Ajker Patrika

ছোট্ট ছেলেটির আজ জন্মদিন

জাহীদ রেজা নূর, ঢাকা
ছোট্ট ছেলেটির আজ জন্মদিন

শেখ রাসেলের জন্মদিন আজ। ১৯৬৪ সালের ১৮ অক্টোবর ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রোডের বাড়িতেই তার জন্ম হয়। বঙ্গবন্ধুর বাড়িটি তখনো পুরোপুরি তৈরি হয়নি। একটু একটু করে বাড়ির কাজ চলছে। নিচতলার উত্তর-পূর্বদিকের একটা ঘরে থাকতেন শেখ হাসিনা আর শেখ কামাল। সেই ঘরেই জন্ম নিয়েছিল শেখ রাসেল। বঙ্গবন্ধু তখন ঢাকায় নেই। মিস ফাতেমা জিন্নাহর পক্ষে প্রচার চালাতে গেছেন চট্টগ্রামে। ল্যান্ডফোনেই তাঁকে খবর দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছিল।রাসেলের জন্ম হতে পারত কোনো ক্লিনিকে বা হাসপাতালে।

কিন্তু বেগম মুজিব একেবারেই চাননি বাড়ির বাইরে যেতে। তিনি বাড়িতে না থাকলে ছোট ছোট চার ছেলেমেয়েকে কে দেখে রাখবে? তাই একজন ডাক্তার আর নার্স এসেছিলেন এই ৩২ নম্বরের বাড়িতে। রাসেলের বড় ফুফু, মেজ ফুফু চলে এসেছিলেন। আরও ছিলেন খোকা মামা। অনেক রাত। শেখ জামাল আর শেখ রেহানার চোখ ঘুমে ঢুলুঢুলু। ঠিক এ সময় মেজ ফুফু ঘর থেকে বেরিয়ে জানালেন একটা ছেলে হয়েছে! সবার মন আনন্দে ভরে গেল!
২.
রাসেল যখন একেবারে ছোট, সে সময়ই তো ছয় দফা দিলেন বঙ্গবন্ধু। তার কিছুদিন পরেই বঙ্গবন্ধুকে জেলে পুরল পাকিস্তানি শাসকেরা। রাসেলের বয়স তখন দেড় বছরের মতো। সবাই রাসেলকে আদর করে; কিন্তু রাসেল তো বাবার আদর পায় না। আর ও এত ছোট ছিল যে, সবকিছু বোঝার বয়সও হয়নি। তাই ও বুঝতেও পারত না ওর বাবা যেখানে থাকে সেটা জেলখানা। কেন থাকে সেখানে, সেটাও জানা নেই ওর।

বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, ‘১৮ মাসের রাসেল জেল অফিসে এসে একটুও হাসে না যে-পর্যন্ত আমাকে না দেখে।’ বঙ্গবন্ধুকে দূর থেকে দেখলেই ‘আব্বা, আব্বা’ বলে চিৎকার করত। গলা জড়িয়ে ধরত। জেলখানার নাম দিয়েছিল ‘আব্বার বাড়ি’। কথাটা তো সত্যি। জীবনের একটা বড় সময় বঙ্গবন্ধু কাটিয়েছেন জেলখানায়।

অন্যদের সঙ্গে রাসেলও বঙ্গবন্ধুকে দেখতে কারাগারে যেত। মূলত শেখ হাসিনার কোলে করেই আসত।রাসেল বঙ্গবন্ধুর হৃদয়জুড়ে ছিল। ‘কারাগারের রোজনামচা’য় অন্তত ১৫ বার রাসেল-প্রসঙ্গ আছে।

১৯৬৭ সালের ২৭-২৮ মে যে ভুক্তি আছে, তাতে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, ‘রাসেল আমাকে পড়ে শোনাল, আড়াই বছরের ছেলে আমাকে বলছে, ৬ দফা মানতে হবে, সংগ্রাম সংগ্রাম চলবে চলবে।’

কোথা থেকে এসব শিখল, জিজ্ঞেস করলে বেগম মুজিব উত্তর দিলেন, ‘বাড়িতে সভা হলে কর্মীরা বলে।’ সেখান থেকেই শিখে নিয়েছে।

 ৩. 
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আর বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের পাঁচ ছেলেমেয়ের মধ্যে রাসেল সবার ছোট। বঙ্গবন্ধুর খুব প্রিয় ছিলেন বার্ট্রান্ড রাসেল। রাসেলের বই পড়ে তিনি বেগম মুজিবকে ব্যাখ্যা করে শোনাতেন। রাসেলের দার্শনিক আলোচনায় বেগম মুজিব খুবই আকৃষ্ট হন। তাই ছেলের নাম রাখেন রাসেল। ছোট্ট রাসেল আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে। ওকে বিছানায় শুইয়ে রেখেই সংসারের কাজ করতেন বেগম মুজিব। স্কুল বন্ধ থাকলে শেখ হাসিনা এসে বসতেন ছোট্ট ভাইটার পাশে। রাসেল তার ছোট ছোট হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরত বড় বোনের বেণি। লম্বা চুলের বেণিটা এগিয়ে দিতেন শেখ হাসিনা, রাসেল তা ধরে হাসত। নাড়াচাড়া করত। খুব মজা পেত বেণি নিয়ে খেলতে।

একটা ক্যামেরা ছিল। জন্মের প্রথম দিন থেকেই শেখ রাসেলের ছবি তোলা হয়েছে। জন্মের দিন, প্রথম মাস, প্রতি তিন মাস, প্রতি ছয় মাসে ছবি তুলে ভরে ফেলা হয়েছিল অ্যালবাম। যেভাবে বড় হচ্ছে রাসেল, তা ছিল সেই ছবিগুলোয়। কিন্তু সেই ছবিগুলো আর থাকেনি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে পাকিস্তানি বাহিনী বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে লুটতরাজ চালায়, অ্যালবামটিও তারা লুট করে নেয়। তাই একেবারে ছোট্ট রাসেলের খুব বেশি ছবি এখন আর দেখা যায় না।
৪.
দেশ স্বাধীন হলো ১৬ ডিসেম্বর। বেগম মুজিব মুক্তি পেলেন ১৭ ডিসেম্বর। চোখে পানি, মুখে হাসি নিয়ে কাটতে থাকল দিনগুলো। রাসেল খুবই উল্লসিত হলো।
বঙ্গবন্ধু ফিরে এলেন ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি। রাসেলকে কোলে দিয়ে রাসেলের দাদা মানে বঙ্গবন্ধুর বাবা গিয়েছিলেন বিমানবন্দরে। লাখো মানুষের ঢল তখন বিমানবন্দরে। দেশে ফেরার পর বঙ্গবন্ধুকে একেবারে দূরে যেতে দিতে চাইত না রাসেল। বঙ্গবন্ধু দুপুরে গণভবনেই খেতেন। বিকেলে হাঁটতেন। রাসেল প্রতিদিন বিকেলে গণভবনে যেত বাবার কাছে। তার সাইকেলটাও আসত সঙ্গে। রাসেলের মাছ ধরার খুব শখ ছিল। মাছ ধরে আবার ছেড়ে দিত। একবার নাটোরের উত্তরা গণভবনে যাওয়ার পর সেখানে সারা দিন মাছ ধরা নিয়েই ব্যস্ত ছিল রাসেল।
৫.
 ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে হত্যা করা হয় বঙ্গবন্ধুকে। বাংলাদেশেরই একদল কুলাঙ্গার এই হত্যাযজ্ঞে অংশ নেয়। শেখ কামালকে হত্যা করার পর বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। এরপর বেগম মুজিবসহ পরিবারের সবাইকে হত্যা করা হয়। বিদেশে ছিলেন বলে বেঁচে যান শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। শেখ রাসেলকে নিচতলায় এনে লাইনে দাঁড় করানো হয়। মায়ের কাছে যাব—বলে শেখ রাসেল। রাসেলকে সেখানে নিয়ে গিয়ে হত্যা করা হয়।
৬.
আজ শেখ রাসেলের জন্মদিন। এই শিশুটিকে হত্যা করেছিল কুলাঙ্গারেরা। পরিবারের সর্বকনিষ্ঠ সন্তানটি ছিল বড় আদরের। ওর শৈশবের বেশির ভাগ সময় জেলে ছিলেন বলে বঙ্গবন্ধু রাসেলকে সব সময় কাছে রাখতে চাইতেন। সে কারণেই কি না, কে জানে, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গেই অচেনা পথে পাড়ি দিল শেখ রাসেল।

কর্মসূচি: শেখ রাসেলের জন্মদিন উপলক্ষে দুই দিনের কর্মসূচি পালন করবে আওয়ামী লীগ। দলটির দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘শেখ রাসেল দিবস’ উপলক্ষে আজ সকাল ৮টায় বনানী কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত শহীদ শেখ রাসেলসহ ১৫ আগস্ট নিহত সব শহীদের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, ফাতেহা পাঠ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল হবে।

আগামীকাল মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টায় শেখ রাসেল দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভা করবে দলটি। সভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হবেন।

শেখ রাসেল দিবস উপলক্ষে মন্ত্রণালয়গুলো পৃথক পৃথক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে শেখ রাসেলের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা, আলোচনা সভা।

এদিকে দিবসটি উপলক্ষে গতকাল রোববার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, প্রিয় বঙ্গবন্ধু গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করে যুবলীগ।

শেখ রাসেলের জন্মদিন উপলক্ষে ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি (ইউল্যাব) স্কুল অ্যান্ড কলেজে আলোচনা সভা ও শিক্ষার্থীদের মাঝে মেধাবৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপকমিটি। যাতে প্রধান অতিথি ছিলেন দলীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নিজের প্রস্রাব পান করে ‘আশিকি’ অভিনেত্রী অনু আগারওয়াল বললেন, ‘আহা অমৃত’

মে. জে. ফজলুরের সেভেন সিস্টার্স দখলের মন্তব্য সমর্থন করে না সরকার: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে স্টারলিংকের প্রস্তাবিত কার্যক্রমের বিস্তারিত চায় ভারত

নির্দেশনা মানেননি পাইলট, মদিনা-ঢাকা ফ্লাইটকে নামতে হলো সিলেটে

গায়ে কেরোসিন ঢেলে কলেজছাত্রীর আত্মহনন, পলাতক ইমাম গ্রেপ্তার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত