Ajker Patrika

দ্বাদশ সংসদ: সবচেয়ে কম দলের প্রতিনিধিত্ব ও সর্বাধিক স্বতন্ত্রের রেকর্ড

গোলাম ওয়াদুদ, ঢাকা
আপডেট : ০৯ জানুয়ারি ২০২৪, ০০: ২১
দ্বাদশ সংসদ: সবচেয়ে কম দলের প্রতিনিধিত্ব ও সর্বাধিক স্বতন্ত্রের রেকর্ড

গতকাল ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়ে গেল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থবারের মতো নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করেছে। ২৯৯ আসনের মধ্য এককভাবে আওয়ামী লীগ পেয়েছে ২২২টি আসন। সরকার গঠন করা এখন সময়ের ব্যাপার। এ নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দলসহ বেশ কিছু দল অংশ নেয়নি, তবে আওয়ামী লীগ ও তাদের মিত্র ২৮টি দল নির্বাচনে অংশ নেয়। ২৮ দলের মধ্যে ২৩টি নিবন্ধিত দলের কেউই এই নির্বাচনে একটি আসনও পায়নি। 

নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া ২৮ দলের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২২২, জাতীয় পার্টি ১১, জাসদ ১, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি ১, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি ১ এবং স্বতন্ত্র পেয়েছে ৬২টি আসন। বাকি ২৩ দলের বেশির ভাগই জামানত হারিয়েছেন। নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৪৪। এবার সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছে মাত্র ৫টি দল।  

এবারের নির্বাচনে এমন ভরাডুবির পর সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, ‘৭ জানুয়ারির নির্বাচন সরকারের নিয়ন্ত্রণে হয়েছে। সরকার যেখানে নিরপেক্ষ করতে চেয়েছে, সেখানে নিরপেক্ষ হয়েছে। সরকার যেখানে যাকে জেতাতে চেয়েছে, সেটিই করেছে। এটা নিয়েই আমরা সব সময় আতঙ্কিত ছিলাম।’ 

নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে কাদের বলেন, ‘আমার বিশ্বাস, এই নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। আমাদের লোককে মেরে-কেটে বের করে দেওয়া হয়েছে। কোনো ধরনের প্রোটেকশন পাইনি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন, ইলেকশন কমিশন, রিটার্নিং অফিসার কোনোখান থেকে সুযোগ পাইনি সুষ্ঠুভাবে ভোট করার। আমরা অসহায় হয়ে গেছি। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এটা একটা নতুন ধরনের ডাইমেনশন দেখা গেল।’ 

তবে, নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে। এই নির্বাচনে ৪১ শতাংশের কিছু বেশি ভোট পড়েছে বলেও কমিশন জানিয়েছে। 

১৯৯১ সালে প্রথম গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরে আসে নির্বাচন। এরপর থেকে আটটি সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। যার মধ্যে পাঁচটি সংসদে নেতৃত্ব পায় আওয়ামী লীগ ও তিনটি সংসদের নেতৃত্বে বিএনপি। 

১৯৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয় ৭৫টি দল। যাদের মধ্যে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করে ১২টি দল। বিএনপি ১৪০ আসনে জয় লাভ করে। আওয়ামী লীগ ৮৮, জামায়াতে ইসলামী ১৮, জাতীয় পার্টি ৩৫, বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ ৫, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি ৫, ইসলামী ঐক্যজোট, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (মুজাফফর), গণতন্ত্রী পার্টি, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (সিরাজ), বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি একটি করে আসন পায়, স্বতন্ত্র থেকে দুজন নির্বাচিত হয়। ওই নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৫৫ দশমিক ৪ শতাংশ। 

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের সঙ্গে খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা১৯৯১ সালের সংবাদপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, জয়ের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ বেশ আত্মবিশ্বাসী ছিল। নির্বাচনী প্রচারণার সময় শেখ হাসিনা বগুড়ায় এক জনসভায় বলেছিলেন, ‘আওয়ামী লীগ বেশি কথা বলে না, সেমি-ফাইনাল বা ফাইনাল গেমের হুমকিও দেয় না। আওয়ামী লীগ যা করতে পারে কেবল সেটাই বলে।’ 

খুলনায় এক নির্বাচনী সমাবেশে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘দেশে-বিদেশে রব উঠিয়াছে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাইবে।’ 

সেই সময় ইত্তেফাক পত্রিকার খবরে বলা হয়েছিল খালেদা জিয়া আওয়ামী লীগকে টার্গেট করে বলেন, ‘আমাদের হাতে স্বাধীনতার পতাকা, অন্যদের হাতে গোলামির জিঞ্জির।’ 

ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯৬ সালে। তবে সেই সংসদ বেশি দিন টেকেনি। কারণ সে নির্বাচন আওয়ামী লীগসহ অনেকেই বয়কট করে। বিএনপির একতরফা সেই নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল খুবই নগণ্য। নির্বাচনে পর তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি একেএম সাদেক বলেছিলেন, ‘কত শতাংশ মানুষ ভোট দিয়েছে সেটি বড় কথা নয়। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে সেটাই আসল কথা।’ 

সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯৬ সালে জুনে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হওয়া সেই নির্বাচনে অংশ নেয় ৮১টি দল। যাদের মধ্যে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করে ছয়টি দল। আওয়ামী লীগ ১৪৬টি আসনে জয় পায়। বিএনপি ১১৬, জাপা ৩২, জামায়াতে ইসলামী ৩, ইসলামী ঐক্যজোট, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (রব) একটি করে আসন পায় এবং স্বতন্ত্র থেকে একজন নির্বাচিত হয়। 

সরকার গঠন করার জন্য কোনো দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। শেষ পর্যন্ত জাতীয় পার্টির সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। এর মাধ্যমে ২১ বছর পরে ক্ষমতার ফেরে দলটি। 

তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার আবু হেনা বলেছিলেন, ‘নির্বাচনে ৭৩ শতাংশ ভোট পড়েছে এবং নির্বাচনে কারচুপির কোনো সুযোগ ছিল না।’ 

অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয় ২০০১ সালে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হওয়া সেই নির্বাচনে ৫৪টি দল অংশ নেয়। সংসদে প্রতিনিধিত্ব করে আটটি দল। তাদের মধ্যে বিএনপি ১৯৩টি আসন পেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। আওয়ামী লীগ ৬২, জামায়াতে ইসলামী ১৪, জাপা ১৪, বিজেপি ৪, ইসলামী ঐক্যজোট ২, জেপি (মঞ্জু), কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ একটি করে আসন পায়। স্বতন্ত্র থেকে ছয়জন নির্বাচিত হয়। 

২০০১ সালের নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘স্থূল কারচুপি করে জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। জনগণ নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছে, আমার মেনে নেওয়ার তো প্রশ্নই আসে না।’ 

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয় ২০০৮ সালে। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ভূমিধস জয় পায়। ৩৯ দল এই নির্বাচনে অংশ নেয়। সংসদে প্রতিনিধিত্ব করে আটটি দল। আওয়ামী লীগ ২৩০ আসন পেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। বিএনপি ৩০, জাপা ২৭, জাসদ ৩, ওয়ার্কার্স পার্টি ও জামায়াতে ইসলামী ২, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি ও বিজেপি একটি করে আসন পায় এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী একটি আসন পান। 

নির্বাচন কমিশনের হিসেব অনুযায়ী ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে ৮৬ দশমিক ২৯ শতাংশ ভোট পড়েছে। বিপুল ভোটার অংশ নিয়েছিল সেই ভোটে। কারণ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছিল, সে জন্য ভোটকেন্দ্রগুলোতে কোনো রাজনৈতিক প্রভাব চোখে পড়েনি। 

একই অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনাদশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচন বিএনপি বয়কট করায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়  আওয়ামী লীগ ১৫৩ আসনে জয় লাভ করে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। ওই নির্বাচনে সাতটি দল অংশ নিয়েছিল। সংসদে প্রতিনিধিত্ব করে সাতটি দলই। 

নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পায় ২৩৪ আসন, জাতীয় পার্টি ৩৪,     বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ৬,     জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল ৫, জাতীয় পার্টি (মঞ্জু) ২, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন ২, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট ১টি এবং স্বতন্ত্র ১৫টি আসনে জয় লাভ করে। 

২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২৮টি দল অংশ নেয়। সংসদে প্রতিনিধিত্ব করে নয়টি দল। আওয়ামী লীগ ২৫৮ আসন পেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। বিএনপি ৬, জাপা ২২, ওয়ার্কার্স পার্টি ৩, গণফোরাম, জাসদ, বিকল্পধারা বাংলাদেশ দুটি করে, বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন, জেপি একটি করে ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৩টি আসন পায়। 

