উচ্চপর্যায়ের কর্মশালা
শহীদুল ইসলাম, ঢাকা
সরকারি প্রকল্পের পরিকল্পনা গ্রহণ থেকে শুরু করে বাস্তবায়ন শেষ হওয়া পর্যন্ত সময়ে নানা ধাপে অনিয়ম-দুর্নীতি ও সমন্বয়হীনতার অভিযোগ নতুন নয়। এতে অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রকল্প বাস্তবায়নে কালক্ষেপণ হয়, বেড়ে যায় প্রকল্পের ব্যয়। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে প্রকল্প পরিকল্পনা, অনুমোদন ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার সমস্যা চিহ্নিত করে সেগুলো সমাধানের পথ খুঁজছে অন্তর্বর্তী সরকার।
এ লক্ষ্যে গতকাল মঙ্গলবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলনকক্ষে উচ্চপর্যায়ের এক কর্মশালার আয়োজন করে সরকার। সাড়ে চার ঘণ্টা চলা ওই কর্মশালায় প্রকল্প বাস্তবায়নের নানা সমস্যা চিহ্নিত করা হয়েছে। সমস্যা সমাধানে উঠে এসেছে একগুচ্ছ সুপারিশ।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উদ্যোগে এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠিত এই কর্মশালায় সরকারের উপদেষ্টাগণ, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী, সিনিয়র সচিব, সচিব এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তারা অংশ নেন। পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এবং অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ কর্মশালায় চালকের ভূমিকায় ছিলেন। কর্মশালা শেষে সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। তবে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীরা সুনির্দিষ্ট প্রকল্প নিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তা শেষ করায় জোর দিয়েছেন। যোগ্য ও অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের নিয়ে প্রকল্প পরিচালক (পিডি) পুল গঠনসহ সরকারি প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে একগুচ্ছ সুপারিশ করেছেন তাঁরা।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশিদ গতকাল সন্ধ্যায় আজকের পত্রিকা'কে বলেন, ‘কর্মশালায় প্রকল্পবিষয়ক নিয়মকানুনগুলো সম্পর্কে সবাইকে জানানো হয়েছে। যার যতটুকু কনফিউশন বা সমস্যা ছিল সেগুলো নিয়ে আলাপ-আলোচনা হয়েছে। উপদেষ্টাসহ কর্মশালায় অংশ নেওয়া সবাই তাদের মতামত দিয়েছেন। প্রকল্প ব্যবস্থাপনা আরও স্মুথ ও স্মার্ট হোক, আমরা সবাই এটা চেয়েছি। এ জন্য এ বিষয়ে যেসব পয়েন্ট উঠে এসেছে, সেসব পয়েন্টের ওপর সবাই কথা বলেছেন।’
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিগত সরকারের সময় রাজনৈতিক বিবেচনায় নেওয়া প্রকল্পগুলোর কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে। অনেক প্রকল্প পুনর্মূল্যায়ন করা হচ্ছে। কিছু প্রকল্পের কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়েছে। সূত্র জানায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রকল্পের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৪৫৪টি। এসব প্রকল্পের মধ্যে ৬৬৮টি প্রকল্প পরিদর্শন করা হয়েছে। নিবিড় পরিবীক্ষণ করা হয়েছে ৫৫টি। আর প্রভাব মূল্যায়ন করা হয়েছে ২১টির।
গতকালের কর্মশালায় প্রকল্প গ্রহণ থেকে শুরু করে বাস্তবায়নের কোন কোন পর্যায়ে প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা সুবিধা নেওয়ার সুযোগ পান, সেসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। রাজনৈতিক বিবেচনায় নেওয়া কোনো প্রকল্প অনুমোদনপ্রক্রিয়ায় সরকারি কর্মকর্তারা আইন-বিধি অনুযায়ী কেন আপত্তি জানান না, সেসব নিয়েও কথা হয়েছে। উপদেষ্টারা ও বিশেষ সহকারীরা এ বিষয়ে তাঁদের মতামত দিয়েছেন। আইন ও বিধিতে কোনো ফাঁক থাকলে সেগুলো দূর করার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর আওয়ামী লীগ আমলে বঞ্চিত কেউ কেউ একসঙ্গে চারটি পদোন্নতি পেয়ে সচিব হয়েছেন। কোনো কোনো কর্মকর্তা দুটি, কেউ কেউ তিনটি পদোন্নতি পেয়ে যুগ্ম সচিব বা অতিরিক্ত সচিব হয়েছেন। সরকারের নীতিনির্ধারণী বিষয়গুলোর সঙ্গে তাঁদের কাজের তেমন অভিজ্ঞতা নেই। ফলে মন্ত্রণালয় বা বিভাগের প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে প্রকল্প থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিষয়ে কীভাবে তদারকি করতে হয়, সে বিষয়ে কর্মশালায় তাঁদের সার্বিক ধারণা দেওয়া হয়েছে।
কর্মশালায় অংশ নেওয়া একজন কর্মকর্তা জানান, বড় প্রকল্পগুলোতে অনিয়ম-দুর্নীতি করতে অনেক সময় পছন্দের ব্যক্তিকে প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। যেকোনো কর্মকর্তাকে চাইলেই যাতে প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দিতে না পারে, কর্মশালায় সেই পথ বন্ধ করার সুপারিশ এসেছে। এ জন্য যোগ্য ও অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের নিয়ে পিডি পুল করে পুলভুক্তদের ফিন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট, প্রকিউরমেন্ট ম্যানেজমেন্ট এবং প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট-বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থার সুপারিশ এসেছে।
চিহ্নিত হয়েছে যেসব সমস্যা
প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে একটি সমস্যার কথা প্রায় শোনা যায়। তা হলো যথাযথ সম্ভাব্যতার সমীক্ষা না করেই প্রকল্প গ্রহণ। গতকালের কর্মশালাতেও এই সমস্যাটি উঠে এসেছে। অংশীদারদের পরামর্শ না থাকা, ভৌত কাজের যথাযথ এবং স্ট্রাকচারাল ডিজাইন না থাকায় প্রকল্প বাস্তবায়ন পর্যায়ে সমস্যা দেখা দেয় বলে এতে জানানো হয়েছে।
এ ছাড়া প্রকল্পের সঠিক লজিক্যাল ফ্রেমওয়ার্ক প্রণয়ন না করা, প্রকল্প প্রাক্কলনে অযৌক্তিক ব্যয় নির্ধারণ, পরিবেশগত বিষয় বিবেচনায় না নেওয়া, মাস্টারপ্ল্যান অনুসরণ না করা, পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের ওপর অধিক মাত্রায় নির্ভরশীলতাকে সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
চিহ্নিত হওয়া অন্য সমস্যাগুলোর মধ্যে আছে—পূর্ণকালীন প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ না করা, একই ব্যক্তির একাধিক প্রকল্পে দায়িত্ব পালন, অভিজ্ঞ প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ না করা, ঘনঘন প্রকল্প পরিচালক বদলি, ভূমি অধিগ্রহণ এবং ইউটিলিটি সার্ভিস শিফটিং-সংক্রান্ত সমন্বয়হীনতা, প্রকল্পের এক্সটার্নাল অডিট নিয়মিত না হওয়া এবং বৈদেশিক সহায়তাপুষ্ট প্রকল্পের ক্ষেত্রে বিভিন্ন পর্যায়ে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার সম্মতি পেতে বিলম্ব হওয়া।
এ ছাড়া প্রকল্পের মেয়াদ নির্ধারণের ক্ষেত্রে স্বীকৃত মডেল ব্যবহার না করা, পিইসি বা ডিপিইসির সভায় আইএমইডির প্রতিনিধির মতামত যথাযথভাবে প্রতিফলন না হওয়া; প্রকল্পের ওয়ার্কপ্ল্যান এবং প্রকিউরমেন্ট যথাযথভাবে প্রণয়ন, সঠিকভাবে অনুসরণ ও মনিটরিং না করাকেও সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এর বাইরে ব্যয় না বাড়িয়ে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব যথাসময়ে না পাওয়া, আইএমইডির ই-পিএমআইএস সফটওয়্যারে প্রকল্পসংশ্লিষ্ট সব তথ্য যথাসময়ে আপলোড না করা, যথাসময়ে প্রকল্প সমাপ্তির প্রতিবেদন আইএমইডিতে দাখিল না করা, সমাপ্ত প্রকল্পের আওতায় সৃষ্ট অবকাঠামো ও সংগৃহীত যন্ত্রপাতি যথাযথভাবে সংরক্ষণ, রক্ষণাবেক্ষণ না করা, প্রকল্পবিশেষ জনবলের সংস্থান না থাকা এবং যথাসময়ে জনবল নিয়োগ না করাকে সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
সমাধানের পথ
প্রকল্পসংশ্লিষ্ট সমস্যাগুলো সমাধানে বেশ কিছু সুপারিশও উঠে এসেছে গতকালের উচ্চপর্যায়ের কর্মশালায়। বাস্তুগত বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা; মাস্টারপ্ল্যান অনুসরণ করে নির্মাণবিষয়ক ড্রয়িং ডিজাইন করা; সংস্থার সক্ষমতা বিবেচনা করে যুক্তিসংগতভাবে প্রকল্প গ্রহণ এবং প্রকল্পের সুনির্দিষ্ট কম্পোনেন্ট রাখা, প্রস্তাবিত প্রকল্প দলিলের সংযোজনীতে কী প্রক্রিয়ায় মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছে, তা তুলে ধরার সুপারিশ করা হয়েছে।
এ ছাড়া প্রকল্প সমাপ্তির তিন মাসের মধ্যে পিসিআর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগ কর্তৃক আইএমইডিতে পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করা, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের রাজস্ব বাজেটের অধীন প্রকল্পের আওতায় সৃষ্ট অবকাঠামো এবং সংগৃহীত যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং প্রকল্পের সুফল টেকসই করার লক্ষ্যে জনবল কাঠামো অনুমোদন ও প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগে সংস্থা কর্তৃক যথাসময়ে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ এসেছে। ভূমি অধিগ্রহণ এবং ইউটিলিটি সার্ভিস শিফটিং-সংক্রান্ত পৃথক প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের সুপারিশ করা হয়েছে।
প্রকল্প নিয়ে বিভিন্ন সমস্যা এবং সেসব সমাধানের আলোচনা-পর্যালোচনার পর কর্মশালায় প্রকল্প নেওয়ার আগে টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করে পরিকল্পনা বিভাগের গাইডলাইন মোতাবেক সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদন প্রস্তুতির ব্যবস্থা করার সুপারিশ করা হয়েছে। প্রকল্প পরিচালক নিয়োগসংক্রান্ত পরিপত্র অনুযায়ী পরিচালক নিয়োগ, যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে পিডি পুল গঠন করা এবং পুলভুক্ত কর্মকর্তাদের ফিন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট, প্রকিউরমেন্ট ম্যানেজমেন্ট ও প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট-বিষয়ক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ; প্রকল্প বাস্তবায়নে নিবিড় মনিটর নিশ্চিত করা; আইএমইডির ই-পিএমআইএস সফটওয়্যারে সব প্রকল্পের তথ্য হালনাগাদ নিশ্চিত করা; প্রকল্পের পিএলসি ও পিআইসি সভা করা ও সভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন মনিটরিং করা এবং প্রকল্প শেষ হওয়ার আগেই প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে টেকসইকরণের জন্য সাংগঠনিক কাঠামো এবং জনবল নিয়োগের বিষয়ে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের সুপারিশ উঠে এসেছে কর্মশালায়।
এতে অংশ নেওয়া একজন কর্মকর্তা বলেন, উচ্চপর্যায়ের কর্মশালা থেকে যেসব সুপারিশ এসেছে, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে সেগুলো বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সহযোগিতা নেবে তারা। প্রকল্পসংশ্লিষ্ট সমস্যার সমাধানে কোন কোন সরকারি দপ্তরকে কী কী কাজ করতে হবে, সেগুলো নির্ধারণ করে দিয়ে দ্রুত তা সমাধানের নির্দেশনা দেওয়া হবে।
সরকারি প্রকল্পের পরিকল্পনা গ্রহণ থেকে শুরু করে বাস্তবায়ন শেষ হওয়া পর্যন্ত সময়ে নানা ধাপে অনিয়ম-দুর্নীতি ও সমন্বয়হীনতার অভিযোগ নতুন নয়। এতে অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রকল্প বাস্তবায়নে কালক্ষেপণ হয়, বেড়ে যায় প্রকল্পের ব্যয়। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে প্রকল্প পরিকল্পনা, অনুমোদন ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার সমস্যা চিহ্নিত করে সেগুলো সমাধানের পথ খুঁজছে অন্তর্বর্তী সরকার।
এ লক্ষ্যে গতকাল মঙ্গলবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলনকক্ষে উচ্চপর্যায়ের এক কর্মশালার আয়োজন করে সরকার। সাড়ে চার ঘণ্টা চলা ওই কর্মশালায় প্রকল্প বাস্তবায়নের নানা সমস্যা চিহ্নিত করা হয়েছে। সমস্যা সমাধানে উঠে এসেছে একগুচ্ছ সুপারিশ।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উদ্যোগে এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠিত এই কর্মশালায় সরকারের উপদেষ্টাগণ, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী, সিনিয়র সচিব, সচিব এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তারা অংশ নেন। পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এবং অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ কর্মশালায় চালকের ভূমিকায় ছিলেন। কর্মশালা শেষে সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। তবে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীরা সুনির্দিষ্ট প্রকল্প নিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তা শেষ করায় জোর দিয়েছেন। যোগ্য ও অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের নিয়ে প্রকল্প পরিচালক (পিডি) পুল গঠনসহ সরকারি প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে একগুচ্ছ সুপারিশ করেছেন তাঁরা।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশিদ গতকাল সন্ধ্যায় আজকের পত্রিকা'কে বলেন, ‘কর্মশালায় প্রকল্পবিষয়ক নিয়মকানুনগুলো সম্পর্কে সবাইকে জানানো হয়েছে। যার যতটুকু কনফিউশন বা সমস্যা ছিল সেগুলো নিয়ে আলাপ-আলোচনা হয়েছে। উপদেষ্টাসহ কর্মশালায় অংশ নেওয়া সবাই তাদের মতামত দিয়েছেন। প্রকল্প ব্যবস্থাপনা আরও স্মুথ ও স্মার্ট হোক, আমরা সবাই এটা চেয়েছি। এ জন্য এ বিষয়ে যেসব পয়েন্ট উঠে এসেছে, সেসব পয়েন্টের ওপর সবাই কথা বলেছেন।’
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিগত সরকারের সময় রাজনৈতিক বিবেচনায় নেওয়া প্রকল্পগুলোর কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে। অনেক প্রকল্প পুনর্মূল্যায়ন করা হচ্ছে। কিছু প্রকল্পের কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়েছে। সূত্র জানায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রকল্পের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৪৫৪টি। এসব প্রকল্পের মধ্যে ৬৬৮টি প্রকল্প পরিদর্শন করা হয়েছে। নিবিড় পরিবীক্ষণ করা হয়েছে ৫৫টি। আর প্রভাব মূল্যায়ন করা হয়েছে ২১টির।
গতকালের কর্মশালায় প্রকল্প গ্রহণ থেকে শুরু করে বাস্তবায়নের কোন কোন পর্যায়ে প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা সুবিধা নেওয়ার সুযোগ পান, সেসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। রাজনৈতিক বিবেচনায় নেওয়া কোনো প্রকল্প অনুমোদনপ্রক্রিয়ায় সরকারি কর্মকর্তারা আইন-বিধি অনুযায়ী কেন আপত্তি জানান না, সেসব নিয়েও কথা হয়েছে। উপদেষ্টারা ও বিশেষ সহকারীরা এ বিষয়ে তাঁদের মতামত দিয়েছেন। আইন ও বিধিতে কোনো ফাঁক থাকলে সেগুলো দূর করার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর আওয়ামী লীগ আমলে বঞ্চিত কেউ কেউ একসঙ্গে চারটি পদোন্নতি পেয়ে সচিব হয়েছেন। কোনো কোনো কর্মকর্তা দুটি, কেউ কেউ তিনটি পদোন্নতি পেয়ে যুগ্ম সচিব বা অতিরিক্ত সচিব হয়েছেন। সরকারের নীতিনির্ধারণী বিষয়গুলোর সঙ্গে তাঁদের কাজের তেমন অভিজ্ঞতা নেই। ফলে মন্ত্রণালয় বা বিভাগের প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে প্রকল্প থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিষয়ে কীভাবে তদারকি করতে হয়, সে বিষয়ে কর্মশালায় তাঁদের সার্বিক ধারণা দেওয়া হয়েছে।
কর্মশালায় অংশ নেওয়া একজন কর্মকর্তা জানান, বড় প্রকল্পগুলোতে অনিয়ম-দুর্নীতি করতে অনেক সময় পছন্দের ব্যক্তিকে প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। যেকোনো কর্মকর্তাকে চাইলেই যাতে প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দিতে না পারে, কর্মশালায় সেই পথ বন্ধ করার সুপারিশ এসেছে। এ জন্য যোগ্য ও অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের নিয়ে পিডি পুল করে পুলভুক্তদের ফিন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট, প্রকিউরমেন্ট ম্যানেজমেন্ট এবং প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট-বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থার সুপারিশ এসেছে।
চিহ্নিত হয়েছে যেসব সমস্যা
প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে একটি সমস্যার কথা প্রায় শোনা যায়। তা হলো যথাযথ সম্ভাব্যতার সমীক্ষা না করেই প্রকল্প গ্রহণ। গতকালের কর্মশালাতেও এই সমস্যাটি উঠে এসেছে। অংশীদারদের পরামর্শ না থাকা, ভৌত কাজের যথাযথ এবং স্ট্রাকচারাল ডিজাইন না থাকায় প্রকল্প বাস্তবায়ন পর্যায়ে সমস্যা দেখা দেয় বলে এতে জানানো হয়েছে।
এ ছাড়া প্রকল্পের সঠিক লজিক্যাল ফ্রেমওয়ার্ক প্রণয়ন না করা, প্রকল্প প্রাক্কলনে অযৌক্তিক ব্যয় নির্ধারণ, পরিবেশগত বিষয় বিবেচনায় না নেওয়া, মাস্টারপ্ল্যান অনুসরণ না করা, পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের ওপর অধিক মাত্রায় নির্ভরশীলতাকে সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
চিহ্নিত হওয়া অন্য সমস্যাগুলোর মধ্যে আছে—পূর্ণকালীন প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ না করা, একই ব্যক্তির একাধিক প্রকল্পে দায়িত্ব পালন, অভিজ্ঞ প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ না করা, ঘনঘন প্রকল্প পরিচালক বদলি, ভূমি অধিগ্রহণ এবং ইউটিলিটি সার্ভিস শিফটিং-সংক্রান্ত সমন্বয়হীনতা, প্রকল্পের এক্সটার্নাল অডিট নিয়মিত না হওয়া এবং বৈদেশিক সহায়তাপুষ্ট প্রকল্পের ক্ষেত্রে বিভিন্ন পর্যায়ে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার সম্মতি পেতে বিলম্ব হওয়া।
এ ছাড়া প্রকল্পের মেয়াদ নির্ধারণের ক্ষেত্রে স্বীকৃত মডেল ব্যবহার না করা, পিইসি বা ডিপিইসির সভায় আইএমইডির প্রতিনিধির মতামত যথাযথভাবে প্রতিফলন না হওয়া; প্রকল্পের ওয়ার্কপ্ল্যান এবং প্রকিউরমেন্ট যথাযথভাবে প্রণয়ন, সঠিকভাবে অনুসরণ ও মনিটরিং না করাকেও সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এর বাইরে ব্যয় না বাড়িয়ে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব যথাসময়ে না পাওয়া, আইএমইডির ই-পিএমআইএস সফটওয়্যারে প্রকল্পসংশ্লিষ্ট সব তথ্য যথাসময়ে আপলোড না করা, যথাসময়ে প্রকল্প সমাপ্তির প্রতিবেদন আইএমইডিতে দাখিল না করা, সমাপ্ত প্রকল্পের আওতায় সৃষ্ট অবকাঠামো ও সংগৃহীত যন্ত্রপাতি যথাযথভাবে সংরক্ষণ, রক্ষণাবেক্ষণ না করা, প্রকল্পবিশেষ জনবলের সংস্থান না থাকা এবং যথাসময়ে জনবল নিয়োগ না করাকে সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
সমাধানের পথ
প্রকল্পসংশ্লিষ্ট সমস্যাগুলো সমাধানে বেশ কিছু সুপারিশও উঠে এসেছে গতকালের উচ্চপর্যায়ের কর্মশালায়। বাস্তুগত বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা; মাস্টারপ্ল্যান অনুসরণ করে নির্মাণবিষয়ক ড্রয়িং ডিজাইন করা; সংস্থার সক্ষমতা বিবেচনা করে যুক্তিসংগতভাবে প্রকল্প গ্রহণ এবং প্রকল্পের সুনির্দিষ্ট কম্পোনেন্ট রাখা, প্রস্তাবিত প্রকল্প দলিলের সংযোজনীতে কী প্রক্রিয়ায় মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছে, তা তুলে ধরার সুপারিশ করা হয়েছে।
এ ছাড়া প্রকল্প সমাপ্তির তিন মাসের মধ্যে পিসিআর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগ কর্তৃক আইএমইডিতে পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করা, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের রাজস্ব বাজেটের অধীন প্রকল্পের আওতায় সৃষ্ট অবকাঠামো এবং সংগৃহীত যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং প্রকল্পের সুফল টেকসই করার লক্ষ্যে জনবল কাঠামো অনুমোদন ও প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগে সংস্থা কর্তৃক যথাসময়ে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ এসেছে। ভূমি অধিগ্রহণ এবং ইউটিলিটি সার্ভিস শিফটিং-সংক্রান্ত পৃথক প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের সুপারিশ করা হয়েছে।
প্রকল্প নিয়ে বিভিন্ন সমস্যা এবং সেসব সমাধানের আলোচনা-পর্যালোচনার পর কর্মশালায় প্রকল্প নেওয়ার আগে টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করে পরিকল্পনা বিভাগের গাইডলাইন মোতাবেক সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদন প্রস্তুতির ব্যবস্থা করার সুপারিশ করা হয়েছে। প্রকল্প পরিচালক নিয়োগসংক্রান্ত পরিপত্র অনুযায়ী পরিচালক নিয়োগ, যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে পিডি পুল গঠন করা এবং পুলভুক্ত কর্মকর্তাদের ফিন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট, প্রকিউরমেন্ট ম্যানেজমেন্ট ও প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট-বিষয়ক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ; প্রকল্প বাস্তবায়নে নিবিড় মনিটর নিশ্চিত করা; আইএমইডির ই-পিএমআইএস সফটওয়্যারে সব প্রকল্পের তথ্য হালনাগাদ নিশ্চিত করা; প্রকল্পের পিএলসি ও পিআইসি সভা করা ও সভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন মনিটরিং করা এবং প্রকল্প শেষ হওয়ার আগেই প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে টেকসইকরণের জন্য সাংগঠনিক কাঠামো এবং জনবল নিয়োগের বিষয়ে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের সুপারিশ উঠে এসেছে কর্মশালায়।
এতে অংশ নেওয়া একজন কর্মকর্তা বলেন, উচ্চপর্যায়ের কর্মশালা থেকে যেসব সুপারিশ এসেছে, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে সেগুলো বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সহযোগিতা নেবে তারা। প্রকল্পসংশ্লিষ্ট সমস্যার সমাধানে কোন কোন সরকারি দপ্তরকে কী কী কাজ করতে হবে, সেগুলো নির্ধারণ করে দিয়ে দ্রুত তা সমাধানের নির্দেশনা দেওয়া হবে।
দরপত্রের জটিলতার সুরাহা না হওয়ায় দেশে সরকারিভাবে বিতরণের জন্মনিয়ন্ত্রণের উপকরণের সংকট প্রকট হয়েছে। এতে পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের তথ্যমতে, তাদের কাছে জন্মনিয়ন্ত্রণের উপকরণের মাত্র তিন মাসের মজুত আছে।
২ ঘণ্টা আগেগাজীপুর সিটি করপোরেশনের (জিসিসি) নামে ভুয়া ব্যাংক হিসাব খুলে ২ কোটি ৬০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমসহ সাতজনের নামে মামলা করেছে দুদক। আজ মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
৬ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ড থেকে দেওয়া সরকারি কর্মচারীদের বিভিন্ন অনুদানের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডের প্রস্তাবের পর অর্থ বিভাগের সম্মতির পরিপ্রেক্ষিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবালয় শাখা অনুদানের হার পুনর্নির্ধারণ করে আজ মঙ্গলবার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
৬ ঘণ্টা আগেফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, আর্থিক অপরাধ, জুয়া, সফটওয়্যার আপডেটের ঘাটতি, ফাইল ট্রান্সফার প্রটোকলের দুর্বলতা, ডিডস আক্রমণ ও ডেটা সেন্টারের ঝুঁকি এখন ব্যাংকিং সেক্টরের বড় হুমকি।
৬ ঘণ্টা আগে