Ajker Patrika

সার্ভিস এরিয়ার কটেজ, মোটেল ইজারা দিয়ে আয়ের চিন্তা

তৌফিকুল ইসলাম, ঢাকা
আপডেট : ১০ জুলাই ২০২৫, ১০: ৩৪
সার্ভিস এরিয়ার কটেজ, মোটেল ইজারা দিয়ে আয়ের চিন্তা

পদ্মা সেতু ও কর্ণফুলী টানেলের সার্ভিস এরিয়ার ভিআইপি কটেজ-বাংলো, মোটেল, রেস্তোরাঁসহ সেবা খাতের বিভিন্ন বাণিজ্যিক স্থাপনা পরিচালনার জন্য ইজারা (লিজ) দিতে যাচ্ছে সেতু বিভাগ। এ জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্রও আহ্বান করা হয়েছে। পদ্মা সেতুর তিনটির মধ্যে ২ নম্বর সার্ভিস এরিয়া এবং কর্ণফুলী টানেলের পুরো সার্ভিস এরিয়া বার্ষিক ভিত্তিতে ইজারা দেওয়া হবে।

সেতু বিভাগ বলছে, এই দুই প্রকল্পের সার্ভিস এরিয়া সব স্থাপনাসহ পরিচালনার জন্য ইজারা দিলে সেতু বিভাগের আয় বাড়বে এবং রক্ষণাবেক্ষণ খরচ কমবে। আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন এসব সার্ভিস এরিয়া পর্যটনকেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে। কারণ, সেখানে কটেজ, বাংলো, মোটেল, কনভেনশন হল, কনফারেন্স রুম, রেস্তোরাঁ, ফুড কোর্ট, সুইমিং পুল, খেলাধূলার ব্যবস্থাসহ অবকাশ কাটানোর সব আয়োজনই রয়েছে। ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে নির্মিত চট্টগ্রামের কর্ণফুলী টানেল লোকসানি প্রকল্প। রক্ষণাবেক্ষণের খরচই উঠছে না। সার্ভিস এরিয়া বাণিজ্যিকভাবে পরিচালনার জন্য ইজারা দিলে কিছু অর্থ আসবে।

যোগাযোগ খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকল্পে স্থায়ী সার্ভিস এরিয়া করা ঠিক হয়নি। কারণ, এই জমি অধিগ্রহণে বিপুল অর্থ ব্যয় হয়েছে। কাজ শেষে জমি ফেরত দিলে প্রকল্প ব্যয় থেকে এই অর্থ সাশ্রয় হতো।

জানতে চাইলে সেতু বিভাগের সচিব মোহাম্মদ আবদুর রউফ পদ্মা সেতু ও কর্ণফুলী টানেলের সার্ভিস এরিয়া ইজারা দিতে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বানের বিষয়টি নিশ্চিত করে আজকের পত্রিকাকে বলেন, উন্মুক্ত দরপত্রে যে কেউ আবেদন করতে পারবে। এই ইজারা দেওয়া হচ্ছে পর্যটন খাতে ব্যবহারের জন্য। বিশেষ করে হোটেল, মোটেল, পর্যটনকেন্দ্র ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের জন্য। প্রায় ৩০ বছরের জন্য ইজারা দেওয়া হবে। ইজারা দিলে কিছু রাজস্ব আয় হবে এবং মানুষ এগুলো ব্যবহার করতে পারবে। সার্ভিস এরিয়ায় যেসব স্থাপনা রয়েছে, সেগুলো আন্তর্জাতিক মানের।

সেতু বিভাগের সূত্র জানায়, ২০২২ সালের ২৫ জুন পদ্মা সেতু চালু হয়। এই সেতুর মোট তিনটি সার্ভিস এরিয়ার মধ্যে ২ নম্বর সার্ভিস এরিয়া দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে সংযোগকারী গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অবস্থিত। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত দেশের প্রথম টানেল কর্ণফুলী টানেল উদ্বোধন করা হয় ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর। সেতু ও টানেল ব্যবহার করা হলেও সার্ভিস এরিয়ার কটেজ, মোটেলসহ অন্যান্য স্থাপনার ব্যবহার নেই। এ জন্য পদ্মা সেতুর একটি এবং টানেলের দুই প্রান্তের সার্ভিস এরিয়া বাণিজ্যিক কার্যক্রমের জন্য ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেতু বিভাগ। এ জন্য ১ জুলাই আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। আগ্রহীরা আগামী ২৭ আগস্ট পর্যন্ত দরপত্র জমা দিতে পারবেন।

সেতু বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ইজারা দেওয়ার মূল লক্ষ্য হলো সেতু ও টানেলের পাশে উচ্চমানের সেবা নিশ্চিত করা এবং সরকারি সম্পদ বাণিজ্যিকভাবে কাজে লাগানো। আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করায় স্বচ্ছতা ও প্রতিযোগিতার সুযোগ সৃষ্টি হবে।

