Ajker Patrika

শূন্য পদ ফাঁকাই থেকে যাচ্ছে

শহীদুল ইসলাম, ঢাকা
আপডেট : ২৪ নভেম্বর ২০২১, ১২: ০০
শূন্য পদ ফাঁকাই থেকে যাচ্ছে

প্রতিবছর চাকরিপ্রার্থীর সংখ্যা বাড়লেও সে অনুযায়ী সরকারি চাকরিতে নতুন পদ বাড়ছে না। করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে গত এক বছরে নতুন পদ সৃষ্টির সংখ্যা ৬০ শতাংশ কমেছে। অন্যদিকে সরকারি চাকরিতে এখনো তিন লাখ ৮০ হাজার পদ শূন্য। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ২০২০ সালে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে নতুন পদ সৃষ্টির প্রস্তাব কম পাওয়া গেছে। এ জন্য করোনাকে কারণ হিসেবে দেখিয়েছেন তাঁরা।

এদিকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সবশেষ হিসাব অনুযায়ী এখনো সরকারি চাকরির ৩ লাখ ৮০ হাজার ৯৫৫টি পদ শূন্য রয়েছে, যা মোট পদের ২০ দশমিক ২০ শতাংশ। সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য বাদে বেসামরিক প্রশাসনের ১৮ লাখ ৮৫ হাজার ৮৬৮টি অনুমোদিত পদের বিপরীতে ১৫ লাখ ৪ হাজার ৯১৩ জন কর্মরত আছেন।

জনপ্রশাসন সচিব কে এম আলী আজম বলেছেন, ‘সরকারি চাকরির শূন্য পদগুলো দ্রুত পূরণে সব মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে সরকারি চাকরির নিয়োগ প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। শূন্য পদগুলো আমরা দ্রুত পূরণের চেষ্টা করব।’

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে নতুন পদ সৃষ্টিতে অনেক সময় লেগে যায়। এ ছাড়া মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো শূন্য পদ পূরণে পদক্ষেপ নিতে ঢিলেমি করায় সরকারি চাকরিতে শূন্য পদের সংখ্যা কমিয়ে আনা যাচ্ছে না।

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অফিস–আদালতের সংখ্যা বাড়ছে, কর্মচারীর সংখ্যা বাড়ছে, কাজের পরিধি বাড়ছে, অর্গানোগ্রাম পরিবর্তন হচ্ছে, নতুন নতুন পদ সৃষ্টি হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা হচ্ছে যে পদগুলো শূন্য রয়েছে, তা দ্রুত পূরণ করা, আমরা সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি। সরকার সাধ্যমতো চেষ্টা করছে, নতুন চাকরির ক্ষেত্র তৈরি করছে।’

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. লাইসুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ২০২০ সালে ৩৫ হাজার ৭৬৯টি নতুন পদ সৃষ্টিতে সম্মতি দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ২০১৯ সালে দিয়েছিল ৮৭ হাজার ৯৯৩টির। এই হিসাবে ২০১৯ সাল অপেক্ষা গতবার নতুন পদ সৃষ্টিতে সম্মতির হার ৫৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ কমেছে। কেন নতুন পদ সৃষ্টির সংখ্যা কমল–এ প্রশ্নে লাইসুর রহমান বলেন, ‘আমরা যতগুলো প্রস্তাব পেয়েছিলাম, তা যাচাই করে সম্মতি দিয়েছি। করোনার একটা প্রভাব আছে, অনেক দিন অফিস বন্ধ ছিল। ২০২০ সালে প্রস্তাব কম পাওয়া গিয়েছিল।’ 

নতুন পদ সৃষ্টির জন্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে প্রথমে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠাতে হয়। এরপর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় তা যাচাই করে সম্মতি দিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগে পাঠায়। এরপর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সম্মতিপত্রসহ পদ সৃষ্টির প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হয়। অর্থ মন্ত্রণালয় সেই প্রস্তাব অনুমোদন করলে তা প্রশাসনিক উন্নয়ন–সংক্রান্ত সচিব কমিটিতে পাঠাতে হয়।

ক্যাডারভুক্ত পদ, মন্ত্রণালয়ের সব পদ ও বেতন কাঠামোর ১, ২ ও ৩ নম্বর গ্রেডভুক্ত পদের জন্য নতুন পদ সৃষ্টিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, প্রশাসনিক উন্নয়ন–সংক্রান্ত সচিব কমিটি ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন নিতে হয়। এসব অনুমোদন পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ নতুন পদ সৃষ্টি করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এরপর সেসব পদে নিয়োগ দেওয়া যায়।

জানা গেছে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় যতগুলো নতুন পদ সৃষ্টির প্রস্তাব অনুমোদন করে, অর্থ মন্ত্রণালয় তাতে কাটছাঁট করে। একজন ঊর্ধ্বতন বলেন, ‘জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় যে বছর যতটি পদ সৃষ্টির প্রস্তাবে সম্মতি দেয়, অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়ার পর সেই সংখ্যায় আর মিল থাকে না।’ 
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সচিব ফেরদৌস জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, সরকারি-বেসরকারি উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো থেকে এখন প্রতিবছর প্রায় সাড়ে তিন লাখ শিক্ষার্থী স্নাতক শেষ করে চাকরির বাজারে ঢুকছেন। এ ছাড়া স্নাতক শেষ করা যাঁরা বিভিন্ন ধাপে পড়াশোনা ছেড়েছেন, তাঁরাও যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরির বাজারে প্রবেশ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত