Ajker Patrika

দুই ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার ও প্রত্যর্পণে বাংলাদেশের অনুরোধের ব্যাখ্যা চায় মালয়েশিয়া

আপডেট : ১০ নভেম্বর ২০২৪, ২১: ১৩
বেস্টিনেট এসডিএন সফটওয়্যারের স্বত্বাধিকারী আমিনুল ইসলাম ও রিক্রুটিং এজেন্সি ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী রুহুল আমিন। ছবি: সংগৃহীত
বেস্টিনেট এসডিএন সফটওয়্যারের স্বত্বাধিকারী আমিনুল ইসলাম ও রিক্রুটিং এজেন্সি ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী রুহুল আমিন। ছবি: সংগৃহীত

মানব পাচারে জড়িত অভিযোগে দুই ব্যবসায়ীকে ফেরত চেয়ে বাংলাদেশের অনুরোধের ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছে মালয়েশিয়া সরকার। দেশটির সংবাদপত্র ফ্রি মালয়েশিয়া টুডের এক খবরে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এই দুই ব্যবসায়ীর একজন হচ্ছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মালয়েশীয় নাগরিক আমিনুল ইসলাম বিন আমিন নূর। যিনি বেস্টিনেট সেখানকার এসডিএন বিএইচডি নামে কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা।

আরেকজন আমিনুলের ব্যবসায়িক সহযোগী রুহুল আমিন স্বপন। তিনি ঢাকায় ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি জনশক্তি রপ্তানিকারক এজিন্সের মালিক। ১৯৯৭ সাল থেকে এই প্রতিষ্ঠান বিদেশে জনশক্তি রপ্তানি করে আসছে।

অর্থ পাচার, অভিবাসী শ্রমিকদের কাছ থেকে জোর করে অর্থ আদায় ও মানব পাচারের অভিযোগের তদন্তের অংশ হিসেবে তাঁদেরকে গ্রেপ্তার করে ফেরত পাঠাতে মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানিয়ে গত ২৪ অক্টোবর চিঠি দেয় বাংলাদেশ পুলিশ।

এ বিষয়ে এক অনুষ্ঠানের ফাঁকে ফ্রি মালয়েশিয়া টুডেকে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুশন বলেন, ‘শুধু তদন্তের অংশ হিসেবে আমিনুল ও রুহুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে নাকি আদালতে তাদেরকে অভিযুক্ত করা হবে, ঢাকার উচিত সেটি স্পষ্ট করা।”

ঢাকার প্রত্যর্পণের আবেদনে ‘কোনো কারণ উল্লেখ করা হয়নি’ জানিয়ে সাইফুদ্দিন বলেন, “(প্রত্যর্পণের) উদ্দেশ্য আগে আমাদেরকে নিশ্চিত করতে হবে। যদি ঢাকার উদ্দেশ্য তদন্তসংশ্লিষ্ট হয়, তাহলে সেজন্য দ্বিপক্ষীয় আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। আর ঢাকার উদ্দেশ্য যদি দুজনকে আদালতে অভিযুক্ত করা, তাহলে সেটাও স্পষ্ট করে বলা উচিত।’

মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ঢাকা যদি তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে, তবেই দুইজনকে ফেরত দেওয়া যেতে পারে। বাংলাদেশের প্রত্যর্পণ আবেদন নিয়ে মতামত জানতে অ্যাটর্নি জেনারেল এবং আইজিপির সঙ্গে আলোচনাও করেছেন।

তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়, আইজিপি বিষয়টি দেখবেন এবং বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন।’

এর আগে মার্কিন গণমাধ্যম ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, মুদ্রাপাচার, চাঁদাবাজি এবং অভিবাসী শ্রমিক পাচারের অভিযোগ তদন্তের অংশ হিসেবে দুইজনকে গ্রেপ্তার করে প্রত্যর্পণ করতে পুত্রজায়াকে লিখিতভাবে অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশের পুলিশ।

দুজনের বিষয়ে ২৪ অক্টোবর ইন্টারপোলের মাধ্যমে পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়, একটি ব্যবস্থার মাধ্যমে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ আদায় করে তাদের ‘শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের’ সুযোগ করে দিয়েছেন তারা। যদিও আমিনুল এবং রুহুল আমিন এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে আমিনুলের বেস্টিনেট থেকে সরবরাহ করা কমপিউটার সফটওয়্যার সাময়িকভাবে বন্ধ রাখারও অনুরোধ করেছে।

আমিনুলের বেস্টিনেট সম্প্রতি মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে ফরেন ওয়ার্কার্স সেন্ট্রালাইজড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের (এফডব্লিউসিএমএস) উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ছয় বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছে।

এফডব্লিউসিএমএসে বেস্টিনেটের ২৪ জন অননুমোদিত ব্যবহারকারী বিদেশি শ্রমিক নেওয়ার আবেদন অনুমোদনে জড়িত বলে গত জুলাইয়ে অভিযোগ করেছিল মালয়েশিয়ার পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি।

তাছাড়া ২০২২ সালের অডিটর-জেনারেলের প্রতিবেদনেও দেখা গেছে, বিদেশি কর্মী নিতে সরকার ও বেস্টিনেটের মধ্যে কোনো আনুষ্ঠানিক চুক্তি ছিল না। অন্যদিকে ঢাকার রিক্রুটিং এজেন্সি ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনালের মালিক রুহুল আমিন স্বপনের বিরুদ্ধে সরকারের উচ্চপর্যায়ে আঁতাত করে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর সিন্ডিকেট গড়ে তোলার অভিযোগ বেশ পুরনো।

তার বিরুদ্ধে ওঠা বিভিন্ন অভিযোগ অনুসন্ধানও করছে এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল-সিআইসি। এনবিআরের গোয়েন্দাদের ভাষ্য, এই কাজে মালয়েশিয়ায় তার বড় সহযোগী আনিমুল ইসলাম বিন আমিন নূর।

আমিনুলের সঙ্গে ‘সিন্ডিকেট’ করে সরকারি খরচের চেয়ে কয়েক গুণ বাড়তি টাকা নেওয়া, সঠিক কাজ না দেওয়াসহ মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠিয়ে অর্থপাচারের নানা অভিযোগে বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমের শিরোনামও হয়েছেন তিনি। মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠাতে আমিনুলের সঙ্গে কারসাজি করে ১০০টি এজেন্সির একটি চক্র বা সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছিলেন তিনি।

গোয়েন্দারা বলছেন, শ্রমিক পাঠানোর ক্ষেত্রে এই চক্রের জাল-জালিয়াতি, সঠিক কাজ না দেওয়া, নিবন্ধন ও মেডিকেলের নামে বাড়তি অর্থ নেওয়া এবং অর্থপাচারের মত অভিযোগের কারণে বাংলাদেশের জন্য মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজারের দরজা বারবার বন্ধ হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। সর্বশেষ গত মে মাসে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো বন্ধ হয় তাদের জন্য।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় জড়িত মোটরসাইকেল শনাক্ত, মালিক সন্দেহে একজন আটক

হাদির মস্তিষ্কের অবস্থা ‘খুবই খারাপ’, এখনো আশঙ্কাজনক: চিকিৎসক

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

সুদানে নিহত ও আহত শান্তিরক্ষীদের পরিচয় জানাল আইএসপিআর

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

এলাকার খবর
Loading...