সূত্র বলেছে, দরপত্রে শর্ত রয়েছে, নির্বাচিত ইজারাদারের কাছে ‘যেমন আছে’ ভিত্তিতে সার্ভিস এরিয়া হস্তান্তর করবে সেতু বিভাগ। ইজারাদার চুক্তি অনুযায়ী ওই সম্পত্তি পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ করবে এবং বার্ষিক ন্যূনতম ভাড়া চার কিস্তিতে পরিশোধ করবে। সার্ভিস এরিয়ায় রুম সার্ভিস, হাউসকিপিং, খাবার, ভ্রমণ, সম্মেলন, স্পা ইত্যাদি সেবা চালু করে ইজারাদার মুনাফা অর্জন করতে পারবে এবং এসব সেবার মূল্য নির্ধারণের অধিকার তার থাকবে। সেবার মান বজায় রাখতে পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করতে হবে। দর্শনার্থী বাড়াতে নতুন উদ্যোগ নিতে পারবে। তবে যেকোনো পরিবর্তনের জন্য ইজারাদাতার অনুমতি নিতে হবে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. শামসুল হক বলেন, নির্মাণ প্রকল্পের নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকায় এসব প্রকল্পে স্থায়ী সার্ভিস এরিয়া গড়ে তোলা উচিত হয়নি। সার্ভিস এরিয়ার জন্য জমি অধিগ্রহণে বড় অঙ্কের টাকা খরচ হয়েছে। অস্থায়ীভাবে জায়গা ব্যবহার করে কাজ শেষে ফেরত দিলে প্রকল্পের খরচ অনেক কম হতো। এই স্থায়ী সার্ভিস এরিয়া করার পেছনে কিছু ব্যক্তির সুবিধা জড়িত ছিল। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে এমন স্থায়ী অবকাঠামো করা ঠেকাতে সরকারের সংস্কারমূলক নীতিমালা তৈরি করা দরকার।

পদ্মা সেতুর সার্ভিস এরিয়া-২ পড়েছে শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে সেতুর দক্ষিণ অংশে। এটি পদ্মা নদীর পাশ ঘেঁষে এবং সেতু ও আঞ্চলিক মহাসড়কের সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত। ফলে অত্যাধুনিক সুবিধাসম্পন্ন এই সার্ভিস এরিয়ায় যাতায়াত সহজ।

সেতু বিভাগের সূত্র জানায়, ৫৩.৭৫ একর জমির ওপর নির্মিত এই সার্ভিস এরিয়ায় রয়েছে ৩০টি ভিআইপি ডুপ্লেক্স কটেজ, ৪০টি মোটেল মেস, কনভেনশন হল, অফিস ও কনফারেন্স সুবিধা, রেস্টুরেন্ট, দোকান, ফুড কোর্ট, সুইমিংপুল, শিশুদের পুল, স্টিম বাথ (নারী ও পুরুষের জন্য আলাদা), বাস্কেটবল ও টেনিস কোর্ট, ইনডোর গেমসের ব্যবস্থা, মসজিদ, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, পানি শোধনাগার, বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রসহ আধুনিক সুযোগ-সুবিধা। রয়েছে অভ্যন্তরীণ সড়ক, হাঁটার পথ, সবুজায়ন, ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও পারিপার্শ্বিক উন্নয়ন।

কর্ণফুলী টানেলের দুই প্রান্তে সার্ভিস এরিয়া ৭২ একর। সেখানে রয়েছে ৩০টি ভিআইপি বাংলো, ৪৮ ইউনিটের মোটেল মেস, কনভেনশন সেন্টার, রিসোর্ট রিসিপশন ভবন, রেস্তোরাঁ, দোকান, জিম, অফিস, কনফারেন্স রুম, সুইমিংপুল, খেলার মাঠ, টেনিস কোর্ট, বিনোদন এলাকা, থিয়েটার, জাদুঘর, মসজিদ, স্বাস্থ্যকেন্দ্রসহ অন্যান্য সুবিধা। এই সার্ভিস এরিয়া নির্মাণে খরচ হয় প্রায় ৪৫০ কোটি টাকা। টানেল প্রকল্পটি এখন লোকসানি। দিনে রক্ষণাবেক্ষণে ৩৭ লাখ টাকার বেশি খরচ হলেও টোল বাবদ আয় হচ্ছে ১০ লাখ টাকার কিছু বেশি।

দুই প্রকল্পের সার্ভিস এরিয়া ইজারার উদ্যোগের বিষয়ে অধ্যাপক শামসুল হক বলেন, সার্ভিস এরিয়া এখন জনগণের সম্পদ। তাই ইজারা দিয়ে আয় করার সুযোগ রয়েছে। তবে দরপত্রের প্রক্রিয়া যেন স্বচ্ছ ও সঠিকভাবে হয়, সেদিকে নজর দিতে হবে। কারণ, এসব জায়গায় অনিয়মের অভিযোগ থাকে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত