ভুলে যাওয়ার কথা আসবে কেন?
নিশ্চয়ই আমরা অতীতে আটকে থাকব না। বাংলাদেশ অতীতে আটকে নেইও। দেখুন, গণচীন ও সৌদি আরব বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে অনেক দেরি করেছিল। কিন্তু তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের বেশ ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এখন। এর একটা বড় কারণ চীন বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক করার সময় একাত্তরকালীন কোনো মিত্রকে খোঁজে না। আওয়ামী লীগ, বিএনপি যখন যে ক্ষমতায় আসে তার সঙ্গেই তারা ভালো সম্পর্ক রাখতে তৎপর হয়। তাদের বাংলাদেশ নীতির সফলতা ওখানেই। পাকিস্তানকেও বাছাই করা কোনো দলের সঙ্গে সম্পর্ক আটকে না রেখে ডান-বাম-মধ্যপন্থী সবার সঙ্গে সংলাপে লিপ্ত হওয়া দরকার। ভারতের বেলাতেও একই কথা প্রযোজ্য।
আমাদের পররাষ্ট্রনীতিতে আছে ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়’। এই ভাবনার আলোকে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের মূল্যায়ন করুন।
‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়’—এটা আমাদের একাত্তর-পরবর্তী বিদেশনীতির মূল দিকনির্দেশনা ছিল। সে কারণেই আমরা যুক্তরাষ্ট্র, চীন, সৌদি আরবের সঙ্গেও সম্পর্ক করেছিলাম। এটা একটা সঠিক নীতিই ছিল।
তবে বিগত সরকারের সাড়ে ১৫ বছর বাংলাদেশের বিদেশনীতি একদিকে হেলে পড়ে। আমাদের বৈদেশিক সম্পর্ক ও যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ তৎপরতা ভারতকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছিল। এতে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবে লাভবান হয়নি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাকিস্তানের সঙ্গেও সম্পর্ক বেশ তলানিতে চলে গিয়েছিল।
পাকিস্তানকে বাংলাদেশের দরকার আছে অবশ্যই। বিশেষ করে মধ্য এশিয়ার বাজারে পৌঁছাতে হলে পাকিস্তানের সঙ্গে সুসম্পর্ক দরকার আছে। আবার বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ে ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়’—আমাদের এই সাংবিধানিক নীতির কারণেও পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক অবশ্যই এগিয়ে নিতে হবে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সমস্যাগুলো তৈরি হচ্ছে পাকিস্তানের দিক থেকেই। ইসহাক দার ফিরে যাওয়ার সময় যা বলে গেলেন সেটা তো সম্পর্ককে এগিয়ে দিল না, বরং বাংলাদেশের জন্য সেটা বিব্রতকর হলো।
কোনো বিষয়েরই যদি সুরাহা না হয়, তাহলে পাকিস্তানের নেতারা ঘন ঘন বাংলাদেশে আসছেন কেন? পাকিস্তান-ভারত সমস্যার জাঁতাকলে বাংলাদেশ কি পড়ছে?
কোনো বিষয় সুরাহা হবে না—বিষয়টা সে রকম নয়। উভয় দেশের মাঝে বাণিজ্য বাড়ছে এবং সামনে আরও বাড়বে। সেটা দরকারও আছে। ভারতের সঙ্গেও আমাদের বাণিজ্য বাড়ানোর সুযোগ আছে। সার্ককে আবার পুনর্জাগরিত করা দরকার। ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক স্বাভাবিক হলে সার্ক সহজেই সক্রিয় হতে পারত। কিন্তু সেটা সহজে হবে বলে মনে হয় না। এ রকম ক্ষেত্রে আলাদাভাবে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে হবে। তবে বাংলাদেশের যেমন ভারতকে মোকাবিলার জায়গা থেকে পাকিস্তানকে কাছে টানার দরকার নেই, তেমনি পাকিস্তানেরও ভারতের বিরুদ্ধে সঙ্গী বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশকে কাছে টানার দরকার নেই। এ রকম কৌশল বাংলাদেশের জন্য ক্ষতিকর। ঢাকাকে নয়াদিল্লি, ইসলামাবাদ ও বেইজিংয়ের সঙ্গে নিজস্ব স্বার্থ ও বোঝাপড়ার জায়গা থেকে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। এখানে জাতীয় স্বার্থ প্রাধান্য দিতে হবে। বাংলাদেশ একটা ছোট দেশ। তাকে সবার সঙ্গে সুসম্পর্কের নীতি নিয়ে থাকতে হবে। তাতে সফলতা কম এলেও ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার মুখে তাকে কোনো একদিকে হেলে পড়ার নীতি পরিহার করতে হবে।
সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আজকের পত্রিকাকেও ধন্যবাদ।
পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার বাংলাদেশ সফরের সময় বাঙালিদের মন পরিষ্কার করতে বলেছেন। বাঙালিদের মনে কোন বিষয়ে ময়লা লেগে আছে?
হ্যাঁ, পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী এসে ফিরে যাওয়ার সময় এটা বলে গেলেন। তিনি এই কথা বলার সময় ইসলাম ধর্মেরও রেফারেন্স দিলেন। বললেন, ‘ইসলাম বলেছে দিল পরিষ্কার রাখতে।’
এটার উত্তরে কী বলব! ইসলাম তো আরও অনেক কিছু বলেছে। জুলুমের বিরুদ্ধেও বলেছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রায় সবাই তো ইসলাম ধর্মাবলম্বীই ছিল। তারা একাত্তরে পূর্ব পাকিস্তানের নিজ জনগণের বিরুদ্ধে কী করে গেল? সেটা কি ইসলামসম্মত হয়েছে? পরিষ্কার দিলে হয়েছে?
বাংলাদেশের মানুষের দিলে তো কোনো ময়লা নেই। বরং আমি বলব, প্রয়োজনের অতিরিক্ত উদারতা বাংলাদেশ প্রদর্শন করেছে পাকিস্তানের প্রতি। বিষয়টা ব্যাখ্যা করতে চাই।
ভারতের হাতে আটক পাকিস্তানের সেনাদের অনেকের বিরুদ্ধে তো যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ ছিল। বাংলাদেশের শক্ত অবস্থান থাকলে ভারত তাদের ছেড়ে দিতে পারত না। বাংলাদেশের তখনকার সরকার এ বিষয়ে শক্ত অবস্থান নেয়নি, কারণ তারা আন্তর্জাতিকভাবে সবাইকে নিয়ে, সবার সঙ্গে সামনে এগোতে চেয়েছিল। ভেবেছিল দক্ষিণ এশিয়ার পুরোনো তিক্ততা ভুলে সামনে এগোনো দরকার। কিন্তু কথা হলো, যেসব সাধারণ বেসামরিক বাংলাদেশি পরিবারের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ঘটেছে, তাদের তো পাকিস্তানি সেনাদের ক্ষমার সিদ্ধান্ত বেদনার্ত করেছে। ক্ষুব্ধ করেছে।
যে পরিবার যুদ্ধে কাউকে হারিয়েছে, তারা তো আন্তর্জাতিক কূটনীতির স্বার্থে তাদের দুঃখ ভুলে যেতে পারে না। তাদের দিলে পাকিস্তানের সেনাদের অপকর্মের ময়লা তো অবশ্যই রয়ে গেছে। এ ময়লা পাকিস্তানের নীতিনির্ধারকদের পরিষ্কার করতে হবে। এটা তাদের ঐতিহাসিক দায়।
১৯৭১ সালের বর্বরতার জন্য বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা চাওয়ার ব্যাপারটিকে এভাবে কেন রহস্যাবৃত রাখতে চাইছে পাকিস্তান? কেন ক্ষতিপূরণের আলোচনা এগোচ্ছে না? পাকিস্তানের কাছে ৪ বিলিয়নের বেশি অর্থ বাংলাদেশ পায়। কেন তার কোনো সুরাহা হচ্ছে না?
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সম্পর্কের ৫১ বছর পেরিয়ে গেছি আমরা। ৫৪ বছর হলো আমরা আলাদা হয়েছি। তার আগে ২৪ বছর আমরা একসঙ্গে ছিলাম।
এখন ২০২৫ সাল। আমরা তো ১৯৭১-এ দাঁড়িয়ে থাকতে পারি না। আমাদের সম্মুখপানে চাইতে হবে। কিন্তু সমস্যা হলো খোলা মনে, স্বস্তির সঙ্গে, আনন্দ চিত্তে সামনে এগোতে হলে পুরোনো বিষয়গুলো মিটমাট করেই এগোতে হবে। এটা যেকোনো সম্পর্কের বেলায় স্বাভাবিক কৌশল।
বাংলাদেশের পাকিস্তানকে দরকার আছে। দক্ষিণ এশিয়ার সবাইকেই বাংলাদেশের দরকার আছে। এখানে একটা বিরাট বাজার। বাংলাদেশ-পাকিস্তান মিলে ৪০ কোটি লোক। এই বাজারটা তারা উভয়ে যৌথভাবে কাজে লাগাতে পারে। কিন্তু এর জন্য পুরোনো বিষয় হিসেবে তিনটা জিনিস পাকিস্তানকে ফয়সালা করে দিতে হবে। প্রথমত, ১৯৭১-এর পূর্বেকার দায়দেনার মীমাংসা। সে সময়ের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ভাগ করে বাংলাদেশকে পাওনা অংশ দিতে হবে। আবার সে সময়ের বৈদেশিক দেনার অংশও বাংলাদেশকে ভাগ নিতে হবে। যুদ্ধাপরাধের জন্য শর্তহীন ক্ষমা চাওয়ার ব্যাপার আছে। এমনকি ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের বিষয়ও আসতে পারে। এর বাইরে আটকে পড়া উর্দুভাষীদের জন্যও পাকিস্তানের কিছু করার আছে। যদিও এই মানুষদের বাংলাদেশ পরিচয়পত্র ও ভোটাধিকার দিয়েছে, কিন্তু তাদের পুনর্বাসনে পাকিস্তান সাহায্য করতে পারে। এটা তাদের নৈতিক দায়।
এখন প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশ চাইলেও পাকিস্তান যদি এসব বিষয় অগ্রাহ্য করেই কেবল সম্পর্ক এগিয়ে নিতে চায়, তাহলে করণীয় কী? বাংলাদেশ সে ক্ষেত্রেও সম্পর্কের ব্যাপারে ইতিবাচক, কিন্তু সেই সম্পর্ক তেমন টেকসই হবে না।
ইসহাক দারের সফরের মাধ্যমে আমরা যেটা দেখলাম, পাকিস্তান পুরোনো বিষয়গুলো এড়িয়ে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে ইচ্ছুক। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী হয়তো চায় না তাদের রাজনীতিবিদেরা এখানে এসে একাত্তরের ঘটনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুক। আবার দেনাপাওনার ইস্যুতে তারা পশ্চিম পাকিস্তানের শিল্পপতিদের ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে শিল্পপ্রতিষ্ঠান খোয়ানোর বিষয়ও যুক্ত করতে চায়।
আসলে এ রকম সব বিষয় নিয়েই আলোচনা হতে হবে এবং সেসবের মীমাংসা করেই সামনে এগোতে হবে। লুকোছাপা করে সামনে এগোনো যায় না। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানকে অতীতের দায় মিটিয়েই সামনে হাঁটতে হবে।
ভুট্টো ও পারভেজ মোশাররফ কি আদতেই বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন, নাকি দুঃখপ্রকাশ করেছিলেন? ক্ষমা চাওয়ার তো নির্দিষ্ট পদ্ধতি আছে। সংসদে আলোচনার ব্যাপার আছে। সেগুলো না করেই কীভাবে এই প্রশ্নের সুরাহা হবে?
পারভেজ মোশাররফ দুঃখপ্রকাশ করেছিলেন। বলেছিলেন, যদি বাড়াবাড়ি হয়ে থাকে তাহলে তাঁর দেশ দুঃখিত। আসলে একাত্তরে যা হয়েছে তার বিপরীতে এই কথাটুকু যথেষ্ট নয়।
ভুট্টোও কখনো সরাসরি স্পষ্ট করে ক্ষমা চেয়েছেন বলে আমার জানা নেই। ১৯৭৪ সালে ভারতে আটক সেনাদের ছাড়িয়ে নিতে তিনি সেই বিষয়ে একধরনের ক্ষমা চাওয়াসুলভ নমনীয় ভঙ্গি নিয়েছিলেন কেবল। তার ফল হিসেবে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি হয় তখন।
আসলে ৫১ বছর ধরে এসব ইস্যুতে আমরা যেটা দেখছি পাকিস্তানে জাতীয় ঐকমত্য নেই। তারা সম্মিলিতভাবে একাত্তরের ভূমিকার জন্য অনুতপ্ত ও লজ্জিতও নয়। হয়তো তাদের জাতীয়তাবাদী অহংয়ের কারণেই এমনটি ঘটছে।
বাংলাদেশের দিক থেকে যেটা বাড়তি বিস্ময়কর সেটা হলো, পাকিস্তান এখানে এখনো সেসব রাজনৈতিক শক্তিকে মিত্র ভাবে, যারা একাত্তরে তাদের সশস্ত্র বাহিনীকে সহযোগিতা করেছে। তাদের সংলাপ ও যোগাযোগের ধরন দেখে সে রকমই মনে হয়।
এর মানে তো এই দাঁড়ায় যে, পাকিস্তানের নীতিনির্ধারকেরা তাঁদের একাত্তরের পলিসিতে সমস্যা দেখছেন না। এটা বাংলাদেশের জন্য অসহনীয়। পাকিস্তানকে তো তার দিল পরিষ্কার করতে হবে আগে। একদিকে তারা বিবাদিত বিষয় এড়িয়ে যেতে চায়, অন্যদিকে একাত্তরের মাইন্ডসেটে আটকে আছে তারা। তাহলে বাংলাদেশ কী বার্তা পাচ্ছে? পাকিস্তান কি মনে করছে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে বাংলাদেশ বাধ্য?
পাকিস্তানের এ রকম মনোভাবের একটা কারণ হতে পারে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বাস্তবতা। হয়তো বাংলাদেশের নতুন বাস্তবতায় পাকিস্তান ভাবছে তার বন্ধু-সংগঠনগুলো এমন পরিস্থিতিতে চালকের আসনে থাকবে, ফলে তার পক্ষে নিজের মতো করে একটা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক তৈরি করে নেওয়া যাবে।
এ ক্ষেত্রে আমি আওয়ামী লীগ সরকারের গত সাড়ে ১৫ বছরের সময় ভারতীয় আচরণকে বিবেচনায় নিতে বলব। ভারতও ঠিক একইভাবে তাদের পছন্দের শক্তিসমূহকে বিবেচনায় নিয়ে, আস্থায় নিয়ে, জনমতের তোয়াক্কা না করে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক ‘অনেক উচ্চতায়’ নিয়েছিল, সেটা কিন্তু টেকসই হয়নি। ফলে ভারতকেও বাংলাদেশ বিষয়ে দিল পরিষ্কারের চাপ তৈরি হয়েছে এখন।
বাংলাদেশের কোনো কোনো রাজনৈতিক দলও বলার চেষ্টা করছে অতীত ভুলে যেতে। এ বিষয়ে বিভিন্ন দেশের ক্ষমা চাওয়া নিয়ে তারা মিথ্যাচার করেছে। এ বিষয়ে আপনার মত কী?
বাংলাদেশ কেন অতীত ভুলে যাবে? বাংলাদেশের সমস্যা কী? বাংলাদেশের মানুষ কি অতীতে ভুল করেছে? ভিয়েতনাম যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক করেছে, ব্যবসা করছে, তার মানে কি তারা নিজ দেশে যুক্তরাষ্ট্রের বর্বরতা ভুলে গেছে? কোরিয়ায় নিষ্ঠুরতার জন্য জাপান হরহামেশা লজ্জার কথা জানায়। আবার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কও এগোচ্ছে তাদের।
বাংলাদেশের দুর্ভাগ্যের দিক—এখানে আজও মুক্তিযুদ্ধের আবেগকে অমর্যাদা করে রাজনীতি করা যায়, কথা বলা যায়। নইলে অতীত ভুলে যাওয়ার কথা আসবে কেন?
নিশ্চয়ই আমরা অতীতে আটকে থাকব না। বাংলাদেশ অতীতে আটকে নেইও। দেখুন, গণচীন ও সৌদি আরব বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে অনেক দেরি করেছিল। কিন্তু তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের বেশ ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এখন। এর একটা বড় কারণ চীন বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক করার সময় একাত্তরকালীন কোনো মিত্রকে খোঁজে না। আওয়ামী লীগ, বিএনপি যখন যে ক্ষমতায় আসে তার সঙ্গেই তারা ভালো সম্পর্ক রাখতে তৎপর হয়। তাদের বাংলাদেশ নীতির সফলতা ওখানেই। পাকিস্তানকেও বাছাই করা কোনো দলের সঙ্গে সম্পর্ক আটকে না রেখে ডান-বাম-মধ্যপন্থী সবার সঙ্গে সংলাপে লিপ্ত হওয়া দরকার। ভারতের বেলাতেও একই কথা প্রযোজ্য।
আমাদের পররাষ্ট্রনীতিতে আছে ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়’। এই ভাবনার আলোকে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের মূল্যায়ন করুন।
‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়’—এটা আমাদের একাত্তর-পরবর্তী বিদেশনীতির মূল দিকনির্দেশনা ছিল। সে কারণেই আমরা যুক্তরাষ্ট্র, চীন, সৌদি আরবের সঙ্গেও সম্পর্ক করেছিলাম। এটা একটা সঠিক নীতিই ছিল।
তবে বিগত সরকারের সাড়ে ১৫ বছর বাংলাদেশের বিদেশনীতি একদিকে হেলে পড়ে। আমাদের বৈদেশিক সম্পর্ক ও যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ তৎপরতা ভারতকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছিল। এতে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবে লাভবান হয়নি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাকিস্তানের সঙ্গেও সম্পর্ক বেশ তলানিতে চলে গিয়েছিল।
পাকিস্তানকে বাংলাদেশের দরকার আছে অবশ্যই। বিশেষ করে মধ্য এশিয়ার বাজারে পৌঁছাতে হলে পাকিস্তানের সঙ্গে সুসম্পর্ক দরকার আছে। আবার বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ে ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়’—আমাদের এই সাংবিধানিক নীতির কারণেও পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক অবশ্যই এগিয়ে নিতে হবে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সমস্যাগুলো তৈরি হচ্ছে পাকিস্তানের দিক থেকেই। ইসহাক দার ফিরে যাওয়ার সময় যা বলে গেলেন সেটা তো সম্পর্ককে এগিয়ে দিল না, বরং বাংলাদেশের জন্য সেটা বিব্রতকর হলো।
কোনো বিষয়েরই যদি সুরাহা না হয়, তাহলে পাকিস্তানের নেতারা ঘন ঘন বাংলাদেশে আসছেন কেন? পাকিস্তান-ভারত সমস্যার জাঁতাকলে বাংলাদেশ কি পড়ছে?
কোনো বিষয় সুরাহা হবে না—বিষয়টা সে রকম নয়। উভয় দেশের মাঝে বাণিজ্য বাড়ছে এবং সামনে আরও বাড়বে। সেটা দরকারও আছে। ভারতের সঙ্গেও আমাদের বাণিজ্য বাড়ানোর সুযোগ আছে। সার্ককে আবার পুনর্জাগরিত করা দরকার। ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক স্বাভাবিক হলে সার্ক সহজেই সক্রিয় হতে পারত। কিন্তু সেটা সহজে হবে বলে মনে হয় না। এ রকম ক্ষেত্রে আলাদাভাবে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে হবে। তবে বাংলাদেশের যেমন ভারতকে মোকাবিলার জায়গা থেকে পাকিস্তানকে কাছে টানার দরকার নেই, তেমনি পাকিস্তানেরও ভারতের বিরুদ্ধে সঙ্গী বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশকে কাছে টানার দরকার নেই। এ রকম কৌশল বাংলাদেশের জন্য ক্ষতিকর। ঢাকাকে নয়াদিল্লি, ইসলামাবাদ ও বেইজিংয়ের সঙ্গে নিজস্ব স্বার্থ ও বোঝাপড়ার জায়গা থেকে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। এখানে জাতীয় স্বার্থ প্রাধান্য দিতে হবে। বাংলাদেশ একটা ছোট দেশ। তাকে সবার সঙ্গে সুসম্পর্কের নীতি নিয়ে থাকতে হবে। তাতে সফলতা কম এলেও ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার মুখে তাকে কোনো একদিকে হেলে পড়ার নীতি পরিহার করতে হবে।
সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আজকের পত্রিকাকেও ধন্যবাদ।
বিগত সরকারের শাসনামলে একটা প্রশ্ন বেশ আলোচিত হতো। এর পরে কী? একটা বক্তব্য চালু ছিল যে নৈরাজ্য দেখা দেবে। তেমনটা ঘটবার আগেই অবশ্য গণ-আন্দোলনের মুখে সরকারের পতন ঘটেছে; কিন্তু পতনের পরে অবস্থাটা এখন যে খুব শান্ত ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে, তা তো নয়। না হওয়ার প্রধান কারণ এটা যে অভ্যুত্থানের পেছনে কোনো সংগঠিত..
১ দিন আগেসাম্প্রতিক একটি সংবাদ দিয়ে শুরু করছি। জাপানে ২০২৪ সালে যত মানুষ জন্মেছে, তার চেয়ে ৯ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এর অর্থ, দ্রুত কমছে জাপানের জনসংখ্যা। এটি যে কেবল ২০২৪ সালেই ঘটেছে, তা কিন্তু নয়। ধারাবাহিকভাবে প্রতিবছরই দেশটির জনসংখ্যা ছোট হচ্ছে। বিষয়টি জাপানের জন্য অবশ্যই উদ্বেগের...
১ দিন আগেবেহিসাবি মানুষের জীবন কখনোই সুখের দেখা পায় না। সুখ সুখ করে আর তার পেছনে দৌড়াতে দৌড়াতে জীবনটাই শেষ; সুখ বেচারার আর দেখা মেলে না। হিসাবের খাতায় গরমিল থাকলে পুরো জীবনটাই দুর্ভোগের শিকার হয়। জীবনের অঙ্ক নির্ভুল না হলে জীবন হয় অভিশপ্ত। হিসাব ছাড়া মানুষেরা সামাজিক বা পারিবারিক—সবভাবেই নিগৃহীত হয়...
১ দিন আগেকাশেমের সামর্থ্য নেই। মেয়ের শখ পূরণ করতে প্রতিবেশীর বাড়ি থেকে তাই পরপর চারটি হাঁস চুরি করে। কিন্তু বাপ-বেটির মধ্যে অনুশোচনা কাজ করলে তারা সিদ্ধান্ত নেয় চারটি হাঁস কিনে প্রতিবেশীকে ফেরত দিয়ে ক্ষমা চাইবে। যা-ই হোক, বৃত্তিতে ভালো ফল করায় গ্রামের চেয়ারম্যান তাদের উপহার হিসেবে কিছু দিতে...
১ দিন আগে