১৯৯১ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত মোট ৯টি নির্বাচন হয়েছে। এসব নির্বাচনের মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদে প্রতিনিধিত্ব সবচেয়ে কম। মাত্র পাঁচটি রাজনৈতিক দল প্রতিনিধিত্ব করবে। এছাড়া এবারের নির্বাচনে স্বতন্ত্র রেকর্ড পরিমাণ জয় লাভ করেছে। ৬২টি আসনে স্বতন্ত্র জয় পেয়েছে। আগের আটটি সংসদে মোট ২৮ জন স্বতন্ত্র জয়ী হয়েছিল। বিগত আটটি সংসদে যতগুলো স্বতন্ত্র জয়ী হয়েছিল এবার এক সংসদ নির্বাচনে দ্বিগুণেরও বেশি। 

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ। তবে বিরোধী দল কে হবে—সে বিষয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘রেজাল্ট অফিশিয়ালি ঘোষণার পর বিরোধী দল কারা সে বিষয়ে জানা যাবে। অলরেডি বিরোধী দল জাতীয় পার্টির তো অনেকেই জিতেছেন, ১৪ দলেরও দুজনের মতো জিতেছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পদায়নের জন্য রাজনৈতিক পদলেহন করবেন না—বিদায়ী ভাষণে বিচারকদের প্রধান বিচারপতি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ। ফাইল ছবি
প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ। ফাইল ছবি

প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছেন, পছন্দসই পদায়নের জন্য রাজনৈতিক পদলেহন পরিহার করতে হবে। মনে রাখতে হবে, আইন বৃহত্তর রাজনীতির একটা অঙ্গ হলেও বিচারকদের রাজনীতির উর্ধ্বে ওঠার প্রয়াস রপ্ত করতে হয়। কেবল ক্ষমতাবান শাসকশ্রেণির পক্ষে প্রয়োজনীয় পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার দায়িত্ব নিলে বিচার বিভাগের আলাদা কোনো অস্তিত্বেরই প্রয়োজন নেই। সে কাজের জন্য নির্বাহী বিভাগ ও পুলিশই যথেষ্ট। রাষ্ট্রের সাংবিধানিক ভিত্তি যে আদর্শকেই ধারণ করে গড়ে ওঠুক না কেন, বিচারকদের সুনীতি ও সুবিবেচনা বজায় রেখে কাজ করতে হবে।

সুপ্রিম কোর্ট অডিটরিয়ামে আজ রোববার জেলা ও মহানগর দায়রা জজ এবং চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটদের উদ্দেশে দেওয়া বিদায়ী ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন আপিল বিভাগের বিচারপতি, অ্যাটর্নি জেনারেল, বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রির কর্মকর্তারা।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে গত বছরের ১১ আগস্ট ২৫তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব নেন রেফাত আহমেদ। অবসর নেওয়ার আগে আজ বিদায়ী ভাষণ দেন তিনি। ২৭ ডিসেম্বর অবসরে যাবেন রেফাত আহমেদ।

প্রধান বিচারপতি বিচারকদের উদ্দেশে বলেন, অসৎ ও অসাধু বিচারকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। বিচারকদের দ্বারা সৃষ্ট যাবতীয় অন্যায়ের জন্য এখন থেকে অন্যের দিকে অঙ্গুলিনির্দেশ বন্ধ করতে হবে। জনগণের জন্য সংক্ষিপ্ত সময়ে সুবিচার নিশ্চিত করতে শতভাগ দায়িত্ব পালন করতে হবে। শুনানিকালে কোনো বিশেষ পদবিধারী ব্যক্তি বা ক্ষমতাবান পক্ষকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়া বিচারকের দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত নয়।

সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, ‘এই পৃথক সচিবালয় (সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়) প্রতিষ্ঠার কোনো স্বার্থকতা নেই, যদি না আমরা ব্যক্তিগত অসততার ব্যাপারে সতর্ক থাকি। একটি স্বাধীন সচিবালয় কেবল শুরু, সর্বশেষ উদ্দেশ্য নয়। আপনাদের উচিত, সততা আর যোগ্যতার ব্যাপারে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হওয়া। অনুপার্জিত অর্থের বাসনা, অন্যায্য বিলাসী জীবন এবং অসংগত ক্ষমতার প্রতিপত্তি যদি আমাদের মনকে কলুষিত করে রাখে, তাহলে পৃথিবীর কোনো আইনি বিধানই আমাদের সামষ্টিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে পারবে না।’

বিচারকদের উদ্দেশে রেফাত আহমেদ আরও বলেন, ‘উন্নত জীবনমান ও কর্মপরিবেশের প্রতি প্রত্যাশা কখনোই ব্যক্তিগত ভোগ, আত্মতুষ্টি কিংবা সামাজিক মর্যাদা অর্জনের লক্ষ্য হতে পারে না। এর অন্তরে থাকতে হবে বিচারিক সক্ষমতার উন্নয়ন, জ্ঞানচর্চার সম্প্রসারণ এবং উচ্চমানের কর্মদক্ষতা অর্জনের সৎ প্রেরণা। এটি অনস্বীকার্য যে, বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থায় চাকরিকালীন প্রশিক্ষণ সংস্কৃতি এখনো কাঙ্ক্ষিত মানে পৌঁছায়নি। প্রায়োগিক প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য আমরা এখনো একটি আধুনিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পারিনি। তবে বিদ্যমান সুযোগের ন্যূনতম সদ্ব্যবহারের ক্ষেত্রেও বিচারকদের বড় অংশের অনীহা ও কার্পণ্য পরিলক্ষিত হয়। তাই আপনাদের প্রতি আমার অনুরোধ—জ্ঞান অর্জন ও পাঠাভ্যাসকে আপনারা জীবনের পরম দায় হিসেবে নেবেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

চোরাগোপ্তা হামলার শঙ্কা থাকলেও ভোট নিয়ে শঙ্কা দেখছে না ইসি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন নির্বাচন কমিশনার মো. সানাউল্লাহ। ছবি: বাসস
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন নির্বাচন কমিশনার মো. সানাউল্লাহ। ছবি: বাসস

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার পরদিন ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনার পর আরও চোরাগোপ্তা হামলার শঙ্কা দেখছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে এতে নির্বাচন নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই বলে জানানো হয়েছে।

আজ রোববার (১৪ ডিসেম্বর) আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।

সানাউল্লাহ বলেন, ‘আজকে একটা বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মূলত আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী আইন প্রয়োগকারী বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের ডেকেছিলাম। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। এতে তফসিল ঘোষণার পর থেকে এই পর্যন্ত উদ্ভূত বিভিন্ন পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছি। সামনের আমাদের কার্যক্রম এবং কৌশল কী হওয়া উচিত—সেগুলো নিয়ে আলোচনা করেছি এবং তাঁদের বিভিন্ন মত শুনেছি।’

সানাউল্লাহ আরও বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময় একটা ঘটনা, যেটা আমাদের সবার সবাইকে উদ্বিগ্ন করেছে। শরিফ ওসমান হাদির ওপরে চোরাগোপ্তা হামলা। সেটা নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে বিস্তারিত বলছি না। সেখানকার আরও কিছু বিষয় সম্বন্ধে আমরা অবহিত হয়েছে। যেগুলোর সাথে নির্বাচন এবং নির্বাচন কমিশনের স্বার্থ জড়িত।’

সানাউল্লাহ বলেন, ‘এখানে কয়েকটা বিষয় উঠে এসেছে যে ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হচ্ছে সন্দেহভাজন হিসেবে। তিনি বেশ কিছুদিন ধরেই একটা সখ্যতা গড়ে তুলে অত্যন্ত কাছে গিয়েছে। দ্বিতীয়ত হচ্ছে যে তার একটা অতীত আছে, পেছনে তার একটা রাজনৈতিক ইন্টারেসিডেন্স (মধ্যস্থতা বা হস্তক্ষেপ) আছে এবং তার একটা ক্রিমিনাল রেকর্ড আছে। সেটা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছ থেকে আমরা জানতে পারলাম যে রেবেল হান্ট বিশেষ করে—এক শুরু হওয়ার পর থেকে যেসব সন্ত্রাসীদের অ্যারেস্ট করা হয়েছিল, তাদের একটা বড় সংখ্যা ইতিমধ্যে জামিন পেয়ে গেছে এবং তারা সমাজে বিরাজ করছে। এটা নিয়ে আমাদের কী করণীয়—সেটা নিয়ে আমরা কথা বলেছি।’

দেশে চোরাগোপ্তা হামলার আশঙ্কাকে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না জানিয়ে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘সামনেও যে এটা সম্ভাবনা নাই, তা-ও বলছি না। আজকের মূল উদ্দেশ্য ছিল যাতে করে এই ধরনের হামলার ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে বা এগুলো যাতে কঠোর হস্তে দমন করা হয় ... নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে মেসেজ ইজ ভেরি ক্লিয়ার। নির্বাচন নিয়ে কোনো আশঙ্কা নাই।’

প্রার্থীদের বৈধ অস্ত্র ও লাইসেন্স দেওয়ার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্য নজরে আনলে এই নির্বাচন কমিশনার বলে, ‘আমার সাথে এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। কমিশনের সাথে কোনো আলোচনা হয়েছে বলে আমার জানা নাই। উনি কী মন্তব্য করেছেন, কোন প্রেক্ষাপটে করেছেন, আমি যদি জানি পরে আমি আলোকপাত করতে পারব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাদির ছবি আঁকা হেলমেট পরে স্কাই ডাইভিং করবেন আশিক চৌধুরী

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির ছবি আঁকা হেলমেট হাতে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেজ
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির ছবি আঁকা হেলমেট হাতে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেজ

মহান বিজয় দিবসের ৫৪তম বর্ষপূর্তি উদ্‌যাপন উপলক্ষে ৫৪টি জাতীয় পতাকা উড়িয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়তে যাচ্ছেন বাংলাদেশের ৫৪ জন প্যারাট্রুপার। এই দলে থাকবেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী। গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান বিন হাদির ছবি আঁকা হেলমেট পরে স্কাই ডাইভিং করবেন তিনি।

আজ রোববার প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে এই তথ্য জানানো হয়।

পোস্টে বলা হয়, ‘১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে ৫৪ জন প্যারাট্রুপার বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে প্যারাট্রুপিং করে বিশ্ব রেকর্ড গড়তে যাচ্ছেন। এই ৫৪ জনের একজন আশিক চৌধুরী জাম্প করবেন ওসমান হাদির ছবি আঁকা হেলমেট পরে। বিজয়ের দিনে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের ভ্যানগার্ড ওসমান হাদির দ্রুত সুস্থতা কামনায় সকলকে দোয়া ও প্রার্থনার আহ্বান জানাই।’

এদিন একই পেজে দেওয়া আরেক পোস্টে বলা হয়, ‘এই বিজয় দিবসে চলে আসুন দলে দলে, এক অবিস্মরণীয় এয়ার শো দেখতে। বিজয়ের ৫৪তম বছরে, ৫৪ জন প্যারাট্রুপার, ৫৪টি জাতীয় পতাকা হাতে বিমান থেকে অবতরণ করবেন, গড়বেন বিশ্ব রেকর্ড। এয়ার শো উপভোগ করতে ব্যবহার করবেন আইডিবির উল্টো পাশের তালতলা গেট। গেট খোলা হবে ১৬ ডিসেম্বর সকাল ৮টায়। ১০টার মধ্যেই সবাইকে নির্ধারিত স্থানে সমবেত হওয়ার অনুরোধ করা যাচ্ছে।’

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং গত সোমবার এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছিল, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনীর যৌথ উদ্যোগে স্বাধীনতার ৫৪ বছর উদ্‌যাপনে ৫৪ জন প্যারাট্রুপার পতাকা হাতে স্কাই ডাইভিং করবেন। এটি হবে বিশ্বের বুকে সর্বাধিক পতাকা হাতে প্যারাস্যুটিং, যা গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড গড়বে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাজনৈতিক দলের জন্য নিরাপত্তা প্রটোকল দেবে পুলিশ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
রাজনৈতিক দলের জন্য নিরাপত্তা প্রটোকল দেবে পুলিশ

আসন্ন এয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটকে সামনে রেখে সব রাজনৈতিক দলের জন্য নিরাপত্তা প্রটোকল সরবরাহ করবে পুলিশ।

আজ রোববার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।

এতে বলা হয়, এই প্রটোকলে রাজনৈতিক নেতা ও আসন্ন নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীরা তাঁদের বাসস্থান, কার্যালয়, চলাচল, জনসভা ও সাইবার স্পেসে কীভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন—সে বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হবে।

এ ছাড়া জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সম্মুখসারির নেতৃত্ব ও গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতাদের বাড়তি নিরাপত্তা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত