Ajker Patrika

অভ্যুত্থানের এক বছরেই হাসিনা সরকারকে ফেরত এনেছে অন্তর্বর্তী সরকার: গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
অভ্যুত্থানের এক বছরেই হাসিনা সরকারকে ফেরত এনেছে অন্তর্বর্তী সরকার: গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি

জুলাই অভ্যুত্থানের এক বছরের মধ্যেই অন্তর্বর্তী সরকার দেশে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারকে ফিরিয়ে এনেছে বলে মন্তব্য করেছে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। তারা বলেছে, দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, মব, সন্ত্রাস ও শ্রমিক হত্যার দায় এই সরকারকেই নিতে হবে।

আজ বৃহস্পতিবার গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির এক বিবৃতিতে এসব মন্তব্য করা হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘মানুষের জীবন বিপন্ন করা, শ্রমিক হত্যা, আদিবাসী নির্যাতন, ধর্মীয় সংখ্যালঘু মানুষের প্রাণহানি, নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা, জাতীয় স্বার্থবিরোধী চুক্তি স্বাক্ষরে জবরদস্তি প্রমাণ করে অন্তর্বর্তী সরকার জনস্বার্থে কোনো পরিবর্তনে আগ্রহী নয়। গণ-অভ্যুত্থানের পরের এক বছরেই অন্তর্বর্তী সরকার হাসিনার সরকারকে ফিরিয়ে এনেছে।

‘অনেক শ্রমজীবী মানুষের রক্তের বিনিময়ে ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে। অথচ গণ-অভ্যুত্থানের পর প্রথম বিনা বিচারে হত্যা করা হয়েছে শ্রমিককে। সেই ধারাবাহিকতাতেই রাষ্ট্রীয় যৌথ বাহিনী ২ সেপ্টেম্বর শ্রমিক ছাঁটাই প্রতিবাদের ন্যায্য আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী এভারগ্রিন কারখানার শ্রমিক হাবিব ইসলামকে হত্যা করেছে। গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির পক্ষ থেকে এই শ্রমিক হত্যার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানানো হচ্ছে।’

এতে বলা হয়, ‘অন্তর্বর্তী সরকার দায়হীনভাবে এই ঘটনাগুলো কেবল ঘটতে দেয়নি; জনগণের ন্যূনতম মানবাধিকারকে বিপন্নতার দিকে ঠেলে দিয়েছে। আগের সরকারের মতোই শ্রমিকবিরোধী, নারীবিরোধী, ক্ষুদ্র জাতিসত্তাবিরোধী, অগণতান্ত্রিক ও স্বেচ্ছাচারী ভূমিকা গ্রহণ করছে এই সরকার।’

অন্তর্বর্তী সরকারের ‘নির্লিপ্ততায় বা সমর্থনে দেশে মবোক্রেসি চলছে’ উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘রংপুরের তারাগঞ্জে দুজন ভ্যানচালক রুপলাল দাস ও প্রদীপ দাসকে নির্মমভাবে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। রংপুরের গঙ্গাছড়ায় ধর্ম অবমাননার মিথ্যা প্রোপাগান্ডা তৈরি করে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা, লুট ও আগুন দেওয়া হয়েছে। অথচ পুলিশ হামলাকারীকে না ধরে ফেসবুকের একজন নিছক পোস্টদাতাকে গ্রেপ্তার করে মব হামলার প্রতি প্রত্যক্ষ সমর্থন দিয়েছে।

‘লালমনিরহাটে বৃদ্ধ নাপিত পরেশ চন্দ্র শীল ও তাঁর ছেলে বিষ্ণু চন্দ্র শীলকে মিথ্যা ধর্ম অবমাননার অপবাদে পেটানো হয়েছে এবং পুলিশ সেই নির্যাতনকারীকে গ্রেপ্তার না করে পরেশ ও বিষ্ণুকেই গ্রেপ্তার করে মবের বৈধতা দিয়েছে।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক সহিংস ঘটনার প্রসঙ্গে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘শিক্ষার্থীদের ওপর সংঘটিত রক্তক্ষয়ী হামলা এবং হামলা প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তা বিস্ময়কর। যৌথ বাহিনী কেন স্থানীয় মব ও হামলা সামলাতে পারছে না, তা আশ্চর্য বিষয়।’

বিবৃতিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে অবিলম্বে মব, সন্ত্রাসসহ জনস্বার্থবিরোধী তৎপরতা বন্ধের দাবি জানানো হয়।

একই সঙ্গে শ্রমিক হত্যা, দলবদ্ধ ধর্ষণসহ নারীবিদ্বেষী তৎপরতা, লুটপাট, হামলা ও সহিংসতায় দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ ও শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি পরিশোধ, নির্যাতন বন্ধ, অন্যায়ভাবে ছাঁটাই প্রত্যাহার এবং নিহত শ্রমিকের পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানানো হয়।

গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির পক্ষে বিবৃতিটি দেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সামিনা লুৎফা নিত্রা, ডা. হারুন উর রশীদ, ড. মাহা মির্জা, মাহতাব উদ্দীন আহমেদ ও মারজিয়া প্রভা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত